কাজী নজরুল ইসলাম বর্তমান শতকের কবিকুলের অন্যতম এক মহৎ ব্যক্তিত্ব। তিনি আমাদের জাতীয় কবি; জয়বাংলা ও স্বাধীনতার রূপকার। তাঁর রচনায় যেমনি ভাবের, মননের, চিন্তনের, প্রকরণের বৈচিত্র্যতা রয়েছে; তেমনি বৈচিত্র্যতা রয়েছে তাঁর ব্যক্তিজীবনের কর্মে, ধর্মে, আদর্শ ও বিশ্বাসে। তাঁর কবিতা, গান ও সাহিত্য পর্যালোচনায় কবির স্পর্শকাতর মনের বাস্তব বর্ণবহুল চিত্রকল্পের প্রমাণ মিলবে।
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি হলেও এ উপাধিটি তাঁর জন্য তেমন কোনো বড় মাপের গৌরবজ্জ্বল অলংকার নয়। বিশ্বের অনেক মহৎ কবি জাতীয় কবির ভূষণে ভূষিত না হয়েও মহৎ কবির আসনে অধিষ্ঠিত আছেন। তবে নজরুল আমাদের জাতীয় কবি এবং মহৎ কবি- উভয় ভূষণেই ভূষিত।
কাজী নজরুল ইসলামের সৃজনশীল প্রতিভা ছিল বহুমাত্রিক ও বৈচিত্র্যময়। ফলে নজরুলের মতো একজন সৃষ্টিশীল ও প্রতিভাধর মানুষের পক্ষে সৃষ্টিকর্মের সকল দিক সমভাবে চালিয়ে যাওয়া ছিল খুবই কষ্টকর বিষয়। উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলাম এক ব্যক্তিক্রমধর্মী সৃষ্টিশীল শিল্পী। কালের বিচারে তাঁর শিল্প: কবিতা ও গান, উপন্যাস, পত্রসাহিত্য আজ অনন্য হয়ে বিরাজ করছে। এর মধ্যে তাঁর অনেক কবিতাই গান আবার অনেক গানই কবিতা হয়ে আজও আমাদের আনন্দ দিচ্ছে।
কবির সমগ্র কাব্যসাহিত্য পর্যালোচনায় মিলবে তাঁর অপূর্ব বর্ণীল চিত্রকল্পের সাক্ষাৎ- যেখানে পাওয়া যাবে অদ্ভুত সব বাস্তব, পরা-বাস্তব ও প্রতীকী রঙের পরশসহ রূপক, উপমা, উৎপ্রেক্ষার চিত্রকল্প নির্মাণের দক্ষতা। বলা যায়, শব্দের চিত্রকল্প নির্মাণে তাঁর মতো একজন দক্ষ চিত্রী চিত্র, কবিতা ও সংগীত জগতে আজও বিরল।
‘কবিতার জন্য চিত্রকল্প- এর মাধ্যমেই আমরা একজন কবির ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতিসহ দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য নির্ণয় করতে পারি। কবির বিমূর্ত অনুভূতি বা মানসিক ভাবরাজি চিত্রকল্পে হয়ে ওঠে মূর্ত। চিত্রকল্পকে বলা হয় কবিতার সেই মায়াবী মুকুর, যেখানে একই সঙ্গে বিম্বিত হয়ে ওঠে স্রষ্টার চৈতন্য, সৃষ্টির লাবণ্য। হার্বাট রীডের মতে: চিত্রকল্পের শরীরে ফুটে ওঠে একটি আবেগী চিত্র এবং দৃশ্যময়তা। নজরুল কাব্যের চিত্রকল্পে এর কোনোটিরই ঘাটতি মিলবে না।
নজরুল পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নিলেও বাংলাদেশের মাটি-মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। ১৯১৪ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনি বহুবার পূর্ববাংলা অর্থাৎ আমাদের এ বাংলাদেশে এসেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন এদেশের আনাচে-কানাচে; প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ভালো বেসেছেন এদেশের মাটি-মানুষকে। এ দেশের মানুষও তাঁকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে। দিয়েছে উষ্ণ আতিথেয়তা, সম্মাননা এবং জাতীয় কবির মর্যাদা। ১৯৭২ সাল থেকে আমৃত্যু (২৯ আগস্ট ১৯৭৬) তাঁকে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আতিথির সম্মান। দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিক মর্যাদসহ তাঁর সাহিত্যকর্মের অসামান্য অবদানের জন্য ডি. লিট. উপাধিা।
নজরুলসৃষ্ট কবিতা ও গানের চিত্রকল্পে যে-সকল রস-রহস্য, মান-অভিমান, রঙ-রেখা স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়জ্জতার বেশির ভাগই আহরিত হয়েছে এই বাংলার জল-স্থল থেকে। উদাহরণ:
একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবণী ॥
(গানের মালা: ৩৭)
অথবা,
হে মোর রানী! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।
আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।
আমার সমর-জয়ী অমর তরবারি
দিনে দিনে ক্লান্তি আনে, হ’য়ে ওঠে ভারী,
(বিজয়িনী: ছায়ানট)
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২০ সালের পর থেকে পরবর্তী ছয়-সাত বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, থানা, ইউনিয়ন- এমনকি গ্রামে পর্যন্ত ব্যাপক সফর করেছেন। এ সম্পর্কে নজরুলের নিজের ভাষ্য: ‘আট বছর ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতি জেলায়, প্রতি মহকুমার ছোট বড় গ্রামে ভ্রমণ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য গান গেয়ে, কখনো কখনো বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতাম’। এরই মধ্যে একপর্যায়ে তিনি মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রামেও একবার বেড়াতে এসেছিলেন এবং মানিকগঞ্জ শহরের কয়েকজনের বাসায় নিমন্ত্রিত অতিথি হয়েও বেড়িয়ে গিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ জেলাটি পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, কালীগঙ্গা, গাজীখালি, ক্ষিরাই, মন্দা, ভুবনেশ্বর, কান্তাবতীর মতো অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল বিধৌত একটি জেলা। খাল-বিল নদী-নালার আধিক্যের কারণে বর্ষায় এ জেলার অধিকাংশ বাড়িঘর পানির উপর ভাসতে থাকায় জেলাটি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। আলোচ্য প্রবন্ধে কবি নজরুলের কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধে মানিকগঞ্জের রূপ-রস রঙ-রেখাসহ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধলেশ্বরী ও অন্যান্য নদ-নদী কতটুকু প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়েছে তা খতিয়ে দেখাই হবে মুখ্য উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, নজরুল নিজ হাতে কখনও কোনো দিনলিপি লিখেন নি, ফলে তাঁর সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে আজও আমাদের নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে নজরুল যে মানিকগঞ্জ এবং তেওতায় ১৯২২ সালে এসেছিলেন তাতে কোনো দ্বিমত নেই। কুমিল্লা আসা-যাওয়ার মাঝেই নজরুল একবার মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রাম ও পরে মানিকগঞ্জ শহরে বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই তিনি মানিকগঞ্জকে মনে প্রাণে ভালোবেসে ফেলেন।
নজরুলের লেখা ‘হারা ছেলের চিঠি’ থেকে প্রমাণ করা যায় যে, তিনি প্রথমে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর ট্রেনযোগে এসে সেখান থেকে স্টিমারযোগে গোয়ালন্দ এবং পরে সেখান থেকে নৌ-পথে মানিকগঞ্জ পৌঁছান। ‘হারা ছেলের চিঠি’তে নজরুল তার মানিকগঞ্জ সফরের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন: ‘সেদিন ছিল যাত্রানাস্তির দিন যেদিন ভোরে নতুন করে পুবের পানে পা বাড়ালাম। …যাক সে কথা। কি বলছিলাম? সেদিন ছিল ১৩২৭ সালের ২১শে চৈত্র, রবিবার, নিশিভোর; দিনক্ষণ সমস্ত কিছু ছিল যাত্রানাস্তির’।
