ইশরাত

তুমি জান, ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি তারিখ উল্লেখ করে বলেছিলাম? ডাক্তার অবাক হয়ে প্রায় এক মিনিট আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। সেটাই স্বাভাবিক না? বিয়ের সবে মাস পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একদিন! ডাক্তার তো আর জানেন না, সেটাও শুধু আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই না, আমি ভয়ে কুঁকড়ে গেছিলাম। আমি একদমই প্রস্তত ছিলাম না, কিন্ত কে কার তোয়াক্কা করে? আমি অসুস্থ হয়ে গেছিলাম। তমাল এসব কথা শুনতে চায়নি। কিন্ত ইশরাত কেমন জানি স্বগোতক্তির মত বলে যেতে থাকেন। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুর, পার্কে বেশ দূরে দূরে শুধুমাত্র গাছের নিচে কয়েকটা জুটি ছাড়া অন্য মানুষের আনাগোনা নেই। আশেপাশে কেউ থাকলেও উনি বলা থামাতেন কি’না তমাল বুঝতে পারে না। উনার ভেতর থেকে একটা ফ্লো চলে এসেছে। তমালের মনে হয়, এই কথাগুলি বোধহয়, ভদ্রমহিলা আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে পারেন নাই, তাই উনাকে থামানোও ঠিক হবে না। তমাল শুনে যায়, কিন্তু তার মাথার মধ্যে অন্য কথা, অন্য ভাবনা, অন্য অনুভূতি সক্রিয় হয়ে উঠে। তমাল ওর স্কুলজীবনের বন্ধু যারা ইতোমধ্যে বিয়ে করে ফেলেছে, তাদের আলোচনায় শুনেছে, বাসর রাতেই বিড়াল মারতে হয়, নইলে নাকি চূড়ান্ত পর্বে যেতে অনেক বাহানা সহ্য করতে হয়। সেই বন্ধুদের আলোচনায় শুনেছে ওদের এক বড় ভাই নাকি বাসর রাতে বিড়াল মারতে পারে নাই বলে বউ তাকে এক সপ্তাহ শুধু বাচ্চা ছেলের মত শুধু বুকে টেনেছে, নিচে নামতে দেয়নি। এসব গল্পও তমাল শুনতে চায়নি, কিন্তু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যতবার ছুটিতে গ্রামে গিয়েছে, গ্রামের বন্ধুদের আলোচনায় ঘুরেফিরে এসব কথায় এসেছে। তমাল এই পর্ব এলে আড্ডা ছেড়ে উঠে যায়নি আবার অংশগ্রহণও করেনি কিন্তু শুনতে বাধ্য হয়েছে। তাই সে রিলেট করতে পারে, এই ভদ্রমহিলার লাইফপার্টনারও তো স্কুলের বারান্দাতে পা রাখেননি। বিয়ের আগে নিশ্চয় তার বন্ধুকুল এভাবেই তাকে গাইড করেছিলেন, উৎসাহিত করেছিলেন, বাসর রাতেই বিড়াল মারতে। নইলে লোকটার তো ফুলসজ্জ্বার রাতে অবাক হবার কথা, অবিশ্বাস হবার কথা তার কপালে এমন একজন বউ জুটেছে। কিন্ত লোকটা কি ভাল করে বউয়ের দিকে তাকিয়েছিলেন, একবারও কি ভাল করে চোখাচোখি হয়েছিল? মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে গেলে সেটা তো চোখে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। উনি নিজেও কি চেস্টা করেছিলেন লোকটার চোখে চোখ রেখে স্পষ্টভাবে না বলতে কিংবা সময় নিতে? অবশ্য ফূলসজ্জ্বার রাত কেমন হয়, আলো থাকে কি’না, কি কথা আসলেই হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে তমালের পরিস্কার কোনো ধারণাও নেই। এইসব ভাবনার পাশাপাশি তমালের একটা অন্যরকম অনুভুতিও কাজ করে, তার মনে হয় ভদ্রমহিলা এত কথা তাকে বলছেন, মানে তিনি ওকে বন্ধু ভাবতে শুরু করেছেন। তাদের সম্পর্কটা একটা অন্য মাত্রা পেয়েছে। তমাল অবশ্য মনে মনে এই সম্পর্ককে বন্ধুত্বের অধিক ভাবতে শুরু করেছেন বেশ আগেই। যদিও সেটা তার একতরফা ভাবনা ছিল এতদিন। কিন্তু আজ উনার মুখে কিছুটা করুণসুরে এসব কথা শুনতে, শুনতে তমালের খুব মন খারাপ হয়, , উনার জন্য মায়া হয়, একইসাথে একটা আনন্দের অনুভুতিও কাজ করে। দু’জন পাশাপাশি বসে, একজন কথক, জীবনের কথা বলে যাচ্ছেন, কিন্তু যিনি শুনছেন তিনি নীরব হলেও বক্তার চেয়ে বেশি সক্রিয়। তিনি শুনছেন, তার পূর্বের শোনা অভিজ্ঞতার সাথে রিলেট করছেন, আবার তার কাঙ্ক্ষিত নারীর এত কাছাকাছি বসে শেয়ারিং এর কথা ভেবে আপ্লূতও হচ্ছেন। এই শোনা, ভাবনা এবং অনুভূতির মাঝে একটা বাক্য তমালের কানে এসে বিঁধে, জান, লোকটাকে সেইরাতে আমার জানোয়ার মনে হয়েছিল। আমি বিছানা থেকে নেমে ঘরের কোণে সারারাত জড়সড় হয়ে বসেছিলাম, লোকটা না আবার আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সুর্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে, তমাল বলে আপনি না রোদ সহ্য করতে পারেন না। গায়ে রোদ লাগছে তো।
আমি তোমাকে বলেছিলাম নাকি আমার রোদ সহ্য হয় না।
আপনি বলেননি, উজমা বলেছে।
ও কে কি তুমি আমার সম্পর্কে তোমার ভাবনা শেয়ার করেছ?
