বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক ও সংস্কৃতি-ইতিহাসের ছাত্র ড. সা’আদুল ইসলামের জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে, দ. ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর থানার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম তিলপিতে। সুন্দরবন সংলগ্ন এই প্রান্তিক অঞ্চলে তাঁর বেড়ে ওঠা। পরে বঙ্কিম সরদার কলেজ, ফকিরচাঁদ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ‘মুনিরুদ্দিন পদক’, কর্মজীবনে সুন্দরবন আম্বেদকর সোসাইটি প্রদত্ত ‘চিন্তানায়ক শক্তিকুমার সরকার স্মৃতি পুরস্কারে’ এবং ২০১৯ সালে তাঁর ‘নজরুল সাহিত্যে দেশকাল’ গ্রন্থের জন্য ‘নতুন গতি’র ‘নজরুল পুরস্কার’-এ ভূষিত। এছাড়া, ‘বাংলার রেনেসাঁ সাহিত্যিক সম্মাননা’ এবং ‘চাতক’ ফাউন্ডেশনের ‘অবিভক্ত বাংলার রত্নসম্মান’ লাভ করেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষাবিভাগের অধীন বিভিন্ন কলেজে (আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ, মৌলানা আজাদ কলেজ, চন্দননগর কলেজ, টাকি সরকারি কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজ)-এ বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করার পর হুগলি মহসিন কলেজে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসাবে কর্মরত অবস্থায় অবসর নিয়েছেন। এককথায় ইসলামি সুফি ও উদার ভারতীয়তাবোধের (যার মধ্যে ধর্ম ভাষা বাঙালিত্ব নির্দ্বিধায় খাপ খেয়ে যায়) ভাবনায় বেড়ে ওঠা এই প্রবীণ অধ্যাপক আজীবন সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি-সমন্বয়ের পক্ষেই কলম চালিয়েছেন। ‘বাংলার হিন্দু মুসলমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মিশ্রণ’ তাঁর গবেষণাগ্রন্থ। ইতিহাস অনুসন্ধানে দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্রিক নাবিক টলেমি-চিহ্নিত তিলোগ্রাম্মাম বন্দরের সন্ধানে প্রত্নবস্তু ও ক্ষেত্রসমীক্ষার আলোয় লেখা ‘তিলপি থেকে তিলোগ্রাম্মাম ছাড়িয়ে…’ এবং ‘তর্কে তক্কে — আনন্দ মঠ, দ্য স্যাটানিক ভার্সেস, বাবরনামা বাবরি – না বাবরি’ তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। শেষেরটিতে ইতিহাসের বৃত্তে সাহিত্যের তর্ক এবং বাবরি-র লোদী আমলের মসজিদ হিসেবে আসল পরিচয় উদঘাটন। ‘শতবর্ষে বিদ্রোহী: একটি কবিতার অক্ষয় পরমায়ু‘ নজরুল বিষয়ে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ।
ইসলাম বিষয়ে লেখা -‘ইসলাম ও আধুনিক বিশ্ব’। গল্পগ্রন্থ -‘নিলয় না জানি’ ও গ্রামকে দিয়ে শহর ঘেরার অ্যালবাম – ‘গ্রাস গান অশ্রু’। তিনটি কবিতার বই- ‘আবহে সন্তাপ তবু, তরণী ভাসাই’, ‘অজ্ঞাবাদীর সঙ্গে দ্বৈরথে’এবং ‘সে আসবে বলে’। পূবের কলম, দুনিয়া বাংলা, হক কথা, সহজিয়া, বাংলার রেনেসাঁ, ভাণ, আল আযকার (আসাম) প্রভৃতি বিভিন্ন সাময়িকপত্রে তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হয়।