নোনাজলে শুকনো ফুলের মালা

আমরা সবাই চাই আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন চিন্তামুক্ত এবং কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া কাটিয়ে দিতে। কিন্তু বাস্তবে কি তা হয়! ভবিষ্যতে কি ঘটবে তাও অজানা, ফলে অনুমান নির্ভর আশংকা নিয়ে আমরা নানা রকম উৎকণ্ঠায় ভুগী এবং জীবনটাকে এক অদৃশ্যমান অদৃষ্টের হাতে তুলে দেই।
হারুন উর রশিদ কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটিতে পিএচডি করছে। তিন বছরের কোর্স। কোর্সের তিন বছর শেষ হওয়ার প্রাক্কালে তার সুপারভাইজার মিস্টার ডেভিড হান্ট তাকে বলল, হারুন, তুমি এমফিল নিয়ে দেশে চলে যাও, আমার মনে হচ্ছে তোমার দ্বারা পিএইচডি হবেনা।
কথাটি শুনে হারুন কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে বললো, মিস্টার হান্ট দেশ থেকে পিএইচডি করবো বলে সবাইকে জানিয়ে এসেছি, এমতঅবস্তায় দেশে ফিরে গেলে আমি আমার কলিগ, বন্ধু-বান্ধব কারো কাছে লজ্জায় মুখ দেখতে পারবোনা।
তোমার তো স্কলারশিপ শেষ, তুমি চলবে কি করে?
প্লিজ, একটা ব্যবস্তা করে দিন। হারুনের আকুল আবেদন।
হারুনের চোখে, মুখে ও কণ্ঠে স্পষ্ট দৃঢ়তার ছাপ দেখে মিস্টার হান্ট তাকে একই ইউনিভার্সিটিতে খন্ডকালীন একটা কাজ জোগাড় করে দিলো। অবশেষে সে জিওলোজিতে তিন বছরের জায়গায় পাঁচ বছর কাটিয়ে পিএচডি ডিগ্রী অর্জন করলো।
দেশে ফেরার আশা হারুন ছেড়ে দিলো, কারণ সে দেখতে পেলো দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ,সে দেশকে অনেক ভালোবাসে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে, শিক্ষক হিসাবে দেশকে অনেক কিছু দেয়ার আছে। শুধু সরকারী প্রশাসনিক দপ্তরগুলো যারা পরিচালনা করেন- তাদেরকে সে মোটেই বিশ্বাস করতে পারেনা। তাই দেশে ফেরার মন মানসিকতা সে একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে। দারিদ্রে পূর্ণ জীবনটাকে সে অনেক কাছে থেকে দেখেছে। তার বাবা ছিলেন একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির একাউন্টস ক্লার্ক। ভাই-বোন, মা-বাবা মিলে তাদের ছয় জনের সংসার। বাবা সারাজীবন কি খাটুনিটাই না করেছেন! অসুখ হলে, বিশেষ করে জ্বর হলে,প্যারাসিটামল অথবা প্যানাডল ট্যাবলেট কিনে খাওয়াটা তাদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া বৈ আর কিছুই ছিল না। সময় মতো কিছুদিন ভোগান্তির পর জ্বর এমনি এমনি সেরে যেত। কলেজে পড়াকালীন অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা হতো, অনেক মেয়েকে ভালো লেগেছিলো। কিন্তু কোনো মেয়েই তাকে পাত্তা দিতো না। কারণটা আর কিছুই নয়, অন্য ছেলেদের মতো পয়সার অভাবে তাদেরকে বিলাস বহুল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে সাহস হয়নি, প্রমোদ ভ্রমণ করাতে পারেনি, দামী গিফট দেয়া অসম্ভব ছিল, আরো অনেক কিছুই তার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তখনকার মতো সে বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছিল। এখন ওই সমস্ত কথা মনে পড়লে তার হাসি পায়। সে মেধাবী ছাত্র ছিল। তাই এই পরিণত বয়সে সে নিজেকে সান্তনা দেয় এই ভেবে যে- যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, তাইতো সে আজ মানুষের মতো মানুষ হয়েছে। তাকে অনেক টাকা আয় করতে হবে। তবে অসৎ উপায়ে নয়, নিজের সময়, পরিশ্রম এবং মেধা দিয়ে দারিদ্র্যটাকে তাদের জীবন থেকে দূর করে দিতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় সে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে লেকচেরার পদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু কোথাও কোনো ফলপ্রসূ উত্তর পেলোনা। সে দমে যাবার পাত্র নয়। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ আরও কয়েকটি দেশের একাধিক ইউনিভার্সিটিতে লেকচেরার পদের জন্য সমানে আবেদন চালিয়ে যেতে লাগলো। এবার ভাগ্য দেবী প্রসন্ন হলো। সে অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিডনিতে’ লেকচেরার পদের জন্য আমন্ত্রিত হলো, বেতনও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি থেকে প্রায় দ্বিগুন। একই বলে ভাগ্য!
