এই সুন্দর আনন্দময় পৃথিবীকে মানুষ তার চিত্র ময়তা দিয়ে যেমন সুন্দরতর করে তুলেছে তেমনি আবার এই মানুষই হয়েছে হন্তারক। মানুষ তার আত্মস্বার্থে একদিকে প্রকৃতিকে করেছে নিধন, অন্যদিকে মানুষের সহজাত অধিকার করেছে হরণ। একদিকে সে শাসক অন্যদিকে সে শোষক। শোষিত মানুষই যুগে যুগে নানা ভাবে শাসকের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। এই প্রতিবাদের স্বরূপ ইতিহাসে অল্পবিস্তর পাওয়া গেলেও সমসাময়িক সাহিত্যে পদ্য ও সুরের মাধ্যমে তা ফুটে ওঠে। বাংলা সাহিত্যেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
ধর্মের আবরণে সাধারণ মানুষের অপ্রাপ্তি ও প্রতিবাদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ (৬৫০-১১০০ খ্রিস্টাব্দ মতান্তরে দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী) এ দেখা যায়। যেমন- “টালত মোর ঘর নাহি পরবেশী/হাড়ীত ভাত নাহি নীতি আবেশী।” (৩৩ নং পদ)। টিলার উপরে আমার ঘর, প্রতিবেশী নেই, হাড়িতে ভাত নেই অথচ প্রতিদিন প্রেমিকের ভীড়। একই পদের শেষে বলা হয়েছে- ”জো সো বুধী সোহি না বুধী/জো সো চোর সোহি সাধী/নিতি নিতি সিয়ালা সিহে সম বুঝি।” যে বুদ্ধিমান সে-ই নির্বোধ, যে চোর সে-ই সাধু। নিত্য নিত্য (প্রতিদিন) শিয়ালে-সিংহে যুদ্ধ চলে। আবার এরই ১০নম্বর পদ “নগর বাহিরি রে ডোম্বি তোহোরি কুড়িয়া/ছোই ছোই জাসি বামহন নাড়িয়া।” নগরের বাইরে ডোম্বি তোর কুঁড়ে ঘর, নেড়ে ব্রাহ্মণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। সরল বাংলায়, লোকালয়ের বাইরে অন্ত্যজ শ্রেণীর অস্পৃশ্যা নারী ডোম্বীর কুটির। সেখানে লোকচক্ষুর আড়ালে নেড়ে ব্রাহ্মণ তাকে ভোগ করতে যায়। এ চিত্রগুলো সে যুগের বৈষম্যের শিকার সাধারণ মানুষের কথা হলেও এতে নেই কোন দ্রোহের সুর-নিছকই অসহায়তার চিত্র। বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগ পর্যন্ত এ চিত্রই দেখা যায়।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্যের চিন্তা চেতনার জাগরণের ঢেউ বাংলার জনজীবনেও দোলা দেয়। ১৯০৫সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া স্বদেশী গানের মধ্যে গণসংগীতের বৈশিষ্ট্য ঝলকে ওঠে। এ সংগীতের ধারায় আবির্ভূত হন বাংলার উদ্দীপনা সংগীতের চারণ কবি মুকুন্দ দাস ও তারুণ্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সেসময়ের স্বদেশী গানে ভারতবাসীর মুক্তির কথা, শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা শোনা গেলেও তা গণসংগীত হয়ে উঠতে পারে নি।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সংঘটিত শ্রমিক বিপ্লবের ফলে শিবনাথ শাস্ত্রীর লেখা “ওগো জাগো শ্রমজীবী জনতা” গানটি এদেশের গণসংগীতের পালে প্রথম হাওয়া দেয়। আর ১৯২০এর পরে সদ্য গঠিত কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এসে তারুণ্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেন দু’টি গান-
