শরৎ সমগ্র
শরৎ এলেই আমার জ্বর হত। শরীরের ভেতরে কেঁপে কেঁপে উঠত অসম্ভব শীতলতা। যেন বাঁকানো ছুরি কেটে যাচ্ছে সমস্ত শিরা। রক্ত জমে জমে বরফ। আর বরফের ভেতরে একটা মাছের মত ছটফট করতাম আমি। জিহবা শুকিয়ে আসত। তখনই, মুখের কাছে লেবুর গন্ধমাখা বাটিভর্তি সাদা বার্লি তুলে ধরতে তুমি।
আমার কাছে শরৎকালের স্মৃতি এরকমই…
ছায়া ও আমি
তারপর আলো মিশে যেতে থাকে ঘরে ফেরা পাখির ডানার পালকে। কবিতার অক্ষর নয়, আমি আঁকি ছায়া। কেউ দেখবে না, জানি, তবু ভাবি, সে এসে ছুঁয়ে দেখবে এই ছায়া। ঢেউ এর মতো সে খুলে নেবে একটি একটি করে বৃষ্টিপাতা।
অপেক্ষারত ছায়া ও আমি…
নির্জনতা
ব্যঞ্জনা থেকে দূরে ঐ ধ্বনি, উৎসব শেষের আদিম, পরলোকের আলোয়, মৃত রক্তকণার মতো জেগে আছে অভিলাষে। সে কি তবে চোখ? মায়াবী আয়না? ভেঙে পড়ছে ঢেউ, নীল নীল নদী কি হৃদয় তবে? ভেঙে যাচ্ছে কূল, রাত্রি ও তরল… দ্বিধার চৌকাঠ পার হলো কি পারদ? তৃষ্ণার আগুন জ্বলে, জেগে থাকে আয়না জুড়ে, রক্ত ঝরে, মৃত কণা, বস্তুত তাকে বলি, নির্জনতা।
উৎসমুখ
ভুঁইচাপা নয়, পায়ে মাড়িয়ে যাকে চলে গেলে, সে আসলে তৃণলতা, গন্ধ নাও, দেখবে, তার শরীরে লেগে আছে মাটির গন্ধ, নাভিমূলে জেগে ওঠে শব্দের নিঃশ্বাস, খসে পড়ে সন্ধ্যাতারা, তাকে রেখে পা বাড়িয়েছ অন্ধকার পথে, গ্রীবায় সেতার বাজাও, তৃষ্ণার্ত আঙুলে খোঁজো লাভাস্রোত, স্তব্ধ চোখে খুঁজে নাও উৎসমুখ। এ ক্যামন শিল্পবোধ! জলের অতল থেকে তুলে আনো আলো, আমি স্পর্শপ্রিয়, তোমার আঙুল থেকে তুলে আনি ঝরাপাতা, শুকাই রোদ্দুরে।
দ্বিধা
আসমান থেকে নেমে আসা মেঘ-সিঁড়ি
দ্বিধা ভরাতুর পায়ে, সে কি ভেঙেছিল?
দিঘীর শালুকে একা কাঁপছে সময় –
কাঁপছে ক্ষণিক জল, চোখের পাতায়!
মনে নেই, হাতে হাত রেখেছিলো কিনা –
রেখেছিলো কি না মন মনের ভেতরে।