১.
দশ টাকা ধরে বসে আছে তো আছেই আজমল। সেই যখন ভাত নামাতে উনুনচালাতে গেছে, তখন থেকেই। কী আছে কি ওতে? জিন পরী না কী! আজমলের মা ভাবে।
দে দিকিনি হাতের নোটটা।
আজমলের সামনে দশটাকার হাওয়াতে ওড়া বাকি নোটগুলো নিয়ে গোছাতে গোছাতে বলে নুরুন।
উঃ কী এঁটে গেছিল!
আজিজুল ড্রয়ারে ব্যবসার টাকা রাখে। সকালে অনেক খোলার চেষ্টা করেছিল নুরুন।
ঠিক তখনই আসতে হল কৌসের বিবিকে!
কৌসের বিবিকে দোরে এসে বলল, কোন খবর আছে?
আছে। পাত্রী বেশ। দেবে থোবেও বেশ।
ঘরকে এসো।
না গো আপু। এখন যেতে হবে পুবপারে, মোল্লাবাড়ি। নিজেম মোল্লার বেটি ডাগর হয়েছে। এই ফটোকটা রাখ। ব্যাটাকে দেখাবে।পছন্দ হলে তবেই না কথাবার্তা!
২.
পরদিন আবার ড্রয়ার আঁটো। যাহোক করে ছবিটা গুঁজেছিল নুরুনবিবি। একবার দেখার সাধ হয়েছিল। তা ড্রয়ার খুলতে এখন আজমলকে পাবে কোথায়? সে বেরিয়েছ। পরক্ষণেই আবার গজগজ-কাজ বলতে তো জনসেবা!
ধানের ব্যবসা করে আজমল এ এলাকার সবথেকে ধনী ব্যবসায়ী থাকতে পারত! একটা সাদি করলে এদ্দিনে এঘর ভরে যেত লাতি লাতিনে।
আরো দুটো বেটা বাইরে। যে যার বউদের মন রাখতে শহরবাসী!
মা। আমার ড্রয়ারটা খুলছে না কেন?
নুরুন তথমত হয়ে এসে বলল,
আমি কী করে জানব?
ব্যাটাছেলের গায়ের জোর। দিল টান। ছিটকে পড়ল একটা ছবি।
আজমল বলল, এটা কী?
কৌসের ফুফু ছবি দিয়ে গেছে।
অ। ওইজন্য খুলছিল না আবার!
কাল দশটাকার নোটগুলো রেখেছ, পাকিয়ে-
আজমল তর্ক না করে বলে, নোটগুলো বড় নোংরা, গুছিয়ে দাও।
নুরুন বিবি নোট গোছাতে বসে। একশো, দুশ, পাঁচশ। তারপর বেটার কাছে দিয়ে বলে, আল্মারিতে তোল।
দশটাকাগুলো গুণলে না?
এসে গুণছি। ভাতটা ধরে যাবে।
ফিরে এসে দেখে আজমল, কালকের দশ টাকাটা নিয়ে বসে আছে।
৩.
রাতে প্রায়ই নোটটা দেখে আজমল।
নাম নীলুফা। দুটো পা নেই। তারপর ড্যাস দিয়ে ফোন নাম্বার।
রাতে আজমল ফোন করে। বাজছে। কেউ ধরল না।
নুরুন রাতে খাবার জন্য ব্যাটাকে ডাকতে এসে দেখে দশটাকার নোটটা নে বসে।
ওই ফোন থেকে কল।
ধরল।
হ্যালো-ও প্রান্তে একটা মিষ্টি গলা।
আপনি নীলুফা!
হ্যাঁ।
কি হয়েছে আপনার?
দুর্ঘটনায় দুটো পা নেই।
৪.
ক’মাস কথা হল। আজমল শুধোয়, একটা কথা, তুমি দশ টাকার নোটে নাম লিখেছিলে কেন নীলুফা?
দুর্ঘটনার পর আম্মুর কাছে আমি বোঝা হয়ে গেলাম। একদিন আম্মু চেঁচাচ্ছিল, তখন মনে হল, কেউ যদি সব জেনে কোনও ব্যবস্থা করে দেয়!
আর কেউ ফোন করেছিল আগে?
করেছিল। মজার জন্য।
কীরকম?
পা না থাকলেও আমার ইচ্ছা আছে কিনা?
কিসের ইচ্ছে?
কিছুই বোঝ না। না!
আমার একটা কথা আছে।
বল।
আমি তোমাকে বিয়ে করব।
বিয়ে করে ঝামেলা করে নাকি?
তুমি হ্যাঁ বললে আমি মাকে বলব।
৫.
শয্যাশায়ী নুরুন। নীলুফা সেবা করছে। অথচ সেই নীলুফার তিনি মুখ দেখেননি। বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল নীলুফাকে দুলাভাই, ফুফু, দুই ব্যাটা আর আপন চাচাতো ভাইদের কথাতে। আজমল বাড়ি থেকে চলে গেছিল। কিন্তু দুদিন অন্তর তাকে দেখে গেছে।
নুরুন তারপরও বলেছিল, খোঁড়া বৌ বিদায় কর।
আজমল শোনেনি। গঞ্জে থেকেছে। শোনে লোকমুখে বৌকে নিয়ে ঘাড়ে করে বয় আজমল। এমনকি লাতি সুস্থ হলেও তাকে দেখতে যায়নি নুরুন। নীলুফার এখন আসাটা আত্মীয়দের ভাল লাগেনি। নুরুন তখন রুখে উঠে বলেছে, পা না থেকেও কত সেবা করছে। তোমরা পা থেকেই বা কী করলে!
শয্যাশায়ী অবস্থা পার করেই নুরুন আজমলকে দিকে তাকিয়ে বলল, ড্রয়ারটা খোল বাপ।
কেন? এখন ঢিলে হয়েছে?
হয়েছে! একটা সোনার মাকড়ি আছে, তোর দাদির- নে আয়। নীলুফাকে বরণ করব সামনের বিস্সুৎবার লোককে দাওয়াত দিয়ে।♦