ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) কোনো জটিল রোগ নয়।এটি একটি শিখনের সমস্যা (Learning Difficulties), যেটি মূলত শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। এই সমস্যাটি শিশুদের পড়াশোনার সাথে সংযুক্ত। ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের মূলত শিখতে সমস্যা হয়। এর ফলে তাঁদের ভাষা মনে রাখতে, পড়তে, লিখতে এবং বানান মনে রাখতে বা কথা বলতে সমস্যা হয়। ডিসলেক্সিয়ার ফলে বিশেষ কিছু কাজে শিশুদের সমস্যা হলেও এর সাথে বুদ্ধিমত্তার কোনও সম্পর্ক নেই। Dyslexia হল এক বিশেষ ধরনের শিক্ষণের জটিলতা এবং এই ধরনের জটিলতার প্রধান কারণ হল নিউরোলজ্যিকাল। এটি শিশুর ভাষাগত জটিলতার সাথে সম্পর্কিত যার ফলে শিশুরা পড়াশোনা, লেখা ও বানান করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। Dyslexia কে অনেক সময় বিশেষ পড়াশোনার জটিলতা হিসেবে গণ্য করা হয়। শিশুদের শিক্ষণের সমস্যার মধ্যে Dyslexia-তে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় ৬০-৭০%। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা এনএইচএস বলছে, একটি শিশুর বেড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ভাবে ডিসলেক্সিয়া প্রকাশ পায়। তবে প্রাথমিক স্কুলে একটু বেশি চোখে পড়ে ,যেহেতু তখন সে অনেক নতুন কিছু শিখতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা যায় যে, যাদের মধ্যে Dyslexia সমস্যা রয়েছে তাদের শ্রবণ-শব্দ ও গ্রহণ-প্রক্রিয়া- যাদের মধ্যে Dyslexia সমস্যা নেই তাদের চেয়ে ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
Dyslexia সম্পর্কে একটি সাধারণ ভ্রান্ত ধারণা হল যে, Dyslexia সমস্যার শিশুরা পড়াশোনায় নিম্নমাত্রার কার্যসম্পাদনা করে- কারণ তারা মূলত অলস, মানসিক প্রতিবন্ধী, বুদ্ধিহীন, বোকা,হাবাগোবা,কিছুই জানে না অথবা আবেগীয়ভাব অসংলগ্ন প্রভৃতি। এই ভাবনাগুলো একেবারেই ভ্রান্ত।এই ধরনের ধারণা তাদের প্রকৃত সমস্যাকে বুঝতে বাধা প্রদান করে।তাদের মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। যদিও এটা জেনে রাখা প্রয়োজন যে এই সমস্যার শিশুরাও বুদ্ধিমান হতে পারে। সম্প্রতি ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি’ জার্নালে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, ডিসলেক্সিয়াকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসাবে দেখা উচিত নয়। গবেষকদের মতে, ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আবিষ্কার, উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতা সহ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আর পাঁচ জনের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতা রয়েছে।
ডিসলেক্সিয়ার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
ক) সমবয়সি শিশুদের তুলনায় Dyslexia সমস্যার শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহ কম প্রকাশ করে।
খ) রিদম উপলব্ধি ও বুঝতে অসুবিধা হয়; যেমন, গাছে একটি ‘তাত’ (কাক) বসে আছে। অর্থাৎ উচ্চারণ করতেও সমস্যা হয়।
গ) পাঁচ বছর বয়সেও শিশুর ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গণনা করতে অসুবিধা হয় এবং ভাষা শেখা, অক্ষর বলতে ও শিখতে অস্বাভাবিক অসুবিধার সম্মুখীন হয়।
ঘ) সমবয়সি শিশুদের তুলনায় অক্ষর/শব্দ উচ্চারণের এবং অক্ষরের অবস্থান অনুসারে উচ্চারণগত ভিন্নতা শিখতে অস্বাভাবিক অসুবিধার সম্মুখীন হয়।
ঙ) সাধারণ গাণিতিক সূত্র শিখতে অসুবিধা হয়, যেমন যোগ, বিয়োগ এবং যুক্তির মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রেও অসুবিধার সম্মুখীন হয়।
যাইহোক,ডিসলেক্সিয়া শিশুকে যেভাবে সহায়তা করা যায় সেগুলি হল-
১) শিশুকে উদাহরণের মাধ্যমে উত্তমভাবে ভাষাশিক্ষা নিয়ম বোঝাতে হবে।
২) যথেষ্ট সময় ও অনুশীলনের মাধ্যমে শিশুকে ভাষার শব্দ উচ্চারণ ও শব্দ তৈরি করে পড়ার সুযোগ দিতে হবে এবং শিশুকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।
৩) শিশুর পড়াশোনাকে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করে পড়াতে হবে যেন সে সফল হতে সক্ষম হয়।
৪) শিশুর আগ্রহ অনুসারে তার পড়ার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে হবে।
৫) অডিও-ভিজুয়্যাল, শ্রবণ ও স্পর্শ ও স্পর্শ-সংবেদনশীলতাকে ব্যবহার করে পড়া ও লেখার নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
৬) শিশুর সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি লক্ষ্য রেখে পড়ার বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে।
৭) পড়াশোনায় যথেষ্ট সময় প্রদানের মাধ্যমে লেখাপড়ার কর্মটি সম্পন্ন করতে হবে।
৮) যেহেতু এই সমস্যার সেভাবে কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। তাই এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদেরকে যত দ্রুত সম্ভব প্রোপার কাউন্সেলিং করাতে হবে। এর জন্য অভিজ্ঞ কাউন্সেলর বা মনোবিদদের সহায়তা নিতে হবে।#