অণুগল্প: শ্মশানে অমাবস্যার রাতে

কথা হচ্ছিল ভূতের ভয় নিয়ে ঠাকুরবাখুলের দাবায়। বঙ্কিম জেঠুই পাড়ল কথাটা, “কেউ যদি অমাবস্যার রাতে শ্মশানের নিমগাছে পেরেক পুঁতে দিয়ে আসতে পারে তবেই বুঝতে পারা যাবে সে সত্যিকারের বাপের ব্যাটা! ভূতের ভয় তার নেই।” এমন কথায় সকলের মুখই শুকনো হয়ে গেল। এমনিতে গ্রামাঞ্চলে ভূতে বিশ্বাস আর ভূতের ভয় অনেকটাই বেশি। তার উপর অমাবস্যার রাত, শ্মশান, নিমগাছ, পেরেক -বাপরে! কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে চ্যালেঞ্জটা নিল জেঠুরই সমবয়সী বেরা পাড়ার হরেকিষ্ট রায়। সারা জীবনে একশোরও বেশি মড়া পুড়িয়েছে সে। ভুতে বিশ্বাস করেনা যে তা নয়, কিন্তু ভূতের ভয় তার নেই। বরং লোকে বলে ভূতেরাই নাকি কিঞ্চিত ভয় পায় তাকে। তাই পাড়ায় তো বটেই আশপাশের দু’চারটে গ্রামেও খবরটা ছড়িয়ে পড়ল, সেই সঙ্গে প্রবল আগ্রহ।

দিন সাতেক পরেই এল সেই আকাক্ষিত, উত্তেজনার, আতঙ্কের রাত! ঠাকুরবাখুল থেকে হাতুড়ি আর পেরেক হাতে রহনা দিল হরেকিষ্ট রায়। শীতকালের অমাবস্যার রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকার হলেও শ্মশানের রাস্তা তার খুব চেনা। আধ-ঘন্টার মধ্যেই শ্মশানে পৌঁছে গেল সে। নদীর ধার থেকে সাঁই সাঁই করে বইছে কনকনে উত্তরে হওয়া। তার গায়ের চাদরতা পত্‍ পত্‍ করে উড়ছে সেই হওয়ায়। চারিদিকে কিরকম সব অদ্ভুত অদ্ভুত শো শো , খসখস শব্দ! এখানে ওখানে ছড়ানো পোড়া কাঠের টুকরো, হাড়, খুলির অংশ..! অন্য কেও হলে হয়তো ভয়ে ভিরমি খেয়ে যেত। কিন্তু সে হরেকিষ্ট রায়। তার গলায় “বল হরি… হরিবোল!!” শুনে ছোটোছোটো ছেলেমেয়েরা তো বটেই, বড়দেরও পিলে চমকে যায়! সে ভয় পায়না কিছুতেই। নিম গাছের কাছে গিয়ে সে সাহসে বুক বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক পুঁততে লাগল। কই, কেউ তো তাকে ভয় দেখাচ্ছেনা! মনে মনে হাসলো সে। পেরেক পুঁতে নিশ্চিন্ত মনে সে পিছন ফিরল।অমনি তার গলায় জড়ানো চাদরে টান পড়ল পিছন থেকে। এবার একটু ভয় পেল সে। জোর করে হ্যাঁচকা টান মারতে গিয়ে শিশিরে পিছলে গেল তার পা। তার গলাটা পেঁচিয়ে গেল চাদরে। এবার একটা অজানা আতঙ্কের শিহরণ খেলে গেল তার শরীরে। এই প্রথম ভয়ে সেই প্রবল ঠান্ডাতেও ঘেমে নেয়ে উঠল সে। যত টান মারে ততই চাদরটা তার গলায় বসে গিয়ে শ্বাস বন্ধ করার উপক্রম করে। এইভাবে চেষ্টা করতে করতে শেষ পর্যন্ত চেতনা হারায় সে…

ঘণ্টা দুয়েক পরেও হরেকিষ্টকে ফিরতে না দেখে উদ্বিগ্ন গ্রামের লোকজন আলোটালো নিয়ে শ্মশানের সেই নিমগাছটার সামনে পৌঁছল। কিন্তু সামনের দৃশ্য দেখে আতঙ্কে শিউরে উঠল তারা। তারা দেখল যে নিজের চাদরেই পেরেক পুঁতে গলা পেঁচিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ঝুলে আছে হরেকিষ্ট রায়। দেহে তার প্রাণ নেই।#্র

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!