নামটি:
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জানুয়ারি তিনি কলকাতার ভালবাসার বারান্দার বাড়িতে জন্ম নেন। মা লেখিকা রাধারানী দেবী, যাঁর ছদ্মনাম অপরাজিতা দেবী। বাবা বিশিষ্ট লেখক নরেন্দ্র দেব।
খুব ছোটবেলার কথা। নামটা নাকি কোনও লেখিকার নামে আমার? কে তিনি? বড় হয়ে পড়ি নবনীতা দেবসেনের ‘হে পূর্ণ তব চরণের কাছে’। পূর্ণ কে? তাঁর চরণে এত মজা করে পৌঁছে যাওয়া যায়? হয়তো যাওয়ার উপায় আছে! করুণা কোনও পথ দিয়ে যদি আসে! আর একবার, ‘ভালবাসা কারে কয়’লেখাটা পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছে। মা পড়ছে! আমাকে পড়তে হবে! ওমা লুকিয়ে পড়ে অবাক! সেরকম তো কিছুই নেই! নবনীতা দেবসেনের একজন পাঠক হিসেবে তাঁর কথাগুলো জীবনে গেঁথে থাকে! তিনি রম্যরচক। মজার ছলে কত গভীর কথা বলেন! দেশভ্রমণের নেশা তাঁর। ওমা তিনি আবার উপন্যাস ও লেখেন! কলেজে চাকরি করতে গিয়েই পড়ে ফেলি একমাত্র সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া পাঠ্য বইয়ের বাইরে ‘নবনীতা’। আমার প্রবাসী জীবনের সঙ্গে ফিলিপস টেপের সঙ্গী হয়, ঐ বই টি। ‘নবনীতা’ পড়ি। উপন্যাসের ভাষা কত অন্যরকম। বিশাখাকে পড়ে কাঁদি। অনুপমকে একদম ভাল লাগে না ‘আমি অনুপম’-এ। কবিতা আর একবার। ছোট গল্পে নিজের জীবনের কথা বলতে বলতে গল্প তৈরি। ‘ভালবাসা কারে কয়’ আর একবার। প্রবন্ধ পড়া হয় স্মারক বক্তব্যের। ভালবাসার বারান্দা’ লেখা পড়তেই ঐ ‘প্রতিদিন’ পড়া যেন!
দেখা হল:
ভাষাও চেতনাতে কবিতা পড়তে এসেছিলেন। তারপর এক সইসভাতে এক লিফটে। উনি বললেন, লাঠিটা লাগে। কত কাছে। সুগন্ধ আসছে।আমার প্রিয় লেখক। আরও কত কিছু বললেন। আমি বুঁদাবেগে আছি। পৌঁছে যাই মঞ্চের কাছে। তিনি মঞ্চের উপর। মনে হচ্ছিল কী সাধারণ। নাটক দেখলাম, বুধসন্ধ্যার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। সাহিত্যিককুল অভিনয় করছেন সেই নাটকে। নবনীতা দেবসেন চাষী-বৌ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় চাষী। নাটক শুরু করছেন তাঁরা।
সই হলাম:
তাঁর সই হলাম। রুপোর চামচ এ জন্মদিনের পায়েস দিয়ে প্রথম দেখা। উনি আমার লেখা পড়েছেন। কার্টিং করতে গিয়ে কেউ আমার লেখাটা কেটে রেখেছিলেন। তারপর গল্পটা উনি পড়েন। বললেন, ও তো ভাল লেখে!
তারপর, কত কথা।
তিনতলার থেকে নেমে আসেন। সইসভাতে হেড সই বসেন। স্বর্গের ফুল যেন ঝরে পড়ে লেখক সমাবেশে। গান হয়। নাচ হয়। সই মেলা নিয়ে কথা হয়। মেয়েকে নিয়ে যাই। ওর দুল পরে খুশি হন। কখনও নিজের কথা কখনও পুরোন কথা গল্প চলে মুড়িতে হাত ডুবিয়ে। কখনও ভাল ভাল খাওয়ার পর্ব চলে। কারুর বই বের হলে। কারুর কোনও ভাল খবরে। কখনও উপলক্ষ্য ছাড়াই। একটা উচ্চ সংসর্গ শেষে ঘরে ফিরে মনের ভাঁজে লেগে থাকে খুশির পারিজাত। ভালবাসা বাড়ির তিনতলাতে এক কোণে তিনি লিখে যান। সে কম্পিউটার টেবিলে কখনও বসতে দেখি।
সভা শেষে উঠে যান ঘর্ঘর করে সেই বিশেষ চেয়ার লিফটে করে!
আজ তাঁর ৮৪ বছর।
৮০ বছরের জন্মদিন কত আনন্দ করে কাটিয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে। একসঙ্গে!!
বলেছিলেন, আমার জন্মদিনে শাঁখ বেজেছিল। ছেলে হয়েছে ভেবে! বলেছিলেন পৌষ সংক্রান্তি ছিল সেদিন!!
সহস্র সহস্র বছর বেঁচে থাকুন সেই স্মৃতির অতুলনীয় সরল মনের মানুষটি!♦