নিজের চেম্বারে বসে স্বরূপনগর থানার ওসি একটা জরুরি বিষয় নিয়ে টেলিফোনে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত। ঘরের বাইরে দরজার সামনে কে একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে কিন্তু আকাশ নিজের গুরুত্বপূর্ণ কথা থামিয়ে তাঁকে ভিতরে আসতে বলতে পারছে না। প্রায় মিনিট পনেরো এভাবেই চলল। শেষের বাক্যটা একরম, তাহলে স্যার যে কোনো মূল্যে কাজটা আপনাকেই সারতে হবে।
আকাশের দাম্ভিক উত্তর, এ নিয়ে একদম ভাববেন না। একবার হ্যাঁ বলেছি যখন, শেষ না করে ছাড়ব না। তখনও বারান্দায় দাঁড়িয়ে লোকটা পায়চারি করছে। দারোগাবাবু রিসিভার নামিয়ে বাঘের মতো দুচোখ নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল, ভিতরে এস।
মতি কঠিন মুখে উষ্কখুস্ক চুলে ভিতরে ঢুকল। ওসির তাৎক্ষণিক প্রশ্ন, কী জন্যে এসেছ বলো?
স্যার, আমি হেমনগর থেকে আসছি। বেশ অসুবিধায় পড়ে আপনার কাছে আসতে হয়েছে যদি কথাগুলো মন দিয়ে শোনেন তো একটা সমাধান হয়ে যেতে পারে। আমার মনে হয়েছে, আপনি উদ্যোগ নিলে এমনিতেই একটা পথ বের হয়ে আসতে পারে।
বলো, কী করতে হবে আমাকে?
স্যার, ওম ঝুনঝুনওয়ালা রায়চক চর থেকে রাতের অন্ধকারে লরিতে বালি তুলে নিয়ে যাছে। এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষে কোনো হেলদোল নেই।
এতে তোমার কী অসুবিধা হচ্ছে বলো?
ব্যক্তিগত কোনো অসুবিধা নেই স্যার। নেতাজী সংঘের পক্ষ থেকে এ নিয়ে হাইকোর্টে আমরা একটা কেস মুভ করেছিলাম। তার রায় আমাদের পক্ষে গেছে। আপনাকেও তার কপি রেজিষ্ট্রি করে পাঠিয়েছি কিন্তু বাস্তবে দেখছি, ওম ঝুনঝুনওয়ালার অন্যায় কাজে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তাই আপনার কাছে এসেছি। আপনি যে থানাতে আছেন, সেখানে এত বড়ো প্রহসন ধরা পড়লে থানা সম্পর্কে আম-মানুষের ধারণা পাল্টে যাবে স্যার। আপনি কী ভাবছেন জানি না।
ওসি ভিতরে ভিতরে রাগে গর গর করছেন। নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না। —তোমাকে মনে করিয়ে দিই মতি, ক্লাব আর পুলিশ প্রশাসন এক জিনিস নয়। ক্লাবে বসে যা ভাবতে পারো, থানার চেয়ারে বসে তা ভাবা যায় না। তোমার ভাবনা কেবলমাত্র নীতিকে স্পর্শ করে ব্যক্তিগত স্তরে সীমাবদ্ধ, থানার কাছে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকে না। রূপায়ণ করে প্রমাণ করতে হয়। তাতেই সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ে। তাই হাইকোর্টের অর্ডার থাকলেও এ নিয়ে তুমি আমাকে একটা কথা বলতে পারো না।
এভাবে চলতে থাকলে এতগুলো লোকের বাসস্থান-সমস্যা যেভাবে পাকিয়ে উঠছে, তা নিয়ে ভাববেন না স্যার? দুটো ফ্যাক্টর আমরা খুব স্পষ্টভাবে মনে করতে পারি না কী? ওম ঝুনঝুনওয়ালা যেভাবে মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তা যে সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধ হাইকোর্টের রায়ে খুব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রায়চক চরে বসবাসকারীরা যাতে নিরাপদে বসবাস করতে পারে, তার সব ব্যবস্থা স্থানীয় প্রশাসনকে করতে হবে। এভাবে মাটি তুলে নিয়ে গেলে সেই নিরাপত্তা থাকছে কী স্যার? সেজন্যে আপনার কাছে এসেছি। কেবল আপনিই পারেন একটা কড়া ব্যবস্থা নিতে যাতে কোর্টের রায় বলবত হতে পারে।