পাগল?
নিশ্চয় আগ্রহ তো দেখিয়েছ, নইলে আমার রোদ সহ্য হয় না, একথা ও তোমাকে বলতে গেল কেন?
না, তা নয়; আসলে আন্টিই বলছিলেন, ও আমাদের খুব আদরের। আমরা সব সময় চেয়েছি ও ভাল থাকুক। তখন উজমা বলছিল, হ্যাঁ সেজন্যই তো যে মেয়েটা রোদে যেতে ভয় পেত, পায়ে হেঁটে স্কুল থেকে ফেরার পর যার মুখটা লাল হয়ে যেত, তাকে তোমরা তার সাথে আলোচনা ছাড়াই বিয়ে দিয়ে দিলে একটা কৃষি ফ্যামিলিতে।
জান তমাল, এইটা আমার আর একটা কষ্ট, আমার পরিবারের লোকজন প্রমাণ করতে চায় , তারা সব সময় আমার ভাল চেয়েছে। ওদের কাছে ভাল থাকার সংজ্ঞা হয়ত অন্যরকম। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ। কি নেই আমার সংসারে? কিন্তু সেই ধান গোলায় তোলার জন্য, গোয়াল পরিস্কার করার জন্য, নিত্যদিন তাজা মাছ কাটা এবং রান্নার জন্যই যে লোকটা আমাকে ঘরে তুলেছেন, অন্যভাবে বললে বলতে হয় আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে তার হাতে তুলে দিয়েছেন, সেইটা উনারা ভাবতে পারেন না। আমি তো চাইনি এই সুখ। হোক না কৃষি ফ্যামিলি, হোক না লোকটা নিরক্ষর তাতে আমার আপত্তি ছিল না। আমি চেয়েছি বিয়ের আগে একবার হলেও লোকটার সাথে কথা বলতে, সেইটা ওঁরা আমাকে এলাউ করে নাই। তাও আমি মেনে নিতাম। মেনে নিয়েছিও বটে কিন্তু মনে নিতে পারিনি। আমার নিজেকে শিকার মনে হয়, একটা লোক এতদিন অপেক্ষা করেছিল শুধু শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। এখন আমি দুই সন্তানের মা। না মেনে উপায় কি বল? তোমাকে এত কথা বললাম, তুমি যেভাবে ভাবছ, সেভাবে সম্ভব নয়। তারপরও বললাম, কারণ তুমি জান এসএসসি’র পর আমার আর কলেজের বারান্দায় হাঁটবার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু আমি আমার একটা পরিসর তৈরি করেছিলাম। আমি চাইলেই বিকল্প ভাবতে পারতাম। কিন্তু এতদিন যেহেতু ভাবিনি, তাই আর ভাবতেও চাই না। কেউ হাতছানি দেয় নাই, কিন্তু আগ্রহ ছিল একাধিক জনের। তুমি আমার ভাগ্নির বন্ধু। আমি জানি এইসব কথা তোমার মধ্যেই থাকবে। তমাল এতক্ষণের বক্তব্যের বিপরীতে কোনো কথা না বলে, বলেন আচ্ছা আমি কি আপনাকে তুমি বলতে পারি? যদিও এভাবে পারমিশন নিয়ে তুমি বলাটাকে কেমন কন্ট্র্যাকচুয়াল মনে হয়। কিন্তু আমার মনে হল, আপনি না করবেন না।
সেই সকাল থেকে এই প্রথম ভদ্রমহিলা হেঁসে ওঠেন…বলেন, আচ্ছা বোলো।
আরেকটা দাবী আছে, সেইটাও পেশ করতে চাই কিন্তু আজ নয়, আর সেইটা সেদিনই করব, যদি আপনি মানে তুমি কখনও জানতে চাও।
তাই?
