‘কোনটা কবিতা, কোনটা কবিতা নয়— এ বিচার সময়ই করবে’ এই আপ্তবাক্যটি বলে ভাবীকালের কবিগণ দেদার কবিতা লিখে চলেছেন। সমালোচক বলে কেউ নেই। কোনও কবির সমালোচনা সহ্য করার মতো ক্ষমতাও নেই। সুতরাং কবির পোয়াবারো অবস্থা। ফেসবুক, ওয়েবসাইট, ম্যাগাজিন কত কত মাধ্যম। টাকা দিলে প্রকাশকরা চকচকে মলাটের কাব্যও ছাপিয়ে দেয়। চেষ্টা চরিত্তির করলে প্রথম শ্রেণির বাণিজ্যিক কাগজে আলোচনাও বের হয়। আর একটু চেষ্টা থাকলে পুরস্কার টুরস্কারও পাওয়া সম্ভব। বাংলা কবিতার এই হাল। ঘরে ঘরে কবির অভাব নেই। পাঠকের থেকে কবির সংখ্যা বহুগুণ বেশি।
এইসব কবিতা নিয়ে যেকোনও ধরনের প্রবন্ধ লেখা যায়। কবিদের প্রতিভা নিয়ে সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করা যায়। সাগর-মহাসাগরও উপমা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সাহিত্যের অন্যান্য শাখার থেকে কবিতাকেই বেশি আশ্রয় করে তাঁদের প্রতিভার দীপ্তি উজ্জ্বল করে তুলতে চান। মনের মধ্যে যে অনুভূতির জাগরণ ঘটে তাকে শব্দে-ভাষায় ধরাই কবির কাজ। সৎ কবিতার অনুভূতি আত্মগত যা subjective. তবে বাহ্যিক জগতের নানান বিন্যাসে বস্তুগত রূপের স্থূল বিষয়ও কবিতা করে তুলছেন কবিরা, তা মূলত objective. বর্তমানে কবির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর আত্মক্ষরণ কবিতার নির্মোহ প্রলেপ হিসেবে আসছে কোথাও। সেক্ষেত্রে কবি তখন দার্শনিক। ‘নির্মোহ’ শব্দটিই তাঁর যোগ্যতার পরিধি নির্ণয় করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই পর্যায়ে কবিরা পৌঁছান বহু পরে। The problems of philosophy-তে John Grier Hibben তাই বলেছেন: “Deprive poetry of this which it has in common with philosophy—the seeing of things as they are—and the beauty and fragrance of the flower are gone.” অর্থাৎ কবিতা বঞ্চিত হয় যখন তা দর্শনের সাথে মিলে যায়। সেসব জিনিসগুলিকে যেমন আছে তেমনই দেখা হয় এবং ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাস তখন আর থাকে না। যখন বস্তুগত চেতনায় মানুষ যান্ত্রিক হয়ে ওঠে তখনই এরকম কবিতা লেখে। তাঁর দার্শনিক চেতনাও বাস্তবতার নিরিখ হয়ে ওঠে। জন গ্রিয়ার হিবেন এই কারণেই প্রশ্ন তুলেছেন:
“বাস্তবতা কী? এটা কি দার্শনিকের জন্য নিছক একটা শব্দ নয় যার সাথে সে তার অজ্ঞতা লুকিয়ে রাখতে পারে?”
