বিবর্ণ অভিযোজন: পর্ব-১১

উপন্যাসিক মুসা আলি’র ‘বিবর্ণ অভিযোজন’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এই উপন্যাসে শিক্ষকের পিতৃত্ব একজন ছাত্রের জীবনকে কত বেশি উদ্বেলিত করে তুলতে পারে, সেই অনুভূতির বিস্তার ঘটেছে এ উপন্যাসের পাতায় পাতায়, পরতে পরতে। পড়তে পড়তে আপনি আপনার প্রিয় শিক্ষককে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন।

।। একাদশ পর্ব ।।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও শুভদিনের সাক্ষাৎ না পেয়ে তানুস্যার কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফিজাকে বলল, কী হল বলতো, এখনো শুভদিনের দেখা পেলুম না। আসার পথে কী কোনো অসুবিধা হল ? হতেই পারে। আমাকে এখন একটু বাজারে যেতে হবে রে মা।।
তাহলে তাই যাও। তাড়াতাড়ি ফিরবে তো?
বাজার করতে যতক্ষণ লাগে।
শুভদিন এলে তোমার সঙ্গে দেখা না করে বাড়িতে ফিরবে না বাপি।
এত গভীর করে ভাবছিস? যদি শুভদিন এসে যায়, তুই নিজে আমাকে ডাকতে যাস। নাহলে ছেলেটা খারাপ ভাবতে পারে।
বেশ তো যাব।
পড়ন্ত বিকেলে রোদের তাপ কমে গেলেও তখনও গুমোট গরম পুরোমাত্রায় ছিল। সবেমাত্র ফুরফুরে বাতাস বইতে শুরু করেছে। রাস্তার দু’পাশে বড়ো বড়ো গাছগুলো নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তানুস্যার তুষ্ট মনে বাজারের দিকে হেঁটে চলেছেন। অচেনা খুশির দমকা হাওয়া তার সমস্ত হৃদয় জুড়ে। ফিজা তখন ঘরে বসে বিভুতিভূষণের ‘আরণ্যক’ পড়ায় ব্যস্ত। প্রকৃতি মানুষের কাছে এত আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে? প্রশ্নের গভীরে নতুন করে ফিজা বারবার আন্দোলিত হতে থাকল।
উঠোনে দাঁড়িয়ে কে একজন ডাকল, মাষ্টারমশাই, বাড়িতে আছেন ?
এখন কে আবার ডাকতে এল? আসলে ফিজা খুব খুশি হত শুভদিনকে দেখতে পেলে। বারান্দায় এসে বলল, কাকে খুঁজছেন?
স্যারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
ভদ্রলোক পাঞ্জাবী ট্রাউজার্স পরা। মাথায় টুপি। মুখটা অর্ধেক দেখা যাচ্ছে, অর্ধেক দেখা যাচ্ছে না।
ফিজা থেমে থেমে বলল, বাপি তো বাজারে গেছে।
খুব দরকার, সেজন্যে এসেছি।
তাহলে বারান্দায় উঠে বসুন। বাপি এলে কথা বলবেন।
তুমি কী তানুস্যারের মেয়ে?
আপনি কে, সেটাই তো জানতে পারলুম না।
আমি দিগম্বর ঘটক, বিয়ের ঘটকালি করে থাকি। শুনেছি, স্যারের মেয়ে এম এ পাশ করে বসে আছে। ভালো ছেলে পেয়েছি, তাই কথা বলতে এসেছি।
ফিজা লজ্জা পেয়ে বলল, এসব কথা কেবল বাপিকে বলতে হবে।
সব বাঙালি নারী বিয়ের সম্পর্ক শুনে এমনি লজ্জা পেয়ে থাকে। ফিজাও তার ব্যতিক্রম নয়।
একটা কথা জিজ্ঞেস করব তোমাকে?
