কেউ কাছে না থাকলে মানুষ ভিতরের নিবিড়তা নিয়ে নিজের মনের সঙ্গে বেশ কথা বলতে পারে। ডুরানির আত্মিক অবস্থান সেই পথে ঢুকে পড়েছে। হিসেব মেলাতে না পেরে কেমন যেন হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। ভাবনা একটাই, ছেলেকে কেন তিনি নিজের মতো করে গড়ে তুলতে পারলেন না? সদুত্তর পেলে প্রশ্নের গোলকধাঁধা থেকে বের হয়ে আসা সহজ হত। ডুরানির পক্ষে তা সম্ভব হল না। চারদিকে কেমন যেন কাঁটাতারের বেড়া যা টপকানোর ক্ষমতা তাঁর নেই। শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে এভাবে হেরে যেতে হবে, সেই উপলব্ধির গভীর ক্ষতে আটকে পড়েছেন ডুরানি। সময়ের বেড়াজাল তাঁর জীবনে কাঁটাতারের বেষ্টনী হয়ে উঠছে।
হেনার মধ্যে একই চিন্তাস্রোত দ্রুত গভীরতর রূপ নিচ্ছে। আড়াল থেকে বিমর্ষ শ্বশুরকে দেখে নিজেকে সামলে নেওয়ার নতুন চেষ্টায় দারুণ মগ্ন। দেবতাতুল্য শ্বশুরকে যে কোনো মূল্যে দুশ্চিন্তার জাল থেকে দ্রুত মুক্ত করা প্রয়োজন, সেই তাগিদ তালে তালে বড়ো হয়ে উঠছে ভিতরে। অবিশ্বাস যখন পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে ওঠে, মানুষ তখন কঠোর বাস্তবকেও বিশ্বাস করতে পারে না। ডুরানির জীবনের বিড়ম্বনা এমনিই। হেনার বার বার মনে হতে থাকল, শ্বশুরকে কথার যাদুতে হাল্কা করে দিতে পারলে নিজেও নিজের জটিল মানস থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। ঘরের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, ঠিকমতো যাচাই না করে এভাবে বিমূঢ় হয়ে যাচ্ছেন কেন?
জানো হেনা, সুদীর্ঘ সংসার জীবনে সুখ দুঃখ বুঝতে বুঝতে অনুভূতির রাজ্যে যেভাবে সম্রাট হয়ে উঠেছিলুম, সেই রাজ্য আজ আকাশের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এ উপলক্ষ যে তোমার মাথার উপর বড়ো বোঝা হয়ে উঠছে, তা বেশ বুঝতে পারছি। সীতার অগ্নিপরীক্ষার মতো তোমাকেও এখন নতুন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমাকে সান্ত্বনা দিতে চাচ্ছ তুমি। কিন্তু মনে রেখো, আকাশকে নিয়ে দুর্ভাবনা শুধু আমার একার নয়, তোমারও। স্ত্রী হিসেবে তুমি যা ভাবছ, পিতা হিসেবে আমাকেও তাই ভাবতে হচ্ছে। খুব করে বুঝতে পারছি, নতুন যন্ত্রণা সহে নেওয়ার পালা শুরু হয়েছে আমাদের জীবনে। এর বাইরে যে নতুন কোনো পথ নেই, তা বেশ দেখতে পাচ্ছি।
এভাবে কী জীবন চলতে পারে?
এত তাড়াতাড়ি একেবারে ভেঙে পড়ো না হেনা। ঘটনার শুরুতে খেদের সংলাপ বাড়িয়ে দিলে মনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না। এমনও তো হতে পারে, আমরা যেমন করে ভাবছি, কঠোর বাস্তবে আদৌ তা ঘটে নি। বিপদের বন্ধুই আসল বন্ধু। আকাশের বিপদে আমাদের প্রাথমিক কাজ হল তার পাশে দাঁড়ানো, তাকে উপযুক্ত সাহস দেওয়া। তবে একটা বাস্তব বিড়ম্বনা নিয়ে শুধু আকাশকে নয়, আমাদেরকেও তা সহে নিতে হবে। কিছু না ঘটলেও গায়ে লেপ্টে যাওয়া বদনামের বোঝা চেপে বসেছে আকাশের উপর। সকলে সমবেত হতে না পারলে সেই বোঝা কিছুতেই ঘাড় থেকে নামানো সম্ভব হবে না। এই প্রসঙ্গে তোমাকে আরেকটা কথা মনে করিয়ে দিই, কেবলমাত্র পাপানের কথা ভেবে আকাশকে নিয়ে অন্য পথে হাঁটার জন্যে তোমাকে সর্বতোভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি পারো, জানব, একটা বড়ো সাধনায় উতরে যেতে পারলে। না পারলে তুমি ভাঙবে, আমি ভাঙব, অদূর ভবিষ্যতে আকাশ ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে, তখন আর ফিরে আসার পথ থাকবে না। এত দিন সংসারের ভিতরের দিকটা একা সামলে আসতে পেরেছ, আকাশ সামলেছে বাইরের দিকটা। এখন আর সেই সীমানা ভাগ করে কোনো লাভ হবে না। আমি মনে করি, তুমি তা পারবে, তোমার মধ্যে সেই যোগ্যতাও রয়েছে।
আপনার সব কথা মাথা পেতে মেনে নিলাম কিন্তু সমস্যা তো অন্য সূত্র ধরে সংসারের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। সাদা-কালোয় মেলাবেন কী করে? ন্যায় অন্যায়বোধের পার্থক্য ঘরের ভিতরে যেমন ঘরের বাইরেও তেমনি। দুটোকে এক করে দেখতে পারবেন কী? জীবনের মূল হিসেবকে কখনো গরমিল সূত্রের সঙ্গে এক করে দেখা যায় না। রাত শেষ হলে তবেই দিন আসে। দিন ফুরিয়ে গেলে তবেই রাতের সূচনা হয়ে থাকে, আপনি কী পারবেন রাতদিনকে পাশাপাশি রেখে মিল করে দিতে? এখন বরং অত্যন্ত কঠোর মনোভাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা দিনের পথে থাকব, নাকি রাতের পথে নেমে অন্ধকারে হারিয়ে যাব। একই ছাদের নীচে থেকে কেউ চাইব দিনকে স্বাগত জানাতে, কেউ চাইব রাতের অন্ধকারে তা ঢাকা দিয়ে মুখোশকে মুখ হিসেবে দেখাতে। এভাবে চলতে পারে কী? চলতে চাইলে একসময় মুখোশের খেলা ধরা পড়বেই। তাই এখন থেকে নিজেদের মতো চলতে না পারলে সমাজের লোক আমাদেরকে মুখোশধারী ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারবে না। তখন আমাদের সামনে নতুন কোনো পথ খোলা থাকবে কী?
এক অর্থে তুমি ঠিক বলেছ হেনা কিন্তু অন্য অর্থে তোমার ভারসাম্যের অবস্থান নিয়ে ভাববে না? তুমি যে আকাশের স্ত্রী, তা অস্বীকার করতে পারো? এতদিনের ঘরসংসার। পাপানকে জড়িয়ে সামনের ভবিষ্যৎ। এ সমাজের কেউ কী বিশ্বাস করবে, আকাশ এত কিছু করেছে, তুমি স্ত্রী হিসেবে কিছুই জানো না? তুমি যেভাবে ভাবছ কঠোর বাস্তবে সেভাবে ভাবা যায় না হেনা। আমি যদি বলি, স্ত্রী হিসেবে তুমিও আকাশের ভাবনা ও তার কাজের সমান অংশীদার, তাহলে অন্তত আম-মানুষের সমর্থন তোমার দিকে যাবে না। আইনি সমস্যা তৈরি হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে সবার আগে তোমার ডাক পড়বে। একজন অপরাধী ধরা পড়লে সবার আগে বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নতুন নতুন তথ্য জেনে নেওয়ার জন্যে, এর পর আম-মানুষের ভাবনা কোন পথে ছুটবে জানো? বাড়ির সবাই না জানলে এত বড়ো ঘটনা কিছুতেই ঘটত না, বাবা হিসেবে আমিও জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হব। আইনের চোখে আমিও এক অর্থে অপরাধী, আর বিবেকের চোখে সবচেয়ে বড়ো অপরাধী। তুমিই বলো না, পিতা হিসেবে আমি তাকে ঠিকমতো গড়ে তুলতে পেরেছি কী? সেই অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে উঠতে পারে কিনা? তখন আইন বলবে, আম-মানুষ বলবে, সব জেনেও স্বার্থরক্ষার জন্যে আমি চুপ করে থেকে গিয়েছি। এ জটিল আবর্তের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আছে কী তোমার? সমাজের সকলে ভাববে, আমি আকাশের বাবা, তাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি কিন্তু চলার পথের দিশা ঠিকমতো দিতে পারি নি। এ তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো অপরাধ, তা লুকবো কী করে? জানো হেনা, অনুশীলনে ফাঁকি থাকলে ঠিক সময়ে গোলে বল ঠেলে দেওয়া একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হয় না। আমি তেমনি একজন অসফল খেলোয়াড়। তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, আকাশকে ছেড়ে পালাবো, নাকি সংশোধনের রাস্তা বাতলে দিয়ে ওর সঙ্গে থেকে যাবো।
বুঝতে পারছি, কত অসহনীয় বেদনা বুকে জড়িয়ে নিয়ে এসব কথা আপনাকে বলতে হচ্ছে। আর পালিয়ে যাব বা কোথায়? সামনে আপাতত নতুন পথের দিশা আছে বলে মনে হচ্ছে না। ভাগ্যের লিখন নরকে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকলে স্বর্গের কল্পনা যে কতটা অবাস্তব হতে পারে, তা এখন বেশ বুঝতে পারছি। তার পরেও বলছি, বাধ্য হয়ে মনের দরজা খুলে রাখার চেষ্টা করলেও শরীর আর সহে নিতে পারছে না।
এভাবে টেনে টেনে তো চলা যায় না। বাইরে ঝড়ের প্রকোপ থাকবে কিন্তু তা মনের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না, এমন হতে পারে কী? রক্ত মাংস দিয়ে যে শরীর গড়ে উঠেছে, তা শুধুমাত্র নেতি চিন্তার তত্ত্বে খুব বেশি দিন আটকে থাকতে পারে না। সময় হলে যুক্তির ফাঁদে ধরা না দিয়ে পারবে না। একটাই প্রসঙ্গ আপনাকে অত্যন্ত বিনীতভাবে জানাচ্ছি, ছলনা করে চলার অভ্যেস গড়ে তুলতে পারি নি বলেই ভিতরে ভিতরে এত বেশি কষ্ট পাচ্ছি। নতুন পথ দেখতে পাচ্ছি নে বলেই এভাবে ছটফট করছি।
ডুরানিও বুঝতে পারলেন, তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি ছেড়ে পালিয়ে বাঁচা ভয়ানক কঠিন কাজ। হেনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলেন, বুঝতে পারছি, চুপ করে থেকেও ভিতরের শক্তিতে স্থির হয়ে থাকা তোমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। হবেই বা কী করে? বাতাস বইবে জোরে আর আকাশের মেঘ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে, এমন তো হতে পারে না। বরং বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামনে ছুটে চলাই হবে মেঘের তাৎক্ষণিক বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির তত্ত্বকথা মানুষের জীবনে কীভাবে সত্যি হয়ে উঠতে পারে, তা তোমাকে দেখে বুঝতে পারছি। তুমি যে আকাশের ঝড়ে অস্থির হয়ে অন্য ভাবনায় দৌড়ে চলেছ, তা বুঝতে আমার এতটুকু অসুবিধা হচ্ছে না কিন্তু প্রতিকূল মুহূর্তে সেটাই জীবনের স্বাভাবিক বিকাশ। এই কষ্টটুকু তোমাকে মেনে নিতেই হবে। মানুষের সংসারে কারও কারও জীবনে এটাই স্বাভাবিক খেলা। এটুকু মেনে নিতে পারলে ভিতরে আর কোনো দোলাচল থাকে না। জানি না, তুমি এই মুহূর্তে নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে পেরেছ কিনা। পারলে অবশ্য সহনশীলতায় সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
আপনি যা বলছেন তা বর্ণে বর্ণে সত্যি কিন্তু মেনে নেওয়ার মতো প্রেক্ষাপট তৈরি করা ভয়ানক কঠিন। শহরের কাউকে হঠাৎ করে জঙ্গলে থেকে যাওয়ার কথা বললে যা হয় আর কী।
একটু হাসলেন ডুরানি। —বেশ উপমা দিতে পারলে বউমা। এটাই তো জীবনের অনন্য উপলব্ধি। এভাবে পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে উঠতে পারলে তুমিও অনুসরণের যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে।