মানিকগঞ্জ যাওয়ার পথবর্ণনার চিত্রকলাপ এঁকে নজরুল লিখেছেন: “তারপর যেতে যেতে দেখলাম পথের দুধারি ঘাসে আর কাশের মাটি ছোট অভিমানী মেয়ের মতো শীষ দুলিয়ে দুলিয়ে বলছে- ‘না, না, না।’ ধানের কচি চারাগুলি তাদের অধরপুটে সবুজ হাসি ফুটিয়ে মাথা হেলিয়ে আঙুল তুলে শাসাচ্ছে- ‘না, না, না! দূরে দিগন্ত-ছোঁয়া গ্রামে সীমায় লাজনত বাঁশের বধূ মাটির পানে চেয়ে শ্বাস ফেলছে আর কেঁপে জানাচ্ছে, না, না, না!’ বাঁধাঘাটে কাঁখের কলসি জলে ভাসিয়ে দিয়ে কিশোরী পল্লীবধূ আমার রথের পানে চেয়ে সজল চোখের করুণ চাওয়ার ভাষায় প্রশ্ন করছিল, ‘কোথা যাও, ওগো বিদেশি পথিক?’ সে বালিকাবধূ ভাবছিল, হয়তো তার বাপের বাড়ির কাছেই আমার বাড়ি! হয়তো তাদের ঘরের সামনে দিয়ে আমার চলার পথ!… আমি তোদের দেশের নই বোন, তবু কেন তোকে দেখে এত কান্না পায়! তোর চোখে আজ সারা বাংলার ঘরহারা বালিকাবধূর ব্যথা ঘনিয়ে উঠেছে যে ভাই। ঘরের মায়া এমনই বেদনা-বিজড়িত মধুর।”
নজরুলের মানিকগঞ্জের তেওতা সফরের আর এক সুন্দর বর্ণনা রয়েছে মো. আজহারুল ইসলাম সম্পাদিত ‘মানিকগঞ্জের শত মানিক’ গ্রন্থে এভাবে: ‘কাজী নজরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে প্রমীলা একাধিকবার তেওতা গ্রামে এবং মানিকগঞ্জে এসেছিলেন। এ সময় তিনি বেশ কিছু গান রচনা করেছিলেন।’ নজরুলের ‘হারা ছেলের চিঠি’তে মানিকগঞ্জ ভ্রমণের আরও এক সুন্দর বর্ণময় চিত্রকল্পের নিদর্শন রয়েছে এভাবে: ‘দেখলাম, ময়নামতি শাড়ির খুঁটে চোখ মুছে ভরা কলসি কাঁখে সে ধানক্ষেত পেরিয়ে সুপারি গাছের সারির মাঝে মিলিয়ে গেল। …আরো দেখলাম, কলার ভেলায় চড়ে উদাসীন পথিক গাঙ পার হচ্ছে আর গাঙের দুপাশের ধানের চারায় ধানী হরফে লেখা তার যেন কোনো হারানো-জনের পত্র-লেখা আনমনে পড়তে পড়তে যাচ্ছে।’
নজরুলের প্রিয় তেওতা গ্রামটি মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার অর্ন্তগত যমুনার তীরবর্তী একটি সুন্দর গ্রামের নাম। উপজেলা শিবালয়ের উত্তরে উথুলির পরই তেওতা গ্রামের অবস্থান। বর্তমান আরিচাঘাট থেকে উত্তরে যার দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটারের মতো। এ গ্রামেই জন্মেছিলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘দীঘল ঘন আঁখিপল্লবের পূজারিণী’, ‘পদ্ম-পলাশ-আঁখি’, ‘পদ্ম-ইলিশ-আঁখি’র ‘পূজারিণী’, ‘বিজয়িনী’, ‘দোলন-চাঁপা’র দোলন দেবী ওরফে আশালতা সেনগুপ্তা ১৩১৫ সালের ২৭ বৈশাখ (১৯০৮ মে)। গ্রামের ছোটরা তাঁকে ‘রাঙাদি’ নামে সম্বোধন করত। মা-বাবার আদর করে ‘দুলি’ নামে ডাকলেও তার প্রকৃত নাম ছিল আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলা দেবী। নজরুলের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি হয়ে যান প্রমীলা নজরুল।
আলী হোসেন চৌধুরী তার এক লেখায় নজরুলের তেওতা যাওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছেন এভাবে: ‘অনুসন্ধানে জানা যায় নজরুল তেওতা গ্রামে প্রমীলা ও বীরেন সেনসহ বেড়াতে গিয়েছিলেন কোন এক দুর্গা পূজার সময় তাদের বিয়ের আগে। বীরেন সেন প্রমীলার কাকাতো ভাই নজরুলের বন্ধু। নজরুল-প্রমীলার বিয়ে হয়েছিল ১৯২৪ সালের এপ্রিলে। সুতরাং নজরুল এখানে এসেছিলেন তারও আগে তা সহজেই অনুমেয়’।
নজরুলের কাব্যসাহিত্য পর্যালোচনায়ও এ সত্য বেরিয়ে আসে যে, নজরুল মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রামে গিয়েছিলেন এবং সর্বত্র ঘুরেও বেড়িয়েছেন। প্রমাণ হিসাবে নজরুলের ‘ছোট হিটলার: কবিতা ও গান’ এর কয়েকটি চরণ এখানে তুলে ধরা হলো:
মা গো! আমি যুদ্ধে যাব নিষেধ কি মা আর মানি?