দিনক্ষন ঠিক করে হারুন মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে সিডনি যাবার টিকেট করে ফেললো, লন্ডন- টু -সিডনি ভায়া কুয়ালালামপুর। অর্থাৎ সে ট্রানজিট যাত্রী, যাবার পথে তাকে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে দু ঘন্টা বিরতি নিয়ে সিডনিগামী বিমান ধরতে হবে। যথাসময়ে তাদের বিমানটি লন্ডনের হিথরো বিমান বন্দর থেকে সিডনির উদ্দেশে পাড়ি জমালো। ভোর চারটা নাগাদ তাদের বিমানটি কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে অবতরণ করলো।পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ছয়টার সিডনিগামী বিমান ধরার জন্য অন্যান্য যাত্রীরদের সাথে হারুন ডিপার্চার লাউঞ্জে আসলো। তাদের সাথে অন্য দেশের যাত্রীরাও রয়েছে। এর মাঝে কিছু সংখ্যক ঢাকা থেকে আগত বাংলাদশী যাত্রীও রয়েছে। হটাৎ করে মাইকে ঘোষণা করা হলো যে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছে যে, সিডনিগামী সকাল ছয়টার ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। তার কারণ হলো, কিছু সংখ্যক যাত্রীর সাথে পাইলট সহ সকল crew members লিফটে আটকা পড়েছে। তাদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসকে তলব করা হয়েছে। তাদেরকে লিফট থেকে ছাড়াতে কতক্ষন লাগবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছেনা। পরবর্তী সিডনিগামী ফ্লাইট রাত সাড়ে নয়টায় এবং ওই ফ্লাইটের জন্য যাত্রীদেরকে তৈরী থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। যাত্রীদের যেন অন্য কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছেএবং তাদেরকে প্রাতঃরাশ, লাঞ্চ এবং ডিনার সরবরাহ করা হবে। যাত্রীদের এই দুরবস্থার জন্য এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষও প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিলো। অবশ্য এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা।
আধ ঘন্টার ভিতরে বিমান কর্তৃপক্ষের পাঠানো একটা কোচ এসে সিডনিগামী যাত্রীদের নিকটস্ত ‘হলিডে ইন’ হোটেলে নিয়ে আসলো। যাত্রীদের মাঝে বেশ কয়েকজন মহিলাও রয়েছেন। একনাগাড়ে পনেরো/ষোলো ঘন্টা প্লেন জার্নি করার ফলে হারুন হোটেলে এসেই ঘুমিয়ে পড়লো। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন লাঞ্চ করার সময় প্রায় পেরিয়ে যায় যায়। তড়িঘড়ি করে হাতমুখ ধুয়ে সে হোটেলের ক্যাফেটেরিয়াতে পৌঁছায়। বুফে সিস্টেমে খাবারের আয়োজন। তার সামনের সারিতে একজন মহিলাকে দেখে হারুন তাকে চিনতে পারলো। মনে হলো তার কলেজ জীবনের বান্ধবী ইয়াসমিন মাহমুদ। ইয়াসমিন আগের মতোই সুন্দরী আছে তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেই শিশু সুলভ চাঞ্চল্য ভাবটা আর নেই। কিছুটা গম্ভীর প্রকৃতি মনে হলো, হয়তোবা বয়সের জন্য। ইয়াসমিনও ঘাড় ফিরিয়ে হারুনের দিকে তাকালো, সেও হারুনকে চিনতে