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে (কৃষকের গান -১৯২৫) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগীতের অনুবাদ “জাগো অনশন বন্দী ওঠো রে যত”। এ কথা অনস্বীকার্য যে, এ সময়ের স্বদেশী ও দেশাত্মবোধক গানগুলোকে গণসংগীতের অন্তর্ভুক্ত না করলেও একে গণসংগীতের পূর্বসূরী বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই গণসংগীত কাকে বলে এবং এর বৈশিষ্ট্য কী সে প্রশ্ন জাগে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনাকালে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে এ ভূখন্ডে গণসংগীতের জোয়ার আসে। বিশেষ করে ১৯৪২/৪৩ সালে বাংলার সংগীত জগতে পারিভাষিক শব্দ হিসেবে এক বিশেষ ধরনের গান বোঝাতে গণসংগীতের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং অচিরেই তা বাংলার প্রায় সব অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বাংলার সংগীত জগতে ‘গণসংগীত’ শব্দটি আসার আগে স্বদেশী ও দেশাত্মবোধক গানের প্রচলন ছিল। তাই অনেকে গণসংগীতের সাথে বাংলা গানের এ দু’টি ধারাকে এক করে ফেলেন।
বস্তুত ১৯৪০এর দিকে ‘গণ’ শব্দটি ‘সংগীত’এর আগে যুক্ত হয়ে এক বিশেষ তাৎপর্য লাভ করে। এখানে ‘গণ’ শব্দটি অধিকার সচেতন, শ্রেণি সচেতনতায় উদ্বুদ্ধ মানুষকে বলা হয়েছে — দেশের আপামর জনতাকে নয়। কোন দেশের শোষকশ্রেণি অর্থাৎ জমিদার, পুঁজিপতি, সাম্রাজ্যবাদীরা এর আওতায় আসে না।
কলকাতা সাহিত্য সংসদ থেকে প্রকাশিত সংসদ বাংলা অভিধানে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার সংগীতকে অন্য কথায় সাধারণ মানুষের দুঃখ ও সংগ্রাম যে সংগীতের উপজীব্য তাকেই গণসংগীত বলা হয়েছে।
উপমহাদেশের গণসংগীতের অন্যতম রূপকার হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মতে, স্বদেশী চেতনা যেখানে গণচেতনায় মিলিত হয়ে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিকতার ভাবাদর্শের সাগরে মেশে সেই মোহনাতেই গণসংগীতের জন্ম।
গণসংগীতের আঁচে মঞ্চ উত্তপ্ত কারী গণনাট্য কর্মী, সংগীতকার সলিল চৌধুরী শ্রমজীবী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা-সংগ্রামের সাংগীতিক ইতিহাসকে গণসংগীত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এছাড়াও উপমহাদেশের অন্যতম শিল্পী ও সুরকার ভূপেন হাজারিকা, গবেষক শম্ভুনাথ ঘোষ, চিত্রকর ও গণসংগীত শিল্পী খালেদ চৌধুরী, গণসংগীত সংকলক সুব্রত রুদ্র, প্রাবন্ধিক বৈরাগ্য চক্রবর্তী, গবেষক নারায়ণ চক্রবর্তী, হীরেন ভট্টাচার্য প্রমুখ গণসংগীত গবেষকদের দেয়া সংজ্ঞায় গণসংগীতের আদর্শ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পূর্বোক্ত সংজ্ঞার কাছাকাছি। এঁরা প্রত্যেকেই গণসংগীতকে মেহনতী জনতার আন্দোলনের গান বলে উল্লেখ করেছেন। তবে হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর একটু এগিয়ে স্বদেশিকতার শতধারা গণচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সর্বহারা যে গান আন্তর্জাতিকতার সাগরে মিশে সেই মোহনায় গণসংগীতের জন্ম বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মেহনতি জনতার গণসচেতনতা ও অধিকার আদায়ের সাথে আন্তর্জাতিক চেতনার মিলন ঘটিয়েছেন।
অন্যদিকে জার্মানির প্রখ্যাত মিউজিক কম্পোজার Hanns Eisler বলেছেন- ”Mass song is the fight song of the modern working class and to a certain degree Folksong at a higher stage than before, because it is international.”
