মাটির গান গাইতে গাইতে নোনাজলে ভেসে বেড়ায় মদন, ছমির মিঞারা। প্রকৃতি কাড়ে তাদের সুখ- স্বপ্ন- আশা- ভরসা। নোনাস্রোতে ভাঙনের সাক্ষী হয় রোজ রোজ। রাত নামলে ছমিরের চোখে ভাসে মেয়ে গোলাপির মুখ। শোনে বিবির অসহায় কান্না।কালক্রমে বাঁজা হারামনি শোনে নারী জীবনের কাঙ্খিত মা ডাক। নোনা জল শোনায় নিখোঁজ হওয়া মানুষের গল্প। আখ্যান জড়িয়ে বাঁচে বিপন্ন লোকসংস্কৃতি, অলৌকিক বিশ্বাস, গ্রাম্য নরনারীর প্রেম, অকাল শোক। ‘নোনা মাটির নোলক’ বস্তুত সমাজ, লোকসংস্কার ও রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ বিভাজনের দৃশ্যলিখন, ভাঙনের গান।
ষষ্ঠ পর্ব
বাড়ি বাড়ি নোক কুটুম্বু হাতে মিষ্টির হাড়ি
দশোহারায় মনসা পালা সিদু জ্যেটার বাড়ি
ম্যেলার কদিন সোবার মনে খুশির ঝিলিক মারে
ধোনার কোতা দুঃকির কোতা পালা গানে ধরে।
মাইপ বাঁদা গাচের ডালে টেঁকা য্যেনো দায়
দলে দলে শুনতি আসে কারোর গামচা গায়
কদিন নোকের মুকি মুকি পালার ঝ্যেতো গান
কচি কাচা বুড়ো বুড়ি ফুর্তিতে আটখান।
পান্তাকরে শো কাপড়ে থানেতে দেয় ডালা
ডালার ওবর চিনি সন্দেশ হাতে ফুলির মালা
নন্দো খুড়োর মাতার বেমো হাতে বাঁদে নাড়া
আতিদিনি চরে ব্যেড়ায় এ পাড়া ও পাড়া।
হরেন খুড়ো বললে ওরে কি অনাচার দেশে
আষাঢ় মাসে জল হলুনি যাবে পাণটা শেষে
কাগড়ি ফেললি মুনতি হোবা ঠুকরে যাবা পাকি
জল বেওনে মাটি ফাটে পাথর চাষীর বুকি।
চলনা সই সাজদেচে কেরোম গানের নোকে দেকি
অঙে অঙে ছোড়া ছড়ি তাগার চোকি মুকি
সাজার আগে বাজে নাগে সাজলি দেকায় ভালো
সীতামাসি সামনের জায়গায় ঝেনল্লা পেতে দেলো।
সীতামাসির কোতা শুনলি বড্ড হাসি নাগে
মাতার বেমো বাড়ে মাসির বোর্ষা পোড়ার আগে
বাদায় যেতো গরুটা নে দুপুর ব্যেলা হলি
নোম্বা গাচের গোড়ায় বসে মারতো যে হাততালি।
মেসো যেতো কাঙড়া ধোত্তি বড়ো গাঙের পারে
পিটো পিটি তিনটে ছাবাল ভাঙা ব্যেড়ার ঘরে
সোন্দেব্যেলায় বসে আচি কু গাইতেচে মন
চোকির ওবর ওটে ভেসে আঁদার ঘন বোন।
পাড়া গাঁয়ের গিন্নি বৌরা মেনে চলে নীতি
বোনে গেলি সিঁদুর দেয় না সাদা উক্ষু সিতি
বেচে খুটে চলেও যে যায় না অক্কে কোরা
অক্ত নাগা কাপড় চোপড় ঢুকলো ঝেনো কারা?
টানাটানির সোংসারেতে পড়লো ঝ্যেনো বাজ
অঙিন দিন সপ গেলো উড়ে পোরায় সাদা সাজ
নোড়াই কোরে যেতি হোবা মরোণ হোবার আগে
বাগ কুমিরির বোন জঙ্গোলে নোনা নদী জাগে।
সারা জেবন ঘানি টেনে সোংসার কোরে গেলো
তারা এ্যাকোন চোকির বালি কি আর বলবো বলো
আস্তার পাশে কুঁজি বেদে শাক-ভাত করে খায়
বুড়ির কাচে আসলি মারা জালায় জ্বোলে যায়।
সীতামাসির বড়োছাবাল আস্তায় টানে ভ্যান
বৌটা বড্ডো ছিচকাঁদুনে করে ঘ্যানরঘ্যান
মুকির ওবোর বললি কোতা ঠেইপে য্যেনো ওটে
ভালো কোতায় বেজার জেনো মুকিতে খই ফোটে।
মেজো বৌটা মাঝিগার ঝি নেকা পোড়া জানে
ভালো হোক বা মন্দো হোক না শউরো শাউড়ির টানে।
গেলো বচোর পান্তা দিতি গেলো দকিণ মাটে
জলের ভোতর নুইকে ছ্যেলো নতায় শরীর কাটে।
ছোটো ব্যেটার বে থা হয় নে অঙের কাজ করে
শওরের এট্টা মেয়ে নাকি ডাকতো নাম ধোরে
বয়োস কতো আটাশ হোবা নাকে মুকি বাঁশি
পাড়ার বৌরা বলতো তারে আধার কালো শশি।
গায়ের অঙটা এট্টু চাপা কেলাস এইট ফেল
বিদ্দের ঝুলি ফাঁ ফাঁ করে দেকায় তেবু খ্যেল
কচিব্যেলায় পিঁমড়ে ছেড়ে ইক্কুলির পাট শেষ
সুটি বুটি বড়ো বাবু ভুলে গেচে দেশ।
কতো মানুষ পেটের টানে ছেড়ে গেচে ঘর
কতো মানুষ বাঁধন ছিঁড়ে হয়ে গেচে পর।
মাটির টানে আসে ফিরে শওর থেকে গাঁয়ে
হাত ছানি দেয় আগাশ মাটি নদীর ভোরা নায়ে।
ভাড়া ঘরে ছানা পোনায় আচে এ্যাকোন ভালো
বৌটা নাকি সেলাই শেকায় অঙটা এট্টু কালো
অনেক বচোর পরে ওরা ঢুকলো দেশের বাড়ি
আসোল কোতা মাটির সোঙ্গে নেগে আচে নাড়ি।
চলবে…