আমি তোমায় পাহাড় ভেবে বাঁচি

রাতের বেলায় ফণীমনসাকে সাপ মনে হয়। আলো এলে, অনুমান ভুলে যাই। অনড় শামুক চলার দাগ রাখেনা, বিছানা থেকে সিলিং এর দূরত্ব কত? আমাদের পাড়ার দুপুরে, কমলা পিসির রিমোট ভরা গান চলে। হাওয়া কলের শব্দে ভাতঘুমের ঘুঙুর বাজে। যেদিন বাবা অফিস কামাই করে, রঞ্জু মায়ের হাত ছেড়ে ব্যাটিং এর চিন্তায় চৌরাস্তায় হারায়। আলো গড়ানোর খেলায়, দেবতারা অপেক্ষা করে। কখন তুলসী তলার ঘন্টায় শঙ্খচিল উড়ে যাবে! ল্যাম্পপোস্ট কাঁপছে, স্টেশনে ট্রেন থামে – ধূলো উড়ানো এ সন্ধ্যায় নামিয়ে ফেলি সমস্ত লাল নিশান, এখানে ভূগোলের ম্যাপে উড়োজাহাজ নামে। মানুষের ভেতরে মানুষের জানালা; অহেতুক রুদ্ধশ্বাস। উপলব্ধি, ঠিক কিসের ভিত্তিতে? ধ্যানী সে, পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। যেখানে দু’ একটা পাথর খসে পড়ে রোজ। তারপর, মুখোমুখি পোশাকহীন সত্যের। দূরে আস্তাবলে ঘোড়াদের হাসি ভেসে আসে। কাল্পনিক আত্মার কাছে কি চাও! এসো, পথ হারাও নতুন তারার পিছু পিছু…ডাক নাম নিয়ে ময়ূরী পেখম খোলে। দেউলিয়া মেঘেদের অনেক গান, অনেক বৃষ্টি। দ্যাখো, ছদ্মবেশী বৃক্ষ ছাতার মতন দাঁড়িয়ে। এখন বৃষ্টি নেই, চলো দৃশ্যাস্ত্র ছুড়ি শাদা ক্যানভাসে – ঋতুকাল ফুরিয়ে আসা নারীদের হাসি আঁকি। আলোর পাশের নির্জনতায় চায়ের ঘ্রাণ; নতুন সাবানের গন্ধ পেতে মোড়ক খুলে রাখি। মুগ্ধতা কেটে গেলে চিত্রকল্পে উড়ন্ত পাখিরা কেন যে ডালিমের ডালে বসে! বাতাস কাঁপে, মানুষ ভাবে এই প্রেম! আর আমি অনার্গল মাথা তুলে রেখেছি, অনবরত এমন অবনত প্রেমে – ধুলো জানে তার ওড়ার সময়ে অন্যকে কিভাবে আবৃত করে রাখে, সেহেতু সে মহান… দূরে দূর গান বাজে। দুলতে থাকা পাতারা জানে বাতাস কতটা দায়ী; ছোটো হয়ে আসা ছায়াদের, ঘষে ঘষে মুছে দেই সময়ের ইরেজারে কেননা আমরা ময়ূরকে ভালোবাসি, আর ময়ূর মেঘদল। আগুন তোমার চোখে তুমি বলো সাপ! অর্ধেক রাত, ঘুমের পাশে নদী টের পাও? জল বইছে – আগুন, রাত, সাপ একই সরলরেখায়। অথচ ঘুম নেই।

তখন বয়স তিন, এখনও ভুলি নি। দুপুর হলেই সেই বাঁশি বাজে। আলুথালু রাধিকার খোঁজে কাঁটাতার পার হতে গিয়ে একটি পাগল বাঁশি, ভেঙে পড়ে আছে। জ্বর এলে মায়া আসে, মা বেঁচে নেই, ঈশ্বর জানে। কপাল জুড়ে ঠাণ্ডা সাপ, পুড়ে যাবে; অন্ধকারের গন্ধ আছে। ওষুধ খেতেও ভালো লাগে না। পূজারি! মন্দিরে প্রদীপ জ্বালবে কখন? আঙুল রেখেছি, সিঁড়ি ও ঠোঁটে। নিথর ঝরা পাতা, ধুলো, রোদ। বিছানার জমিনে মানুষ আর শূন্যতা- অযথা আমি। মানুষের জীবন নিয়ে বিভ্রান্ত কারণ মানুষ হেসে উঠতে পারে। নিরীহ বোবার মতো প্রচলিত হয়ে ভেতরে আমার বইছো তুমি, এসবই ধ্যান – দীর্ঘ হতে হতে হেলে পড়েছি প্রেমে… জগতে টিকে থাকা যত ভাবধারা সবটাতে মানুষের মৃদু চেহারা প্রকট হয়েছি আমি তোমার প্রেমে। চলুক গতিরেখা প্রবল জোয়ারে চেহারায় উঁকি দেওয়া আয়নার কারুকাজ — ক্ষুধা হচ্ছে তোমার আমার সন্তান। তাড়াহুড়ো না করেও বলা যায়, ক্ষুধাই আমাদের মিলিত করেছে। আমি স্রোত ভয় পাই, ভয় পাই ভেসে থাকা, ভয় পাই ডুবে যাওয়া, ভয় পাই সুবিধা; আমি আসলে এলোমেলো বিক্ষিপ্ত হয়ে আছি জীবন-প্রাপ্তি নিয়ে। কি করা যায়? কি করা যায়? কোনো উত্তর নেই কারো কাছে। তোমাকে পেয়েছি তবু নিরাময় হয়েছে ব্যথা। তবু ব্যথা লাগলে, ভীষণ ব্যথায় আমি হাউমাউ করে কাঁদি। আমার কান্না তোমাকে ফেরানোর জন্যে না, আমার কান্নার স্রোত আছে – ভেসে যেতে হয় আরো দূরে। এজন্য ধারা আমার কান্না দেখে ফেলেছো – তবু দেখোনি এমন ভাব নিয়ে হেসে ওঠো, আমি টেনে ধরবো স্রোত – মিলিত হবো কুণ্ডলী বেগে। কারো উচ্ছ্বাসে আমার মাথাব্যথা নেই, শুধু তোমার তর্কে আমাকে জীবিত রেখো। আমি তোমাকে বিদ্ধ করবো প্রেমে, বিজয়ী হবে তুমি – ফাঁসির দড়ি ছিঁড়ে যাবে হেসে ওঠার প্রতিক্রিয়ায়। তোমাকে ভালোবাসি এ কোনো বাক্য নয়, এ তীব্র শব্দ।

আমার জন্যে কোনো ব্যথা রেখোনা কারণ আমি ভালো আছি তা বারবার বলতে পারবোনা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!