এখানে দ্রষ্টব্য, আইসলার আরো একধাপ এগিয়ে একটি সময়ের অর্থাৎ আধুনিকতার পরিসীমায় একে গণ্ডিবদ্ধ করেছেন। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ‘আধুনিকতা’ শব্দটি ব্যবহার করেন নি। হয়ত আধুনিকতার দার্শনিক সাজুয্যের সাথে ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীর জীবন দর্শনের সমন্বয় তিনি খুঁজে পাননি।
গণসংগীতের এই সংক্ষিপ্ত পরিচিতির আলোকে এ কথা অনস্বীকার্য, ১৯৩৬ সালে গঠিত সর্বভারতীয় প্রগতি লেখক সংঘ, ১৯৪০এ Youth Cultural Institute এবং ১৯৫০-’৫২ পর্যন্ত ভারতীয় গণনাট্য সংঘের (Indian People’s Theatre Association –IPTA) ছায়াতলে বেড়ে ওঠা গণসংগীত বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনের প্রাণ হিসেবে গীত হয়েছে ঠিকই তবে ‘৫২র ভাষা আন্দোলনের পর পূর্ব বাংলার বৈষয়িক দৃষ্টিভঙ্গি একটা স্বতন্ত্র মনোভাবের দিকে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। একসময়ের অখণ্ড বাংলার একটি অংশ পূর্ব বাংলা নামে স্বাধীন পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রের রূপ নেয়ায় এর শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আর্থ-রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়টি আলাদা হওয়া স্বাভাবিক। এরই রেশ ধরে ১৯৫২ থেকে ‘৭১এর বিজয় পর্বে এ ভূখন্ডের সংগ্রামগুলোতে গণসংগীত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর প্রথম আঘাত আসে পূর্ব বাংলার ভাষার উপর। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলার মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে নব্য পাকিস্তানের ‘রাষ্ট্রভাষা’ হিসেবে ঘোষনা দিলেন। এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার হল। নেমে পড়ল রক্ত পিচ্ছিল সংগ্রামের পথে। সৃষ্টি হল মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর ইতিহাস। ন্যায্য অধিকার আদায়ে এ দেশের সহজ সরল মানুষকে করে তুলল নির্ভীক-আত্মবিশ্বাসী। আর এই সংগ্রামের পারম্পর্যে ‘৫২,’৫৪,’৫৬,’৬২,’৬৬,’৬৯ পেরিয়ে ‘৭০এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে দিল।’৭০ এর নিরঙ্কুশ বিজয় কুচক্রীদের শাসন শোষণের সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি তার ইপ্সিত লক্ষ্য স্বাধীনতায় পৌঁছে গেল। বিশ্বের মানচিত্রে স্হান পেল নতুন এক রাষ্ট্র ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’।
বাঙালির ২৪ বছরের সংগ্রামের পথে সশস্ত্র যুদ্ধ, প্রতিবাদী মিটিং মিছিলের পাশাপাশি জন্ম নিলেন একঝাঁক শিল্পী, লেখক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, মুকুন্দ দাস, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী, সত্যেন সেন প্রমুখ রাজনীতি সচেতন গীতিকার ও সুরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া আব্দুল গাফফার চৌধুরী, গাজিউল হক, আব্দুল লতিফ, শেখ লুৎফর রহমান, খান আতাউর রহমান, এনামুল হক, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, সিকান্দার আবু জাফর, আপেল মাহমুদ প্রমুখ জানা-অজানা সুরকার ও গীতিকারের গানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে বাঙালিকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে মুক্তির সংগ্রামে। এই অনুপ্রেরণার যোশে যিনি জীবনে একটি চরণও লেখেন নি তিনিও চেতনার গানে মুখর হয়ে কলম ধরেছিলেন।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ছোট্ট শহর বরিশাল পিছিয়ে তো ছিল না বরং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যতম বড় সেক্টর নবম সেক্টর সচিবালয়ের দায়িত্ব পালন করে।
‘৭১এর স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশালে গণসংগীতের ভূমিকা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল ৫৩বছর আগের সেই কণ্ঠ যোদ্ধাদের অনেকেই এ ধরাধাম ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। বিস্মৃত প্রায় সেই সোনালি দিনের স্মৃতিগুলো নিয়ে যে দু’একজন কণ্ঠযোদ্ধা আজও আমাদের মাঝে রয়েছেন তাঁদের কাছে সে সময়ের পরিস্থিতির উপর কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলাম। প্রশ্নগুলো হলো-
(১) ‘৭১এর সেই উত্তাল দিনগুলোতে আপনার বয়স কত ছিল?
(২) শহর জুড়ে গান গেয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হল?
(৩) এ ব্যাপারে কে বা কারা মূখ্য ভূমিকা পালন করেন?
