ঋষিখোলা

ঋষিখোলা, সেখানে ঋষি নেই ঠিকই কিন্তু প্রকৃতির খোলা জানলা আছে। ঋষিখোলা গ্রামের নামটি হয়েছে ঋষি নদীর থেকে এবং স্থানীয় ভাষায় নদীকে খোলা বলা হয়। সে থেকেই ঋষিখোলা। নদীর পাড়ের এক ছোট্ট নির্জন গ্রাম। যেখানে পৌঁছে গেলে মনে হবে গোটা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে।

অধিকমাত্রায় ভ্রমণ পিয়াসীরা মাঝে মাঝেই চলে আসেন এই পাহাড় পর্বত জঙ্গলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। যেকোনো রোমাঞ্চকর পরিবেশে সহজেই তাই হারিয়ে যান। এমনই এক সকালে রওনা দিয়ে খুব সহজেই পৌঁছে গেলাম ঋষিখোলা নদীর কাছাকাছি। বর্ষার তুমুল স্রোতে মাঝে মাঝেই ব্রীজ ভেঙে যায়। তখন নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে হলে এই পাহাড়ের গা দিয়েই যেতে হয়। পাহাড়ের গা ঘেঁষে সরু স্থানীয় মানুষদের পায়ে পায়ে তৈরি হওয়া রাস্তা। কখনও বিপুল জলরাশি পাহাড় থেকে নেমে রাস্তা ভাসিয়ে নেমে গিয়েছে নদীতে। পাথড় ধরে ধরে কোনও রকমে পেরিয়ে তবে সেখানে যাওয়া যায়।পায়ে হোঁচট খেলে আর রক্ষা নেই, তাহলে একেবারে নদীতে। কারোর আটকানোর ক্ষমতা নেই। এই পথে আরও অনেক এমন ঝর্ণা পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশ সময় লেগে যায়। সব ক্লান্তি অবশ্য কাটিয়ে দেয় ঋষি নদীর অপূর্ব রূপ মাধুর্য। অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত নদীতে পা ডুবিয়েই বসে থাকা যায়। রাতে নদীর উপর ঝুলে থাকা ব্যালকনিতে বসে চা-এর সঙ্গে আড্ডা জমতেই পারে।

কখনও কখনও ঝড়-বৃষ্টিতে ব্রিজ ভেঙে গেলে এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর অন্ধকার অপেক্ষা করে সেই সময়টুকুর জন্যে। ঝুপ করে চারপাশকে কালো রঙের মধ্যে ডুবিয়ে দেয়। তবে সকালের সৌন্দর্য একেবারেই আলাদা। অপূর্ব সুন্দর পাহাড় আগলে রাখে খরোস্রাতা ওই নদীকে। পাহাড়ে রোদ উঠলে ঝর্ণারও রূপ পাল্টে যায়। তার কলকল শব্দ অনেকটাই কমে অসে।

পশ্চিমবঙ্গ সিকিম সীমান্তে প্রায় ১৭০০ ফুট উচ্চতায় ছবির মত সুন্দর জনপদ ঋষিখোলা। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে এখানকার দূরত্ব ১০১ কিমি। চারধারে মনমাতানো পাহাড়শ্রেণী আর পাহাড়ের ঢালে গহীন জঙ্গল। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী ঋষিখোলা। প্রকৃতির কোলে দিন দুয়েক ছুটি কাটানোর জায়গা হিসেবে ঋষিখোলার জুড়ি মেলা ভার। সকালে কফির কাপে চুমুক দেওয়া থেকে শুরু করে রাত্রির ডিনার টেবিলে বসা পর্যন্ত প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এখানে। সারাদিন ধরে কানে ভেসে আসে নাম না জানা হিমালয়ের বিভিন্ন পাখ-পাখালির শব্দ। ইচ্ছে হলে নেমে পরা যায় ঋষি নদীতে, স্নানও করেন অনেকে। আবার নদীর ধারেই বসে বসে কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাটা দিন। ঋষিখোলায় দিন দুয়েক কাটিয়ে ঘুরে আশা যায় রিশপ, আরিতার লেক বা সিকিমের অনাঘ্রাতা রোলেপে। ঋষিখোলায় প্রকৃতির এক শান্ত স্নিগ্ধ রূপ যে কোনো প্রকৃতি প্রেমীকে মুগ্ধ করবেই। বেড়াতে যাওয়ার জন্য যারা এমন নিরিবিলি জায়গার খোঁজ করছেন, তাদের জন্য ঋষিখোলা হয়ে উঠতে পারে আদর্শ ডেস্টিনেশন। শুধু পুজোয় নয়, নিজের সময় সুযোগ মতো এই নির্জনতাকে উপভোগ করতে এখানে একটিবার আসা যেতেই পারে।

