বৈশালী খেয়াল করল, এত রোদ সত্ত্বেও নির্ঝরের মাথায় কোনও টুপি নেই। হাতে কোনও ছাতা নেই। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড রোদে গরমের ঝাপটা চোখে এসে লাগে, চোখ জ্বালা করে। এজন্য বেশির লোক এই গ্রীষ্মকালে চোখে গগগস পরে। কিন্তু বৈশালী নির্ঝরের হাতে বা বুকপকেটে কোনও গগলস দেখতে পেল না। নির্ঝর বৈশালীকে দেখে দ্রুত জায়গা থেকে সরে যাচ্ছিল। বৈশালী বলে উঠল, “নির্ঝরদা দাঁড়াও, দাঁড়াও।” নির্ঝর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল। শম্ভুনাথ রং নিয়ে ফিরে আসছিল। বৈশালী ও নির্ঝরকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। বৈশালী ধীরে-ধীরে নির্ঝরের দিকে এগোতে লাগল। নির্ঝর একইরকমভাবে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। নির্ঝরের কাছে গিয়ে বৈশালীকে বলল, “নির্ঝরদা, আপনি কেন আমার পেছনে ঘুরঘুর করছেন? আপনি কেন আমাকে বিরক্ত করছেন? আমি বাড়ি থেকে অনেক দূরে ঘুরতে এসেছি। এখানে আমি নির্ঝঞ্ঝাটভাবে, নিরুপদ্রবে সময় কাটাব। আপনি এত দূরে আমার পিছু নিয়েছেন। এটা কোন ধরণের অসভ্যতা? তাছাড়া আপনার সাহস তো কম নয়।” নির্ঝর বলল, “বৈশালী, আমি তোমার পিছু নিইনি। আমি মালঞ্চা দত্তক গ্রামে ঘুরতে এসেছি, মালঞ্চা-দত্তক-গ্রাম দেখতে এসেছি। আমি জানতাম না, তুমি এখানে আসবে। আমি আজ সকাল সাতটায় মালঞ্চা গ্রামে এসেছি। আজ সারা দিন এই গ্রামেই কাটাব।” শম্ভুনাথ বলল, “ম্যাডাম, দাদাবাবু একদম ঠিকই বলেছেন। সকাল সাতটা থেকে দাদাবাবু আমাদের গ্রামে রয়েছেন। আমাদের গ্রাম ঘুরে দেখছেন।” শম্ভুনাথ রং নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
আরও পড়ুন: বটগাছ ও বৃষ্টির মধুরতা
বৈশালী বলল, “নির্ঝরদা, এই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জে রয়েছে বৃহৎ বটুক গ্রাম। যার বর্তমান নাম বটুন গ্রাম। অতীতে পুন্ড্রবর্ধনের অন্তর্গত ছিল এই গ্রাম। এই বটুন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিখ্যাত কবি সন্ধ্যাকর নন্দী। তিনি পাল আমলের রামপাল-এর সভাকবি ছিলেন। তিনি বটুন গ্রামে থেকেই ‘রামচরিত’ নামে বিখ্যাত বই লেখেছিলেন। তিনি নিজেকে ‘কলির বাল্মীকি’ বলতেন। ঐতিহাসিক দিক থেকে বটুন গ্রামটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বুনিয়াদপুর থেকে বটুন গ্রামের দূরত্ব আর মালঞ্চা গ্রামের দূরত্ব প্রায় এক। তুমি ঐতিহাসিক বটুন গ্রামে না গিয়ে এই মালঞ্চা গ্রামে এলে কেন?” নির্ঝর উত্তর দিল, “দত্তক’ কথাটির মধ্যে শোভা আছে, সুগন্ধ রয়েছে। আমি ‘দত্তক’ কথাটির শোভা আস্বাদন করতে দত্তক-গ্রামে এসেছি, দত্তক- কথার সুগন্ধ নিতে মালঞ্চা দত্তক-গ্রামে এসেছি।”
চলবে…