বলুন।
তুমি তানুস্যারের কে, সেটাই তো বললে না।
ফিজা এবারও উত্তর দিল না।
এবার বুঝেছি, তুমিই তানুস্যারের মেয়ে। যে ছেলের খোঁজ নিয়ে এসেছি, সে দেখতে খুব সুন্দর। কেবল ভাবছি, তোমার সঙ্গে বিয়ে হলে সোনায় সোহাগা হবে। অবশ্য তোমার বাবার রাজি হওয়ার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
এসব কথা কেবল বাপিকে বলতে হবে।
তোমার জন্যে সম্পর্ক নিয়ে এতদূর এসেছি, বাড়িতে মিষ্টিফিষ্টি নেই? থাকলে আমাকে খেতে দিতে পারতে। ওইতো টেবিলের উপর মিষ্টির প্যাকেট দেখছি।
আত্মীয় আসবে বাড়িতে, তার জন্যে আনা হয়েছে। ওসব আমি আপনাকে খেতে দিতে পারি না।
তাহলে অন্তত একগ্লাস জল দাও।
ফিজা ব্যস্ত হয়ে রান্নাঘরের দিকে হেঁটে চলল। সেই সুযোগে নির্লজ্জ দিগম্বর ঘটক ঘরে ঢুকে মিষ্টির প্যাকেটটা বারান্দায় এনে খেতে শুরু করল।
ফিজা ফিরে এসে ঘটক মশাইয়ের আচরণ দেখে অবাক না হয়ে পারল না। আচ্ছা হ্যাংলা লোক তো আপনি। বাপির ছাত্র বিদেশ থেকে ফিরছে, তার জন্যে ওই মিষ্টির প্যাকেট কিনে আনা হয়েছে। আর আপনি সেটুকু? ঘটকরা এমনি লজ্জাহীন হয় নাকি?
লজ্জা থাকলে ঘটকের কাজে সফল হওয়া যায় না ফিজা।
আমার নাম জানলেন কী করে?
ওই প্রসঙ্গ জেনেই এসেছি।
এই জল এনেছি, খেয়ে এখন যান। বাপি এলে আসবেন।
মিষ্টি খেয়েছি বলে তাড়িয়ে দিচ্ছ এভাবে?
আপনি এখন যেতে পারেন। একটু পরে সাগরবাবু বড়ো পার্টি দিচ্ছেন, ওখানে ভালো খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
কেন এত বড়ো আয়োজন, তা একটু বলবে?
ওঁর ছেলে শুভদিন এফ আর সি এস পাশ করে লন্ডন তেকে বাড়িতে ফিরছে। সেই উপলক্ষে।
তুমি শুভদিনকে চেনো?
কেন চিনব না? ছোটোবেলায় বাপির কাছে পড়তে আসত। একদিন ও আমার বর-পুতুল ভেঙে দিয়েছিল। খুব কেঁদেছিলুম। এখন কী সে সব শুভদিনের মনে আছে? তাছাড়া আমরা খুব গরিব, আমাদেরকে মনে রাখতে যাবে কেন?
শুভদিন তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে তুমি সে বিয়েতে রাজি হবে তো?
এত বড়ো অসম্ভব কল্পনা করতে যাওয়া ঠিক নয়। আমাদের এমন কিছু নেই যা দিয়ে শুভদিনের মন ভোলাতে পারি।
এমন তো হতে পারে, কোনো চাহিদা না করেই শুভদিন রাজি হয়ে গেল। আমি সেই চেষ্টাই করব। তুমি কী গ্রামের দোকান থেকে আমার জন্যে ১০০ গ্রাম মুড়ি কিনে এনে দিতে পারো? সাগরবাবুর অনুষ্ঠানে খাওয়া তো অনেক রাতে, ততক্ষণ মুড়ি খেয়ে এক গ্লাস জল টেনে নিলে অনেকক্ষণ টিকতে পারব।
ফিজা উচ্চ শিক্ষিতা, ভিতরে যথেষ্ট শালীনতাবোধ রয়েছে। তার বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে ঘটক এসেছে তাদের বাড়িতে। বলল, তাহলে বসুন, মিনিট পাঁচেক লাগবে।
মুড়ি কেনার জন্যে টাকাটা নিয়ে যাও।
তা নেওয়া যায় নাকি?