(৪) বরিশালের ক’টি স্পটে এঅনুষ্ঠানগুলো হয়েছিলো?
(৫) কী কী গান গাওয়া হতো?
(৬) এ দলে কারা কারা গান গেয়েছেন?
(৭) এ সময় বিশেষ কোনো স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল কি?
(৮) এ কারণে সে সময় কি কেউ শহীদ বা কারাবরণ করেছিলেন?
এ প্রশ্ন ক’টির উত্তর খুঁজতে গিয়ে সে সময়ের নওল কিশোর বর্তমান বরিশাল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ আবুল খায়ের সবুজ ও মীর সাব্বির হোসেন শামীমের সাথে আলাপ করি। ওরা তখন ঐ অনুষ্ঠানগুলোতে গান না গাইলেও কিশোর সুলভ কৌতুহলী মন নিয়ে অনুষ্ঠানগুলোর পিছনে পিছনে ছুটেতো। ওরা আমাকে কয়েকটি জায়গা ও কয়েকজন শিল্পীর কথা বলে। যা পরবর্তীতে ‘৭১এর কণ্ঠ যোদ্ধাদের সাথে আলাপচারিতায় বেড়িয়ে আসে।

এরপর বরিশাল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তী মুকুল দাসের কাছে গেলে তিনি আমাকে জানান, তখন তার বয়স ছিল ২২বছর। অর্থাৎ পরিপূর্ণ যুবক। তিনি বলেন, ”মূলত ‘৬৯এর গণঅভ্যুত্থানের সময় বরিশালে গণসংগীত গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন আবু আল সাঈদ নান্টু (প্রয়াত)। শিল্পীদের মধ্যে আমিসহ আর ছিলেন, আক্কাস হোসেন (প্রয়াত), সত্যেন সাহা (প্রয়াত), মনিলাল দাস (প্রয়াত), নরেন দাস (প্রয়াত), সেলিম বিন আযম (প্রয়াত), বাসুদেব সেন (প্রয়াত), অনিতা নাগ, দীপক নাগ, উৎপল দাস, ললিত দাস প্রমুখ। এ সময় ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (IPTA) এর গান ছাড়াও আমাদের নিজেদের লেখা গানও গাওয়া হতো।
বলাবাহুল্য ‘৬৯এর গণঅভ্যুত্থানের রেশ ধরেই ‘৭০এর নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগ এতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়। নিয়মানুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ দিতে পাকিস্তানী সরকার গড়িমসি করে। আলোচনা চলাকালীন এক পর্যায়ে পশ্চিম পাকিস্তান রাতের অন্ধকারে ঢাকার জনগণের উপর হামলা চালালে স্বাধীনতার যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়। এ সংগ্রামে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বরিশালেও জনগণকে জাগ্রত করার জন্য শিল্পীরা মহল্লায় মহল্লায় সংগীত পরিবেশন করেন। যেহেতু এ সংগীত দেশের ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে দেশের আপামর জনতার সচেতনতার সংগীত, তাই এ অনুষ্ঠানগুলোতে গণসংগীতের সাথে দেশাত্মবোধক গান সমান তালে গাওয়া হতো।
কবে, কখন, কারা এ ধরনের আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন এত বছর বাদে তাও ঠিক মনে পড়ছে না। যতদূর মনে পড়ে এ সময় একটি কার্টুন দেখে আমরা জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মহল্লায় মহল্লায় গান গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কার্টুনটি এমন- একটি ছবির দু’দিকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মানচিত্র, মাঝখানে একটা গাভী। গাভীটির মুখ পূর্ব পাকিস্তানের দিকে। সে ঘাস খাচ্ছে আর ওর পেছনের অংশ পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে। সেখানে ওকে দোহন করা হচ্ছে।