আর এই বাস্তবতা এতটাই নগ্ন হয়ে উঠেছে যে তা আমাদের প্রবৃত্তিগত আত্মবিন্যাসেরই যাপনমাত্র। সেখানে অজ্ঞতাও কবিতার নামান্তর। যে আত্মিক অনুভাবনা জীবনমহিমার অনন্ত প্রজ্ঞায় পৌঁছে দিতে পারত, তা কিন্তু হয়ে উঠেনি। আমরা জানি জীবন যত নাড়া খায়, বঞ্চনার অভিমুখে দাঁড়ায়, তার দার্শনিক সত্তা তত বোধি লাভ করে। কিন্তু আজকের দিনে এই দার্শনিক সংকটই মারাত্মক হয়ে উঠেছে। তাই কবিতাও সৌন্দর্য হারিয়েছে।
কবিতা সূক্ষ্মবোধের তরঙ্গ থেকে ফিরে গেছে ইন্দ্রিয়ময় স্থূল চেতনায়। কৈশোরের প্রেম যেমন শরীর ও রূপজমোহেই কেন্দ্রীভূত থাকে, আজকের কবিতাও তেমনি কথন বিবৃতি। অশ্রু, বেদনা, না-পাওয়ার কষ্ট সবই তাতে আছে, কিন্তু কবির উত্তরণ ঘটেনি। আজকের কবির কাছে রিয়ালিটিই ফিলোজফি। একই বিষয় ভিত্তিক বিষয়, শব্দ,বাক্য, পদ, চিত্রকল্প ঘুরেফিরে আসে। সংকেতময় না-বিষয় না-কথন না-চিত্রের কবিতা খুব বেশি জন চর্চা করেন না। আবার এমন অনেক কবি আছেন, তাঁরা রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো কবিতা লিখতে চান। কেউ কেউ মাইকেলের মতো। বাংলা কবিতায় এত বস্তাপচা গতানুগতিক ধারা প্রবাহিত হয়ে চলেছে, যে পাঠক কিছুই নতুন বিষয় খুঁজে পাচ্ছেন না। খুঁজে পেলেও পাঠ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারছেন না। প্রগতিশীল পাঠক যেমন নেই, তেমনি প্রগতিশীল কবিও নেই। যা আছে তা সনাতন প্রাচীনপন্থী বদ্ধ মনস্কতার ধারণা সঞ্জাত মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্যে সমালোচনা মুছে গেছে। তার বদলে শুরু হয়েছে পিঠ চাপড়ানো। স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলার লোক নেই।
কবিকে চেনা যায় তাঁর ব্যতিক্রমী সৃষ্টি ও ভাবনার দ্বারা। তাঁর শিল্প নিজস্বতা নিয়েই একটা আলাদা ঘরানা তৈরি করে। তাতে অন্যকোনও কবির প্রভাব থাকতে পারে, কিন্তু অক্ষম অনুকরণ থাকে না। আজকের কবিতায় অক্ষম অনুকরণ ভূরি ভূরি দেখা যায়। একই কবিতা বিভিন্ন জনের হাতে লেখা হয়। একই কষ্ট, একই অনুভূতির প্রকাশ বিভিন্ন জনের কাছেই ফিরে আসতে পারে। কিন্তু প্রকাশ ও শব্দযোজনায় তা কখনও একই হতে পারে না। চিত্রকল্পেও একই বক্তব্য ধরা পড়তে পারে না। কিন্তু তা প্রায় একই হতে দেখা যায় প্রাচীন ও নবীন কবির কলমেও। যেমন ‘গাছ’ নিয়ে বেশকিছু কবিতা পাঠ করে আমার মনে হয়েছে একই বক্তব্য কবিরা লিখেছেন। গাছের বোধে সেই বক্তব্যটিই নিজের কথায় তুলে ধরছি:
“গাছেরা পোশাক পরে
গাছেরা আলিঙ্গন চায়
দুই হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকে জ্যোৎস্না রাতে
গাছেদের ছেলেমেয়েগুলো লুকোচুরি খেলে”
গাছ-সংসারের কবিতা বহু পাঠ করলাম বহু কবির লেখাতেই। বক্তব্যে হেরফের থাকলেও বিষয় বিন্যাসে তেমন পরিবর্তন নেই। এমনই ‘চাঁদ’ বিষয়েও আবহমান বহু কবিতা লেখা হয়ে আসছে। চাঁদ রুটি বা কাস্তে যাই-ই হোক। এযুগের চাঁদের রং যে কালোও তা দেখতে পেলাম:
“তোমার আকাশে কালো চাঁদ
বাউল গেয়েছে সারারাত
নেমে এসে সেই চাঁদ
তোমার সিঁথিতে খেতে চায় ভাত”
প্রেমের আদিখ্যেতার শেষ নেই। গোলাপ ফুল, ভ্রমর, পাখি, ভোর, সাইকেল প্রেমের বাহন হয়ে এসেছে। সময়ের সেতুতে দাঁড়িয়ে কবিরা কবিতায় মায়া হরিণীকে ধরার চেষ্টা করে চলেছেন। কোনও কোনও কবি লিখেছেন:
‘তোমাকে দিলাম ভালোবাসার গোলাপ’
অথবা
‘তোমার বাগানে ফুটেছে কত রক্তগোলাপ’
অথবা
‘গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁটে চুম্বন চাই’
ভ্রমর নিয়েও কত কথা লিখেছেন:
‘বাগানে ভ্রমর কত উড়ছে আজ
আমিও উড়ে গেছি তোমার নিকটে’
অথবা
‘ভ্রমর তোমার ডানায় প্রেম কাঁপে’
অথবা
‘কী সংবাদ এনেছে ভ্রমর?’