মতি, তুমি কী এখন ক্লাব ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করতে শুরু করলে, আজ প্রথম সেই ঢঙে তোমাকে কথা বলতে দেখছি। এভাবে অকারণে সর্বহারাদের নেতা হতে যেও না। কখনো বলি নি, কোর্টের অর্ডার মানব না কিংবা ওম ঝুনঝুনওয়ালা মাটি তুলে নিয়ে গিয়ে অন্যায় করছে না বা আমার প্রশাসন ঝুনঝুনওয়ালার পক্ষে কাজ করছে। কিন্তু ঘটনাস্রোত এমন স্তরে চলে গেছে যে এ নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে বেশি কথা বলতে পারি না।
তাহলে কী বলতে পারি, আপনিও আমার মতো অসহায় মানুষগুলোর কথা ভেবে মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছেন, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে কিছুই করতে পারছেন না। কেবল সেই কারণে আমিও ছুটে এসেছি স্যার।
ওসি আকাশ আর নিজেকে নিজের স্তরে ধরে রাখতে পারল না। গলার স্বর নামাতে বাধ্য হল। এক পলক মতির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, আমাকে একটা খবর জানাতে পারবে মতি?
বলুন স্যার।
সেদিন বাজারে যে বুড়ো লোকটার জন্যে তোমার সঙ্গে মাথা গরম করে ফেলেছিলুম, সেই লোকটার সন্ধান জানতে চাচ্ছি।
খুব মনে আছে স্যার, আপনি আমাকে চড় মেরেছিলেন। তাতেও একটুকু রেগে যাই নি। ক্লাব করতে করতে এ সব ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠতে পেরেছি। তখনিই জেনে ফেলেছিলাম, লোকটা আসলে চোর নয়। আজ বুঝতে পারছি, আপনিও আমার মতো অনুতপ্ত হতে পেরেছেন লোকটির জন্যে। এটাও কম পাওনা নয় স্যার।
ওরা এখন কোথায় আছে বলতে পারবে মতি?
সেদিন যদি সকলের সামনে এভাবে অপমান না করতেন, তাহলে অন্তত মানবিক অনুকম্পা নিয়ে ওদের কথা জেনে রাখার চেষ্টা করতুম কিন্তু তা তো করেন নি। বরং উল্টে আমাকে অপদস্ত করে নিজের ক্ষমতা জাহির করেছিলেন।
এভাবে ভাবছ কেন মতি? আমি শুধু বলছি, যদি জানা থাকে, আমাকে জানাতে পারো। একটা কথা তোমাকে মানতেই হবে, মেয়েটার সাথে রয়েছে একজন বুড়ো মানুষ। দেখে মনে হয়েছে, সংসার বিরাগী হয়ে পথে নেমেছে। ওদের উপর অন্য কোনো অঘটন ঘটে গেলে তা আমাকে ভীষণ বিপদে ফেলে দিতে পারে।
খুক খুক শব্দে হেলে উঠল মতি।
এভাবে হাসলে যে?
স্যার, আইনের প্রয়োগ নিয়ে আপনার মনোভাবে না হেসে পারছি নে। হাইকোর্টের রায় আছে জেনেও রায়চক চরের বালি তুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আপনার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই অথচ একজন বুড়ো লোকের নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে যেভাবে কম্পিত হচ্ছেন….। একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করব স্যার?