সেই দিনগুলোতে শিল্পীরা দলে দলে ভাগ হয়ে গান গেয়েছেন। আমি সব জায়গায় না গাইলেও যে ক’টি জায়গায় গান গেয়েছিলাম বলে মনে পড়ে সে গুলো হলো- দপ্তর খানার বীরেন্দ্র দাসের কাঠের গোলা প্রাঙ্গণ, বাকলার মোড়, নাজির পুল, চকের পুল, নতুন বাজার, ঝাউতলা পূজামণ্ডপ, নথুল্লাবাদ, সদর রোড জগন্নাথ মন্দির, জগদীশ (কাকলি) সিনেমা হলের কাছের ব্যামাগার এবং বেলস্ পার্ক।
যে গানগুলো গাওয়া হতো, সেগুলো হল-
(১) ”মানব না এ বন্ধনে, মানব না এ শৃঙ্খলে।” (সলিল চৌধুরী),
(২) ”হেই সামালো ধান হো,”(হেমাঙ্গ বিশ্বাস),
(৩) ”লাঞ্ছিত নিপীড়িত জনতার জয়, শোষিত মানুষের একতার জয়।” (অধ্যাপক মতলব আলি),
(৪) ”ধিতান ধিতান বোলে” (সলিল চৌধুরী),
(৫) ”মুক্তির মন্দির সোপান তলে।” (মোহিনী চৌধুরী),
(৬) ”রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করলি যে বাঙালি” (শামসুদ্দীন আহমেদ ),
(৭) ”ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়” (আব্দুল লতিফ),
(৮) ”ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে”(মুকুন্দ দাস),
(৯) ”বান এসেছে মরা গাঙে খুলতে হবে নাও, তোমরা এখনও ঘুমাও” (মুকুন্দ দাস),
(১১) ”আজি সুপ্ত সাগর ওঠে উথলিয়া তোরা শুনতে কি পাস” (সত্যেন সেন),
(১২) ”ওরে ওরে বঞ্চিত সবহারা দল, শোষণের দিন, হয়ে আসে ক্ষীণ“ (সত্যেন সেন)।
আমাদের সাথে যারা বাদ্যযন্ত্রে সংগত এবং কণ্ঠ দিয়েছেন তাঁদের অনেকেই এখন প্রয়াত। তাঁরা হলেন, আক্কাস হোসেন (প্রয়াত), মনি লাল দাস (প্রয়াত), সেলিম বিন আযম (প্রয়াত), লতিফা হেলেন, কৃষ্ণা কর্মকার (প্রয়াত), আবু আল সাঈদ নান্টু (প্রয়াত), ললিত দাস, গোলাম মর্তুজা চৌধুরী টুলু (প্রয়াত), হামিদ মিয়া (প্রয়াত), শিবু লাল রঞ্জু, প্রসূন নাগ (প্রয়াত), খুকু দাস, উৎপল দাস, (বলা বাহুল্য, খুকু দাস এবং উৎপল দাস বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে থাকেন) বাসুদেব সেনগুপ্ত (প্রয়াত), নরেন রায় চৌধুরী (প্রয়াত), হাবিব মীরা (প্রয়াত), আলী হোসেন সিকদার (প্রয়াত), নরেন দাস (প্রয়াত), বরুণ বর্মন (প্রয়াত), বরুণ সেন (প্রয়াত) ও উমা সেন (প্রয়াত)।
এ ব্যাপারে কেউ শহীদ বা কারাবরণ করেছিলেন বলে আমার জানা নেই। তবে ঐ সমসাময়িক সময়ের একটা মজার ঘটনা জানাতে লোভ সম্বরণ করতে পারছিনা। আগেই বলে রাখি, এটা বরিশালের গণসংগীতের সাথে সম্পৃক্ত নয়। শহরে পাকবাহিনীর আসার পরের ঘটনা। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সদর রোডে তরুণ লাইব্রেরির দোতলায় গানের আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় দু’জন পাকসেনা সেখানে হাজির। ভয়ে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। ওরা আমাদের অভয় দিয়ে গান শুনতে চাইলো। আমি ভয়ে ভয়ে একটা ব্যান্ডের গান গাইলাম। গানটার কথা মনে নেই। ওরা নির্দেশের সুরে আবারো গানটা গাইতে বললো। কি আর করা। ”পড়েছি মোঘলের হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে।“ গাইলাম। এরপর বন্ধু সমুজ্জল মজুমদার গাইল “মুসাফির মোছরে আঁখি জল ফিরে চল আপনারে নিয়া”গানটি। ওরা গান শুনে খুশি হয়ে আবার আসার কথা বলে ব্যারাকে যাবার দাওয়াত দিয়ে চলে গেল।” যেন প্রাণ আসল ধরে। …কি বলিস? ফের হপ্তা? তওবা তওবা নাক খপ্তা।”