পাখি নিয়েও কম ওড়াউড়ি হয় না:
‘কোন বনের পাখি তুমি
কোথায় উড়ে যাও?’
অথবা
‘আজ বাগানে এসেছে হলুদ ডানার পাখি’
অথবা
‘পাখির গান ঘুম ভাঙায় ভোরে’
প্রেমের ভোর হয় কোথাও, কোথাও অন্ধকার হয়। কোথাও সাইকেল ছুটে যায়, বেল্ বাজায়, আবার চেনও পড়ে। বাহন সাইকেলও সময়ের সাথে ছোটে। আগুন জল সাপ সূর্য শিশির রোদ্দুর সব উপাদানগুলিই কবিতায় মিশে যায়। রাতজাগা আর ব্যর্থ প্রেমের অশ্রু গড়ায়। হাহাকার শূন্যতার স্থূল প্রকাশের দরাদরি ভাষার প্রয়োগ দেখা যায়। এসবই আজকাল লেখা হচ্ছে। যে কোনও কবির যে কোনও কবিতাতেই যুগের ছায়া ভেসে উঠছে। নিজেকে আলাদা করে প্রকাশ করার, শব্দব্যঞ্জনায় নতুনত্ব আনার প্রয়াস যে নেই তা নয়। তবে তা নেহাত কম। সেসব কবিতা যে অধুনান্তিক নয়, শুধু মেটাফোরও নয়, কিংবা মেটাফিজিক্যালেরও প্রভাব আছে, কিংবা ছায়াবাদে আশ্রিত তা বলাই যায়। গতানুগতিক পথে না হেঁটেও আত্ম-অন্বেষণের এক পর্যায়ে তাঁদের ভাষা ও চিত্রকল্পবাদ, আঙ্গিক গঠন, শব্দ ব্যবহার সম্পূর্ণ আলাদা। পাঠকের কাছেও নতুন অভিজ্ঞতার বিষয়। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। গোলাম রসুল লিখলেন:
“বিগত সূর্য
আমি কথা বলছি তাদের সাথে
যারা পুনরায় জন্মানোর আসবাবগুলো নিয়ে
এগিয়ে আসছে শূন্যস্থানে
আমাদের দূরত্বের মাঝে
নৌকা নিয়ে এসেছে যে এক ফালি চাঁদ
তাকে দেখিনি কখনো আগে”
(অসাধারণ ছায়া)
গোলাম রসুল কবিতায় ছোট পংক্তি ও দীর্ঘ পংক্তির মাধ্যমে প্রথমত আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যে নতুনত্ব নিয়ে এলেন। দৃষ্টিকে মুক্ত করলেন স্থূল পার্থিবের বস্তুময় জগৎ থেকে। যেখানে প্রাচীন উপমাগুলি সবই বর্তমান অথচ আদিপ্রজ্ঞার সংজ্ঞাবহ অভিব্যক্তির এক গভীর অন্বয় দেখা গেল। তাই সূর্যকে বললেন ‘বিগত’। কবির কথা বলার বোধটি উঠে এল ‘যারা পুনরায় জন্মানোর আসবাব নিয়ে এগিয়ে আসছে’ তাদের সাথে। কবির জীবন ও পুনরায় জন্মানোর মাঝের দূরত্বের শূন্যতায় যে চাঁদ কবি দেখলেন তা আগে কখনও উদিত হয়নি। এই ভাবেই অসাধারণ ছায়ায় কবির নিমজ্জন। ‘পুনরায় জন্মানো’ কথাটিই এই কবির কাছে একটি নতুনত্বের ইঙ্গিত দান করে। ‘বিগত’, ‘প্রাচীন’, ‘পুরনো’, ‘আদিম’ বা ‘আদি’ কথাগুলি গোলাম রসুল তাঁর কবিতায় বারবার নিয়ে আসেন। আবার নতুন রূপে সব কিছু দেখার মধ্যেও তা আবার ফিরে আসে পুনরাধুনিক হিসেবে। এই প্রত্ন ও পুনরাধুনিক ব্যাপারটি কবিতার নতুন ধারার দরজা খুলে দিয়েছে।