হুম।
উজমার কাছে শুনেছি, তুমি নাকি স্কুল লাইফে ক্লাসে, ক্লাসের বাইরে প্রচুর কথা বলতে। তোমার কথা কি ফুরিয়ে গেছে?
না তো…আমি এখনও প্রচুর কথা বলি।
কিন্তু সেই সকাল থেকে তুমি কয়টা বাক্য বলেছ, সেইটা আমি হিসাব করে বলে দিতে পারি।
আসলে আপনার কাছে…না মানে তোমার কাছে এলে আমার মুখের ভাষা হারিয়ে যায়। তোমার পাশে বসে তোমার কথা শুনতে শুনতে তোমার সাথে, নিজের সাথে কত কথা বলেছি, সে তুমি বুঝতে পারবে না।
তাই নাকি?
তা কি কথা হল নিজের সাথে, আমার সাথে? ভাবনায় রাশ টানো মহাশয়, আমি তোমার সিনিয়র…সেইটা মনে রেখো। বুঝতে পেরেছ?
হা হা হা…
হাসছ যে…
না, একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু তুমি কি ভাববে?
বল, কিছু ভাববো না…
আমার না, ছোটবেলা থেকেই সিনিয়রদের পছন্দ, মানে সিনিয়রদের প্রতি আকর্সণ বোধ করি।
ও আমাকে তাহলে সেই ক্যাটাগরিতেই তোমার পছন্দ?
সেইটা একটা বটে, কিন্ত এ পর্যন্ত যাদের প্রতি আকর্সণ বোধ করেছি, তাদের কারো প্রতিই কিন্তু আগ্রহ দেখাইনি। কাজেই সিনিয়র ছাড়াও আরো একাধিক কারণ আছে।
কি সেগুলি?
সব কথা এখন বলা যাবে না।
কিন্ত মহাশয়, আপনার সাথে তো আমার এভাবে কথা বলার সময়ও খুব বেশি মিলবে না।
নিশ্চয় মিলবে…
তুমি নিশ্চিত করে বললেও আমার পক্ষে সম্ভব নয়; আমি একজনের ঘরণী। সংসারী নারীদের অনেক সীমাবদ্ধতা, সেগুলি তোমরা বুঝবে না।
তোমরা মানে?
তোমরা পুরুষেরা…
আপনার, মানে তোমার কি মনে হয় আমি তোমার দেখা পুরুষদের মত ব্যাটা মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছি?
হয়ে উঠা না উঠা তো তোমার উপর নির্ভর করে না…আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ছেলেদেরকে ব্যাটা মানুষ করে তোলে, কেউ ব্যাটাগিরি দেখায়, কেউ চেপে রাখতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠে না।
তুমি কিন্ত আমার একটা ক্লাস নিয়ে ফেল্লা।
তাই?
হুম…
ওই যে বলছিলাম না, তোমাকে পছন্দ করার, ভাল লাগার একাধিক কারণ আছে তার মধ্যে একটা হল তোমার ভাবনা, তোমার দৃষ্টিভঙ্গি…
আমার কিন্তু অন্য একটা কারণ মনে হয়, ঠিক একটা না…দুইটা।
আজকের গোটা একটা দিন দু’জন একসাথে পার করলেও এই শেষ বেলাতে এসে দু’জন খুব ইজিভাবে কথা বলতে পারছেন। তমাল খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, কি কি বলত?
হতে পারে আমি ভূল। বাট আমার মনে হয়, তুমি বয়সে ছোট হলেও তোমার দেখার ব্যাপ্তি আমার চেয়ে বেশি। বন্ধু, সহকর্মী ছাড়া অনেক মেয়ে এবং নারীকে তুমি দেখেছ। তোমার কাছে মনে হয়েছে, একজন গ্রামীণ নারী হয়েও ভাবনায় আমি একটু এগিয়ে…
ভাবনায় আমি একটু এগিয়ে কথাটা খুব সহজভাবে ভদ্রমহিলা বলতে পারেন নি এবং বলার পর উনার মধ্যে কেমন একটু অস্বস্তি কাজ করে।
তমাল বিষয়টাকে ইজি করার জন্য বলেন, এ…নিজের সার্টিফিকেইট নিজে দিলে হবে?