এরপর আবুল খায়ের সবুজকে পূর্বোল্লিখিত প্রশ্ন ক’টা দিয়ে পাঠালাম সে সময়ের ১৭বছর বয়সের যুবক প্রসূন সেনগুপ্তের বাসায়। ভদ্রলোক অসুস্থ। গলায় অস্ত্রোপচারের কারণে কথা বলতে পারেন না। এত অসুস্থতার মাঝেও তিনি লিখিতভাবে আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো দিলেন।আমি তার কথাগুলো হুবহু তুলে ধরছি।
”একাত্তরের সময়ের ঘটনা বলতে গেলে স্পষ্ট কিছু মনে নেই।মার্চ মাস থেকেই সারা পূর্ব পাকিস্তান গরম ও উত্তাল। চারিদিকে অসহযোগ আন্দোলনের মিটিং মিছিল। তখন পাড়ার পাড়ায় অনেক ফাংশন হয়েছে।এসময় দেশাত্মবোধক গান আর গণসংগীত গাওয়া হতো।তবে একটা অনুষ্ঠানের কথা অনেকটা মনে আছে।
বরিশাল কলেজের তমাল তলা। তখন কলেজটির নাম ছিল বরিশাল নাইট কলেজ। এটা একসময় মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের কাচারি ঘর ছিল। ওখানে একটি তমাল গাছ আছে। ঐ তমাল গাছটির চারপাশ ঘুরিয়ে চাদর বিছিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছিল। শ্রদ্ধেয় নিখিল সেন ও বরিশাল মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সানাউল্লাহ মাহমুদ এরা দুজন মিলে অনুষ্ঠানের ধারাভাষ্য লিখে ছিলেন। যন্ত্র সংগীতে তবলায় ছিলেন উৎপল দাস, বাঁশীতে আমার বড় ভাই বরুণ সেন, কণ্ঠ সংগীতে আমিসহ আমার আরেক ভাই অরুণ সেন, বাসুদেব সেন, সেলিম বিন আযম, সত্যেন সাহা, খুকু দাস ও লতিফা হেলেন।
এ কারণে কেউ কারাবরণ করেছিলেন কিনা আমার জানা নেই। দেশের গানের মধ্যে সানাউল্লাহ সারের লেখা আর আমার দাদা অরুণ সেনের সুর করা “বাংলা তুমি আমার বাংলা, তুমি আমার কবিতা” গানটি গেয়েছিলেন আমার দাদা নিজেই। আমি গেয়েছিলাম “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে” গানটি।বাকি সব গানই ছিল কোরাস।
‘৭১এ আমি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ফিস দাখিল করেছিলাম। তবে পরীক্ষা দেয়া হয় নি।”

‘৭১এর ২৫ বছরের তাজা তরুণ যুবক ললিত দাস সেদিনের সেই উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বেশ কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। একই সাথে বাঙালির এই গৌরবময় ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় গর্ব বোধ করেছিলেন।
আমার দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ প্রশ্নের জবাবে (অর্থাৎ এ ব্যাপারে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর কারাই বা এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন) ললিত দাস বলেন, এর উত্তর দিতে একটু পিছনে যেতে চাই। মূলত ষাটের দশকে আমরা শিল্পী সংসদের সদস্যরা বরিশাল সদর রোডের আর সি দাস ভবনের (বর্তমান সোনালী ব্যাংক) ছাদ লাগোয়া তিন তলায় গান গাইতাম। আমাদের নিজস্ব কোন অফিস ছিল না। এছাড়া স্বদেশী আন্দোলনের পুরোধা হরেণ নাগের কাটপট্টির বাসা, কাউনিয়ায় মনোরমা