পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ ভারতের কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারী পড়তে এসেছে নাগমা কোরাইশী। কি এমন আকর্ষণ যার জন্য তাকে ভারতের অনেক নাম করা মেডিকেল কলেজ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে তার আগমন? প্রশ্নটি ছিল এক বাঙালি সাংবাদিকের। উত্তরে নাগমা বলেছিলো, “অনেকগুলি কারণ রয়েছে যার মধ্যে প্রথমটি হলো, ঢাকা মেডিকেল কলেজের গ্রাজুয়েটদের ভারতের “ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন” দ্বারা অনুমোদিত এবং এখানে অন্যান্য বিদেশের তুলনায় ভরণপোষণের খরচপত্র অনেক কম। তাছাড়া এদেশের সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং ধর্মীয় আচার ব্যবহার আমাদের সাথে প্রচুর মিল রয়েছে। ভারত – বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা নাই বা বললাম।”
নাগমার কয়েক মাস কেটে গেছে ঢাকা শহরে। চৈত্র মাসের শেষ প্রায়, বাংলা নববর্ষ উৎসব উদযাপনের দিন প্রায় কাছাকাছি। তরুণ সমাজ বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই দিনটি পালন করার জন্য তীর্থের কাকের মতো তারা অপেক্ষা করে থাকে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এবং তার আশেপাশের কলেজ এবং নানা শিল্প-কলা সংগঠন, সাহিত্যগোষ্ঠীদের মাঝে এই দিনটি উদযাপনের প্রস্তুতি একেবারে পুরো দমে চলছে।
আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন, বাংলা নববর্ষ। নানা রঙবেরঙের বৈচিত্রময় ব্যানার, ফেস্টুন, শিল্পীদের আঁকা নানা রকমের জীবজন্তুদের চিত্র, আরও কত রকম মডেল নিয়ে বিরাট মিছিল বের হলো যা নিজের চোখে না দেখলে বলা মুশকিল। লোকে লোকারণ্য রাস্তাঘাট। মোট কথা এ যেন এক স্বপ্নীল রাজ্য।
নাগমা এই প্রথম তার সহপাঠীদের সাথে কৌতূহলবশত মিছিলের যোগ দিয়েছে। বলা বাহুল্য, নুতন পরিবেশে আনন্দ ঘন মুহূর্তগুলি বেশ ভালোই কাটছিলো ওর। মিছিলটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের কাছাকাছি আসতেই অঘটনটি ঘটে গেলো। এত ভীড়ের মাঝে হঠাৎ করে এক ঠগ দৌড়ে এসে তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুততার সাথে চলে গেলো। নাগমা একেবারে কিংকর্তব্যবিমুড়। ঠগ লোকটি নাগমার হাতটি এতো জোরে চেপে ধরেছিলো যে, সে তার হাতের মুঠটি অনায়সে খুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল। পবন রহমান তার ইউনিভার্সিটি বন্ধুদের সাথে ওই মিছিলেই ছিল। সে নাগমার ভয়ার্ত চিৎকার শুনে কিছু না ভেবে ঠগ ছেলেটির পিছনে দৌড়ালো। পরিশেষে সে ছেলেটিকে ধরে নাগমার কাছে নিয়ে আসলো। ছেলেটি বয়স প্রায় ১৫/১৬ বছর হবে। তার করুণ দুঃখের কথা শুনে তাদের দুজনের বিশ্বাস হলো যে, সে অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে ছিনতাই করে। বাবার অনুপস্থিতিতে ছোট বয়সেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। আমাদের সমাজে এই রকম কাহিনী নুতন কিছু নয়। মনে হলো না সে মিথ্যা কথা বলছে। কি আর করা! নাগমার কাছে মাফ চাইয়ে ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়া হলো।
পবন এখন তো নাগমার কাছে হিরো। সে নাগমাকে বললো, “এ রকম ঘটনা ছোট বড় যে কোনো শহরে হতে পারে, আপনাকে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে, বিশেষ করে জনতার ভিড় থেকে।” কথাগুলো বলে পবন চলে যাচ্ছিলো। নাগমা পবনকে ডাকলো। পবন পিছনে ফিরে তাকালো।
– বলুন
– আপনার নামটা তো জানা হলোনা, ভাঙা ভাঙা বাংলাতে নাগমা প্রশ্ন করলো।
– আপনি কি অবাঙালি?