কেন করবে না, তুমি তো আমার পক্ষেই বলছ। বুড়ো লোকটার জন্যে তোমার যে দরদ রয়েছে, তার জন্যেই অনেক প্রশ্ন করতে পারো তুমি। বলো, কী বলতে চাচ্ছ?
আপনি ওদের খোঁজ করছেন কেন?
কী বলতে চাচ্ছ তুমি? আকাশের কণ্ঠস্বর আকাশমুখি হয়ে উঠল। —ভুলে যেও না, তুমি একটা ক্লাবের সম্পাদক আর আমি স্বরূপনগর থানার ওসি।
এই পার্থক্যটুকু আছে বলেই তো স্যার রায়চক সমস্যা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।
কেবল ওই বুড়ো লোকটা সম্পর্কে কিছু জানা থাকলে তা জানানোর কথা বলছি।
স্যার, আপনি সব জেনেশুনেও রায়চক সম্পর্কে না জানার ভান করে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন। আমিও তো সেই পথে বুড়ো লোকটার খবর নেই বলে এড়িয়ে যেতে পারি।
কী বলতে চাচ্ছ তুমি? আকাশ আরও মেজাজ চড়িয়ে দিল।
প্লিজ স্যার, এভাবে হুমকি দেবেন না।
জেনে রাখো, এই মুহূর্তে আমি তোমাকে এ্যারেস্ট করতে পারি।
তা অবশ্যই পারেন স্যার। এও জানি, আপনি ওম ঝুনঝুনওয়ালাকে এ্যারেস্ট করতে পারবেন না। কেন পারবেন না, তাও জানি। অথচ কী প্রহসন দেখুন, আমাকে বিনা কারণে এ্যারেস্ট করার হুমকি দিতে আপনার বিবেকে বাধছে না। সব ওসির মধ্যে যে মিথ্যা দাম্ভিকতা লুকিয়ে থাকে, তা থেকে আপনি বের হয়ে আসতে পারেন নি স্যার।
মনে হচ্ছে, জেনেও সব কিছু চেপে যাওয়ার তালে রয়েছ। এতে তোমার কী গোপন স্বার্থ লুকিয়ে আছে, তা জানতে পারি কী? এখনও তুমি আমাকে ঠিক চিনতে পারো নি মতি। আসামি পিটিয়ে কথা বের করার ক্ষেত্রে সারা বাংলায় আমিই সেরা ওসি। একই ট্রিটমেন্ট তোমার উপরেও প্রয়োগ করতে পারি।
মতিও ছাড়ার পাত্র নয়। সঙ্গে যথেষ্ট লোকবল রয়েছে। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, জানা থাকলেও বলব না, কী করতে পারেন করুন।
আকাশ সপাটে চড় বসিয়ে দিল মতির গালে। এতক্ষণের বাকবিতন্ডা শারীরিক নির্যাতনের স্তরে নেমে এল। মতি একটু চুপ করে থেকে থেমে থেমে বলল, স্যার, বিভাস সামন্তের সাথে আপনার কোনো পার্থক্য নেই। দুজনেই স্বৈরাচারী, সুবিধাবাদী। বিভাসবাবু আজও হন্যে হয়ে খুঁজছেন মেয়েটাকে কাছে পাবার জন্যে, আপনিও সেই চেষ্টা করে চলেছেন। গত পরশু আমাকে ডেকে বিভাসবাবু যেভাবে খোঁজখবর নিয়েছেন, তাতেও খুব ভয় পেয়েছি স্যার। সেখানেও একই কথা বলেছি। তবে বিভাসবাবু শুধু রেগে গেছেন, আর আপনি সপাটে চড় মারতে পারলেন।
আকাশ মনে মনে স্তম্ভিত। রোষের শূন্যতা থেকে ধীরে ধীরে মাটিতে নামতে বাধ্য হল। অস্ফুটে বলল, তাহলে বিভাসবাবু এ পথে নেমেছেন? দেখছি, এখনিই সামাল দেওয়া প্রয়োজন। মনে মনে খুব বিড়ম্ভিত হতে থাকল মতির কথায়। কী বলে ছেলেটাকে সান্ত্বনা দেবে, ভেবে পেল না। চেয়ারে বসে কিছু সময় গুম হয়ে থাকল। বিভাস সামন্তের উগ্র ছবিটা চোখের তারায় ভাসছে। গলার স্বর তলানিতে নামিয়ে মতিকে বলল, তুমি যা বললে, তা কী সত্যি?
