তৈমুর খানের গুচ্ছ কবিতা

#সরলতার গল্প

সরলতাগুলি খুঁজতে এসেছি
কোথাও সরলতা আছে?
চারিদিকে রাতজাগা কোলাহল
সঙ্গমের অন্ধকারে ঝরছে শীৎকার
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গল্পের প্রয়াসে
আলো জ্বলে ওঠে
আবার আলো নিভে যায়

কতদিন এই রাস্তায় হেঁটেছিল ব্যঞ্জনাময়ী
কতদিন দুলেছিল বেণী
স্মৃতির আমলকি বন ছুঁয়ে
আমাদের প্রথম কানাকানি

তারপর বৃষ্টি এসেছিল
শ্রাবণের ভরা নদীর কূলে
আমাদের ছাতা উড়ে গেলে
প্রথম ভেজার গন্ধে আনন্দে হেসেছিল জল
তুমিও সরল আর আমিও সরল
সাঁতার জানি না বলে
পৌঁছাতে পারিনি কেউ গল্পের ভেতর

তবু গল্প আছে
সরলতাগুলি এখনও জটিল হয়নি
যদিও অব্যয়-ক্রিয়ায় রাস্তা ভ’রে গেছে!

#ভাষাজন্ম

দারুণ পাখিরা সব ডাকছে চারিদিকে
পাখিদের ডাক শুনছি আমিও জেগে জেগে
ক্ষুধা-তৃষ্ণারাও পাখিদের ডাক শুনে শুনে
জৈবধর্ম ভুলে গেছে

জানালা খুলে মাঝেমাঝে চাঁদও চলে আসে
বহু পুরাতন চাঁদ
কাব্য-কবিতার পাড়া ভেদ করে সরস উপন্যাসে
দেহ বিক্রি করেছে সে
জ্যোৎস্নাও দিয়েছ যাকে তাকে

ইন্দ্রিয়ের তাপ ক্রমশ ঠাণ্ডা হলে
পাখিদের ডাকেও ভাষার জন্ম হয়
যে ভাষা বোঝে না কেউ
শুধু জ্বর হলে কেউ কেউ আচার খায়
মুখ ভালো হবে বলে

আজ ইন্দ্রিয় পতন হোক
বসন্তে বসন্ত মেলাব—
পাখিতে পাখিতে সংসার ভরে গেলে
আমাদের ভাষাজন্ম তীব্রতর হবে
ভাষায় ভাষায় বয়ে যাবে কালস্রোত….

#বয়স বাড়েনি

বয়স বেড়েছে এত তবু মনে হয় বয়স বাড়েনি
সেই বটবৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছি
মৌসুমি বাতাস আসছে
মাছরাঙা নামছে অতর্কিতে
এখনও ঘাড়ের রোমগুলি বাতাস নেড়ে দেয়
চুল এলোমেলো
ঝাপসা দৃষ্টিও উচ্ছল সতত
ঢিল ছুঁড়ে দিই
অনুভূতির বেগ তরবারি বানায়
যুগ ও সময় কেটে কেটে
মানবিক সূর্যের প্রতীক্ষা তার

নৌকাটি কোথায় যায়?
আমিও যেতে চাই নদীর সঙ্গমে
বালিতে পায়ের চিহ্ন

উদ্দাম কৈশোর ছুটে যায়

#সংবাদ

কত সংবাদ ভেসে বেড়াচ্ছে
সংবাদেরও সংবাদ ভাসছে
মাটি থেকে উঠে আসছে লাশ
লাশ থেকে উঠে আসছে গন্ধ
বাতাস আজ ভারী হচ্ছে বলে
উড়তে পারে না স্বপ্নের হাঁস।

টাকার পাহাড়ের খবর শুধু
খবরে খবরে ভরে গেছে রাস্তাঘাট
আর মাছিদের আনাগোনা শুধু
কার কাছে বসব? সবাই এখন মাছি

আবেগের মাথায় জল ঢালি
নির্ঘুমের পরিশ্রমে বার্ধক্য তার
দীর্ঘ রাত্রির দুয়ার খুলে গেছে
বিদ্বেষের সঙ্গে সংগম সংঘাতের

সিংহাসনের মাথায় উঠে চেঁচাচ্ছে কারা?
দেখতে সিংহের মতো ডাকটি বুক্কণ
ধর্মাধর্ম জুড়ে স্রোত, ছুটছে কাঁদাহাসা
সভ্যতার ধ্বংস দেখতে এসেছি সবাই!

#আমার কবিজীবন

একটাও পায়ের ছাপ পড়ছে না রাস্তায়
হাঁটতে হাঁটতে বিকেল হয়ে গেল

রোদের সিঁদুর মেখে পায়রা উড়ল
শালিক পাখির ভীরু চিৎকার ভেসে এল
গ্রামের ফাঁকা পুকুর ঘাটে
একাকী নির্জন এখন

আমি কালিদাস হতে চাইলাম
তারপর মত পাল্টে শরৎচন্দ্র
তারপর আবারও মত পাল্টালাম

এখন আমি কী হব?
ভাবতে ভাবতে রাতের তাঁবুর দিকে
চলে যাচ্ছি ক্রমশ…

#একটি স্বপ্ন

আজ স্বপ্নে আমি মরে গেছিলাম
কিন্তু মরার পরও আমি জীবিত ছিলাম
কথা বলছিলাম আমার মৃতআত্মীয়দের সঙ্গে
তারপর একসঙ্গে সবাই খেতে বসেছিলাম

আমাদের পুরনো মাটির বাড়িটি অবিকল তেমনই আছে
খড়ের চালে দুটি প্রাচীন কাক বসে আছে এখনও
বাড়ির পাশের নিমগাছ আমাদের দুপুরবেলা ছায়া করে আছে
পুকুরঘাটের সেই লাল পাথরটি এখনও সদ্য যুবতী

সব দেখতে দেখতেই স্বপ্নটি বাস্তব হয়ে গেল
আর ঘুম ভাঙলেই উদাস হয়ে চেয়ে রইলাম
মনে করতে পারলাম না আমার ভাত খাওয়া
পুরনো থালাটি আগের মতোই ফুটো ছিল কিনা!
অথবা এতদিন পরও সেটি মেরামত হয়েছে কিনা!

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!