– হ্যাঁ, আমি কাশ্মীরের মেয়ে, কয়েক মাস হলো ঢাকায় ডাক্তারি পড়তে এসেছি।
– ছি ছি! দেখুন দেখি কি বিশ্রী কান্ড হয়ে গেলো! আপনার নিশ্চয় বাংলাদেশ সমন্ধে একটা খারাপ ধারণা হলো। আর হাঁ, আপনার বাংলায় কথা বলতে অসুবিধা হলে আমার সাথে আপনি অনায়াসে হিন্দি কিংবা উর্দুতে কথা বলতে পারেন। আমি পুরানো ঢাকার আদি অধিবাসী, আমি
দু ‘ভাষাতেই কথা বলতে পারি।
– তা আর প্রয়োজন হবেনা, আমি বাংলাতেই কথা বলতে চেষ্টা করবো। এদেশে কয়েক বছর থাকবো, বাংলা শিখবোনা তা কি হয়। তাছাড়া বাংলা ভাষাটা আমার কাছে মধুর মনে হয়।
– ভালো কথা, আমার নাম পবন, পবন রহমান।
-পবন তো হিন্দী শব্দ, মানে হলো মৃদু বাতাস।
– পবন বাংলা শব্দও বটে!
– তা ঠিক! বলে দুজনেই সম্মত জানালো।
তারপর পবন তার পকেট থেকে একটা সিগ্রেট বের করে তাতে আগুন ধরালো।
– এ মা, আপনি সিগ্রেট খান? নাগমা কিছুটা বিচলিত হয়ে জিগ্যেস করলো।
– সিগ্রেট এবং চা এ দুটো হলো আমার ব্রেইনের উর্বরতার সার। আমি স্টুডেন্ট পলিটিক্স করি। ও দুটো জিনিষ না হলে আমার রাজনৌতিক চিন্তা ধারায় আঘাত পায়, কাজে অলসতা আসে।
– আপনি নিশ্চয় জানেন, সিগ্রেট খাওয়াটা স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক ক্ষতিকর। যাকগে, আপনি কি সরকারী দলের হয়ে কাজ করেন?
– না না, আমি হলাম সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি অফ বাংলাদেশ) দলের একজন সক্রিয় মেম্বার। আমরা অসহায় লোকদের মৌলিক জীবন যাপনের ন্যূনতম দাবির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। কৃতকার্য হবো কি হবো না তা জানি না। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কিছুক্ষন নীরব থেকে পবন বললো, আমার একটু তাড়া আছে। দলের মিছিলের সাথে যোগ দিতে হবে।
-ঠিক আছে, আবার কি আপনার সাথে দেখা হবে?
– হতেও পারে। ডিজিটাল বিজ্ঞানের বদৌলতে পৃথিবীটা অনেক ছোট হয়ে গেছে। আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সমাজ বিজ্ঞানে এম এ পড়ছি। মাস্টার্স শেষ করে ভবিষ্যতে এই যে ছন্নছাড়া ছেলেটিকে দেখলেন তাদের মতো অভাগা মানুষদের জীবন নিয়ে রিসার্চ করার ইচ্ছা আছে। বাকীটা সময়ই বলে দেবে। আশা করছি কয়েক বছর ঢাকা ইউনিভার্সিটির আশে পাশেই থাকবো, সুতরাং দেখা সাক্ষাৎ হওয়াটা অস্বাভাবিক হবে না। এই বলে দুজনে দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিলো।
পবন চলে যাবার পর নাগমার মনে হলো ছেলেটি দারুণ চটপটে এবং প্রাণবন্ত। কিছুটা খামখেয়ালি তো বটেই! এ সমস্ত ছেলেদের সাথে অনায়াসে ঘণ্টার পর ঘন্টা সময় কাটানো যেতে পারে। আবার কবে, কখন দেখা হবে কে জানে! হয়তোবা জীবনে নাও দেখা হতে পারে। সে পবনের সম্বন্ধে এমন কেন ভাবছে? তার অবচেতন মনে কি পবনকে ভালো লেগে গেলো? সবসময় তার দু’চোখ ইউনিভার্সিটির, মেডিকেল কলেজের এদিকে সেদিকে কাকে যেন খুঁজে বেড়ায়!
অবশেষে প্রায় ৬/৭ মাস পর একদিন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির এক অধিবেশনে পবনের সাথে নাগমার ফের দেখা হয়ে গেলো। পবন অধিবেশনে যোগদানের জন্য লুকিয়ে এসেছে। তার পিছনে অনর্থক এক টিকটিকি লেগেছে। তাই বতর্মানে সে আত্মগোপনে আছে।
নাগমা পবনকে জিজ্ঞাসা করলো, এতদিন কোথায় ছিলেন?
– এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়িয়েছি টিকটিকির ভয়ে।
– সেটা আবার কি?
– ক্ষমতাসীন সরকার নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ছাত্রদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদের দ্বারা ডিটেক্টিভ লাগিয়ে দেয়। তারা যে কোনো ছাত্রকে সরকারে বিরুদ্ধে কোনো সন্দেহজনক কাজকর্ম করতে দেখলে পুলিশকে জানিয়ে দেয়। তাদেরকে আমরা বলি টিকটিকি। আমাদের দেশের এটা এক প্রকার কীটপতঙ্গের নাম- সময় অসময়ে টিকটিক শব্দ করে উঠে, বিশেষ করে রাতের বেলায়।
– আচ্ছা, এই সমস্ত পলিটিক্সের ঝামেলায় আপনার না গেলেই কি নয়।
কথাটি পাশ কাটিয়ে একটু হেসে পবন বললো, আপনি কি আমাকে মিস করেছেন?
আরও পড়ুন: ভুল বালুচরে
হঠাৎ প্রশ্নটি শুনে কাশ্মীরি মেয়ে নাগমার ফুটন্ত পদ্মফুলের মতো রক্তিম মুখমণ্ডলটি লজ্জায় লাল হয়ে উঠল।
অস্ফুট স্বরে বললো, হয়তোবা!
অতি বিনীতভাবে পবন বললো, কাউকে তো এই সমস্ত অভাগীদের জীবন নিয়ে ভাবতে হবে, তা না হলে তারা যাবে কোথায়? গরীব ঘরে জন্ম নেয়াটা কি অপরাধ? আমাদের মতো শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা তাদের প্রতিনিধি হয়ে যদি একটু হলেও উপকারে আসি তাতে ক্ষতি কি? জীবনটা সুন্দর যখন আমি সুখী, আরও সুখী যখন আমার সাহায্যে অন্যে সুখী হয়।
– আপনি মানুষটা ভিন্ন ধরণের, এক অসামান্য এবং দুর্লভ মানবিক চেতনার অধিকারী। তাই আপনাকে আমার ভালো লাগে। আবার কবে দেখা হবে?
– ধন্যবাদ আপনাকে আমার এত সুন্দর গুণকীর্তন করার জন্য। আর আমাদের দেখা সাক্ষাৎ? তা একমাত্র সময়ই বলতে পারে। সেটা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিলাম।
এরপর বছর খানিকের ও বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো। কারো সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই। একদিন নাগমা উত্তরার একটা ফার্মেসিতে কিছু ওষুধ পত্র কেনার সময় দেখতে পেলো পবনের মতো চেহারার এক ডাক্তার একজন রোগীর শারীরিক পরীক্ষা – নিরীক্ষা করছে। পবন আবার কবে ডাক্তার হলো? তাহলে সে কি তাকে মিথ্যা কথা বলেছিলো? কিন্তু সে তো এমন ছেলে নয়। ঘন কুয়াশার মতো তার মনের ভিতরে একটা রহস্য আবির্ভূত হলো। ভিতরে গিয়ে দেখা যাক, পবনকে অতর্কিতে বিস্ময়ে ফেলে রহস্য উদ্ঘাটন করা যায় কিনা! রোগীটির চিকিৎসার পরামর্শ শেষ হবার পর পরই নাগমা সোজা ভিতরে ডাক্তারের চেম্বার ঢুকেই প্রশ্ন করলো, কেমন আছেন পবন সাহেব?
