জ্যোতি পোদ্দারের ছয়টি কবিতা

মানুষ

দানা ছুঁড়ে দিলেই কি আর পাখি আসে?

পাখির ডানায় জল দিও
উষ্ণতা দিও
দিও ভরসা

তুমি মানুষ বড্ড বেশি ফাঁক ও ফাঁদ ফেলার ওস্তাদ।

শাড়ি

অনেক তো হলো।
এবার তবে কুড়িয়ে তুলি বাদামের খোসা।খুচরা আলাপ।
আর দু’জনের মাঝে থিতু হয়ে বসে থাকা দীর্ঘ চুপচাপ।

ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকার মতো করে
চোখের আড়ালে,মনের আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি
শুনছো বারান্দায় ভেজা কাপড় মেলার ধ্বনি—
উড়তে উড়তে উড়ে গিয়ে যে পাখিটি বনে দিকে চলে গেলো
তাকে আমি দেখেনি।আমি দেখেছি ভেজা শরীরে লেপ্টে
থাকা লতা পাতা আঁকা টাঙ্গাইলের শাড়ি।
আর সাদা রঙের গোড়ালি, ছুপছুপে ভেজা।

ক্লিপ

জলের তোড়ে বাসি আলতা ক্ষয়ে গেলেও
ফাটাফাটা দাগ—পায়ের গোড়ালি ভর্তি দাগের মিছিল।
সব মিছিল কি সুন্দর হয়? তবু চিকিৎকার থাকে।
গতি থাকে।পায়ের সাথে পায়েদের তাল লয় মাত্রা থাকে।

লাল রঙের বেষ্টনীর পা কত না ঘর থেকে ঘরে
ঘর থেকে বাইরে কিংবা বাইরে থেকে বাইরে হাঁটতে হাঁটতে
কিংবা উড়তে উড়তে পায়ে পায়ে কালশিটে দাগের মতো
যে গল্প থাকে সে গল্প আমি টুকে রাখিনি।
তুচ্ছ গল্প হলেও, তুচ্ছই।তুচ্ছকে কে আর ক্লিপে আটকে রাখে।

বাদামের খোসা

খয়েরি রঙের খোসা তুড়ি মেরে ওড়ানো যায় না।

দুই ঠোঁট গোল করে হালকা বাতাস বের করলেই
ফুড়ুৎ করে টুনটুনি ওড়ার মতো করে উড়ে
যায় বাদমের খোসা।

একবার আমি আর জ্যোতি পোদ্দার
লালচে কালচে হয়ে যাওয়া বাদামের খোসার মতো
কতিপয় অপমান হাতের তালুতে রেখে
গোল ঠোঁটে ফু ফু করে বার কয়েক ফু দিলেও
ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়নি তাচ্ছিল্য।

বরং দুই জনের ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে একদলা থুতু আর কফে
ভিজে গেছে হাতের তালু, তালুতে আঁকা নিয়তি রেখা।

মুখ

ঝরঝর মিহিদানা বৃষ্টি আচমকা ভিজিয়ে দিলো
বারান্দার রেলিঙে ঝুঁকে থাকা একটি বিষণ্ন মুখ।

ওপাড়ায় কেউ বোধ হয় বাজাচ্ছে মাউথ অর্গান।
নাকি এপাড়ায় সবুজ পাতায় আলতা পায়ে
ঘুঙুরে তুলছে ঝুনঝুন দু’হাতে গাউন একটু উঁচিয়ে?

আজ বৃষ্টি আর রোদের মাখামাখি হলো খুব।
অকালবোধনে গলে গলে পড়ছে বিষণ্নতার রঙ।

ঘোড়া

ভাতের বলকের ধোয়া ওঠা সুর পাঠালাম।

তুমি তাকে স্বর দিও
তুমি তাকে ব্যঞ্জন দিও

রেখো, তাদের ব্যঞ্জনায়।

তারাগড়ের আস্তাবল কি খুঁজে পেলে?
খুঁজে পেলে সহিস মুকুন্দ হাজংকে?
সেই বাদামী রঙের ঘোড়া?

মাটির ভাঁজে ভাঁজে এখনো এখানে ত্রস্ত ও দাপুটে
ঘোড়ার পায়ের ছাপ—বিভক্ত খুরের চিহ্ন
আগলে রেখেছে তারাগড়ের আবাদি মাটি।
লাঙুল ফলায় এখনো কখনো কখনো
হাতে উঠে আসে ক্ষয়ে যাওয়া ঘোড়ার নাল।

কত পথ কত গতি ও স্থতির কত কথা জমে থাকা
ঘোড়ার নাল এখন শুধুই জঙধরা অপূর্ণ উপবৃত্ত।

তারাগড়ে ঘোড়া এখনো আশ্রয়হীন,ক্ষুধার্ত আর ক্ষুব্ধ।
অমাবস্যার তৃতীয়া রাতে যে ঘোড়াটি চিৎকার
করে করে তারাগড় দাপিয়ে বেড়ায় তার রঙ
কি দেখেছে জ্যোতি পোদ্দার?

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!