দিগম্বর ঘটক আড়চোখে চেয়ে থাকল ফিজার দিকে। মেয়েটা ছন্দময় পায়ে এগিয়ে চলেছে তার জন্যে মুড়ি কিনতে। দিগম্বর আর দেরি করল না। এক মনে চিঠি লিখতে শুরু করল। বারান্দার উপরে রেখে দেওয়া পত্রটা যাতে উড়ে না যায়, তার জন্যে জলের খালি গ্লাস উপরে বসিয়ে দিল।
মিনিট দশেক পরে বাড়িতে ফিরে এসে ফিজা দেখল, ঘটক বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। বেশ অবাক না হয়ে পারল না। বারান্দার উপরে রাখা পত্রটা দেখে আরও বেশি হতবাক হল। ব্যস্ততা ছিল বলেই কী বাপির উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে? প্রথমে ভাবল, বাপির জন্যে লেখা পত্রটা খুলে পড়া ঠিক হবে না। আবার ভাবল, ঘটকবাবু এসেছিলেন তার বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে। তাই অন্য কৌতুহলে না দুলে পারল না। আবেগ বিহ্বল হয়ে পত্রটা খুলে পড়তে শুরু করল।
প্রিয় ফিজা,
তুমি কী গো, শুভদিনকে সামনে পেয়েও চিনতে পারলে না? আসলে জয়নগর স্টেশনে নামতেই গাবলুদা বলল, হাসানপুরের মতো গ্রামে এভাবে সুট বুট পরে ঢোকা ঠিক হবে না। গ্রামের কেউ কেউ আমাকে বিলেতি উশৃঙ্খল ভাবতে পারে। তাই গাবলুদার পাঞ্জাবী পরে ঘটক সেজে তোমার কাছে এসেছিলুম। ঘটকের ভূমিকায় ভালো অভিনয় করতে পেরেছি তো? লন্ডনে বসে অনেকবার ভেবেছি, বর-পুতুল ভেঙে ফেলার পরে তুমি কেমন করে কেঁদেছিলে। তাই স্টেশন থেকে আরেকটা বর-পুতুল কিনে কাগজে মুড়ে পত্রের পাশে রেখে এসেছি। অন্তত একটা ভালো স্মৃতি তোমার মধ্যে বেঁচে থাকুক। লন্ডন থেকে তোমার জন্যে একটা নতুন পেন কিনে এনেছি। আবার দেখা হলে সেটাই তোমাকে গিফট হিসেবে দিতে চাই। ‘উপহারটুকু ক্ষুদ্র বলে করিও না কিছু মনে, উপহারে কী ভালোবাসা থাকে, ভালোবাসা থাকে মনে’।
ইতি—
তোমার শুভদিন।
ঘটনার নাটকীয়তায় ফিজা অবাক না হয়ে পারল না। একটু হাসি পেল ফিজার। শেষ পর্যন্ত শুভদিন তার বিয়ের ঘটকালি করতে এল? বড়ো ডাক্তার কিন্তু জীবনের সূক্ষ্ম রসিকতার সূত্র আজও ভুলে যায় নি। বাপির প্রিয় ছাত্র আজও পুরনো দিনের মতো রয়ে গেছে। চিঠিটা বুকে জড়িয়ে এক অদ্ভুত ভাবালুতায় ডুবে থাকল ফিজা। একটা প্রচ্ছন্ন প্রশ্নে ফিজার ভিতরটা আন্দোলিত হচ্ছে। তাহলে শুভদিন আজও তাকে ভুলতে পারেনি ?