– আমি পবন নই, আমি ডাক্তার সৈকত রহমান। আপনি কি পবনের খোঁজে এসেছেন?
প্রশ্নটি শুনে নাগমা কিছুটা হোঁচট খেলো এই ভেবে তাহলে পৃথিবীতে একই চেহারার দুজন মানুষ থাকে! তারপর নিজেকে সামাল দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো, আপনি কি পবন রহমান নন?
– পবন আমার ছোট ভাই। আমার থেকে তিন মিনিটের ছোট। আমাদের দুজনের মধ্যে অনেকেই গরমিল করে ফেলে। ভাগ্যিস আজ পর্যন্ত এই ব্যাপারে আমরা কোনো মেয়ে ঘটিত বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে পড়ি নাই। আজই প্রথম আপনাকে দেখে কথাটি মনে হলো।
এমন রসিকতা করে কথাগুলি ডাক্তার সৈকত বললো তাতে নাগমার মনে হচ্ছে যেন পবনই কথা বলে যাচ্ছে।
– উনি এখন কোথায়?
– সে তো তার মা বাবার সাথে পুরানো ঢাকায় থাকে।
-কিছুক্ষন আগে আপনি না বললেন, সে আপনার ছোট ভাই, আবার বললেন, পবন তার মা বাবার সাথে থাকে। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না।
– না বুঝারই কথা। ব্যাপারটা আপনাকে খোলাসা করে বলি, পবন আমার আপন ভাই, চাচাতো ভাই এবং খালাতো ভাই, যেটাই ধরুন না কেন। কেমন ধাঁধায় ফেলে দিলাম, তাই না? আসল কথা হলো আমার বাবা এবং চাচা একই পরিবারের দু বোনকে বিয়ে করেছে। তাই আমার চাচী যিনি, খালাও তিনি। আমার বাবা বয়সে বড়। আমরা তিন বোন এবং যমজ দুই ভাই। পবন এবং আমি। এদিকে আমার চাচার এবং খালার কোনো ছেলে -পেলে হলোনা। চাচার ওকালতিতে অনেক নাম ধাম। প্রচুর টাকা কামাচ্ছে কিন্তু নিঃসন্তান হওয়াতে তাদের জীবনে কোনো সুখ ছিলোনা। তাদের দুঃখ দেখে আমাদের দাদা-দাদীর অনুরোধে পবনের যখন মাস তিনেক বয়স তখন পবনকে আমার মা বাবা আমার খালা এবং চাচাকে দত্তক দিয়ে দেয়। সেই থেকে আমরা ভাই ভাই এবং একে অপরের পরম বন্ধু। এখন কিছু বুঝতে পারলেন কি?
– জী! একদম ভালোভাবে বুজেছি।
-আমার ভাইটা একটু আত্মকেন্দ্রীক, কিন্তু মনটা বড় উদার। যাকে বলে ঝুনা নারিকেল। বাইরের দিকটা শক্ত, ভিতরের দিকটা বেশ নরম। কারও কথা শুনেনা। বিশেষ করে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে। খাবার- দাবার ব্যাপারে ভীষণ উদাসীন। বেশ কিছুদিন অসুখে ভুগলো, এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
কথাটি শুনে নাগমা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে প্রশ্ন করলো, কি হয়েছিল তার?