মাসিমার ভাঙ্গা দোতলায়ও মাঝে মধ্যে আমরা গান গাইতাম। আমরা বলতে আমি, বরুণ সেন, উৎপল দাস, সেলিম বিন আযম ও বাসুদেব সেনগুপ্ত। মূলত গণসংগীতের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের দেশাত্মবোধক গান গাইতাম। আমাদের সাথে আরও ছিলেন আক্কাস হোসেন, নরেন দাস, মনি লাল দাস, বাংলা বাজারের বেবী (ওনার পুরো নামটি মনে পড়ে না)। আর আমাদের সাথে উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শ্রী পঞ্চানন ঘোষ।
‘৭১এর সূচনালগ্নে দেশে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বরিশালের সংগীতাঙ্গনের পরিচিত মুখ আবু আল সাঈদ নান্টুর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে কণ্ঠকে অস্ত্র করে অধিকার আদায়ে সচেতনতার লড়াইয়ে বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ি। পঞ্চানন ঘোষের সহযোগিতায় প্রান্তিক শিল্পী গোষ্ঠী ও আরেকটি সংগীত দল সবাই মিলে এলাকা ভাগ করে গান গায়। প্রান্তিক শিল্পীগোষ্ঠীর যাদের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে তারা হলেন, অসীত দাস, বরুণ প্রসাদ বর্মন এবং মুকুল দাস নামে একটি মেয়ে।
আমার যতদূর মনে পড়ে আমরা যে সব জায়গায় গান গেয়েছিলাম সেগুলো হলো- টাউন হল, ফকির বাড়ি রাখাল বাবুর পুকুর পাড়, জিলা স্কুলের মাঠ, আমবাগান, নূরিয়া স্কুলের মাঠ, ল কলেজের মাঠ, নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ড, কাউনিয়া এ কাদের চৌধুরী স্কুলের মাঠ, হাটখোলার মূল রাস্তা বন্ধ করে তার উপর বসে, আমানতগঞ্জ রেডক্রসের মাঠ, কাউনিয়া মাতৃমন্দির স্কুলের পিছনের মাঠ, লঞ্চঘাটে জেরটিনকে তবলা বানিয়ে গান গেয়েছি আর সবশেষে গানটি গেয়েছিলাম বগুড়া রোডের পেশকার বাড়ির বিপরীত দিকে বর্তমান সমবায় অফিস লাগোয়া মাঠে। সেখানে বসেই আমরা পাক সেনাদের হামলার খবর পাই। তারপর কণ্ঠের অস্ত্র ছেড়ে হাতিয়ার হাতে তুলে নেই।
সে সময় যে গানগুলো আমরা গেয়েছিলাম তার অধিকাংশই তাৎক্ষণিক এবং সামষ্টিক রচনা। যেমন একজন একটি গানের প্রথম চরণটি বললেন আরেকজন তার সাথে মিলিয়ে দ্বিতীয় চরণটি তৈরি করলেন। এভাবে গানগুলো পূর্ণতা পায়। এ ক্ষেত্রে আবু আল সাঈদ নান্টুর কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি। এ সময় গাওয়া গানগুলোর মধ্যে যেগুলো মনে পড়ে সেগুলো হল-
(১) লক্ষ কোটি বাঙালির মুক্তি স্বাধীন সূর্য দীপ/নির্যাতিত বাঙালির শেখ মুজিব/বিদ্রোহী সে বিপ্লবী সে অঙ্গে জ্বলে অগ্নিবেশ/বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।
(২) জাগো বাঙালি জাগো/অন্যায় জুলুম আর চলবে না/বাঙালিরা স্বাধিকার চাইছে/কোন বাঁধা আজ তারা মানবে না/বহু ত্যাগে আজ মাথা তুলেছে/জাগো বাঙালি জাগো।
(৩) শোষণ চাই না স্বাধীনতা চাই/বাঁচার মতো বাঁচতে চাই/আমরা শত মায়ের ছেলে/স্বপ্ন আশা দু’পায়ে ঠেলে/রাজপথ আজ বুকের রক্তে/রাঙিয়ে যাই, রাঙিয়ে যাই, রাঙিয়ে যাই।
(৪) আজ রক্তে আমার জ্বলছে আগুন জ্বলছে/আজ মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ জ্বলছে।