এত ভালো ভালো সান্ত্বনালাভ জীবনের শেষতম প্রাপ্তি যা কেবল আপনার কাছ থেকে লাভ করতে পেরেছি।
শোনো হেনা, সন্ধে হয়ে এল, আমাকে এখন একটু বের হতে হবে। রিটায়ার্ড হওয়ার পরে এই অভ্যেসটুকু প্রতিদিনের জীবনচর্চার অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বিকেল হলেই ভিতরের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারি না, সারা দিন তো ঘরের মধ্যেই থাকি, মনের জগত নিয়ে নানা কিছু ভাবি কিন্তু এত বড়ো জগতকে কী ঘরের মধ্যে ধরে রাখা যায়? বিপুল এ বিশ্ব সংসার। বিকেলে ঘোরার সময় একটু একটু করে তার ভিতরে ঢুকে পড়তে পারি। জানো হেনা, জীবনের শেষ বেলায় এসব অনুভূতি খুব সহনশীল করে তোলে। তাই বোধ হয় আকাশকে নিয়ে দুর্ভাবনা থাকলেও জগতসংসারের একটা ক্ষুদ্রতম বিচ্যুতি হিসেবে নিজেকে বেশ সামলে নিতে পেরেছি যদিও অনুভূতির জোয়ারে মাঝে মাঝে বেসামাল হয়ে পড়তে হচ্ছে।
তাহলে যান কিন্তু ভুলে যাবেন না, বাইরে বেশ স্যাতসেতে ঠাণ্ডা, ফেরার সময় কষ্ট হতে পারে। গায়ে দেওয়ার হালকা চাদরটা সঙ্গে নিয়ে যান, লড়ার মতো একটা প্রোটেকশান সঙ্গে থাকল আর কী।
ডুরানির ঠোঁটে মৃদু হাসি। —বেশ বললে বৌমা। যে প্রোটেকশন নিয়ে তুমি সবচেয়ে বেশি করে ভাবছ, সেই ভাবনা আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারলে, আমিও একই ভাবনাজারিত হয়ে পড়েছি। মনের ঠাণ্ডায় যখন মরে যেতে বসেছি, তখন বাইরের ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার প্রসঙ্গ তুলে ভালো উপমা তুলে ধরতে পারলে হেনা। কিন্তু জেনে রাখো, নেতি বৈপরীত্য শুধু যন্ত্রণা দিতে জানে, তাতে হয়তো একটু একটু করে সহনশীলতা বাড়ে কিন্তু শেষ ফলশ্রুতি হিসেবে তেমন কিছু পাওয়ার থাকে না। এটাও ঠিক যে জীবনের শেষ বেলায় তোমার প্রটেকশনের পরামর্শ একেবারে কম পাওনা নয়।
আপনি আমার শেষতম ভরসাস্থল, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার দাঁড়ানোর জায়গাটুকু সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে। এখন তো আলোচনা করে অন্তরের ব্যথা দিব্যি উপশম করতে পারছি, আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই সুযোগটুকুও থাকবে না।
কেমন যেন ভাবালুতায় ডুবে গেলেন ডুরানি। ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমার কথা শুনে বেশ মনে করতে পারছি, সুখের চেয়ে দুঃখ অনেক বেশি ভাবতে শেখায়। জীবনের ধাক্কায় সূক্ষ্ম অনুভূতিপ্রবণ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়। শেষ লগ্নে এসে আজ-কাল-পরশুর মধ্যে আর কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি নে হেনা। এটাও ঠিক, স্নেহের শাসন না মানলে জীবন অচল পয়সা হয়ে ওঠে। সন্ধের আগে ঠিক সময়ে ফিরে আসব, অন্য দিন ঘন্টা দেড়েক ঘুরতাম, আজ না হয় তোমার কথা রাখতে তা অর্ধেক করে দিলাম। বেশ ভাবতে পারছি, এ সংসারে আমার ভালোর জন্যে ভাবার এখনও একজন রয়েছে। কবে চলে যাব জানি নে, তার আগে তোমার দেওয়া এ অমূল্য পাওনা যে স্মৃতি এনে দিল, তা নিয়ে পরম সুখে মরতে পারব হেনা।
দুচোখ ভিজিয়ে ডুরানির দিকে চেয়ে থাকল হেনা। শ্বশুরের জীবনের যন্ত্রণা কেমন যেন তার নিজস্ব যন্ত্রণার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ডুরানি হাঁটছেন সামনে। হেনার স্থির দুচোখ ডুরানির দিকে। মন ছুটে চলেছে তীব্র গতিতে। অচেনা পথ অতিক্রমণের তীব্র আকাঙ্খা ক্রমে বড়ো হয়ে উঠছে কিন্তু সেই অজানা পথে কী কী বাধা রয়েছে, হেনার মাথার মধ্যে তখনও সেই গ্রাফ ঠিকমতো ধরা পড়ে নি।
চলবে…