– ওর এপেন্ডিসাইটিসটি রেপচার হয়ে গিয়েছিলো, মানে বার্স্ট আর কি! আমি কাছেই ছিলাম, তাড়াতাড়ি ওকে হসপিটালে নিয়ে অপরাশন করাতে হলো। এ যাত্রায় সে প্রাণে বেঁচে গেলো। সাধারণত রেপচার হয়ে গেলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। একটা সুখবর হলো পবন এখন আর সিগ্রেট খায় না। সেই যে অপারেশন হবার পর সে যখন চোখ মেললো তখন থেকে এনেসথেটিকের ধকলে বা অন্য কোনো কারণে তা আমি বলতে পারবোনা- পবন সিগ্রেটের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারেনা।
একটু আবেগ জড়িত কণ্ঠে নাগমা বললো খুব একটা ভালো খবর আমাকে দিলেন। উনার সাথে আমাকে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারবেন?
– নিশ্চয়! তা ব্যাপারটি কি? ও হাঁ, বুঝেছি।
– ওকে ধরে আমি খুব করে পিটুনি দেব, নাগমার অভিমান ভরা জবাব।
সৈকত,পবনকে ওর মোবাইলে ফোন করলো, জিজ্ঞাসা করলো, কি করছিস?
– বাবার সাথে তর্ক করছি।
– এবার কি বিষয়ে হচ্ছে?
– বাংলাদেশ এখন কোন পথে যাচ্ছে? ক্যাপিটালিজম, সোশালিজম না কমুনিজেমের দিকে?
– রাখ তোর ‘ইজম’, তোকে এক সারপ্রাইস দিবো। এক্ষুনি চলে আয় আমার চেম্বারে।
– সারপ্রাইসটি কি?
– সেটা জানালে তো আর সারপ্রাইস রইলোনা।
-ঠিক আছে আমি চলে আসছি, তবে জ্যামে কতক্ষন লাগবেনা জানি না।
-ওকে, আমরা অপেক্ষা করবো।
পবন ভাবছে আমরা বলতে সৈকত কি বোঝাতে চাচ্ছে!
অনেকক্ষণ সময় পেরিয়ে গেলো। এদিকে নাগমা পবনের দেরিতে অস্থির ও উৎকণ্ঠিত চিত্তে চেয়ে আছে রাস্তার দিকে, কখন ওকে এক নজর দেখবে! কতদিন হয় দেখা হয়নি।
নাগমা দেখলো পবন স্কুটার থেকে নেমে রাস্তার এপারে আসলো। সে তাড়াতাড়ি ফার্মেসি থেকে বের হয়ে সোজা পবনের মুখোমুখি। জিগ্যেস করলো, তুমি যে অসুস্থ কেন আমাকে জানাওনি?
– জানালে কি হতো?
– কাউকে ভালো লাগলে তুমি কি করে জানবে, না দেখা হলে সে কি যন্ত্রণার মধ্যে কাটায়?
– প্রথম দেখাতেই তোমাকে আমার ভালো লেগেছিলো। কিন্তু সাহস হয়নি এগোবার। কারণ হলো, রাজনীতির আদর্শের ব্যস্ততার মাঝে আমি তোমাকে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবোনা। তাছাড়া তুমি বিদেশিনী, তোমার কোর্স শেষ হলে তুমি তোমার দেশে চলে যাবে। আমার কি হবে? অনেক কষ্ট করে নিজের মনকে শক্ত করে তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি। মনকে সান্তনা দিয়েছি এই ভেবে- পেয়ে হারানোর চাইতে না পাওয়াটা অনেক ভালো।
পবনের কথা শুনে নাগমার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। বললো, মানুষের জীবনে মায়া-মমতা-ভালোবাসা এগুলো বর্ণনা করে বুঝানো যায় না। এগুলো টাকার পরিমাণেও মাপা যায় না। এগুলো শুধু হৃদয়ে অনুভব করা যায়।
– তোমাকে আমি ভুল বুঝেছি, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।
– এই না হলো কথা! অশ্রু বিজড়িত হাসিতে নাগমাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছিল, মনে হচ্ছিলো আকাশটা ঘন কুয়াশা কাটিয়ে রোদ্রের সাথে লুকোচুরি খেলছে।#