হা হা হা…তাহলে দ্বিতীয়টা না বলি…
না না…প্লিজ! তমাল মুখে যাই বলুক না কেন, উনি যেটা বলেছেন, সেইটা তো একটা কারণ বটেই, এবং মুখ্য কারণই বলতে হবে। সেজন্য দ্বিতীয়টা শুনতে সে দারুণ উদগ্রীব।
প্রথমটা ঠিক কি’না, সেইটা জানতে পারলে দ্বিতীয়টা বলব কি’না ভেবে দেখতাম।
তাই? আচ্ছা ঠিক-বেঠিকের প্রশ্ন পরে, আপাতত শ্রোতার প্রবল আগ্রহের প্রতি রেসপেক্ট দেখিয়েই নাহয় বল…প্লিজ!
আচ্ছা, কি এমন আছে আমার মধ্যে যে তুমি আমাকে রীতিমত আবিস্কারের নেশায় মেতেছ? আমার মুখের কথা তোমার কাছে অমিয় বাণী মনে হয়?
এ…আবার নিজের প্রশংসা? খুব না…আমি অত সহজে কারো প্রতি মুগ্ধ হই না…
তাই? তাহলে আমার জন্য এত সময় কেন ব্যয় করছ?
কথা ঘুরিও না, দ্বিতীয়টা বল।
বলব না…
প্লিজ! প্লিজ!! প্লিজ!!!
অন্যদিন…
না…আজই!
আমার মনে হয়েছে, তুমি ভাবছ আমি ঠিক যোগ্য জায়গায় নেই। আমাকে উদ্ধার করার ক্ষমতাও তোমার নেই। কিন্তু তুমি আমার বন্ধু হয়ে, বন্ধুর চেয়ে বেশি হয়ে জীবনে ক্ষণিকের জন্য হলেও আনন্দ দিতে চাও।
তমাল খুব অবাক হয়! এরপর কি বলবে ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারে না। এবার তমালকেই ইজি করার জন্য উনি বলেন, এত অল্পতেই অবাক হলে হবে? খেই হারিয়ে ফেললে হবে? সিনিয়রদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে একটু ম্যাচিউরিটিও লাগে…বুঝেছ খোকা?
এই আমাকে খোকা বলবে না।
তাহলে কি বুড়া বলব?
না…
তাহলে?
আমার একটা নাম আছে…
ওকে…চল, আজ ফেরা যাক। বাড়িতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
শোন না…
কি? একটা কথা বলি…
বল…
না…আজ বরং থাক!
চল…দাঁড়িয়ে আছ যে!
আরো কিছুক্ষণ তোমার পাশে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু সেটা তো আজ আর সম্ভব নয়।
আবার কবে দেখা হবে?
তুমি নাটোর এলেই হবে।
কিন্তু কথা তো হবেই।
তা হবে, তবে শর্ত কিন্তু আগেরটাই বহাল থাকবে।
মানে কি? আমি এখনও তোমাকে ফোন করতে পারব না?
না…আমি তো তোমাকে ফোন করিই।
কিন্তু আমার যখন ইচ্ছে করবে, তখন আমি কথা বলতে পারব না? এইটা কোনো কথা এই জামানায় এসেও?
আমি তো তোমাদের জামানার মানুষ না…তাছাড়া আমি গাঁয়ের বঁধু। নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছেরই গুরুত্ব দিতে ভূলে গেছি…
প্লিজ, এভাবে বোলো না।
আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় থাকব।
তমালের সাথে ভদ্রমহিলার আলাপ করোনার আগে। আলাপ না বলে, দেখা বলাই ভাল। কারণ, ভদ্রমহিলা তমালের বন্ধু উজমার খালা। একজন গ্রামীণ ইয়াং নারী। বেশভূষায় বাংগালিয়ানার ছাপ কিন্তু কথাবার্তায় দারুণ চটপটে। প্রথম পরিচয় এবং ঘন্টা দুয়েক উজমাদের বাসাতে উনার সাথে কথায় তমালের সাথে বেশ স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। গোল বাঁধে উনি বিদায় নেবার পর, উজমা এবং ওর মায়ের উনাকে নিয়ে আলাপের পর। উজমার মা তার বোন সম্পর্কে বলতে গিয়ে জামাইটা উপযুক্ত না হলেও তিনি যে ভাল আছেন, সেইটা বলার প্রেক্ষিতে উজমার প্রতিক্রিয়া এবং তার বিপরীতে ওর মায়ের যুক্তি তমালের সামনেই বাদানুবাদে গড়ায়। তমাল বুঝতে পারে একটু আগের আলাপ হওয়া