পারলো। প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর দুজনেই খাবার নিয়ে একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসলো। ইয়াসমিন জানালো সে ঢাকা থেকে তার ছোট বোনের বিয়েতে সিডনি যাচ্ছে। তার বাবা ডেন্টিস্ট এবং সেখানেই তাদের সমস্ত পরিবার সেটেল করেছে। ইয়াসমিন ঢাকতেই রয়ে গেছে, ঢাকায় তার ভালো লাগে এবং সে এক বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা। আর হারুন জানালো সে সিডনি ইউনিভার্সিটিতে আধ্যাপনার কাজ নিয়ে সেখানে যাচ্ছে।
হারুন জিজ্ঞেস করলো, তোমার বরকে তো দেখছিনা! মানে ইফতেখারকে। যাকে কলেজে তুমি আদর করে ‘ইফতি’ বলে ডাকতে। সেই সুদর্শন, ধনীলোকের ছেলেটি। তোমার মতো মেয়ের মন জয় করতে পেরেছে বলে আমার তো ওকে দেখলে রীতিমতো হিংসে হতো।
হারুনের প্রশ্নটি শুনে ইয়াসমিন কিছুক্ষনের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। আনন্দঘণ পরিবেশটা যেন পলকেই নিস্প্রান হয়ে পড়লো। তারপর আবেগ জড়িত কণ্ঠে ইয়াসমিন উত্তর দিলো, আমাদের বিয়েটা হয়নি। বলতে পারো ইফতি তার মত বদল করে আমাকে তার অপারগতার কথা জানালো। আমিও তার কথার অমর্যাদা করা থেকে বিরত থাকলাম।
কি এমন ঘটনা ঘটলো যার জন্য সে তোমাকে বিয়ে করতে নারাজ হলো?
মানুষের মন বুঝা মুশকিল। যে লোকটি হৃদয়ের সবটুকু প্রেমাবেগ দিয়ে আমাকে সর্বক্ষণ জড়িয়ে রাখতো, সে কিনা একদিন শুকনো মালার মতো আমাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
আহা! ভনিতা না করে আসল ব্যাপারটি বলতে তোমার কি দ্বিধা হচ্ছে?
মোটেই না; তোমাকে জানাতে আমার কোনো সংকোচ বা লজ্জা নেই। কলেজে তুমিইতো আমার কাছের মানুষ ছিলে। তারপর তুমি স্কলারশিপ নিয়ে বিলেতে চলে গেলে। আজ পাঁচ বছর পর তোমার সাথে দেখা হলো। আমার জীবনের চরম দুদর্শার কথাটি নিশ্চয়ই তোমাকে বলা যেতে পারে!
যে বছর তুমি বিলেতে চলে গেলে, তখন আমি অনার্স পড়ছিলাম। হটাৎ করে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম, গুরুতর অসুস্থ। নানা রকম টেস্ট করার পর আমি জানতে পারলাম আমার শরীরে cervical cancer বাসা বেঁধেছে। সময় মতো রোগটি ধরা পড়েছে, তাই চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হলোনা। রোগটা এখন রেমিশনে আছে, তবে আমি কোনোদিন ‘মা’ হতে পারবোনা। এই বিষয়টি ইফতি গ্রহণ করতে পারেনি। সে আস্তে আস্তে আমার জীবন থেকে সরে দাঁড়ালো। আমার মনের মধ্যে একটা জিদ চেপে গেলো। পুরুষ মানুষের প্রতি এক প্রকার ঘৃ্ণা এসে গেলো। আমাদের সমাজে পুরুষ মানুষেরা সত্যিকারের ভালোবাসার মূল্য দিতে জানেনা। আরো বুঝতে পারলাম একজন মহিলাকে সমাজে থাকতে হলে, খেয়ে পড়ে বাঁচতে হলে, নিজের শররীরটাকে বেঁচতে হয়। সে প্রেমিকাই হোক আর স্বামী হোক অথবা অন্য যে কোনো পুরুষই হোক। শরীরটা অসুস্থ হয়ে পড়লে, তুমি মূল্যহীন, নেই কোনো দাম। তাই তো মনে প্রশ্ন জাগে তবে কিসের এই ভালো বাসা! কেন তবে ভালোবাসার নামে এই নাটকীয়তা?
এক নাগাড়ে ইয়াসমিনের কথাগুলি শুনে হারুনের মনে হলো ইয়াসমিন যেন রাগে ও কষ্টে ফেটে পড়ছে।
তোমার ধারণার সব কথাগুলি সত্যি না। পুরুষ বা মহিলা সবারই দোষ গুন্ আছে, কারণ আমরা উভয়েই তো মানুষ। তাই যতদূর সম্ভব আমাদেরকে সজাগ হয়ে চলতে হয়। তারপর যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়, তাহলে ভাগ্যকে দোষারোপ করে নিষ্কৃতি পাওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।এখন বলো তোমার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে কেমন আছে?
ওই যে বললাম, বর্তমানে রেমিশনে আছি। সব সময়ে মাথার মধ্যে ঘুরছে-এই বুঝি ক্যান্সার রোগটা ফিরে এলো। আসল কথা হলো রোগটা ফিরে আসে না, কারণ এটা কখনো শরীর থেকে চলে যায় না, ভাগ্যচক্রে ওটা শরীরের ভিতর সুপ্ত হয়ে থাকে। কপাল খারাপ থাকলে হয়তোবা আগ্নেয়গিরির লাভার মতো আবার ফুঁস করে জ্বলে উঠতে পারে।
হয়তোবা! হারুন ইয়াসমিনের কথার প্রতিধ্বনি করে উঠলো।
জানো হারুন, আমি মৃত্যুকে ভয় পাইনা। কিন্তু এই যে মরে যাবো যাবো চিন্তাধারাটা মাথার মধ্যে সব সময়ে কিলবিল করতে থাকে সেটা সহ্য করা অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়ে উঠে। মানুষের জীবনে ডিপ্রেশনটা সচরাচর যে কোন কারণে, যে কোন বয়েসেই হতে পারে। কিন্তু আমার বেলায় ডিপ্রেশনটা যেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মনে হয়। মাঝে মাঝে কান্নায় চোখে জল এসে যায়। আমার জীবনটা কেন এমন হলো? আমি তো কারো কোনো ক্ষতি করিনি। আবার নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করি, যতদিন বাঁচবো আমাকে শক্ত হয়ে বাঁচতে হবে।
কিছুক্ষন নীরব থেকে ইয়াসমিন বলল, প্রতি ছয়মাস অন্তর আমাকে রুটিন চেকআপে হাসপাতালে যেতে হয়। তখন মনের ভেতরে ভয়ে দুরু দুরু কম্পন শুরু হয়ে যায়। মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না, আমার ভয় নিজের জীবনের শুন্যতা, একাকিত্বের কথা চিন্তা করে। ভয়টা ওখানেই আমার পাশে কেউ নেই। আমার মন প্রাণ তখন চায়, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হেসে আমাকে তার বাহুতে জড়িয়ে কেউ যদি বলতো, হে প্রিয়তমা, কোন চিন্তা করোনা। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাহলেই এ জীবনটাকে ধন্য মনে করতাম। এর বেশী আমার চাওয়ার কিছু নেই।
কথাগুলো বলে ইয়াসমিন লক্ষ্য করলো হারুনের চোখ দুটি জলে ছল ছল করছে। সে হারুনকে জিজ্ঞাসা করলো, কি আশ্চর্য! তোমার চোখে জল কেন! আমি তো শুধু আমার দুঃখের কথা তোমার সঙ্গে শেয়ার করলাম।
কেন জানি না, তোমার দুঃখের কথা শুনে আমার হৃদয়টা খুব ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লো। তাইতো চোখের জল আটকাতে পারলাম না।#
Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!