বিশ্ব গ্রন্থ দিবসে কিছু ভাবনা

বিশ্বের এমন একটি সময় আমরা অতিবাহিত করছি, যখন মানবিক বিপর্যয়, হিংস্রতা, যুদ্ধ, দাঙ্গা সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত মানুষ, প্রকৃতি, জীবসম্পদ বিনষ্ট হয়ে ভয়াবহ এক বিশ্বের মুখোমুখি হয়ে আছি। এমন সময়ে ক্যাথলিক চার্চ ও ভ্যাটিকান রাজ্যের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের অন্তরালে চিরায়ত হলেন। যিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর লেখা Dilexit Nos, The Joy of the Gospel, Amoris Laetitia, Hope: The Autobiography এসব গ্রন্থে মানবের উন্নত জীবন ও শান্তির অমিয় বাণীতে আলোকিত হয়েছে।

বিশ্বের আরেকজন মহান নেতার কথাও প্রসঙ্গক্রমে নিয়ে আসতে পারি। সর্বহারা মানুষের জন্য বিশ্বে নতুন জীবন ব্যবস্থার জন্য রাষ্ট্রের মতবাদ সৃষ্টি করে তা প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন। মহান নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, যিনি রাষ্ট্রের জনগণের অর্থনৈতিক সাম্য ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রণী বৈষম্য বিলোপের পথ দেখিয়েছেন। তাঁর সংগৃহীত রচনাবলী ৫৪টি খণ্ড, প্রায় প্রত্যেকটি ৬৫০ পৃষ্ঠার। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে বিশ্বের অন্তরালে তিনি চিরায়ত হয়েছেন। উভয়ের মধ্যে বিশ্ব শান্তির বাণী উল্লেখিত হয়েছে। মত ও পথের ভিন্নতা ও ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও তাঁদের মূল বাণীর সাযুজ্যে অভিভূত হতে হয়।

পোপ ফ্রান্সিস মৃত্যুর একদিন পূর্বে ইস্টার সান ডে যে শান্তির বার্তা দেন, তা হলো– অন্যের মতামতের প্রতি সম্মান ছাড়া কখনোই প্রকৃত শান্তি আসতে পারে না। ধর্মীয় স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া শান্তি সম্ভব নয় (সমকাল, ২১.০৪.২০২৫)।” তিনি চলমান বিশ্বের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শান্তির বাণী দিয়ে গেলেন। এই বাণী একজন ধর্মযাজকের হলেও সকলের জন্য, বিশ্বের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পথনির্দেশ করে। লেখক মাত্রই অগ্রসর চিন্তার এবং সমাজ রাষ্ট্রের তথা জনমানুষের কল্যাণে লিখে থাকেন। বিপরীতের মধ্যেও প্রকৃত গ্রন্থ মানব জীবনকে মহিমান্বিত করে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে UNESCO ঘোষিত ‘World Book & Copyright Day’ পালিত হচ্ছে। স্পেনের প্রখ্যাত লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেস তাঁর অগ্রজ গুরু বিশিষ্ট লেখক মিগেল দে সের্বান্তেসের মৃত্যুদিবসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৯২৩ সাল থেকে দিবসটি পালনের সূচনা করেন। ১৯৯৫ সালের ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপনের সূচনা করে।

মিগেল দে সের্বান্তেস স্পেনের বিখ্যাত কবি, নাট্যকার উপন্যাসিক, যাঁর অমর লেখা ডন কিহোতে ( Don Quixote)-র সাথে কমবেশি সকলেই পরিচিত আছেন। এই বিখ্যাত লেখক কারাগারে অন্তরীণ এবং জীবনের কঠিন সময় অতিবাহিত করেছিলেন। ১৬০৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ‘ডন কুইহিতো’ ব্যাপক জীবনের অভিজ্ঞতা, গদ্যশৈলী, চরিত্র চিত্রণের মাধ্যমে বিখ্যাত হয়ে আছে। দার্শনিক সিগমন্ড ফ্রয়েড সের্বান্তেসের ‘দ্য ডায়ালগ অফ দ্য ডগস’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ১৮শতকের রেনেসাঁসের সময়ে তিনি ইংরেজ লেখকদের দ্বারা পুনঃআবিষ্কৃত হয়ে ওঠেন। তাঁকে রোমান, গ্রীক লেখকদের মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।

লক্ষ্য করা যায়, বই দিবসে বিভিন্ন খ্যাতনামা লেখকেরা জন্ম নিয়েছেন। যেমন- সের্গেই প্রোকোফিভ (জন্ম-১৮৯১ সাল, রাশিয়ার প্রখ্যাত সংগীত রচয়িতা, সুরকার এবং পিয়ানোবাদক); হাল্ডর লাক্সনেস (জন্ম- ১৯০২ সাল), নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আইসল্যান্ডিক লেখক ও কবি) প্রমুখ। এই দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন উইলিয়াম শেকসপিয়র (মৃত্যু ১৬১৬ সাল। ইংরেজি সাহিত্য তথা বিশ্বসাহিত্যের প্রথম সারির নাট্যকার ও সাহিত্যিক।) ; মিগেল দে থের্ভান্তেস ( মৃ. ১৬১৬, স্পেনীয় ঔপন্যাসিক, কবি ও নাট্যকার।); উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ (মৃ. ১৮৫০, অন্যতম ইংরেজ রোমান্টিক কবি।); নেপালি ভাষার আদি কবি ভানুভক্ত আচার্য। (জ. ১৮১৪- মৃ ১৮৬৮), রুপার্ট ব্রুক (মৃ. ১৯১৫, ইংরেজ কবি।); বাঙালি বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ও প্রাবন্ধিক অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ (মৃ. ১৯৪০); ভারত-রত্ন সত্যজিৎ রায় (মৃ.১৯৯২, বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালক, সাহিত্যিক, চিত্রকর)। ফলে ইউনেস্কোর কর্তৃক ঘোষিত বই দিবস যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা যেতে পারে।

বিশ্ব গ্রন্থ দিবসে নিজের লেখা বই, সাময়িকীগুলো দেখছি। কোন কোন প্রবন্ধ পুর্নপাঠ করে আরো কি কি সংযোজন করা যায়, তার কিছু নোট লিপিবদ্ধ করেছি। নিজের যেসব গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য: কাব্যগ্রন্থ – কালের নটরাজ, গৌড়ীয় প্রেমলিপি, অমৃতের প্রেয়সী, মা ও মনপাখি; প্রবন্ধ গ্রন্থ– প্রবন্ধ সংগ্রহ-১, রামমোহন রায় সমাজ ও সাহিত্য, আধুনিক বাঙালি রামমোহন রায়, বাঙালির আত্মপরিচয় ও অন্যান্য; উপন্যাস– জয়জয়ন্তী; ছোট গল্পগ্রন্থ– আর্যসত্য; সম্পাদিত… গবেষণা পত্রিকা সুন্দরমে’র তিনটি সংখ্যা, বঙ্গীয় সাময়িকী, সাহিত্যমনীষী সেলিনা হোসেনসহ কিছু সম্পাদিত বই; এছাড়াও বঙ্গীয় ইশতেহার, বঙ্গীয়’র বিভিন্ন বুকলেট; স্মৃতিতে সেইসব দৃশ্য ভেসে উঠছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশিত দেড় শতাধিক প্রবন্ধের শ্রেণী বিন্যাস করেছি। তারমধ্যে– ১. কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ২. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ৩. বেগম রোকেয়া, সিস্টার নিবেদিতাসহ নারী বিষয়ক প্রবন্ধ, ৪. রাজনৈতিক সাহিত্য, ৫. বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, ৫. আদি প্রাচ্যের সাহিত্য, দর্শন, ৬. তৃতীয় সাম্রাজ্যবাদ, ৭. সুফী-বৈষ্ণব-শাক্ত বিষয়ক প্রবন্ধ, ৭. কার্ল মার্কস, লেনিন বিষয়ক প্রবন্ধ, ৮. বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে লেখা প্রবন্ধ, ৯. সংগীত, নৃত্য, নাট্যকলা বিষয়ক প্রবন্ধ, ১০. আব্দুল হক, সিরাজ সিকদারসহ প্রগতিশীলদের নিয়ে নিবেদিত লেখাসমূহ, ইত্যাদি।

বঙ্গীয়’র কার্যক্রম করতে গিয়ে সাংগঠনিক কাজে দেশ বিদেশের নানা অঞ্চলের লেখক, কবি, শিল্পী, গবেষক, চিন্তকসহ বহুজনমানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান তাঁদের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে। আমার অন্তর অনুভব করে ব্যাসদেব, বাল্মিকী, কৌটিল্য, সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, খনা, কালিদাস, আলেকজান্ডার, বার্টান্ড রাসেল, উইলিয়াম শেক্সপিয়র, কার্ল মার্কস, এঙ্গেলস, টলস্টয়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লেনিন, ডারউইন, আইনস্টাইন, মাও সে তুঙ, টি এস এলিয়ট, বোদলেয়র, কাজী নজরুল ইসলাম সহ প্রমুখের সৃষ্টিশীলতায়। পর্যবেক্ষণ করেছি, করছি সমাজের পরিবর্তন।

পাশ্চাত্যের বহু লেখক , কবি, রাজনীতিক‌ আছেন, তাঁদের নিয়ে কিছু বই পাঠ করেছি। সেসব পরে উল্লেখ করব।
তবে উপলব্ধি করি, মহানবী হযরত মুহম্মদ (স), গৌতম বুদ্ধ, যীশুখ্রিস্ট, হযরত মুসা(আ)-এর কিতাব, ধর্মগ্রন্থ ও তাঁদের বাণী সমূহ। বিস্ময়করভাবে মানব জাতির কল্যাণে মহামানবদের জীবন আদর্শ, ভাবনা যুগ থেকে যুগে বহমান হয়েছে। ধর্মে ধর্মে বিভেদ পরিহার করে সকল ধর্মের জনমানুষ ও মুক্তচিন্তার মানুষেরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার মানসিকতার বাস্তবায়ন হওয়া খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ, সন্ত্রাস, নৃশংসতার ইতিহাসের মাধ্যমে ভয়ংকর একট বিশ্ব সৃষ্টি হয়ে গেছে। যার ফলে সমাজের অভ্যন্তরে জনমানুষের জীবনবোধ, লোকজ শিল্প, উৎসব, উৎপাদন প্রক্রিয়া, কৃষিব্যবস্থা, ক্ষুদ্র শিল্প, সামাজিক ঘটনা, বিদ্রোহ, বিক্ষোভ, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বৈচিত্র্যময় রাষ্ট্রের উপাখ্যানের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অখণ্ড ভারতবর্ষ ও বাংলার সংস্কৃতিকে বিশ্ব পরিসরে মর্যাদার সাথে স্থাপন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। এই আদর্শ আমাদের অন্তরকে আলোকিত করে রাখে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী চেতনায় বাঙালিরা শক্তি ফিরে পেয়েছে। নবজাগরণের জন্য বই দিবস বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের সাম্যব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য নবজাগরণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের বিধি ব্যবস্থায় শ্রেণি বৈষম্য প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে গেছে। সাহিত্য সংস্কৃতি অর্থনীতি সমাজ দর্শন বিজ্ঞান সহ সকল ক্ষেত্রে সক্ষমতার জন্য জ্ঞানের চর্চা বাড়াতে হবে। বৃহৎ শিল্প সৃষ্টি করতে হবে। এসবের জন্য বই প্রয়োজন এবং প্রকৃত বই সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিনির্মাণে পথ দেখায়।

বাংলার মানুষকে অতীতের শক্তি নিয়ে পুনরায় বৃহৎ শক্তি সৃষ্টি করতে হবে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলায় জাগরণ করাতে হলে প্রথমেই শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। জ্ঞানের চর্চায় আধুনিক ভাবনার বইকে যুক্ত করতে হবে। শ্রমজীবী কৃষক শ্রমিকের জীবন ব্যবস্থায় বৈষম্য বিলোপ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে।