অনুপম মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় প্রথমেই তাই লেখা হয়—’প্রত্নপ্রিয়: পুনরাধুনিক’। তাঁর কবিতায় এই প্রত্নপ্রিয়তা এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্যে সমন্বিত। একটি কবিতার অংশ তিনি এভাবে লেখেন:
“এখন। এখন।
আর আলাদা শহর
বিড়াল। সিঁটিয়ে গেছে
ঘুমিয়ে আছে ইঁদুরের নখে।
নাগরিক মূর্তি আছে।
কলোনির কোণে
গ্রাম থেকে হাওয়া আসে
বাতাসও তো আসে।”
‘প্রত্ন’ ব্যাপারটির মধ্যেই থাকে আদিম অভ্যাস, অমার্জিত এক সত্যতার দর্শন। অপরিশীলিত বিন্যাসও। চলার মধ্যেই থামা, উঁকি মারা, একপায়ে দাঁড়ানো এবং মোহ ও নির্মোহ, অথবা আলো ও অন্ধকার। সভ্যজগতের বাতাবরণে এই প্রত্ন বিবমিষা ছায়াকে তুলে আনেন অনুপম। পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহারের ক্ষেত্রটিও পাল্টে দেন। কবিতার প্রথমেই পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করার দৃষ্টান্তটি যেমন এখানে তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি ‘সিঁটিয়ে গেছে ‘ যৌগিক ক্রিয়াটি কেটে দিয়েও রাখা হয়েছে কবিতায়। কেননা পুনরাধুনিক ব্যাপারটিতে আধুনিকতার উত্তরণ খুঁজে পেয়েছেন কবি। প্রত্নবিভাষের চিহ্নটি তাই বাহিত হয়ে চলেছে। সেখানেই ‘ঘুমিয়ে আছে ইঁদুরের নখে’ আমাদের পোষা জন্তুটি। নাগরিকতার প্রচ্ছায়ায় মনুষ্যও বেড়ালের সদর্থক চেতনায় ঘুমিয়ে যায় ইঁদুরের নখে। বিপরীতক্রম জীবনাচারে শিকারি শিকার বিন্যাসটিও পাল্টে যায়। তবু গ্রাম ও নাগরিক সভ্যতার মিশ্রণটি কবি দেখতে পান ‘হাওয়া’ ও ‘বাতাসে’র বৈশিষ্ট্যে। হাওয়া যদি Stream বা Fashion হয়, বা Style হয় তবে ‘বাতাস’ও সারল্যের জীবন পর্যায়, ছায়াচ্ছন্ন ধান-শিশির-পাখি-ফুলের অবগাহনে সমৃদ্ধ। সেখানে ঘাস ও আকাশ, ময়নামতী ও ডুরে শাড়ির আলতাপরা পা দেখা যায়। কবিতার আঙ্গিক গঠনের ক্ষেত্রটি পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে বিষয়ও এবং শব্দকৌশলও পাল্টে গেল। পাঠক এইসব কবিতা থেকে আজও দূরে আছে। কবিদের দুর্বোধ্য বলে দায় এড়িয়েছে। তারা ফিরে গেছেন সেইসব চিরচেন অভ্যাসেই:
“যখন তোমার কথা মনে পড়ে
ব্যাণ্ডেল স্টেশনে গিয়ে বসি, একা—
সময় কাটে না—শুধু পেছনে তাকাই”
(ফিরে আসা: চৈতন্য দাশ)
অথবা
“আর কতজনকে তুমি ভেবে ভুল করে
জড়িয়ে ধরব ভালবাসা?
