একখান দ‍্যাশের বাড়ি আছিল!

শ্রদ্ধেয় ভায়োলেটদি,
সুদূর নরওয়েতে বসে আমাকে স্বাধীনতা দিবসের উপর লেখা পাঠাতে বলেছ। কি লিখবো বলতো? মাথায় যে কিছুই আসে না। বাংলাদেশ হবার পরে আমার জন্ম। জ্ঞান হবার পর থেকেই ঠাকুমা, বাবা, জ্যাঠামশাই, পিসিমাদের মুখে শুনে এসেছি দ‍্যাশে আমাগো একখান বাড়ি আছিল।
বাবাকে জিজ্ঞাসা করতাম আমাগো দ‍্যাশটা কই?
বাবা বলতেন, মানচিত্রে যে বাংলাদেশ দেখতে পাও ওটাই আমাগো দ‍্যাশ আছিল।

কোন স্বাধীনতার কথা বলছো জানিনা। শুধু জানি রাতের অন্ধকারে পূর্ব বাংলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবার বেঁচে থাকার জন্য সামান্য সম্বল নিয়ে তাদের বসতবাটির ভিটা ছেড়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছিল।
যখন একান্নবর্তী পরিবারের ভাইবোনেদের গোল হয়ে ঠাকুমাকে ঘিরে আসর বসতো তখন আমার ফোকলা দাঁতের ঠাকুমা ঘোলা চোখে গল্প শোনাতো।

…তাগো দ‍্যাশে একখান বাড়ি আছিল। ছয়খানা শান বাধানো পুকুর ছিল।
লোহার সিন্দুকে রাশি রাশি সোনার গয়না ছিল। মাটির নিচে ছয় ঘড়া মোহর ছিল ।
শীতলা কালী মনসা মন্দির আর বারো মাসে তেরো পার্বণ ছিল।
বুলবুল ময়না টিয়ে ছিল।
বড় বড় কাসার, পিতল, তামা, রূপোর বাসন ছিল।
আর ছিল নারকেল, আম, জাম, কাঠাল গাছের বাগান।
ঘর ভর্তি মেহগনি আর সেগুন কাঠের আসবাব।
রুপোর নল বাধানো ঘড়ঘড়া আরও…

সেই পরিবারের ঠাঁই হয়েছিল শিয়ালদহ স্টেশনের রিফিউজি ক্যাম্পে। তারপর দীর্ঘ সময় জীবন যুদ্ধ করে সকলে প্রতিষ্ঠিত হলো। পিসিমাদেরও একে একে বিয়ে হয়ে গেল।
কিন্তু জীবদ্দশায় দ‍্যাশের বাড়ি তার কাছে সুখের টুকরো স্মৃতি হয়েই থেকে গেল। রাতের বেলা যখন ঠাকুমা দুধ খই আম মেখে খেতেন তখন আক্ষেপের সুরে থাকত দ‍্যাশের বাড়ির ল‍্যাঙরা ফজলির কথা। আর তার দ‍্যাশের বাড়িতে যে সব ছিল…

আমাগো একখান দ্যাশের বাড়ি আছিল!

আজ এ পর্যন্তই থাক।

শুভেচ্ছান্তে
কৃষ্ণা গুহ রায়
পশ্চিমবঙ্গ
৩০ শ্রাবণ ১৪৩০

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!