মিথ্যে বলার অভ্যেস আমার নেই স্যার। ক্লাব করতে গিয়ে এ পথে নামতে ভুলে গিয়েছি। এখন থানায় এসে ভাবছি, একটু আধটু এ অভ্যেস থাকলে ভালো হত। অন্তত এমন জটিল মুহূর্তে মিথ্যে বলার কিছুটা দাম পেলেও পেতে পারতাম। মনে রাখবেন, বিভাস সামন্তের দুচোখ কোনো মেয়ের উপরে একবার পড়লে, তা থেকে পালিয়ে বাঁচা অসম্ভব। আমি শুধু মিথ্যে চেষ্টা করে চলেছি। অনেক ওসিকে গাঁটিতে গুঁজে রেখে সামন্তবাবু বহুবার মেয়েকাণ্ডে সফল হয়েছেন। কেবল এজন্যেই বিভাসবাবুর একটা নিজস্ব চেম্বার রয়েছে। শুধু ভাবছি, যেদিন মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিভাসবাবু ভোগ করবেন, সেদিন হয়তো আপনাকেই তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতে হবে। হয়তো বিভাসবাবুর পরে আপনাকে এঁটো প্রসাদ খেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এখন স্যার সন্তুষ্ট হয়ে আমার বিপরীত গালে আরেকটা চড় মারতে পারেন। বাড়িতে ফিরতে পারি দুগালের সমান গুরুত্ব নিয়ে। প্রশাসন যে কীভাবে রাজনীতির যাঁতাকলে আটকে থাকতে পারে, তা আপনাকে দেখে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি স্যার।
আকাশ দ্রুত জটিল ভাবনায় নিজেকে হারিয়ে ফেলল। যে মতিকে একটু আগে চড় মারতে তার মনে কোনো দ্বিধা জাগে নি, সেই ছেলেটাই হেনাকে বাঁচাতে চাচ্ছে? চরম অসম্ভবের মধ্যে একটা ক্ষুদ্র বাস্তবতার ছবি খেলা করছে আকাশের মনের আঙিনায়। নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছে না। মনের উগ্রচন্ডী অবস্থান থেকে পেলব ভূমিতে নেমে নতুন মতিকে খোঁজার চেষ্টা করছে। একটাই প্রশ্ন মাথার ভিতরে লাট্টুর মতো ঘুরছে। ছেলেটার মধ্যে এত বড়ো মানবিকতা লুকিয়ে রয়েছে? অন্যকে মনের মাধুরী দিয়ে এভাবে আপন করে নিতে পারে? মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মতিকে ভারী গলায় বলল, আমাকে ক্ষমা করে দিও মতি। তোমাকে ভুল বুঝেছি আমি। এত বড়ো পদে চাকরি করেও কেন যে আজকাল মানুষ চিনতে এভাবে ভুল হয়ে যায়, তা ভেবে পাই না। তুমি যে ভিতরে ভিতরে মানবিকতাকে এভাবে আঁকড়ে ধরতে পেরেছ, সেই মূল্যায়নটুকু ধরতে পারি নি আমি।
শুধু শুধু মিথ্যে সান্ত্বনা আমার ভালো লাগে না স্যার। আপনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়ো। তবুও অনুতপ্ত হয়ে যেটুকু বললেন, তাতেই মুগ্ধ হয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না। একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ এখনও আপনাকে বলা হয় নি স্যার। আগামিকাল সকাল নটার সময় নেতাজী সংঘের পক্ষ থেকে রক্তদান শিবিরের ব্যবস্থা করেছি। অনেক বিশিষ্ট লোক আসছেন। আপনিও সাদরে আমন্ত্রিত। থানার জরুরি দরকার আপনার কাছে