পাথরের গায়ে
শ্যাওলাদের দেখে ভাবি সবুজ দ্বীপ”
(হাত ছোঁও ভালবাসা: সীমা জানা)
সব অপেক্ষার ভেতরেই এক ভ্রম ও স্বপ্ন বিরাজ করে। প্রেমের কথা, প্রেমের মুখ তো হৃদয়ের আয়নায় সর্বদা মুখ দেখায়। তখন বাস্তবেও ঘর-বাহির শুরু হয়। প্রেমের কাছে এই আত্মসমর্পণ আবহমানকাল ধরেই চলে আসছে। মনুষ্য জীবনের অভিমান তো চিরন্তন। কবিরা এই ভাষাকে আয়ত্ত করেই কবিতা লিখে চলেন। কবিতার যে বিশিষ্ট ধারা তাতে নতুন কোনও পর্যায়ের সূচনা হয় না।
তবু সময় বিচার করবে, কোনটি কবিতা আর কোনটি কবিতা নয়— এমনতর ধারণা নিয়ে বসে থাকা কি উচিত আমাদের? যতই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় ততই ভালো। শব্দ, আঙ্গিক, বক্তব্য নিয়ে কবিরা ভাববেন না তো কী নিয়ে ভাববেন? এই সৃষ্টির মধ্যেই যথার্থ সত্যটি লুকিয়ে আছে। একজন প্রকৃত শিল্পী, প্রকৃত পাঠকই তা জানতে পারে। Amos Bronson Alcott তাঁর ‘Table talk’-এ বলেছেন: “Truth is the cry of all, but the game of few.” এই সত্যের কান্না সব সৃষ্টির মধ্যেই শোনা যায়। কবিরা হৃদয় কারবারি, দূরদ্রষ্টা, দার্শনিক এবং সভ্যতাচারী জাগ্রত মানুষ। তাঁদের অনুভূতির ক্ষেত্রটি সর্বদা বিস্তৃত হচ্ছে, তেমনি শিল্পবোধের ক্ষেত্রটিও বিপ্লবাত্মক পথে অগ্রসর হচ্ছে।মানবরসায়নের নানা মোচড়ে কবিতায় প্রক্ষিপ্ত হচ্ছে আত্মদর্শনের পর্যায়। তাই কবিতাকে সেভাবেই লেখা উচিত যাতে আমরা দেখতে পাই: “Poetry, she thought, wasn’t written to be analyzed; it was meant to inspire without reason, to touch without understanding.”
— (Nicholas Sparks:The Notebook) অর্থাৎ কবিতা, তিনি ভেবেছিলেন, বিশ্লেষণ করার জন্য তা লেখা হয়নি; এর উদ্দেশ্য ছিল কোনও কারণ ছাড়াই অনুপ্রাণিত করা, না বুঝে স্পর্শ করা।
নতুন কবিতার ব্যাখ্যাহীন ভালোলাগা হয়তো এই বক্তব্যেই অনুমিত হয়। কবিতার বাজনা তো ভাষাহীন সেই বোধের দীপ্তি এনে দেয়। পাঠ করে প্রাণের স্পন্দন অনুভব করি। যেমন ঈশ্বর অনুভব হয় আমাদের কাছে। মনে রাখতে হবে ভালো কবিতার কোনও বক্তব্যই থাকবে না, শুধু ভাললাগা ছাড়া। ♣