ক্যানাডার মনট্রিয়ালে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘Global Alliance Against Atrocity And Violence on Humanity (GAVH)” নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। গত ২২ ডিসেম্বর ৫৩তম বিজয় দিবসের আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপনের মধ্য দিয়ে এই সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
মনট্রিয়ালে সুপরিচিত সংগঠক ইশরাত আলমকে চেয়ারপারসন, রুপা বড়ুয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও সাহাব উদ্দিন ও খাদিজা লীনাকে সহ-সভাপতি সাফওয়ানুল করিমকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, অলক চক্রবর্তীকে অর্থ সম্পাদক, দীপান্বিতা মুৎসুদ্দিকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সঞ্জয় মৎসুদ্দিকে সদস্য এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম ঈসমাইল ও এমডি আনিসুজ্জামান সার্জনকে এক্সিকিউটিভ সদস্য হিসেবে মোট এগারো সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়াও পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ক্যানাডা মন্ট্রিয়াল উপদেষ্টা কমিটিতে রয়েছেন মমতা দত্ত, সরোজ কুমার দাস, সুকান্ত বড়ুয়া, নমিতা দত্ত, সুশান্ত বড়ুয়া।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদদের স্মরনার্থে ১ মিনিট নীরবতা পালন ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে ইশরাত আলমকে সাধুবাদ জানান এবং দেশের বর্তমান দুর্বিষহ অস্থিতিশীল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে; ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান, প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, লেখক তাজুল মোহাম্মদ। সংগঠনের সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহিবুর রহমান, মুন্সী বশির ও সাজ্জাদ হোসেন সুইট। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ক্যানাডায় বসবাসরত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়াও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংগঠনের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন মাইনুল হাসান, বজলুর রশিদ, মেহেদী রাসেল, জেবুল হাসান, দিদার ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম ইসমাইল, সাংবাদিক নাসিম, সুশান্ত বড়ুয়া, সুকান্ত বড়ুয়া।
গ্লোবাল এলায়েন্স এর চেয়ারপারসন ইশরাত আলম বলেন, গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে জনগণকে প্রতারিত করে উগ্র ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সরকারের পতন ঘটিয়ে তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামে একটি মৌলবাদী ক্রিয়ানক সরকার প্রতিষ্ঠা করে। এই সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে উগ্র ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, দখল, জ্বালাও পোড়াও সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ সকল দুর্বৃত্তদের প্রধান লক্ষ্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, মুক্ত চিন্তার মানুষ, শিল্প-সংস্কৃতি ও আধুনিক শিক্ষা। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি ত্রিশ লাখ আত্মবলিদানের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে সংবিধান, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক ধারার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা ইনক্লুসিভ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে ধর্মীয়, জাতিগত, লিঙ্গীয় ও চিন্তাগত সংখ্যালঘুর অধিকার হরণ করে তথাকথিত উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখে গ্লোবাল এলাইয়েন্স সংগঠনটির পদক্ষেপ নেয়া হয়।
ইশরাত আলম আরও বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়; বিশ্বের যে প্রান্তে মানবতা লঙ্ঘন হবে, সেখানেই আমরা যথাসাধ্য ভূমিকা রাখার চেষ্টা করব। আমরা সমাজে সমতা আনয়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্যরোধে কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার, আইনগত অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাবো।
উক্ত অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে ‘আমি বীরঙ্গনা বলছি’ জীবনচারিতা পাঠ করেন খাদিজা লীনা এবং তারই সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন দীপান্বিতা মুৎসুদ্দী, সপ্তর্ষি বড়ুয়া ও স্নাতা বড়ুয়া, দেবপ্রিয় কর রুমা, মুনমুন দেব ও মিতাইল। আবৃত্তি করেন তৌফিকুর রহমান রাঙ্গা।
অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে অনলাইনে যুক্ত থেকে এই নতুন সংগঠনটিকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান, ‘গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ কমিটি’র সদস্য আল-আমিন বাবু (নিউইয়র্ক), নাহিদা নাসের (টেক্সাস), ভায়োলেট হালদার (নরওয়ে) ও নাহার মমতাজ (সুইডেন) সহ বিভিন্ন দেশের অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী।