বিবর্ণ অভিযোজন: পর্ব-১০

উপন্যাসিক মুসা আলি’র ‘বিবর্ণ অভিযোজন’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এই উপন্যাসে শিক্ষকের পিতৃত্ব একজন ছাত্রের জীবনকে কত বেশি উদ্বেলিত করে তুলতে পারে, সেই অনুভূতির বিস্তার ঘটেছে এ উপন্যাসের পাতায় পাতায়, পরতে পরতে। পড়তে পড়তে আপনি আপনার প্রিয় শিক্ষককে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন।

।। দশম পর্ব ।।

সময়ের ছন্দ জীবনের গতিকে কীভাবে আমূল পরিবর্তন করে দেয়, তা নিয়ে আমরা অনেকেই খোঁজখবর রাখিনা। কেউ কেউ শুধুমাত্র অতীত ছুঁয়ে পড়ে থাকে। অনেকেই শুধু বর্তমানকে আঁকড়ে ধরে থাকতে ভালোবাসে। তাদের মাথায় ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকে না। মূল যুক্তি, অত দূরের অবস্থান নিয়ে ভাবতে যাব কেন ? তিন কালকে এক করে দেখার লোক এ সমাজে খুব কম।
সম্পাদক সাগর শুধুমাত্র বর্তমানের। ছেলে শুভদিন জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে শেষ পর্যন্ত লন্ডনে যেতে পেরেছে এফ আর সি এস কোর্স সম্পন্ন করতে। লিজা তাকে গড়ে তোলার জন্যে কী ভাবে তানুস্যারের কাছে স্যারেন্ডার করেছিল, তা সাগর কোনোদিন জানতে চান নি। তাছাড়া এত আগেকার স্মৃতি সাগরের মতো উদ্যত মানুষ মনে রাখতে যাবেন কেন? আজও তিনি পূর্বের মতো একগুঁয়ে। ঠিক করে রেখেছেন, শুভদিন এফ আর সি এস পাশ করে বাড়িতে ফিরলে অন্তত তানুস্যারকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া সম্ভব হবে।
সোমবার সকালে ডাক পিয়ন এসে চিঠিটা দিয়ে যাবার পরে বারনামা দেখে তানুস্যার বুঝে গেলেন, শুভদিন তাকে ভুলে যায়নি। এত বছর পরেও আগেকার স্মৃতি তার জীবনে জীবন্ত হয়ে রয়েছে। না হলে সে এভাবে পত্র পাঠাতে পারত না। শুধু ভাবলেন, শিক্ষক জীবনে এর চেয়ে বড়ো পাওনা আর কিছুই হতে পারে না। মেয়ে ফিজা এম এ-তে প্রথম শ্রেণি পেয়ে পি এইচ ডি করছে। সে অধ্যাপনা করতে চায়। তাকে সামনে পেয়ে তানুস্যার বললেন, কে পত্র পাঠিয়েছে জানিস?
সবে তো শুনলাম ?
এই দ্যাখ, শুভদিন লন্ডন থেকে পত্র লিখেছে আমাকে উদ্দেশ্য করে। সকলে ভুলে যায় না রে মা। ও এফ আর সি এস পাশ করেছে। পত্রে লিখেছে, প্রথমে আমাদের বাড়িতে আসবে আমার আশীর্বাদ নিতে। কত পুরনো স্মৃতি খুব করে মনে পড়ছে রে।।
তাহলে শুভদিন আজও গুরুদক্ষিণা দিতে এতটুকু ভুল করল না? জানো বাপি, ছাত্র ভাবশিষ্য হয়ে গেলে সামনাসামনি যে আনুগত্য দেখায়, তাকেই গুরুদক্ষিণা বলে।
তানুস্যার আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষ, বললেন, ও সব কথা থাক মা। পত্রে লিখেছে, ও প্লেনে উঠেছে। কাল সকালে নামবে। তারপর সোজা চলে আসবে আমাদের বাড়িতে। সমস্যা হল, ওকে বাড়িতে বসিয়ে রেখে তোকে বাজারে পাঠিয়ে মিষ্টি আনতে পাঠানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বরং ভালো হয়, তুই যদি এখন বাজারে গিয়ে কেনাকাটা সেরে ফেলতে পারিস।
সেটাই ভালো হবে বাপি। তাহলে শুভদিনের উপস্থিতিতে আমাদের আর ব্যস্ত হতে হবে না। এখন কী বাজারে যাব?