বই দিবসে কি পড়বেন, কেন পড়বেন, সেটাই বিবেচ্য হতে পারে। তবে সমৃদ্ধ বই জীবনকে উন্নত করে। দেশ বিদেশের বই পড়ার অভ্যাস থাকলে মুক্তচিন্তার প্রসার ঘটবে।
বই পড়ব। ‘বিশ্ব গ্রন্থ দিবসে’ কি বই পাঠ করবেন?
বই নির্বাচন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বই নামক আবর্জনা প্রচুর প্রকাশিত হচ্ছে। সেসব বই মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়। বাংলা একাডেমি গ্রন্থমেলায় শিশু কিশোরদের জন্য প্রকাশিত কিছু বই দেখে হতাশ হয়েছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে ভূতে আচ্ছন্ন অসার বই, উদ্ভট রঙের কিম্ভূতকিমাকারে কিছু কিছু প্রকাশিত হয়েছে, তা ভুলে ভরা আবর্জনার মতো মনে হয়েছে । আরও কিছু বই প্রকাশনা দেখেছি বানান, বাক্যগঠন, তথ্য ও বিশ্লেষণ অত্যন্ত নিম্নমানের বলে মনে হয়েছে। কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্পের বইও কিছু দেখেছি। তড়িঘড়ি করে বই উৎপাদন করে লেখক হবার প্রবণতা পরিহার করাই উত্তম। তবে আমি আনন্দিত হই, তরুণ, নতুন লেখকদের গ্রন্থ প্রকাশিত হলে। তাদের আকাঙ্খাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আশা করি তাঁরা সাধনার দ্বারা মহৎ সৃষ্টিকর্মে নিয়োজিত থাকবেন।

বই জ্ঞানের ভাণ্ডার। বই সৃজনশীলতার বহুমাত্রিক প্রকাশের শিল্প। একথা সত্য যে, সমাজে রূচি ও সৃজনশীলতার পচন ধরেছে। মূর্খ কূপমন্ডুকদের জয় জয়কারে প্রকৃত লেখকরা নির্বাসিত হয়ে আছে। সরকারের সৃজনশীল বই সংগ্রহ তালিকায় সরকারের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ২০/২১ টা অপাঠযোগ্য নিজের বই সরকারের ক্রয় তালিকায় সংযোজন করেছিলেন। সেই সংবাদ দেখে হতবাক ও বিস্মিত হয়েছিলাম। কোন কোন সময় আমলা লেখকদের বই ক্রয়ের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মচারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে প্ররোচিত করেছেন। পাঠ্য পুস্তককে নিয়ে বিভিন্ন বছরে যেসব তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

লেখকরা জীবন কর্মে কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকুরীজীবী, কেউ পেশাজীবী, কেউ স্বেচ্ছা-স্বাধীন হয়ে লেখালেখি করছেন। বই ও মেধাস্বত্ব দিবসের আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি জাতীয় বিষয়াদি নিয়ে সমৃদ্ধ আলোচনা লক্ষ্য করা যায় না। দেশে বিদেশে প্রচুর বইমেলার কথা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পারি। এসব মেলায় বাংলাদেশের কিছু প্রকাশকরা অংশ নিচ্ছেন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলার বিস্তার বিস্তৃতি প্রসার হয়েছে। প্রতি বছর নতুন নতুন লেখক, কবি এবং প্রকাশকের আর্বিভাব ঘটছে। এটা আনন্দের বিষয়। তবে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু কিছু বই রিভিউ হওয়া প্রয়োজন। রিভিউ অর্থ মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা নয়। বইয়ের মাধ্যমে লেখক তাঁর মতামত উপস্থাপন করার স্বাধীনতাকে কোনভাবেই খর্ব করা উচিত নয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, বিভিন্ন পুরস্কারে থালা, বাটি, প্লেট ইত্যাদি দেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই দেয়াটাই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করি। শিক্ষার্থীদের জন্য কি বই/ কোন বই দেয়া হবে, তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঠিক করে নেবেন। বিশ্ব গ্রন্থ দিবসে বেশ কিছু বই সংগ্রহ তালিকায় যুক্ত করতে পেরেছি। দুর্লভ কিছু বই পুরানো বই বিক্রেতাদের মাধ্যমে, নতুন বই অনলাইনে সংগ্রহ করে দিবসটি স্মরণ করে রাখলাম। সংগৃহিত কিছু বই– মহানবী- সৈয়দ আলী আহসান, অগ্নিযুগ- শৈলেশ দে(সম্পাদক), রবীন্দ্রনাথ স্বদেশী আন্দোলন ও ভাণ্ডার পত্রিকা- প্রত্যূষকুমার রীত, নজরুল-চরিতামানস – ড. সুশীলকুমার গুপ্ত, রাষ্ট্রের মালিকানা- সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, পাঁচটি উপন্যাস- মহেশ্বতা দেবী।