রাত্তিরে রোজ ঘুমের মাঝে ডাকে পোলান্ড, জার্মানি।
ভয় করিনা ‘পোলিশ’দের জার্মানির ঐ ভাওতাকে,
কাঁপিয়ে দিতে পারি আমার মামা বাড়ির ‘তেওতা’ তে।
(ছোট হিটলার: কবিতা ও গান)
এ কবিতায় যদিও নজরুল তাঁর জবানবন্দিতে ‘আমার মামাবাড়ির তেওতা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন- যা থেকে স্পষ্ট করে বলা যায়; নজরুল মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রামে কখনো না আসলে অথবা তেওতা গ্রাম সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট ধারণা না থাকলে কবিতায় এত দৃঢ়তার সঙ্গে ‘মামাবাড়ির তেওতা তে’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারতেন না। সুতরাং নির্দ্বিধায় প্রমাণ করা সম্ভব যে, নজরুল মানিকগঞ্জের তেওতায় এসেছিলেন এবং তেওতা, মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জায়গায় তিনি ঘুরেও বেড়িয়ে গেছেন- যার প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়েই তিনি তাঁর পরবর্তী কাব্যসাহিত্যে মানিকগঞ্জ ও তেওতার নানা বর্ণিল চিত্রকল্প রঙ-রেখা উপমা প্রতীকে এঁকেছেন।
তথ্য-উপাত্তে স্পষ্টই প্রমাণিত হয়: নজরুল মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রামে এসে ঘুরে বেড়িয়ে গেছেন এবং পদ্মা-যমুনার গা-ঘেঁষা গ্রাম তেওতার প্রাকৃতিক দৃশ্যসহ মানিকগঞ্জের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধলেশ্বরী নদী কবিকে ভীষণভাবে আকৃষ্টও করেছিল। যার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে কবির নানা চিত্রকল্পের বর্ণবৈচিত্র্যে। উদাহরণ: ‘রোদে-পোড়া দুপুরটা তৃষ্ণাকাতর যমকাকের মতো হাঁপাচ্ছে আর খাঁ খাঁ করছে; তখন তরী আমাদের পদ্মার বুকে ভাসল! দেখলাম পদ্মার শুকনো ধু-ধু করা চরটা নির্জলা একাদশীর উপবাস ক্লান্ত বিধবা মেয়ের মতো উপুড় হয়ে পড়ে পড়ে ধুঁকছে। ও-পারে মানিকগঞ্জের সীমানা সবুজ রেখায় আঁকা। এ-পারে ফরিদপুরের ঘন বনছায়া। এ-পারে ও-পারে দুটি সাথীহারা কপোত-কপোতীকুজন-কান্নায় তখন যেন সারা দুপুরটার বুকে দুপুরে মাতন জুড়ে দিয়েছিল। কী এক অকূল শূন্যতার ব্যথায় বুকটা আমার যেন হো হো করে আর্তনাদ করে উঠ্ল’।