যেতে চাস, যা।
টাকা দাও, কী কী কিনে আনতে হবে বলো?
ঘরের ভিতরে যা, আমার বুক পকেটে টাকা রয়েছে, যা লাগে নিয়ে যা।
কী কী কিনে আনতে হবে, তা তো বললে না।
ওটা তোর উপর ছেড়ে দিলুম। শুভদিন পুতুল ভেঙে দিয়েছিল, তুই কেঁদেছিলি। শুভ আবার তোকে পুতুল কিনে এনে দিয়েছিল। এসব আমার মনে আছে রে।
শুনতে শুনতে ফিজা বিহ্বল না হয়ে পারল না। একটা ক্ষীণ দুর্বলতা মন্দ গতির বলের মতো মনের তলানিতে গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে। ফিজা নিজস্ব ইচ্ছার জোরে তা উড়িয়ে দিতেও চাইল। এ তো জীবনের একটা স্মৃতি ছাড়া কিছুই নয়। তা নিয়ে তাকে এভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে হবে কেন? তাছাড়া যুক্তির নিরিখের যে আলো তা ভিন্ন তাৎপর্য প্রকাশ করছে। আবেগ আর যুক্তির যে টানাপোনেন তা ফিজার মনের আকাশ মেঘলা করে রাখলেও হাওয়ার গতিবেগে মেঘ ফুঁড়ে শুভদিনের মুখটা মাঝে মাঝে ভেসে উঠছে। মানুষের জীবনে স্মৃতির বিড়ম্বনা কী এমনিই?
বাজারে বেশি দেরি করল না ফিজা। অন্য কোনো দরকারও ছিল না। সন্ধের আগে মিষ্টির প্যাকেট হাতে বাড়িতে ফিরে এল। ঘরের ভিতরে ঢুকল টেবিলের উপর রাখার জন্যে। শুভদিন যে পত্রটা পাঠিয়েছে, সেটাও সেই টেবিলের উপর ছিল। ফিজা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। শুভদিন সম্পর্কে নানা কল্পনা জেগে উঠেছে ফিজার মধ্যে। শুভদিন তাকে দেখে কী চিনতে পারবে? সে কী আজও অতীতের স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে পেরেছে? পড়তে পড়তে শুভদিনের সঙ্গে কত মজা করেছিল সে। সে সব কী তার মনে আছে? দু’জনে অনেকদিন খাবার ভাগ করে খেয়েছিল। শুভদিনের স্মৃতিতে সেসব বেঁচে আছে তো? মাঝে মাঝে বাপির ফিরতে দেরি হলে দু’জনে বসে গল্পে গল্পে মজে থেকেছে। সেই স্মৃতি শুভদিনের মনে আছে কী? সে ক্লাশে প্রথম হলেও শুভদিন তা নিয়ে এতটুকু মন খারাপ করেনি। বরং পরের দিন তার হাতে একটা টাটকা লাল গোলাপ গুঁজে দিয়ে বলেছিল, গর্বিত হয়েছি, ছোটো উপহার, ভুলে না গেলে খুশি হব।
ভাবনার খরস্রোতে উদ্বেলিত হতে হতে ফিজা শুভদিনের লেখা পত্রটা নিজের হাতে তুলে নিল। পড়তেও শুরু করল।
শ্রদ্ধেয় স্যার, আপনার আশীর্বাদ মাথার উপর না থাকলে আমার পক্ষে এফ আর সি এস পাশ করা সম্ভব হত না। আমার জীবনকে মূল পথে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রকৃত পথিকৃৎ আপনিই। বড়ো হওয়ার স্বপ্ন মানুষের জীবনকে কত বেশি সার্থকতায় ভরিয়ে তুলতে পারে, তার অন্যতম ভালো উদাহরণ আমি নিজেই হয়ে উঠতে পেরেছি। ফলাফল হাতে পেয়ে সবচেয়ে বেশি করে মনে পড়েছে আপনাকে। পুরনো ফেলে আসা অনেক স্মৃতি হঠাৎ করে সজীব হয়ে উঠেছে। মনের আয়নায় আপনাকে দেখতে পেয়েছি অনেকবার। রেজাল্ট হাতে পেয়ে কল্পনায় ভেসে আপনার পায়ের কাছে থপ করে বসে পড়েছি। এ ঋণ জীবনে কোনোদিন শোধ করতে পারব না স্যার।
দ্বিতীয় প্যারার দিকে চোখ রেখে ফিজা বুঝতে পারল, তাকে উদ্দেশ্য করে শুভদিন আরও অনেক কিছু লিখেছে। তাহলে বাপি চিঠি পড়ার পর তাকে এ নিয়ে কিছু বলল না কেন? বাপি কী চায় না শুভদিনের ইচ্ছার বাস্তব প্রকাশ তাকে না দেখাতে?
