সুকুমার রায় লিখেছিলেন—‘ছিল বেড়াল হয়ে গেল রুমাল!’ প্রশ্ন হল যে, তিনি যদি দেবী লক্ষ্মীর বাহনের বিবর্তন দেখতেন, তাহলে কি বলতেন? কারণ—আদিতে লক্ষ্মীর বাহন কিন্তু প্যাঁচা ছিল না, ছিল পশুরাজ সিংহ! বৈদিক সাহিত্যে লক্ষ্মী সম্পর্কিত যে বর্ণনা পাওয়া যায়, সেটার থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে—বৈদিকযুগের মধ্যেই প্রাচীন ভারতে লক্ষ্মী সংক্রান্ত ধর্মবিশ্বাসের জন্ম হয়েছিল। এই দেবী সংক্রান্ত ধর্মবিশ্বাস খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয়-প্রথম শতাব্দীতে বা খৃষ্টীয় প্রথম কয়েক শতাব্দীর মধ্যে আরও জনপ্রিযতা লাভ করেছিল। একথার প্রমাণস্বরূপ বলা চলে যে, সেই সময়কার যেসব নামমুদ্রা, মুদ্রা ও ভাস্কর্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে—সেগুলিতে লক্ষ্মীকে পদ্মহাতে, পদ্মবনে দাঁড়িয়ে, সমৃদ্ধির প্রতীক পূর্ণঘট থেকে উঠে আসা পদ্মের উপরে ও পদ্মহাতে দাঁড়ানো ইত্যাদি নানা ভঙ্গিমায় দেখানো হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ‘ধনদেবী’ লক্ষ্মী বিভিন্নরূপে এদেশে পূজিতা হয়ে আসছেন। বিশেষ করে বঙ্গদেশে হিন্দুদের ঘরে-ঘরে আজও লক্ষ্মীর পূজা হয়, লক্ষ্মীর লৌকিকব্রত পালন করা হয়, ব্রত সম্পর্কিত আলপনা দেওয়া হয়। কোজাগরী পূর্ণিমাতে দেবীর বিশেষ পূজা প্রচলিত রয়েছে। বর্তমানে বাঙলায় (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে) লক্ষ্মীর যে মূর্তিগুলি প্রচলিত রয়েছে, সেগুলিতে এককভাবেই হোক কিংবা সপরিবারেই হোক,—সেগুলোতে দেবীকে তাঁর বাহন প্যাঁচা বা পেচকের সঙ্গে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে প্যাঁচার উপস্থিতি ঠিক কতটা প্রাচীন এবং কেন শেষে তাকেই দেবীর বাহন হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল—সেটার ইতিহাসও কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদে (১,১৬৬,১০; ২,২৩,১৮; ৩,১,৫; ৪,৫,১৫; ৫,৬০,৪; ৭,১৫,৫; ইত্যাদি) এবং অন্যান্য গ্রন্থগুলিতে, যেমন—শতপথ ব্রাহ্মণ (৮,৪,৪,১১), তৈত্তিরীয় সংহিতা (২,১,৫,২), ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (২, ৪০.৮), মহাভারত (৯,১৫৮,৩) ইত্যাদিতে লক্ষ্মীর সম্পর্কে যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তাতে দেবীর বাহন হিসেবে কিন্তু প্যাঁচার কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। এমনকি লক্ষ্মীর প্রাচীনকালের কোনও মূর্তিতেও প্যাঁচার উপস্থিতির কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এথেকে বোঝা যায় যে, লক্ষ্মীর সঙ্গে এই প্যাঁচার ধর্মীয় সংযোগ এবং পরিশেষে বাহনরূপে প্যাঁচার পরিগণ্য হওয়ার ইতিহাস দেবীর ইতিহাসের তুলনায় নিতান্তই অর্বাচীন। এছাড়া দেবীর বাহন হিসেবে প্যাঁচার আগমনের অনেক আগেই লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে সিংহের উপস্থিতির ঐতিহাসিক প্রমাণ কিন্তু ঐতিহাসিকেরা পেয়েছেন। এপ্রসঙ্গে এখানে উত্তরপ্রদেশের এটা জেলার বিলসড়ে আবিষ্কৃত একটি স্তম্ভের গায়ে উৎকীর্ণ গুপ্তযুগের একটি ভাস্কর্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই ভাস্কর্য অভিষেক লক্ষ্মী বাগজলক্ষ্মী নামে চিহ্নিত। সেই প্রতিমূর্তিতে দেবী লক্ষ্মীকে একটি সিংহের উপরে আসীনা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে দেবীর একহাতে রয়েছে পদ্মের মৃণাল এবং দেবীকে দু’পাশ থেকে দুটি হাতি অভিষিক্ত করছে। বিলসড় ভাস্কর্য ছাড়াও উত্তর ভারতের অন্যত্রও কিন্তু লক্ষ্মীর এই ধরণের আরো মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। প্রসঙ্গতঃ এখানে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত কাশ্মীর থেকে প্রাপ্ত তৃতীয়-চতুর্থ শতাব্দীর একটি লক্ষ্মী মূর্তির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সেই মূর্তিটি বর্তমানে বৃটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে দেবীর একহাতে রয়েছে পদ্মের মৃনাল; তিনি সিংহের উপরে বসে আছেন এবং তাঁর মাথায় উপুড় করা দুটি ঘট দৃশ্যমান। উক্ত মূর্তিটি ভগ্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সম্ভবতঃ অক্ষত অবস্থায় মূর্তিটিতে দুটি হাতি দু’পাশ থেকে ওই ঘটের জল দিয়ে দেবীকে অভিসিঞ্চিত করত বলে মনে করা অসঙ্গত হবে না।