ভদ্রমহিলা যিনি ক্ষণিকের আলাপে তমালকে মুগ্ধ করেছেন, তিনি যার সাথে জীবন পার করছেন তাদের পরস্পরের মধ্যে কোনো মুগ্ধতা নাই, ভালবাসা নাই…তিনি একটা জীবন শুধু টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। এত অল্প সময়ের পরিচয়ে একজন নারীর জীবন নিয়ে এত গভীরভাবে ভাবনা তমালের জীবনে বোধহয় এই প্রথম। তমাল কেমন যেন বিমর্সভাবে সেদিন উজমাদের বাসা থেকে বিদায় নেন। কাজের মাঝে, একান্ত নিজস্ব সময়ে ভদ্রমহিলার মুখ তমালের মনে উঁকি দেয়।
করোনার প্রাদূর্ভাব শেষে তমাল একটা সরকারি প্রকল্পে যোগদান করেন। কাজের ধরণ কিছুটা কর্পোরেট এবং কিছুটা এনজিও ধাঁচের। কাজের প্রয়োজনে মাসে কমপক্ষে এক দুইবার ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলাতে যেতে হয়, নিজের জেলাতেও যেতে হয়। নিজের জেলায়, পার্শ্ববর্তী জেলাতে গেলেও তমাল ভদ্রমহিলার সাথে দেখা করেন। ফোনেও কথা হয়। দু’জনের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তমাল টেলিভিশন প্রায় দেখেনই না, তার ফোনাসক্তিও তুলনামূলক কম। তাই ঢাকার বাইরে গেলে ব্যাগে দু-একটা বই, পত্রিকা নিতে ভোলেন না। তমাল কাজে যোগদান করার পর তৃতীয়বারের মত নাটোর যাচ্ছেন। ট্রেনে চেপেই তমাল ব্যাগ থেকে সদ্য কেনা দেশ পত্রিকাটা বের করে সূচিপত্রটা দেখে একটা গল্প পড়তে শুরু করেন, সেখানে একজন যুবকের তার থেকে সিনিয়র একজন নারীর প্রতি তার আকর্সণকে কেন্দ্র করে গল্পটা আগায়। লেখক নর-নারীর পরস্পরের আকর্সণকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন, শারীরীক আকর্সণ, রূপের প্রতি আকর্সণ, যোগ্যতার প্রতি আকর্সণ এবং মানসিক আকর্সণ। কিন্তু যুবকের মনোলোক বিশ্লেসণ করে গল্পে লেখক পাঠককে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেন না, এই যুবকের ওই নারীর প্রতি আকর্সণটা টা ঠিক কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে। গল্পের সেই যুবকের নাম তন্ময় যিনি এতটাই তার পছন্দের নারীর প্রেমে মগ্ন হয়ে থাকেন যে ই উচ্চারণ করলেই বুকের মধ্যেই উথাল-পাথাল শুরু হয়ে হয়ে যায় কারণ তন্ময়ের সেই পছন্দের নারীর নাম ইরা। তমালের অভ্যাস একটু পড়া একটু বাইরে তাকানো কিন্ত আজ তিনি একবারেই গল্পটা পড়ে ফেলেন, গল্পের সাথে গল্পের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্রে তন্ময়ের সাথে নিজেকে এক করে ফেলেন, আর তার ইরা হল ইশরাত। এতক্ষণ ভদ্রমহিলা, উনি , উজমার খালা সম্বোধনে যে চরিত্রের সাথে আপনারা সামনে এগোচ্ছেন, তার নাম ইশরাত। সেদিন নাটোরে পৌঁছে প্রোজেক্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে হাই-হ্যালো করা ছাড়া তমালের কোনো কাজ ছিল না, তাই বিকালে ইশরাতের বাসায় যাবার কথা ছিল। ইশরাতের জামাই এতদিনে এটুকু বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, তার বউ একটু বহির্মুখী বটে কিন্ত স্বামী হিসেবে তার প্রতি, তার সন্তানদের প্রতি কোনো কর্তব্য পালনে অবহেলা করেন না। এমনকি তার আত্মীয় স্বজনের প্রতিও দারুণভাবে দায়ত্বশীল। তাই বাসাতে কেউ এলেও তিনি মাথা ঘামান না। ইশরাতের চরিত্র সম্পর্কেও একটা আস্থার