রাত হয়েছে অনেক, মা এখনও এলো না শোবার ঘরে। রান্নাঘরে কী যে এতো কাজ থাকে মা’র, তিতলি বোঝে না। তার খুব বিরক্ত লাগে, রাগ হয় একা একা শুয়ে থাকতে।
ওমা একি? মায়ের বদলে ঘরে এসে ঢোকে রথের মেলা থেকে কেনা মাটির পুতুলটা। যার হাতটা তিতলি সে’দিন ভেঙে দিয়েছিল। সে এসে তিতলির সামনে দাঁড়ায়। পুতুলটা মায়ের মতো বড় হয়ে গেছে অনেক।
সে এসে বলল, তোর হাতটা এবার ভেঙে দিই আমি?
তিতলি রাগে ফেটে পড়ে। বলে, কি বললি? তুই আমার হাত ভাঙবি?
– হ্যাঁ ভাঙবোই তো, তুই আমার হাতটা সেদিন ভেঙে দিয়েছিস মনে নেই? ভুলে গেছিস নাকি?
– বেশ করেছি।
– তবে রে, পুতুলটা তার কাছে এসে, হাত মুচড়ে ধরে বলে, তবে রে, তোকে দেখাচ্ছি মজা।
কী সর্বনাশ ! তিতলি মনে মনে খুব ভয় পায়। তবু বুকে সাহস নিয়ে মুখে বলে, তোর তো খুব সাহস বেড়েছে রে?
– বেড়েছেই তো। বলে সে হাক দেয়, এই, আয় তো তোরা কে কোথায় আছিস।
পুতুলটা বলার সঙ্গে সঙ্গে, তিতলি দেখে, শুঁড় ভাঙা হাতিটা, চোখ ঘষা বাঘটা, নেড়ামাথা মোমের পুতুল, পা ভাঙা ভালুকটা সবাই এসে হাজির হয়েছে এখানে।
হাতিটা এসেই বলে, আমার শুঁড় ভেঙেছিলিস তুই, এবার তোর নাকটা আমি ভেঙে দিই?
বাঘটা কাছে এসে বলে, আমি তোর চোখদুটো খুবলে নিই এবার?
ভালুকটা তিতলির একটা পা ধরে বলে টেনে বলে, আমি এবার ভেঙে দিই তোর এই পা-টা?
মোমের পুতুলটাও কম যায় না। তিতলির চুলগুলো টেনে ধরে বলে, ছিঁড়ে নিই তোর সব চুলগুলো?
ভয়ে তিতলির বুকের রক্ত হিম হয়ে আসে। সে যে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না?
মা মা বলে চিৎকার করে ডাকতে গিয়ে দেখে গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না।
সে ভীষণ জোরে চিৎকার করে ওঠে – মা আ আ আ আ…
তার চিৎকার শুনে, মা তার গায়ে হাত রেখে বলে ওঠে, কি রে, কি হয়েছে তোর? ভয়ের কিছু স্বপ্ন দেখেছিস?
মায়ের ডাকে ঘুমটা ভেঙে গিয়ে, তিতলির যেন ঘাম দিয়ে ভয় কাটল। মনে স্বস্তি ফিরে এলো। সে বলে, হ্যাঁ গো মা।#