ধারাবাহিক উপন্যাস: উত্তাল চতুর্থ পর্ব

গোটা পৃথিবী জুড়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জমি নিয়ে যত কেলেঙ্কারি ঘটেছে, তার সালতামামী দিয়ে একটি অসামান্য উপন্যাস ‘উত্তাল’…  

চতুর্থ পর্ব

একবার নয়, দু’বার নয়, বারবার বোঝাতে এসেছিল উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তারা। কিন্তু বীজেশরা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না, একজন ব্যবসায়ীকে জমি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওরা এতগুলো লোককে জমি থেকে উৎখাত করতে চাইছে কেন!
যারা জমি দিতে চাইছিল না, তারা এককাট্টা হতে শুরু করেছিল। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছিল, কী করে আটকানো যায় এটাকে। দল বেঁধে উকিলের কাছেও গিয়েছিল ওরা।
এরই মধ্যে জমি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় চিন্তায় চিন্তায় কেউ শয্যাশায়ী হলেন বিছানায়। কেউ মারা গেলেন হৃদরোগে। কেউ একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।
হাজার বুঝিয়েও, নানা রকম টোপ দিয়েও জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষকদের যখন কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছিল না, তখন আর প্রশাসন নয়, দলকে সাহায্য করতে আসরে নামল তাদের পার্টির ক্যাডার আর মাসলম্যানরা। কিন্তু তারাও তো মানুষ। তাই তাদের বিবেক যাতে কখনওই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, নেশায় চুর করে রাখার জন্য উপর মহল থেকে তাদের জন্য ঢালাও মদের ব্যবস্থা করা হল। হাতে তুলে দেওয়া হল আর্মস। বলা হল, ওখানে ঢুকে তোমরা যা ইচ্ছে হয় করো। যত খুশি লাশ ফেলো, যত মেয়ে-বউকে পারো রেপ করো, পুলিশ তোমাদের দিকে ফিরেও তাকাবে না। ও সব আমরা দেখব। তোমরা শুধু ওখানে এমন আতঙ্ক আর ত্রাস সৃষ্টি করো, যাতে ওই অনিচ্ছুক কৃষকরা বউ-বাচ্চা নিয়ে রাতারাতি জমি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
দলের উচ্চস্তরের নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই, মাঠে নেমে পড়ল হাত-কাটা শিবু। গত ইলেকশনের দু’দিন আগে বোম বাঁধতে গিয়ে যার একটা হাত উড়ে গিয়েছিল। নেমে পড়ল সাট্টা নিমাই। সামান্য পেনসিলার থেকে যে শুধুমাত্র বুদ্ধি আর রাজনৈতিক দাদাদের ভেট দিয়ে সন্তুষ্ট করে, তাদের কাজে লাগিয়ে পাঁচ-সাত বছরের মধ্যেই শহরের সব ক’টা সাট্টার ঠেককে নিজের হাতের মুঠোয় করে নিয়েছে। শহরের উপকণ্ঠে গড়ে তুলেছে একটার পর একটা রিসর্ট। রমরম করে চালাচ্ছে নারী দেহের ব্যবসা। সে নামার আগে ভাল করে আঁটঘাট বেঁধে নিল। বেছে বেছে দাগি আসামিদের এনে জড়ো করল সে। যত দিন না কাজ মিটছে, তত দিনের জন্য ওই জমির কাছাকাছি তাদের থাকার ব্যবস্থাও করে দিল। হাতে ধরিয়ে দিল একটা করে বাইক। যাতে যেখানে সেখানে যখন খুশি ওরা যেতে পারে। অনিচ্ছুক কৃষকদের গতিবিধির ওপরে সর্বক্ষণ নজর রাখতে পারে।
এই বাইক-বাহিনীর হুটহাট আসা, বারবার হুমকি দেওয়া, শাসানো, মেয়ে-বউদের রাস্তায় একা পেলেই কু-মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া, অশালীন আচরণ করা, পারলে হাত ধরে টানা-হ্যাঁচড় করা– চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল জমি আঁকড়ে পড়ে থাকা ওই সব অনিচ্ছুক কৃষকের। কারণ, ওরা যা করত, বেছে বেছে অনিচ্ছুক কৃষকদের উপরেই করত। আর তার প্রতিবাদ করতে গেলেই দল বেঁধে চড়াও হত ওরা। মারধর তো করতই। আগুন লাগিয়ে দিত ঘরে। থানায় অভিযোগ জানানোর কোনও উপায় ছিল না। থানার কিছুটা আগেই ওরা ডেরা বেঁধেছিল। দু’-একবার যে কেউ থানায় যায়নি, তাও নয়। গিয়েছিল। অভিযোগও জানিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি। ওদের ধরা-টরা তো দূরের কথা, সামান্য একটা ডায়েরি পর্যন্ত নেয়নি।#

চলবে…

আরও পড়ুন: ধারাবাহিক উপন্যাস: উত্তাল তৃতীয় পর্ব

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!