জায়গা উনার মনে তৈরি হয়েছে। তাছাড়া যে দু-একবার তমাল ইশরাতের বাসাতে গিয়েছে সেটা তো উজমার বন্ধু হিসাবে। কাজেই তমালকে নিয়ে ইশরাতের জামাইয়ের তেমন মাথাব্যথা থাকবারও কথা না। শুধু প্রথমবার তমাল নাম বলার পর লোকটা জানতে চেয়েছিলেন, পুরো নাম কি? তমাল তাৎক্ষনিকই এই প্রশ্নের কারণ বুঝতে পেরেছিলেন, তাই পদবী না বলে ওর ফেসবুকের নামটাই বলেন তমাল শুভ্র। তমাল আজ ইশরাতের বাসাতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইশরাতের জামাই বাজারে বেরিয়ে যান। মেয়ে পাশের বাড়িতে চাচাত বোনের কাছে পড়তে গেছে। ছেলে সারাদিন ছূটোছুটি করে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। বাসায় আছেন শুধু সকাল-সন্ধ্যা বাড়ির কাজের সহযোগি মঞ্জি। ইশরাতের সাথে মঞ্জি’র দারুণ ভাব। ইশরাত আদর করে মঞ্জিকে ডাকেন মনো জি। তমাল এই মহিলাকে শুরুর দিন থেকেই পছন্দ করেন না। কেন সেটা অবশ্য তমাল নিজেও বুঝতে পারেন না। তবে তমাল এই বাড়িতে দু-একবার আসার পর, একদিন নাটোরের একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে মঞ্জি’র একটা মাইনর অপারেশন হয়, সেখানে ইশরাতের সাথে তমাল দেখা করতে যান মঞ্জিকে দেখার অছিলায়। মঞ্জির জন্য ফল এবং ইশরাতের জন্য রজনীগন্ধা নিয়ে যান। যদিও তমাল বলেন, মঞ্জি আপনার জন্য ফুল নিয়ে এলাম। দূর থেকে ঘ্রাণ নিবেন। বলে ফুলিগুলি তমাল ইশরাতের হাতেই দেন। এরপর থেকে মেয়েটার ভাবে ভঙ্গিতে বোঝা যায়, ইশরাতের প্রতি যে তমাল দূর্বল সেইটা এই মহিলা জানেন, তাতেও দোষের কিছু নেই। ইশরাত সারাদিন একা থাকেন, কোনো এক একান্ত আলোচনায় হয়ত ইশরাতই মঞ্জিকে বলেছেন। না বললেও পারতেন। আসলে তমালের মনে হয়, এই মহিলা তমালকে জানান দিতে চায় যে তিনি সব জানেন। অপছন্দ করার এইটা একটা কারণ। ইশরাতের জামাই বিদায় নেবার পরই মঞ্জি ইশরাতকে বলেন, তোমরা এখন চা খাবে? ইশরাত তমালের দিকে তাকান। তমাল মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দেন।
তাহলে তোমরা পাশের রুমে কথা বল। আমি বাবু’র পাশে একটু শুইলাম। চা খেতে চাইলে আমাকে বললেই হবে। তমাল মনে মনে ভাবেন মঞ্জি ওদেরকে আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছে। কিন্তু ইশরাতকে একটু ভাবলেশহীন মনে হয়। তিনি তমালকে কিছু না বলেই অন্য রুমে চলে যান। তমাল একটু দ্বিধায় পড়েন। তার মনে হয়, একটু পরে মঞ্জিই হয়ত তাকে তাগিদ দিবে পাশের রুমে যাবার জন্য, তার চেয়ে বরং নিজেই চলে যাওয়া বেটার। পাশের রুমে দরজায় গিয়ে তমাল দেখেন, ইশরাত বিনা কারণে আলনাতে থাকা কাপড়গুলি আবারো গুছিয়ে রাখছেন। তমাল বুঝতে পারে নিজের বাড়িতে এভাবে আলাদা রুমে তমালের সাথে কথা বলার জন্য ইশরাত ঠিক প্রস্তত নন। তমাল কি বলবে ঠিক বুঝতে পারেন না। কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ পায়ে খাটের উপর বসে ওয়ালে হেলান দিয়ে ইশরাতকে বলেন, শুধু আমাকেই ইম্যাচিউরড বল না?
এতক্ষণে ইশরাত কথা খুঁজে পান। বলেন, ইম্যাচিউরডই তো…
আর তুমি? নিজের হাতে গোছানো কাপড় আবার গোছাচ্ছ। চেয়ারটা ঘুরিয়ে কাছে এসে বস।
বাহ…খুব মুরুব্বিয়ানা দেখানো হচ্ছে, না?