দ্বিতীয় প্যারায় আলাদা হেডিং করে শুভদিন লিখেছে—

প্রিয় ফিজা,
অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই বলেই হয়তো ভাবছ, আমি তোমাকে ভুলে গিয়েছি। দেখা হলেও চিনতে পারব না। এ ধারণা একেবারেই ভুল। দূরে থাকলে তবেই বোঝা যায়, কে কত বেশি আপন। রাতের স্বপ্নে তুমি এসে আমাকে জাগিয়ে তুলেছ। বকে দিয়েছ ঘুম কাতুরে হয়েছি বলে। হয়তো এসব অলিক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু যাকে ভাবি, কেবল সেই আসতে পারে স্বপ্নের বিভাবরি হয়ে। জীবনে এর চেয়ে বড়ো বাস্তবতা তো আর কিছুই হতে পারে না। যে ফুল সকালে ফোটে, নির্দিষ্ট সময়ের পরে তা ঝরে যায় কিন্তু তার শোভা, সৌন্দর্য সুভাস সবই মনের ভিতরে লেগে থাকে অনন্ত স্মৃতি হয়ে। আমিও দূরে থেকে রোজ রোজ তোমার শোভা সুগন্ধ অনুভব করেছি। স্যারকে জীবনে কোনোদিন ভুলতে পারব না। তাই ঠিক করেছি, স্যারের আশীর্বাদ নিয়েই বাড়িতে ফিরব।
ইতি—
শুভদিন।

তানু স্যার বারান্দার উপরে উঠে দেখলেন, ফিজা কম্পিত শরীর নিয়ে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে। মেয়ের শরীরী ভাষা প্রকাশ করছে যে ইতিমধ্যে সে চিঠিটা পড়ে ফেলেছে। যে ভয়ে তানুস্যার পত্রটা ফিজাকে দেখাতে চায়নি, সেই ভয় প্রবলতর হয়ে উঠল। ফিজা জানে না, এ তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে সম্পাদক সাগর কত বেশি রুষ্ট হয়ে উঠতে পারেন। হয়তো এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করবেন যা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। তবুও তানুস্যার ভাবতে বাধ্য হলেন এই অর্থে যে শুধু স্মৃতির ঐতিহ্য রক্ষা করতে গিয়ে শুভদিন ফিজাকে আজও ভুলতে পারেনি।
[ ১৬ ]
সাগরের সম্মতিক্রমে গাবলু ঠিক সময়ে জয়নগর স্টেশনে উপস্তিত হল। মিনিট দশেক পরে ট্রেন ঢুকবে। এ্যারোপ্লেন দেরিতে ছাড়ার কারণে শুভদিন সকালের পরিবর্তে দুপুর একটায় নামবে দমদম এয়ারপোর্টে। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে শিয়ালদহ। তারপর ট্রেনে। চারটে পর্যন্ত জয়নগর স্টেশনে। গাবলু বেশ কিছু সময় স্টেশনে দাঁড়িয়ে বিশেষ ধন্দে বুঁদ হয়ে থাকল। কেবল মনে হতে থাকল, শুভদিন কী তাকে চিনতে পারবে? এমনিতেই ফর্সা ছেলে। সুদর্শন চেহারার। ইংল্যান্ডে থেকে নিশ্চয় সাহেবি ঢং নিয়ে ফিরছে। প্যান্ট, সার্ট, কোট, টাই, মাথায় টুপি এ সব থাকবেই। চোখে দামি রোদ চশমাও থাকতে পারে।
শুভদিন জয়নগর স্টেশনে নামল নির্দিষ্ট সময়েই। আগের মতো ট্রেন আজকাল দেরিতে চলে না। এ নিয়ে রেলমন্ত্রকের সচেতনতা চোখে পড়ার মতো। শুভদিন দু’চোখ ভরে বাংলার নিজস্ব প্রাকৃতিক শোভা দেখতে দেখতে বিহ্বল হয়ে পড়ল। কী অপরূপ শোভা নিয়ে নিসর্গ প্রকৃতি মানুষের দু’চোখ শোভিত করে চলেছে। শুভদিন মাথা নত করে সম্ভাষণ জানালো বাংলার প্রকৃতিকে। অভিভূত হল এই ভেবে যে বাংলা এত অপরূপ, এত সুন্দর, এত মনোলোভা।
গাবলু এসে দাঁড়ালো শুভদিনের সামনে।
শুভদিনের সাদর সম্ভাষণ, বেশ তো রোগা হয়ে গেছ।
এখন থেকে মোটা হতে শুরু করব দাদাবাবু।
কী করে?
তোমার কাছে মোটা হওয়ার ওষুধ খাবো।
গাবলুদা, আমাকে দাদাবাবু বলে ডাকবে না, শুভদিন বলে ডাকবে।
কী যে বলো তুমি? এত বড়ো বিলেত ফেরত ডাক্তার। নাম ধরে ডেকে ছোটো করতে যাব কেন?
এ সব বলে আমাকে লজ্জা দিও না গাবলুদা। ভাবছ কী, বিলেতে ছিলুম বলে নিজেকে পাল্টে নিয়েছি। একদম তা নয়। তোমার কাছে শুভদিন ছিলাম, এখনও তাই আছি। তারপর বলো, বাড়িতে সবাই ভালো আছে? বাপি, মা? মাষ্টারমশাই?
তুমি ঠিক কথা মনে করিয়ে দিলে শুভদিন। কর্তাবাবু বলে পাঠিয়েছেন, ফেরার পথে তুমি যেন বিজয়স্যারের আশীর্বাদ নিতে ভুল না করো।
বাপি এরকম বলেছেন নাকি?
আমি জানি শুভদিন, তুমি বিজয়স্যারের ছাত্র। তোমাকে বেশ সাহেব সাহেব লাগছে। দেখে আমার মনটা ভরে উঠল। এরকম ভেবেছিলুম গো।
জানো গাবলুদা, ডাক্তারি পড়ার প্রয়োজনে ইংল্যান্ড যেতে হয়েছিল আমাকে। কিন্তু আজও মনে প্রাণে বাঙালি হয়েই আছি। ইংল্যান্ডে গেলেই সাহেব হতে হবে কেন? ইতিহাস পড়ে জেনেছি, দেশকে স্বাধীন করতে অনেক রক্ত ঝরেছে, অকাতরে ক্ষুদিরামের মতো অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। সেই প্রাণ নিয়েছে ইংরেজরা।
গাবলু এসব শুনতে শুনতে অবাক না হয়ে পারল না। এমনকী, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল। শুভদিনের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পেল না সে। বার বার ভাবতে লাগল, একজন এফ আর সি এস পাশ ডাক্তার তাকে নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিয়ে দিল? আবেগের প্রবল তোড়ে একবার কেঁদেও ফেলল। দাবির অতিরিক্ত পাওনা হঠাৎ চলে এলে এভাবেই কেঁদে মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে। সেই কান্না ঝরে পড়ল গাবলুর দুচোখে।
শুভদিন গাবলুর কাঁধে হাত রেখে বলল, আজ রাতে তোমার পাশে বসে জমাটি খাওয়া দাওয়া করব, বড়ো রুইমাছ কিনে নাও। সবার জন্যে একটা করে ইয়া পিস, আমি একটা, তুমি একটা, বাপি একটা, মা একটা। একসাথে বসে কতদিন মাছের ঝোল খাইনি। লন্ডনে এসব সহজে পাওয়াও যায় না।
শিক্ষক বিজয় সামন্ত ইতিমধ্যে সাগরের মাধ্যমে জেনে ফেলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করেই শুভদিন বাড়িতে ফিরবে। এমন কী শুভদিনের সৌজন্যে যে গ্রান্ড পার্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানেও তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত। মনে মনে বেশ গর্ব অনুভব করতে লাগলেন। এক অভূতপূর্ব সম্মানপ্রাপ্তি। শিক্ষক জীবনের এক বিরল অবস্থান লাভ। মনে মনে ভেবে নিলেন, এমনি সোনা ঝরা মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে শুভদিনের সঙ্গে সাহানির বিয়ের প্রস্তাবটা সামনে আনা যেতেই পারে। একটাই সমস্যা, মেয়েটি আজও উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পার হতে পারল না।
ভাবনার ফাঁক গলে বিজয় সামন্ত সামনে চেয়ে দেখলেন, মন মরা হয়ে সাহানি তার বাসার দিকে এগিয়ে আসছে।
কী খবর রে সাহানি ?