ইমারজেন্সি হয়ে না উঠলে যাবেন স্যার। আপনাকে পেলে খুব খুশি হব। আমাদের ক্লাবের অন্য অনেক প্রসঙ্গ জানতে পারবেন। যাবার আগে আরেকটা কথা মনে করিয়ে দিই, আপনি যেমন বুড়ো লোকটা ও তাঁর সঙ্গে থাকা মেয়েটা নিয়ে চিন্তিত, আমিও একই চিন্তার শরিক। কখনো এ ব্যাপারে আপনার উপকারে আসতে পারলে ভাবব, একটা ভালো কাজ সেরে জীবনে ধন্য হওয়ার আরেকটা সুযোগ পেলাম।
আকাশ একা চেয়ারে বসে মতির কথার গোলক ধাঁধায় দ্রুত হারিয়ে যেতে থাকল। কিছুতেই ভেবে পেল না, কী ভাবে এত বড়ো ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে হেনাকে উদ্ধার করা সম্ভব। খুব মনে পড়ছে পাপানকে। বাড়িতে ফিরলেই যেভাবে বাপি বলে ডাকত, সেই সম্বোধন তার কানে তখনও বাজছে। জীবনে এর চেয়ে বড়ো যন্ত্রণা আর কী হতে পারে? পাপানের উজ্জ্বল স্মৃতি তার মনের ইজেলে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। তাতেই আকাশ নিজের নতুন পরাজয় দেখতে পাচ্ছে। সামন্তবাবুর স্পর্ধাও তাঁর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। নিজের মনে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, মনে রেখো বিভাস, আমার নাম আকাশ, তোমাকে আমি সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে মারব, কাকপক্ষীও টের পাবে না।
টেবিলে সিগারেটের প্যাকেট রেখে বদন ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আজকাল তার পক্ষে আকাশের মন মতলব ঠিকমতো বুঝে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। আকাশের সব আচরণ কেমন অদ্ভুত লাগছে।
সিগারেটের প্যাকেট টেবিলে উপর দেখেও আকাশ মনের জ্বালায় নিজের চেম্বারের ভিতরে হাঁটছে আনমনে। বুকের ভিতরে কেমন যেন ছটফট করছে। নিজেকে সামলাতে গ্লাসে মদ ঢালছে তালে তালে। ঢক্ঢক্ শব্দে সবটুকু শেষ করার পরে এক অদ্ভুত প্রশ্নে দুলতে থাকে বার বার। যেন মত্ততার ঘোরে হেঁটে চলা এক বেঘোর মাতাল। কেবল ভাবছে, হেনা তাকে কিছুতেই ভুলে থাকতে পারে না। যে মেয়েটা বাপের বাড়িতে না গিয়ে দিনের পর দিন তার জন্যে অপেক্ষায় থেকেছে, তার পক্ষে এতদিন একা একা থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। ঘরের ভিতরে পায়চারী করতে করতে আরও কী সব ভাবছে আকাশ। সেদিন প্রথম জীবনে টাকা গাড়ি বাড়ির মূল্যকে ক্ষণেকের জন্যে তুচ্ছ ভাবতে পারল। মন যদি শূন্য হয়ে যায়, এসব থেকে লাভ কী? আকাশ মদের বোতলটা ডান হাতে সজোরে ছুড়ে মারল মেঝেতে। ঝন্ঝন্ খন্খন্ শব্দে তা কয়েক খন্ডে ভাগ হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকল। হেনার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কঠোর বাস্তবতা প্রকাশ পাচ্ছে খণ্ডবিখণ্ড কাঁচের গ্লাসের মধ্যে।
চলবে…