যেটা বলছি, সেইটা কর।
ইশরাত কথা না বাড়িয়ে চেয়ারটা ঘুরিয়ে তমালের মুখোমুখি বসেন।
কাছাকাছি এসে বসো। ইশরাত কিছুটা অপ্রস্তত কিন্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে খাটের কাছাকাছি এসে বসেন।
তমাল গলায় কিছুটা দ্বিধার সুর নিয়ে বলেন, আমি বোধহয় আজ তোমাকে খুব অপ্রস্তত অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছি।
না তো…
তাহলে?
কি তাহলে?
তোমার মনো জি এই রুমে আসতে বলার পর থেকেই না তুমি কেমন…
না না…ও এমন কিছু না…
তাহলে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছ না কেন? কখন তোমার জামাই চলে আসে সেই ভয়ে?
আজ এখানকার হাঁটবার। ও রাত দশটার আগে ফিরবে না…
তাহলে? পাশের রুমে মঞ্জি আছে বলে?
না…আড়িপাতার অভ্যাস ওর নেই। আর ওকে নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই।
তাহলে?
আসলে একটা কথা তোমাকে বলতে চাই, কিন্তু বলতে অনেক দ্বিধা কাজ করছে। মনে হচ্ছে অনেক বছর পরে এসে হার মানলাম।
কি হয়েছে বলত?
তুমি খুশি হবে জানি। আমিও যে অখুশি তা নই…কিন্তু
কিন্তু কি?
আমি না নিজের উপর নিজের দখল হারিয়েছি।
কিভাবে?
তুমি বুঝতে পারছ না?
না তো…
এজন্যই তো তোমাকে ইম্যাচিউরড বলি। খোকাবাবু বলি…
প্লিজ বল না কি হয়েছে?
আমি এখন তোমার দখলে…তমাল খাট থেকে নেমে সোজা দরজার কাছে চলে যায় সন্তর্পণে দরজা বন্ধ করার জন্য। আমি তোমার দখলে কথাটা শোনার পরই তমাল এতটাই আপ্লূত হন যে ইশরাতকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে, উষ্ণতা দিয়ে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এইটা ইশরাতের বাড়ি, কেউ যদি হঠাত এসে পড়ে। কিন্তু দরজার ছিটকিনি তোলার আগেই পেছন থেকে ইশরাত তমালের কাঁধে হাত রেখে ইশারায় না করে বাইরে বেরিয়ে যান। তমাল তখন দারুণভাবে উত্তেজিত। মিনিট খানেকের মধ্যে হাতে গ্লাসভর্তি ঠান্ডা জল নিয়ে ইশঅরাত ফিরে আসেন।
জল খাও।
আমি ঠান্ডা জল খাই না।
থাকুক এখানে নরমাল হলে খেয়ো। বলে ইশরাত আবার আগের মত আলনাতে গিয়ে কাপড় গোছাতে শুরু করেন।
তমাল এবার কাছে গিয়ে হাত থেকে কাপড়গুলি নিয়ে আলনার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে ইশরাতকে কাছে টেনে নেন। ইশরাতের কাঁধের উপর নাক রেখে জোরে শ্বাস নেন। ইশরাত বাধা দেন দেন না, কিন্তু পিছু সরতে থাকেন। তমালের বাহুবন্ধনে থাকা অবস্থায়ই পেছাতে পেছাতে ওয়ালে হেলান চোখ বুজে মুখ উপরে তোলেন।
তমাল ইশরাতের কাধ থেকে মুখ তুলে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে যাবে, আই এম সো হ্যাপী, সো এক্সাইটেড…কিন্তু ইশরাত ওর মুখটা ধরে নিজের মুখোমুখি করে নিজের ঠোঁটের উপর আঙ্গুল চেপে ইশারা করেন, কোনো কথা নয়।
তমাল বুঝতে পারেন, ইশরাত বোধহয় আরো বেশি কিছু চাইছে। কানের কাছ থেকে মুখটা ইশরাতের ঠোঁটের কাছে এনে কেন জানি তমাল কিস করতে পারেন না। বুঝে উঠতে পারেন না, করা ঠিক হবে কি হবে না। হাজার হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন যুবক। তার মনে হতে থাকে, প্রচণ্ড ভাল লাগার অনুভূতিতে, খুশিতে, পুলকিত মনে একজন একজন নারীকে জড়িয়ে ধরা আর তাকে চুম্বন করার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তাছাড়া, বন্ধুত্বের সীমানা অতিক্রম করলেও উনি তমালের সিনিয়র। একটা ব্যারিয়ার থাকা দরকার কিংবা উনি কিভাবে নিবেন। তাই তমাল ভাবেন কপাল হল