নজরুল এ চিত্রকল্পটি এঁকেছিলেন গোয়ালন্দ ঘাটে স্টিমার থেকে নেমে নৌকাযোগে পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে মানিকগঞ্জ যাওয়ার পথে। একইভাবে নজরুল কাব্য অনুসন্ধানে তেওতা, মানিকগঞ্জ ও পদ্মা নদীর আরও এমন অনেক শব্দ-বর্ণ, উপমা-প্রতীক ও চিত্রকল্পের প্রমাণ মিলবে, যা মনের অজান্তে তাঁর কাব্যসাহিত্যে ব্যবহৃত হওয়ায়- আজও তেওতা, মানিকগঞ্জ, পদ্মা নজরুল সাহিত্যে অমর হয়ে আছে। উদাহরণ: ‘পদ্মা-ইলিশ-আঁখির চাওয়া’; ‘তখন তরী আমাদের পদ্মার বুকে ভাসল’; ‘পদ্মার শুকনো ধু-ধু করা চরটা’; ‘গোয়ালন্দের ঘাটে পদ্মার বুকে স্টিমারে রেলিং ধরে’ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে এখানে কবির একটি বিখ্যাত গানের কথা উল্লেখ করা যায়:
পদ্মার ঢেউরে-
মোর শূন্য হৃদয় নিয়ে যা যা রে
…ও পদ্মারে ঢেউ এ তোর ঢেউ ওঠায় যেমন চাঁদের আলো
মোর বঁধুয়ার রূপ তেমনি ঝিল্মিল করে কৃষ্ণ কালো।
(বুলবুল: ৮৩)
অনুরূপভাবে পদ্মাকে নিয়ে কবির আরও একটি বর্ণবহুল চিত্রকল্পের উদাহরণ দেয়া যায় এভাবে: ‘পদ্মার বুকেই ধোঁয়ার মতন ঝাঁপসা হয়ে মলিন-সন্ধ্যা নেমে এল! সন্ধ্যা এল, ধূলি ধূসরিত সদ্য-বিধবার মতন ধূমল কেশ এলিয়ে, দিগ্বালাদের মেঘলা অঞ্চলে সিঁথির সিঁদুরটুকুর শেষ রক্তরাগ মুছে! ধানের চারায় আর আমার চোখে অশ্রু-শীকর ঘনিয়ে এল’।
শুধু পদ্মা নয়- মেঘনা, যমুনার সঙ্গেও ছিল নজরুলের ঘনিষ্ঠতা। সম্ভবত মানিকগঞ্জের তেওতা ভ্রমণের সময়ই নজরুল পদ্মা ও মেঘনাকে বেশি কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। কারণ যমুনার তীরবর্তী গ্রামই তেওতা, আর তারই সন্নিকটে রয়েছে পদ্মা নদীর অবস্থান। তেওতা অবস্থানকালে নজরুল যে সে গ্রামের পাশদিয়ে প্রবাহিত বাংলার স্বনামধন্য নদী পদ্মা, যমুনার তীরে ঘুরে বেড়ান নি- তা ভাবাও অবান্তর মনে হবে। কবির কবিতায় পদ্মা-যমুনার চিত্রকল্প:
পদ্মা-মেঘনা-বুড়িগঙ্গা-বিধৌত পূর্ব-দিগন্তে
তরুণ অরুণ বীণা বাজে তিমির বিভাবরী অন্তে।
ব্রাহ্ম মুহূর্তের সেই পূরবাণী
জাগায় সুপ্ত প্রাণ জাগায়জ্জনব চেতনা দানি’
(পূর্ববঙ্গ: শেষ সওগাত)
নজরুল তাঁর এক কীর্তনাঙ্গের গানে রাতের যমুনার যে অপরূপ রূপবৈচিত্র্যের চিত্রকল্প রচনা করেছেন; যা যমুনাকে বাস্তবে প্রত্যক্ষ না করলে কখনোও এ ধরণের চিত্রকল্প রচনা সম্ভব হয়ে উঠবে না। উদাহরণ:
যমুনার জল দ্বিগুণ হয়েছে চাঁদ কি উঠেছে গগনে?
চন্দন-রজ-সুগন্ধ পাই ব্রজের মন্দ পবনে।
(কবিতা ও গান: ৯৪৫)
অথবা,
সারি সারি গোপ-নারী-পাগলিনী প্রায়
শূন্য যমুনাতে জল নিতে যায়
দেখে তীরের কদম-তরু আছাড়ি পড়ে