(৫) ছাওয়ালেরে পাঠাই ছিলাম হায় ঢাকার শহরে/ফিরলো না আজ সে/শূণ্য আমার ঘর/ছাওয়াল আমার লেইখ্যা পইরা মানুষও হইবে/মানুষ কোথা হইল বাছা বুলেট খাইলো।
(৬) পশ্চিমা জুলুম আর চলবে না/বাঙালিরা স্বাধিকার চাইছে… বাঙালিরা দিতে জানে রক্ত/প্রয়োজনে হতে পারে শক্ত/পশ্চিমা যত খান সাবধান সাবধান।
(৭) বাংলার বাঙালি এক হও,এক হও/বিপ্লবী জয়রথ চলছে/জুলুমের শৃঙ্খল দুলছে/এইবার হাতিয়ার তুলে নাও।
(৮) হে মৃত্যুঞ্জয়ী বন্ধুরা, তোমাদের নাম লেখা রবে এই বাংলার/প্রতিটি নগরে প্রান্তরে/এ মাটির প্রতি ধূলিকনায়।(আবু আল সাঈদ নান্টু),
(৯) মানুষেরে ভালোবাসি এই মোর অপরাধ/হাসিমুখে তাই মাথা পেতে নেই/দু:খের আশির্বাদ (সত্যেন সেন),
(১০) রক্তের অক্ষরে স্বাক্ষর দিলাম/শপথ নিলাম/অগ্নি শপথ, মুক্তি শপথ আর শান্তি শপথ/আজ শপথ নিলাম।(সানাউল্লাহ মাহমুদ),
(১১) চলছে মিছিল চলবে মিছিল/চলবেই, চলবেই,চলবে/লক্ষ কোটি আগুন শিখা/জ্বলবেই জ্বলবেই জ্বলবে।( সানাউল্লাহ মাহমুদ)
(১২) আকাশের নীল আর শ্যামল সবুজ মিলে/আনে সোনালি স্বপ্ন আবেশ/এই আমার স্বদেশ। (সানাউল্লাহ মাহমুদ)
এ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ও কাজী নজরুল ইসলামের উদ্দীপনামূলক দেশাত্মবোধক ও বিপ্লবী চেতনার গান গাইতাম। সাথে IPTA এর গণসংগীতগুলো তো রয়েছেই।
স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে দুটি ঘটনা এখনও মনে পড়ে, একটি হল-ফকিরবাড়িতে গাওয়া “ছাওয়ালেরে পাঠাই ছিলাম হায় ঢাকার শহরে” গানটির শেষে এক ভদ্রমহিলা কাঁদতে কাঁদতে আমাদের স্টেজে চলে এলেন। সে এক আবেগঘন দৃশ্য। বলে বোঝানো যাবে না।
আরেকটি ঘটনা লঞ্চঘাটে। আমাদের হাতে কোন বাদ্যযন্ত্র নেই কিন্তু গান গাইতে হবে। তখন উৎপল দাস কোথা থেকে যেন একটা জেরটিন নিয়ে এসে তবলা বাজাতে শুরু করল। আর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তার তালে তাল মিলিয়ে গাইতে শুরু করলাম। অনুষ্ঠানটি বেশ জমেছিল।
এ গান গাওয়ার কারণে কেউ কারাবরণ করেছিলেন বলে আমার জানা নেই।
বস্তুত ৫৩ বছর আগের ঘটনা হুবহু মনে রাখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কোন বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের দিনগুলোতে এ বিষয়ে কেউ কিছু তাদের কাছে জানতে চায়নি। সে ক্ষেত্রে এই কণ্ঠযোদ্ধাদের স্মৃতির দেয়ালে কিছুটা ধুলো জমে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই এ গৌরবময় দিনগুলোর আলোচনায় কারো ভূমিকার কথা বাদ পড়ে গেলে তা পূরণের দায়িত্ব পরবর্তী প্রজন্মের কাঁধে তুলে দিলাম।#
তথ্যসূত্র:
১। যে পথ গেছে… পরম্পরায় গণনাট্য সংস্কৃতি – সেকাল একাল। প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী,দে’জ পাবলিশিং , কলকাতা -৭০০ ০৭৩।
২। সলিল চৌধুরী জীবন উজ্জীবন এবং… সম্পাদনা: প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা -৭০০ ০৭৩।
৩। বাংলাদেশের গণসংগীত বিষয় ও সুর বৈচিত্র্য, সাইমন রানা, বাংলা একাডেমী, ঢাকা
৪। আমাদের লড়াই সংগ্রামে গণসঙ্গীত, ভোরের কাগজ,কাগজ প্রতিবেদক, ১৯ডিসেম্বর,২০১৯.
৪। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের সাক্ষাৎকার।