সুন্দরবনের সভ্যতা ও লোকসংস্কৃতি অন্বেষণ- ড. দেবব্রত লস্কর, রেনেসাঁসের আলোকে হেনরী লুই ডিভিয়ান ডিরোজিও- শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়, বাঙলা ভাগ হলো- জয়া চ্যাটার্জী, দেশভাগ, দাঙ্গা ও হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক- অর্জুন গোস্বামী।
Selected Works- Marx-Engels, Rammohun Roy and Progress Movement In India- Sadharan Brahmo Samaj, The Kingdom of God And Peace Essays- Leo Tolstoy, An Enemy of the People- Henrik Ibsen, On Britain- Lenin, Cultural Anthropology- Melville J. Herskovits. The Anarchy- William Dairymple, Hagemony or Survival- Noam Chomsky, Godchildren- Nicholas Coleridge, Culture and Society- Barton M. Schwartz & Robert H. Ewald, Women, Development, and the UN- Devaki Jain, Terrorism- Howard, Diplomacy- Henry kissinger.The Leader of the Future- Hesselbein Goldsmith, How to Meditate- Doriel Hall, এবং Diplomatic Journal- Sazzad Hider (Editor), দেয়াঙ (ধান সংখ্যা)- মাহমুদ নোমান (সম্পাদক)।

বিশ্ব গ্রন্থ দিবসে জ্ঞান সাধনাই লক্ষ্য হোক। লেখকগণ সমৃদ্ধ লেখার দ্বারা বিশ্বশান্তির জন্য অব্যাহত চেষ্টা করবেন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নৈরাজ্য, হিংস্রতা পরিহার করে শিল্পের প্রসার, তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন করাতে হবে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সংস্কারমুক্ত হয়ে বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপের দ্বারা অর্থনৈতিক সাম্য সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে চালিত হবার জন্য গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে মানসিক শক্তি অর্জন করবে বলে বিশ্বাস করি। বিশ্ব অর্থনীতিতে তৃতীয় সাম্রাজ্যবাদের বাজার উপনিবেশ সৃষ্টির লড়াইয়ে বিশ্ব বিপণ্ন হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সংঘাত, আঞ্চলিক সংকট, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, অর্থনৈতিক অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা, সামরিক যুদ্ধ ইত্যাদির যে উত্থান ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বের লেখকগণ সম্মিলিতভাবে লেখার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করাতে পারে। বিশ্বে বিরাজমান আধিপত্যবাদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় মুক্তির অব্যাহত প্রয়াসে নিরস্ত্রীকরণ, সামরিক অস্ত্র কারখানা সীমিতকরণ, বিধ্বংসী এটম বোমার দুর্বিনীত অধ্যায়ের অবসান হওয়া অত্যন্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

বিশ্বগ্রন্থ দিবস অমর হোক। পাঠ করুন, জ্ঞানের পথে থাকুন, নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করুন।

আর সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো আমরাও সমস্বরে বলতে পারি–
নোংরা, লোভী ও ভোগী রহিবে না শুদ্ধ এ পৃথিবীতে,
এ আবর্জনা পু’ড়ে ছাই হবে নরকের চুল্লীতে। (শোধ করো ঋণ);
আরেকটি কবিতা ‘ভয় করিও না, হে মানবাত্মা’য় পাই–
‘ভয় নাহি, নাহি ভয়!
মিথ্যা হইবে ক্ষয়!
সত্য লভিবে জয়!’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!