ঐতিহাসিক তথ্য সাপেক্ষে মনে হয় যে, খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী নাগাদ সিংহের সঙ্গে লক্ষ্মীর প্রথম সংযোগ ঘটেছিল। ইতিহাস বলে যে, সেই সময়েই ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের (গ্রীসীয়-যবন, শক-পহ্লব, কুষাণ প্রভৃতি শক্তিবর্গের শাসনকালে) সঙ্গে পশ্চিম-এশিয়ার বিশেষ সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ঘটেছিল। তবে ওই অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন মাতৃ-দেবীর সঙ্গে পশুরাজের সম্পর্কের ইতিহাস গড়ে উঠেছিল। তাঁদের মধ্যে—সুমেরীয় নিনলিল (নিনহুরস্যাগ) ফ্রিজীয় ও লিডীয় (সুতরাং পশ্চিম-এশিয়) কুবিলি (কুবেলি?) বা সিবিলি, আসুবীয় ইষতার, গ্রীসীয় রিয়া ও অ্যাথিনা, ব্যাবিলোনীয় ননা এবং পারসিক অনাহিত—ছিলেন। সেইসব দেবীরা তাঁদের নিজের নিজের ভক্তমণ্ডলীর দ্বারা মাতৃদেবীরূপে পূজিতা হতেন। এরপরে একটা সময়ে বিভিন্ন জাতিভুক্ত সেইসব ভক্তগোষ্ঠীর মধ্যে ভাবের আদান প্রদানের ফলে ওইসব দেবীরা পরস্পরের নিকটবর্তী এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে একে অন্যের থেকে অভিন্নরূপে পরিচিত হয়েছিলেন। খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর বহু আগেই সেই একীকরণ সম্ভবপর হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ কুবেলি, ইষতার ও ননার বাহন বা সহচর—সিংহ, প্রথমে রিয়া ও পরে অ্যাথিনার সহচরে পরিণত হয়েছিল। ভারতের সঙ্গে পশ্চিম-এশিয়ার সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপনের ফলস্বরূপ ওইসব অভারতীয় মাতৃ-দেবীদের ধ্যান-ধারণা পরবর্তী সময়ে লক্ষ্মী সম্পর্কিত ভাবনাকে প্রভাবিত করেছিল। তৃতীয় কণিষ্কের একশ্রেণীর মুদ্রাকে এর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক প্রমাণ বলা যেতে পারে। সেই মুদ্রায় সৌভাগ্যের ফিতা হাতে সিংহের উপরে আসীনা দেবীর পদতল পদ্মের উপরে স্থাপিত বলে দেখা যায়। মুদ্রার পাশের উৎকীর্ণ লেখ সেই দেবীকে ননা বলে চিহ্নিত করে। সেক্ষেত্রে ননারূপে নির্দেশিত হলেও ওই দেবী কিন্তু ননা-লক্ষ্মীর প্রতিমূর্তিরূপেই ঐতিহাসিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। কুষাণযুগের বিভিন্ন মুদ্রায় ননার প্রতিমূর্তি সেই সময়ে তাঁর জনপ্রিয়তার ইঙ্গিত করে। অতএব উপরের আলোচনা থেকে একথা মনে করা যেতে পারে যে, লক্ষ্মীর বাহনরূপে সিংহের সংযুক্তির ধারণাটা আসলে ব্যাবিলোনীয় মাতৃ-দেবী ননার কাছ থেকেই এসেছিল। এসব ছাড়াও বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী জেলায় আবিষ্কৃত খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর আরো একটি ভাস্কর্য থেকে দেবী লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে সিংহের উপস্থিতির প্রমাণ ঐতিহাসিক পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে সেই ভাস্কর্যটি রাজশাহী-বরেন্দ্র রিসার্চ সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রয়েছে। অতীতে অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সর্বপ্রথম সেই ভাস্কর্যটির প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। সেই ভাস্কর্যের প্রধান মূর্তিটি হচ্ছে ললিতারূপী দুর্গা বা উমার। সেখানে তিনি সিংহবাহিন ও মহিষমর্দিনী নন। বরং ওই ভাস্কর্যে তাঁর সঙ্গে তাঁর তথাকথিত পরিবারের সকলকেই, যথা—লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ এবং কার্তিককে উপস্থাপিত করা হয়েছে বলে দেখা যায়। ভাস্কর্যটিতে এসব দেব-দেবীর ক্ষেত্রে বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ) তাঁদের প্রচলিত বাহনের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়, যেমন—সরস্বতীর সঙ্গে তাঁর বাহন হাঁস, গণেশের সঙ্গে মুষিক এবং কার্তিকের সঙ্গে যথাযথ ঐতিহ্য অনুসারে ময়ূর। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে, ওই ভাস্কর্যটিতে সিংহকে কিন্তু লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে দেখানো হয়েছিল, দুর্গার বাহন হিসেবে নয়! অথচ খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত সেই ভাস্কর্যের প্রায় চারশো বছর পরে, অর্থাৎ—ষোড়শ শতাব্দীতে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত কবিকঙ্কণ চণ্ডীতে পরিবারের অন্যান্যদের (অর্থাৎ—শিব, লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিকেয়) সঙ্গে দশভূজা চণ্ডিকার (অর্থাৎ—দুর্গার) সিংহবাহিনী মহিষমর্দিনী রূপ বর্ণিত হয়েছিল। সেই পারিবারিক বর্ণনায় লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে প্যাঁচা এবং দেবী দুর্গার বাহন হিসেবে সিংহের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। লক্ষ্মীর বাহনের ইতিহাসের দিক থেকে এই দুটি তথ্য কিন্তু খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এথেকে বোঝা যায় যে, খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যের কোন একসময়ে দেবী লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে সিংহের জায়গায় প্যাঁচার আগমন ঘটেছিল।
এখানে অবধারিতভাবে যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়ে পড়ে, সেটা হল যে—প্যাঁচাই কেন বাহনরূপে এই ধন-দেবীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল? এবিষয়ে বিদ্বজ্জনেরা বিভিন্ন মত বা ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে দেখা যায়। সেগুলির মধ্যে একটি মত অনুযায়ী, বিষ্ণুর বাহন কাল্পনিক গরুড় পাখীর একটি পরিবর্তিত রূপ হিসাবেই লক্ষ্মীর বর্তমান বাহন প্যাঁচার আগমন ঘটেছিল। গবেষকরা তাঁদের এই মতের সপক্ষে কয়েকটি প্রাচীন নাম-মুদ্রার তথ্য ঐতিহাসিক প্রামাণরূপে দাখিল করেছিলেন। তবে এক্ষেত্রে অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অতীতে অন্য একটি সম্ভাবনার দিক তুলে ধরেছিলেন। যেহেতু প্যাঁচা শস্যের জন্য ক্ষতিকারক (শস্য খেয়ে ফেলে যেসব প্রাণী) প্রাণীদের ভক্ষণ করে (যেমন—ইঁদুর) কৃষকের শস্যক্ষয়ের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিয়ে কৃষকের জন্য এক মহৎ উপকারীর ভূমিকা পালন করে থাকে, সেহেতু লোকমানসের বিশ্বাসে প্যাঁচা কল্যাণরূপের একটি চিরন্তন স্থান অর্জন করেছিল। অন্যদিকে দিনের আলোয় প্যাঁচার ধানের গোলায় লুকিয়ে থাকবার মধ্যে দিয়ে সাধারণ কৃষিজীবী মানুষেরা তাঁদের লোক-বিশ্বাসের দৃষ্টিতে ধানের তথা শস্যদেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে প্যাঁচার একটি সমন্বয়-সূত্রও উদ্ভাবন করে নিয়েছিলেন। সাধারণতঃ কৃষিজীবী বাঙালিরা তাঁদের প্রধান শস্য ধানের সঙ্গে প্যাঁচার এই ওতপ্রোত সম্বন্ধ দিয়েই লোক-বিশ্বাসে তাকে লক্ষ্মীর বাহনরূপে কল্পনা নিয়েছিলেন বলে অনুমান করা যেতে পারে। অতীতে অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গ, বাঙ্গালা ও ভারত’ গ্রন্থে এপ্রসঙ্গে আরেকটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন বলে দেখা যায়। সেটা হল যে—সুদূর অতীতে হেলেনীয় মাতৃদেবী ও যুদ্ধের দেবী এবং এ্যাথেন্সের নগরলক্ষ্মী