সেইফ জোন। তিনি ইশরাতের কপালে কিস করেন। ইশরাতকে ভালভাবে দেখেন। ইশরাত তখনও ওয়ালে হেলান দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। আর কি করা উচিত তমাল বুঝে উঠতে পারেন না। কিন্ত ইশরাতকে ছেড়ে দিতেও ইচ্ছে করছে না, তমালের মনে হচ্ছে অনন্তকাল তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকি। তাই তমাল আরো দৃঢ়ভাবে ইশরাতকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে নাক ঘষতে থাকেন। তমালের মনে হয়, এই যে তমাল তাকে জড়িয়ে ধরে আছেন, তাকে ছুঁয়ে আছেন সেটাই ইশরাত এনজয় করছেন, হটাত এর চেয়ে বেশি কিছু হলে ইশরাত নিতে পারবেন না। কারণ তার মধ্যে তো একটা ট্রমা আছেই। ওঁর মনে হতে পারে সব পুরুষেরাই একই রকম। ঠিক এরকম সময় এত সব ভাবনা মাথার মধ্যে ভিড় করছে। তমাল নিজেও অবাক হন এবং মনে মনে হেসে ফেলেন। আসলে এর চেয়ে বেশি কিছু ইশরাতের কো-অপারেশন, হেল্প ছাড়া সম্ভবও নয়। কারণ এসব ব্যাপারে সে নিতান্তই আনাড়ি। তাছাড়া তমাল কি এর চেয়ে বেশি কিছু চায়। এরকম আবেগীয় মুহুর্তে মাথার মধ্যে এত চিন্তার ভিড় জমলে উষ্ণতায় বোধহয় একটু ভাটা পড়ে। তমালের বাহুবন্ধন কিছুটা শিথিল হয়, ইশরাতের কাঁধের উপর তার নাকের চাপও বোধহয় কিছুটা হালকা হয়ে আসে। কিন্তু সেটা ইশরাত কিভাবে বুঝতে পারেন? তিনি তমালকে খুব নিচু গলায় জিজ্ঞেস করেন, শুধু দখল বুঝে নিতে চাইলে হবে? সাথে থাকতে শিখতে হবে তো…তুমি তো আমার সাথে নাই। তমাল আবারো বিস্মিত হন। ইশরাতকে তার বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে দিয়ে তার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করেন, তুমি আসলে কে বল তো?
আমি ভূত?
আমি সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করছি!
আমিও তো সিরিয়াসলিই উত্তর দিলাম। যে ইশরাতের সাথে তোমার পরিচয়, সেইটা আসলে ইশরাতের প্রেতাত্মা। আমার আত্মার মৃত্যু হয়ে গেছে যেদিন আমার বিয়ে হয়েছে, আর আমার কবর রচিত হয়েছে, তোমরা যাকে কাব্য করে ফুলসজ্জ্বার রাত বল সেই রাতেই। আমরা মেয়েরা, প্রতিদনই মরি, কে আমাদের আত্মাকে তিলে তিলে মারে না বল তো? পরিবার, সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র…সবাই, সবাই। কিন্তু আজ আমি ক্ষণিকের জন্য হলেও আমার আত্মাকে ফিরে পেয়েছি, আত্মসম্মান ফিরে পেয়েছি। তুমি আমার ভাবনাকে সম্মান জানিয়েছ, আমার শরীরকে সম্মান দেখিয়েছ। এইটাকে বলে মোমেন্টাম। আমি এই মুহুর্তটাকে মনে করে বেঁচে থাকতে চাই।
তমাল মোহাবিষ্টের মত ইশরাতের কথা শুনে যান। কি বলবেন, ভেবে পান না। ইশরাত কথা শেষ করার মিনিট দুয়েক পরে দ্বিধাজড়িত কণ্ঠে শুধু জানতে চান, আমাদের কি তাহলে আ দেখা হবে না?
কেন হবে না? নিশ্চয় হবে
এই যে তুমি বললা, আজকের মুহুর্তটাকে মনে করে বেঁচে থাকতে চাও।
হ্যাঁ, এর সাথে দেখা না হবার কোনো কারণ নেই। তবে আমরা আর এভাবে এত কাছাকাছি আসতে চাই না। আমাদের সম্পর্কটা হবে মানসিক। তমাল এতটাই বিস্মিত হন, ট্রেনে আসবার সময় পড়া গল্পের তন্ময়-ইরার কথা মনে পড়ে। তমালের মনে হয়, গল্প, উপন্যাসের চরিত্ররা এই সমাজেই থাকেন, আমাদের খুব কাছাকাছিই থাকেন, কিন্তু তাই বলে সেই চরিত্রের সাথে আমার কথা হচ্ছে আমিও যে সত্যিই কোনো গল্পের এরকম জীবন্ত চরিত্র হয়ে উঠব, সেটা কি কোনোদিন ভেবেছি?

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!