শূন্য যমুনা বুকে মুখ রাখিয়া দুখে গিয়াছে মরি।
(কবিতা ও গান: ৯৪৫)
নজরুল পুবের যমুনার রূপ দেখে কখনও উদ্বেলিত হয়েছেন, আবার কখনও হাঁটু জল দেখে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একইভাবে যমুনার ভরা যৌবন দেখে উৎফুল্ল হয়ে তার রূপ, রঙ-রেখা, উপমা-প্রতীকের মাধ্যমে কবিতার চিত্রকল্পে রাঙিয়ে তুলেছেন এভাবে:
যমুনা-আকলি’ উঠিছে উথলি;
গুঞ্জরে অলি বিহাগ-কাকলি শুকসারী আনন্দে
ভ্রমর গুণ গুণ স্বরে বন্দে।
(কবিতা ও গান: ৯৪৬)
অথবা,
যমুনা কূলে মধুর মধুর মুরলী সখি বাজিল
মাধব নিকুঞ্জ-চারি শ্যাম বুঝি আসেজ্জ
কদম্ব তমাল নব-পল্লবে সাজিল।
(‘বন-গীতি’: ৩০)
নজরুল যেদিন অকারণে ‘বিনা-কাজের আহ্বানে পুবের পানে পাড়ি দেন’- সেদিন ছিল ১৩২৭ সালের ২১ চৈত্র রবিবার, নিশিভোর। ট্রেন, স্টিমার ও তরীযোগে কবি কখন তেওতা পৌঁছেন এবং কতদিন সেখানে অবস্থান করেন তার সঠিক কোনো তথ্য জানা না গেলেও তেওতা থেকে বিদায় নিয়ে, ভেজা আঁখিতে ফেরার পথে বিকেলে গোয়ালন্দের ঘাটে পদ্মার বুকে স্টিমারে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে মানিকগঞ্জের যে চিত্রকল্প তিনি এঁকেছেন- তার প্রতিটি রঙ-রেখার পরশে রয়েছে নজরুলের বিষাদের ছাপ। উদাহরণ:
মা! যেদিন নিজে নিজে কেঁদে তোমাদের কাঁদিয়ে বিদায় নিয়ে আসি, সেদিন আসন্ন বিকেলে এই গোয়ালন্দের ঘাটে পদ্মার বুকে স্টিমারের রেলিং ধরে ঐ ওপারেজ্জ মানিকগঞ্জের সবুজ সীমারেখার দিকে তাকিয়ে, আমার বুক চোখের জলে ভেসে গিয়েছিল। তুমি যে বলেছিলে, ঐখানেজ্জ ঐ অপরপারের সুনীল রেখায় আমাদেরও ঘর ছিল। সে ঘর হয়তো আজো আছে, কিন্তু সে আজ পোড়াবাড়ি, আর মনে পড়ল, ঐ গাঁয়েরই চিতার বুকে হয়তো এই কীর্তিনাশারই অপর কূলে, আমার হারা-বোন বেলীর স্মৃতি ছাই হয়ে পড়ে আছে। ওরে কোথা সে সর্বগ্রাসী শ্মশান-মশান? কোথায় সে শতস্মৃতিবিজড়িত পোড়া ঘরখানি? আমাকে সবচেয়ে বেশি কাঁদতে লাগল আমার দুই হারা-বোন লিলি আর বেলীর পোড়া স্মৃতি। সবচেয়ে বেশি দুঃখ বয়ে গেল আমার, আমি তাদের দেখতে পাইনে! বেলা নাকি যাবার দিনে ‘পদ্ম-পলাশ আঁখি’ দেখেছিল! এই কথা শুনে কমলা প্রমীলা হেসে উঠেছিল, তাই সে রেখে বলেছিল, তোরা কখনো তাঁকে দেখতে পাবিনে, তোরা মিথ্যা বলিস, যারা মিছে কথা কয়, তাদের তিনি দেখা দেন না। এর পরেও কী কারো মনে অবিশ্বাস জন্মাতে পারে- নজরুল মানিকগঞ্জের তেওতা যান নি!