[ ১৮ ]
বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব। জমকালো অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে। চলবে টানা পাঁচদিন। শেষ দিনে শুভদিনের মতো কৃতি ছাত্রদের সম্মান জানানো হবে।
পাঁচ জানুয়ারী অনুষ্ঠানের শেষ দিন। লন্ডন থেকে এফ আর সি এস পাশ করে বাড়িতে ফিরে এসেছে শুভদিন। তাকে দেখার জন্যে স্কুল মাঠ ভরে উঠেছে।
অনুষ্ঠানের ঘোষক বলতে শুরু করলেন, একটু পরে বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক বিজয় সামন্তকে সম্মান জানানো হবে। আপনারা সকলেই জানেন, বিজয় সামন্ত শিক্ষক হিসেবে প্রকৃত অর্থে জীবন গড়ার কারিগর। শুভদিন তার হাতে গড়া সোনার ফসল। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সেলিমকে ডাকা হচ্ছে বিজয়বাবুর হাতে ফুলের ব্যুকে (Bouquet) তুলে দেওয়ার জন্যে।
সেলিমকে আগেই জানানো হয়েছিল। তাই সে ডাক পেয়েই পায়ে পায়ে মঞ্চের উপর উঠে এল। বিজয় সামন্তের হাতে ফুলের ব্যুকে তুলে দিল। চারদিকে হাততালির চড়চড় শব্দে আসর জমে উঠল।
ঘোষক আবার জানালেন, এখন বিজয় সামন্তের হাতে মানপত্র তুলে দেবেন বিদ্যালয়ের মাননীয় সম্পাদক সাগর শাহিন মহাশয়। তাৎক্ষণিক সেই পর্ব শেষ হতেই আবার হাততালির অভিনন্দন আছড়ে পড়ল সভার মধ্যে।
ঘোষক বললেন, বিজয়বাবুকে সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত বোধ করছি। এখন স্যারকে অনুরোধ করছি, বিদ্যালয়ের কথা ভেবে কিছু বলতে যাতে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নতুন স্বপ্ন তৈরি হতে পারে।
বিজয় সামন্ত গম্ভীর মুখে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ালেন। গভীর মনন নিয়ে বলতে শুরু করলেন, আমি ধন্য হয়েছি এই ভেবে যে আপনারা আমার যথাযথ মূল্যায়ণ করতে পেরেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যা দান করাই আমার জীবনব্রত, আমার স্বপ্ন। শুভদিন তার প্রকৃত দৃষ্টান্ত, আমার হাতে গড়া ছাত্র। ওকে বড়ো করে তুলতে নিজেকে তিল তিল করে ব্যয় করেছি। সেই স্বপ্ন বুকে জড়িযে সে আজ এফ আর সি এস ডাক্তার। গ্রামের সম্পদ। নিশ্চয় তার জন্যে আপনারা সকলে গর্বিত, আমিও। আপনাদের আশীর্বাদ সঙ্গে থাকলে শুভদিনের মতো আরও অনেক ছাত্র-ছাত্রী আমার হাত থেকে বের হবে।
মোহমুগ্ধ বক্তব্যের জন্যে বিজয় সামন্ত সকলের দ্বারা অভিনন্দিত হলেন।
ঘোষক আবার বললেন, আপনাদের উচ্ছ্বাস দেখে বুঝতে পারছি, আপনারা বিজয়বাবুকে কত বেশি শ্রদ্ধা করেন। তাঁর প্রিয় ছাত্র শুভদিনকে মঞ্চে আসার জন্যে অনুরোধ করছি। শুভদিন এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। বিদ্যালয়ের অন্যতম ছাত্রী সাহানিকে মঞ্চে ডাকছি শুভদিনের হাতে ফুলের মালা তুলে দেওয়ার জন্যে।
ঘোষক শুভদিনকে অনুরোধ করলেন বড়ো হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে।
শুভদিন মাইক্রোফোনের সামনে এসে বলতে শুরু করল, এ বিদ্যালয় আমার জীবনে সূর্যের মতো। সব আলো পেয়েছি এই প্রতিষ্ঠান থেকে। আগামি দিনে ডাক্তার হিসেবে সাধারণ মানুষকে কতখানি দিতে পারব তা জানিনে। আজকের অনুষ্ঠানে যা পেলাম, তা সারা জীবন মনে থাকবে। একটা ছোট্ট ঘোষণা, বিদ্যালয়ের কলেবরকে বড়ো করে তোলার জন্যে আগামি ছ’মাসের মধ্যে দশ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা মনস্থ করেছি।