কালিম্পং এর কিছু অফবিট স্থানের মধ্যে একটি অন্যতম নাম হল ঋষিখোলা। কালিম্পং থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানটি পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম বর্ডারের শেষ গ্রাম, এই গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে চলে গেছে ঋষি নদী যার অন্য অংশ আছে সিকিমে।

নেপালি ভাষায় খোলা শব্দের অর্থ হলো বয়ে চলা বা ধারা, আর নদীটির নাম ঋষি তাই এই স্থানটির নাম হয়েছে ঋষিখোলা যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফিট। চারদিকে ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি উপত্যকার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা ঋষি নদীর সৌন্দর্য যে কাউকেই আকর্ষণ করবে। এছাড়াও ঋষি নদীর বয়ে চলা অফুরন্ত স্রোতের কুলকুল ধ্বনির আওয়াজ ও পাখিদের সুমিষ্ট আওয়াজ মনকে ভরিয়ে তুলবে যারা প্রকৃতিতে খুব কাছ থেকে দেখতে ও উপভোগ করতে চান। সমস্ত চিন্তা ভুলে কিছুদিনের জন্য একটু বিশ্রাম করতে চান? তাদের কাছে এই ঋষিখোলা খুব পছন্দের একটি জায়গা হয়ে উঠতে পারে। ঋষি খোলাতে প্রকৃতির মাঝে সময় কিভাবে যে কেটে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না। কেউ এখানে আসেন আপাত নির্জন নিঃসঙ্গতাকে উপভোগ করতে, কেউ বা দৈনন্দিন নাগরিক জীবনের কর্মব্যস্ততায় ক্রমাগত জমতে থাকা ক্লান্তিকে দূর করতে, অথবা কেউ আসেন ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতির সুধারস পান করতে। হোম স্টের সংখ্যা কম হবার কারণে পর্যটক সংখ্যা কম।

এখানে মন একদম ভাল হয়ে যায় নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে চারপাশের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে করতে। এখানে নদীর গভীরতা খুব বেশী না ফলে এখানে নদীতে স্নান করা যেতেই পারে। অনেকেই নদীর জলের মাছ ধরে রান্না করে খান। পাহাড়ে ঘন জঙ্গলের মধ্যে ট্রেক করা যায়। ভীষণ ভাল লাগে
নদীর ধারে স্রোতের আওয়াজ শুনতে শুনতে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সারতে।

ঋষিখোলার আশেপাশে ঘোরার মতো কিছু স্থান হল…

ঋষিখোলা থেকে পেডং খুব কাছে।

আরিতার হ্রদ — পূর্ব সিকিমের বহু পুরনো হ্রদ এই আরিতার হ্রদ। এর সৌন্দর্য কল্পনাতীত। ঋষিখোলা থেকে কাছে হওয়ায় এই স্থানটিতেও ঘুরে আসা যায়।

ডামসাং দুর্গ: লেপচা রাজার দ্বারা তৈরি পুরনো দুর্গ ।

সিলেরা গাঁ: কালিম্পং এর অফবিট স্থানগুলির মধ্যে একটি ছবির মতো সুন্দর গ্রাম এই সিলের‍া গাঁও। এই স্থানটিও খুব দূরে নয় ফলে এই স্থানটিতেও ঘুরে আসা যায়।

ইচ্ছে গাঁও: সিলেরি গাঁও এর পাশাপাশি ইচ্ছে গাঁও , এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সুন্দর অনুভব করা যায়।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ঋষিখোলা যেতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টা। গাড়ী ভাড়া – ৩০০০-৩৫০০/-

ছবিঋণ: মণিজিঞ্জির সান্যাল 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!