মানিকগঞ্জ থেকে ফেরার পথে, স্টিমার যখন পদ্মার বুক চিরে ফরিদপুরের তীর ঘেঁষে চলছিল তখন আর একবার কবির বুক তোলপাড় করে উঠেছিল। কারণটা কবির নিজের বর্ণনায় শোনা যাক: ‘এপারে ফরিদপুরের পানে তাকিয়ে মনে হয়েছিল, ঐ ছায়া-সুনিবিড় কোনো একটি গৃহের আঙিনার তুলসী-মঞ্চে আমার স্নেহময়ী তেজস্বিন মাসী-মার সন্ধ্যা-প্রণামগুলি হারিয়ে গেছে! স্বাহা কন্যা আমার এই দীপ্তিমতী সন্ন্যাসিনী মাসিমাকে মনে পড়লে আমার আকুল কান্না চেপে রাখতে পারিনি। আচ্ছা বলতে পারো, এ তপস্বিনী মেয়ের হাতের নেওয়া সিঁথির সিঁদুর কেড়ে বিধাতার কি মঙ্গল সাধিত হলো? কে এর জবাব দেবে মা? …এই বিধবা মেয়েদের দেখলে আমার বুকের ভেতর কেমন যেন তোলপাড় করে ওঠে। বাংলার বিধবার মতো বুঝি এত করুণ- এত হৃদয়বিদারক দৃশ্য আর নেই’।
মানিকগঞ্জ থেকে নৌকা এবং স্টিমারযোগে নজরুল যখন চাঁদপুরের রেলস্টেশনে পৌঁছে রেলে চড়েছিলেন তখন সন্ধ্যা। নজরুলের বর্ণনায়- ‘যখন রেলে চড়লাম তখন সন্ধ্যা বেশ ঘনিয়ে এসেছে। ট্রেন চলতে লাগল। আমি কেমন যেন উন্মনা হয়ে পড়লাম অলস উদার চোখে আমার শুধু এইটুকু ধরা পড়েছিল যে, ভীষণ বেগে উল্টো দিকে ছুটে যাচ্ছে- আঁধার রাতের আঁধারতর গাছপালাগুলো। চলন্ত ট্রেনের ছায়াটা দেখে মনে হচ্ছিল, যেন একটা বিরাট বিপুল কেন্নো ছুটে যাচ্ছে।
কুমিল্লায় যখন নামলাম তখন বেশরাত হয়েছে। কন্দর্পের মতো সুন্দর এক যুবতী আমায় ‘এসো’ বলে হাত বাড়াল- তার পদ্ম-পলাশ আঁখি দেখে, আঁখি আমার জুড়িয়ে গেল। আমরা না চিনতেই পরস্পরকে ভালোবাসলাম। সে উল্টো আমাকেই পদ্ম-পলাশ-আঁখি বলে ডাকল। আমার চোখে জল ঘনিয়ে আসল’।
প্রমীলা সেনগুপ্তা ছিলেন বসন্তকুমার সেনগুপ্তের দ্বিতীয় স্ত্রী গিরিবালা দেবীর একমাত্র মেয়ে। মা-বাবা উভয়ের জন্মস্থান ছিল তেওতা গ্রামে। বসন্ত কুমারের বড় ভাই জগৎকুমার এবং ছোট ভাই ছিলেন ইন্দ্রকুমার সেন। বসন্ত কুমারের বাড়িটি ছিল তেওতা জমিদার বাড়ির দেয়ালঘেঁষা বিরাট বাড়ি।
বসন্তকুমার চাকরি করতেন ত্রিপুরা রাজ্যের নায়েবের পদে। প্রথমা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় গিরিবালা দেবীকে পুনরায় বিয়ে করার পেছনে স্পষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও অনুমান করা যায়- প্রথম পক্ষের কোনো সন্তান-সন্ততি না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে বসন্তকুমারকে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
প্রমীলার জন্মের পর বসন্তকুমার সেনগুপ্ত ত্রিপুরা রাজ্যেই ইহলোক ত্যাগ করেন। বসন্তকুমারের মৃত্যুর পূর্বে গিরিবালা দেবী প্রমীলাকে নিয়ে তেওতা গ্রামেই বসবাস করতেন। আর্থিক অসচ্ছলতা ও সামাজিক কারণে গিরিবালা দেবী বাধ্য হন মেয়ে প্রমীলা সেনগুপ্তাকে নিয়ে দেবর ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় বাসায় চলে আসতে। কুমিল্লার কান্দির পার আসার পর ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়ির উত্তর ভিটার একটা ঘরে গিরিবালা দেবী ও প্রমীলা সেনগুপ্তার বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত যখন কুমিল্লার কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ইন্সপেক্টরের পদে চাকরি করতেন তখন সেখানে তার সঙ্গে বাস করতেন তাঁর মা, বাবা এবং স্ত্রীসহ তার দু’বোন ও এক ছেলে। এর পর সে পরিবারে এসে যোগ দেন গিরিবালা দেবী ও তার মেয়ে প্রমীলা সেনগুপ্তা।
ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের স্ত্রী ছিলেন বিরজাসুন্দরী দেবী; নজরুল যাকে মা বলে সম্বোধন করতেন এবং ভীষণভাবে তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন। বীরেন্দ্রকুমার ছিলেন বিরজাসুন্দরীর ছেলে, নজরুলের বন্ধু। ‘হারা ছেলের চিঠি’তে নজরুল যাকে ‘মা’ বলে সস্বোধন করেছেন তিনি আর কেউ ননজ্জ ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের স্ত্রী বিরজাসুন্দরী। ‘হারা ছেলের চিঠি’তে নজরুল বিরজাসুন্দরীকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন: ‘যাক, সে রাত্রিতে শান্তির ঘুম ঘুমালাম, এই সুখে যে- আজ আমি ঘরের কোলে ঘুমাচ্ছি।… তারপর, বুকে তীর বিঁধে আবার যখন আহত পাখিটির মতন রক্তবমন করতে করতে তোমার দ্বারে এসে লুটিয়ে পড়লাম, তখন তুমি আর মাসি-মা আমায় কী যত্নেই বুকে করে এসে তুলে নিলে। তোমরা আর আমার ঐ শিশু-বোন কটিই আবার যমের দ্বার হতে আমায় ফিরিয়ে আনলে। আজ ভাবছি কী ঘরের মায়ায় বনের হরিণকে মুগ্ধ করলে? আশীর্বাদ করো মা, তোমাদের এই দেওয়া প্রাণ যেন তোমাদেরই কাজে লাগিয়ে যেতে পারি’।
উল্লেখ্য, প্রমীলা সেনগুপ্তার জন্ম তেওতা গ্রামে না বসন্তকুমার সেনগুপ্তের ত্রিপুরা রাজ্যের চাকরিস্থলে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সুলতান মাহমুদ মজুমদারের মতে, ‘আমার মনে হচ্ছে, প্রমীলার জন্ম হয়েছিল ত্রিপুরা রাজ্যে বসন্ত বাবুর চাকরি স্থলে। কেননা প্রমীলার জন্মোৎসব বসন্ত বাবুর চাকরিস্থলেই হয়েছিল। আমি ত্রিপুরা রাজ্যে বাস করতাম। বসন্ত সেন যে তহশীলে চাকরি করতেন, সেই তহশীলে আমাদের সম্পত্তির খাজনা দেয়া হ’তো’।
প্রমীলা সেনগুপ্তার সঙ্গে নজরুলের প্রথম দেখা হয় ১৩২৭ সালের চৈত্র মাসে (১৯২১ সালের মার্চ এপ্রিল) ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাসায়; নজরুল তখন প্রথম কুমিল্লা আসেন। তখন প্রমীলা সেনগুপ্তার বয়স ছিল মাত্র তের/চৌদ্দ বছর। এর পর তাদের মন দেয়ানেয়া চলে এবং ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিল কলকাতার ৬নম্বর হাজী লেনের বাড়িতে ‘আহ্লুল কিতাব’ মতানুসারে নজরুল-প্রমিলা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পক্ষাঘাতের কারণে প্রমীলা নজরুলের মৃত্যু হয় ৩০ জুন ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে।
তথ্যসূত্র:
১. শ্যামলকুমার ঘোষ; ‘কবিতার চিত্রকল্প: কবি জীবনানন্দ দাশ’, প্রথম প্রকাশ, ১৩৯৪, কলিকাতা; পৃষ্ঠা ১৫।
২. Cecil Day Lewis: The Poetic Image (London, 1968); p. 18
৩. আবু হেনা আবদুল আউয়াল: ‘বাংলাদেশে নজরুল সফর ও সংবর্ধনা’; নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ’২০০০, ‘প্রাক-কথা’।
৪. হারা ছেলের চিঠি: ‘নজরুল-রচনাবলি’ (৫ম খ-); বাংলা একাডেমি, ঢাকা, নতুন সংস্করণ, ২৭ আগস্ট, ২০০৭, পৃষ্ঠা ৩৭৮।
৫. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮০।
৬. মো. আজহারুল ইসলাম: ‘মানিকগঞ্জের শত মানিক’, মানিকগঞ্জ সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, ঢাকা: প্রথম প্রকাশ ২০০৫, পৃষ্ঠা ৩৯৫।
৭. হারা ছেলের চিঠি: ‘নজরুল-রচনাবলি’ (৫ম খ-), প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮০।
৮. আলী হোসেন চৌধুরী: ‘নজরুল ও বাংলাদেশ’, নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, ২০০০, পৃষ্ঠা ১০৯।
৯.হারা ছেলের চিঠি: ‘নজরুল-রচনাবলি (৫ম খ-), প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮১।
১০. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮২।
১১. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮১।
১২. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮১।
১৩. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮২।
১৪. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৮২-৮৩।
১৫. সুলতান মাহমুদ মজুমদার: ‘ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি’, নজরুল পরিষদ, কুমিল্লা, প্রথমপ্রকাশ