স্যার, এ বছরও হয়নি। আপনার সাজেশন কোনো কাজে আসে নি।
তোর ফলাফল আমাকে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ফেলে দিল সাহানি।
কেন স্যার?
আজ তো শুভদিনের পার্টি, ভেবেছিলুম, ওখানে তোর সঙ্গে ওর বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়ে দেব কিন্তু তা সম্ভব হবে কী? এখন তোর উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
আমাকে কী করতে হবে বলুন?
শুভদিন বিলেত থেকে ফিরছে সাহেবি রঙিন মন নিয়ে। এখানে ফিরলেও তার মন পড়ে থাকবে ইংল্যান্ডের উলঙ্গ রোমান্টিক পরিবেশে। সেই সুযোগটুকু কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজন হলে ওর কাছে নিজেকে উজাড় করে দিতে কুণ্ঠা করবি নে। তাতেই দেখবি, সমস্যার ষোল আনা সমাধানে এসে গেছে। শুভদিন রাজি হলে তো কারুর কিছু করার থাকবে না।
ঠিক বলেছেন স্যার। তাহলে তো আমাকে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
কোনো কিন্তু করবি নে। শুভদিন যেন ভাবতে পারে যে একটা ফর্সা মেয়ের পরিবর্তে তুই অদ্বিতীয় বিকল্প হয়ে উঠতে পেরেছিস। মানে বলছি কী, যে ফুলে যে সন্তুষ্ট হয়, তাকেই সেই ফুল দিয়ে পুজো করতে হবে।
স্যার, আমাকে শুধু সাহস দিন।
তুই পারবি সাহানি। প্রার্থণা করি কামনার যুদ্ধে জয়ী হ। শুভদিন তোর কাছে চিরদিনের হয়ে উঠুক। পড়ানোর ঘরে একটু অপেক্ষা কর। শুভদিনের এখানে আসার কথা ছিল, পথে দেরি হওয়ার কারণে বোধ হয় তা সম্ভব হচ্ছে না। একেবারে পার্টিতে এসে যোগ দেবে।।
সাহানি পড়ার ঘরে বসে শুভদিনের মনের জোয়ারে ভেসে যেতে থাকল। নিজস্ব কল্পলোকে দাঁড়িয়ে কল্পনার পানসিতে সাহানি ভেসে চলেছে কেবলমাত্র শুভদিনের সঙ্গে।
মাত্র মিনিট পাঁচেক গেল বিজয় সামন্তের রেডি হতে। পড়ার ঘরের সামনে এসে বললেন, সাহানি, মনের প্রস্তুতি সেরে ফেলতে পেরেছিস তো?
মুহূর্তে সাহানির সমস্ত শরীর কম্পিত হয়ে উঠল। কল্পলোকের সব স্বপ্ন নিজস্ব শরীরী কম্পনে ঝরে পড়ল স্বয়ং বিজয় সামন্তের সামনে।

চলবে…

আরও পড়ুন: বিবর্ণ অভিযোজন পর্ব- নয় 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!