ঘোষক মাইক্রোফোনের সামনে এগিয়ে এসে বললেন, বিদ্যালয়ের আর এক কৃতি ছাত্র সত্যজিৎ রুইদাসকে মঞ্চে আসার জন্যে অনুরোধ করছি। খবরের কাগজের ব্যবসা দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল, এখন ইষ্টার্ন রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার। নবম শ্রেণির ফার্স্টবয় রফিকুলকে ডাকছি ফুলের মালা দিয়ে সত্যজিৎ রুইদাসকে বরণ করে নেওয়ার জন্যে।
রফিকুল মঞ্চের উপরে এসে সত্যজিতের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিতে উদ্যত হল কিন্তু তা গ্রহণ না করে সত্যজিৎ বলল, আমি আজ এমন একজন শিক্ষকের গলায় এ মালা পরিয়ে দেব, যাঁর জন্যে আমি জীবনে এভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি।
সাধারণ দর্শকদের মধ্যে কৌতুহল চরমে উঠল। সত্যজিৎ স্টেজ থেকে নেমে এসে দর্শক আসনের দিকে এগিয়ে চলেছে। সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, কোন শিক্ষকের গলায় সত্যজিৎ মালা পরিয়ে দিতে চাচ্ছে?
সত্যজিৎ দর্শক আসনের মাঝে গিয়ে তানুস্যারের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, তানুস্যার আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, আমার পরম গুরুদেব। স্যারের গলায় এই মালা পরিয়ে দিয়ে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ গুরুদক্ষিণা প্রদান করছি। স্যারের হাতে পাঁচলক্ষ টাকা তুলে দিয়ে অনুরোধ করছি, একটা ফ্রি কোচিং সেন্টার গড়ে তুলতে, যেখানে আমার মতো দুস্থঃ ছাত্র-ছাত্রীরা বড়ো হয়ে উঠতে পারবে।
তানুস্যারের বিনীত কথা, সত্যজিতের অনুরোধ মাথায় তুলে নিলাম। প্রিয় ছাত্রের অর্থে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের নাম হবে ‘গুরুদক্ষিণা ফ্রি কোচিং সেন্টার’।
সাগর বিদ্যালয়ের মাননীয় সম্পাদক, ঘোড়েল রাজনীতিক। তালি দিতে দিতে মঞ্চের উপরে উঠে এলেন। মাইক্রোফোন টেনে নিয়ে বললেন, খুব গর্বিত হলাম এই কারণে যে বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানকে কাজে লাগিযে সত্যজিৎ তানুস্যারকে গুরুদক্ষিণা দিতে পেরেছে বলেই। কিন্তু আমি শুভদিনকে নিষেধ করেছি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানকে ব্যক্তিগত প্রচারের কাজে না লাগাতে। আপনাদের একটা সুখবর দিই, আমার ছেলে শুভদিন এফ আর সি এস পাশ করেছে শিক্ষক বিজয় সামন্তের কাছে পড়াশোনা করেই। বড়ো হওয়ার সব মন্ত্র শুভদিন পেয়েছে বিজয়বাবুর কাছ থেকেই। সেজন্যে আগামিকাল সন্ধেয় আমার বাড়ির সামনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। তানুস্যারকে অনুরোধ করছি ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্যে। আপনারাও সকলে সাদরে আমন্ত্রিত।
সম্পাদক সাগরের ভিতরের ভাবনা তখন কিন্তু অন্য পথে ছুটছে। তানুস্যারকে মঞ্চে ডেকে সকলের সামনে বুঝিয়ে দেবেন, আর যাই হোক, তানুস্যার শহর জীবনকে বরণ করে বড়ো হয়ে ওঠা বিজয় সামন্তের মতো কখনো শিল্পীশিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন নি।

চলবে…

আরও পড়ুন: বিবর্ণ অভিযোজন পর্ব- ১০ 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!