এ্যাথিনার প্রতীক ছিল প্যাঁচা, খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয়-প্রথম শতাব্দীতে সেই দেবী সংক্রান্ত বিশ্বাসের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশের পরিচিতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু প্রাচীনকালের কোনও লক্ষ্মীর মূর্তিতে এর অনুপস্থিতির ফলে তিনি এ্যাথিনার কাছ থেকে তাঁর বাহনকে পেয়েছিলেন কিনা—সেকথা বলা মুশকিল। (বঙ্গ, বাঙ্গলা ও ভারত; বি, এন, মুখার্জী, পৃ- ৭৫) অন্যদিকে অধ্যাপক রণবীর চক্রবর্তীর মতে প্যাঁচার সঙ্গে প্রাচীন শিল্পশাস্ত্রের যে দেবীর যোগসূত্র পাওয়া যায়, তিনি হলেন—চামুণ্ডা। কিন্তু ভয় উদ্রেককারী ও অমঙ্গলসূচক চামুণ্ডার সঙ্গে ন্যগ্রোধপরিমণ্ডলা লক্ষ্মীর রূপগত কোন সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। (আনন্দবাজার পত্রিকা, পূজাসংখ্যা, ১৯৯২, পৃ- ৪৩)
যদিও প্যাঁচাকে লক্ষ্মীর বাহনরূপে বাঙালির প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে, তবুও দু’-একটি ঐতিহাসিক তথ্যসাপেক্ষে প্যাঁচার ও লক্ষ্মীর সহাবস্থানের অন্য একটি তাত্ত্বিক দিকও এখানে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। লক্ষ্মীর বাহনরূপে প্যাঁচার ঐতিহাসিক উদ্ভব ও বিবর্তনের প্রসঙ্গক্রমে সম্ভাবনার এই দ্বিতীয় তাত্ত্বিক দিকটিও আলোচনার যোগ্য। প্যাঁচা ও লক্ষ্মী এখানে অশুভ ও শুভের ধারণার বৈপরীত্যমূলক অবস্থানের এক প্রতীক। প্যাঁচার বীভৎসদর্শন আকৃতির জন্য তাকে অশুভ শক্তির প্রতীকরূপে গণ্য করবার সাধারণ প্রবণতা অতীতে অসঙ্গত ছিল না। এক্ষেত্রে প্যাঁচার লক্ষ্মীর পদতলে অবস্থান থেকে ভারতীয় ধর্মের সেই আদি ধারণাই প্রতিফলিত হয়েছে যে, প্রাথমিকভাবে না হলেও চূড়ান্তভাবে শুভশক্তিই জয়ী হয় এবং অশুভ শক্তির উপরে নিজের ধ্রুব প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। এখানে লক্ষ্মীর বিপরীত অ-লক্ষ্মীর ধারণার কথাটা উল্লেখ করা যেতে পারে। ঋগ্বেদের শ্রীসূক্তে অ-লক্ষ্মী বা পাপীলক্ষ্মীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এপ্রসঙ্গে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি সামাজিক আনুষ্ঠানিক রীতির দৃষ্টান্ত এখানে দেওয়া যেতে পারে। সেই ঐতিহ্যপূর্ণ রীতি অনুসারে অ-লক্ষ্মীকে ধর্মীয় নানা ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে বিতাড়নের পরই লক্ষ্মীর আবাহন করা হয়ে থাকে। ফলে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন জাগে যে—এই কুৎসিত পেচকই কি তাহলে অলক্ষ্মীর প্রতীক? সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিমূর্তিতে দেবীর পায়ের কাছে তার অবস্থান অলক্ষ্মীর, অর্থাৎ—অশুভ শক্তির উপরে লক্ষ্মীর বা শুভ শক্তির প্রাধান্যের দ্যোতকও হতে পারে।
তবে বর্তমানে কোজাগরী পূর্ণিমায় বাঙালির ঘরে ঘরে যে লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়, পৌরাণিক লক্ষ্মীর সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে তাঁর মিলের চেয়ে অমিলই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ঋগ্বেদ, শুক্লযজুর্বেদ এবং অথর্ববেদে—লক্ষ্মী ও শ্রী—নামের দুই দেবীকে কল্পনা করা হয়েছে বলে দেখা যায়, যাঁরা মূলতঃ সৌন্দর্য এবং সম্পদদায়িনী। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পুরাণে তাঁরা ক্রমে ক্রমে একসাথে মিলে গিয়েছিলেন, এবং আরো পরে ভৃগুঋষি ও খ্যাতির কন্যা বলে পরিচিতা হয়েছিলেন। বৈদিক বিষ্ণু এবং সূর্যদেবতা যখন পরবর্তী সময়ে একই বলে কল্পিত হয়েছিলেন, তখন সরস্বতী-ঊষা-লক্ষ্মী-শ্রী এঁরাও পরস্পরের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন, এবং লক্ষ্মী বিষ্ণুর স্ত্রীতে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলেন। বাঙালির ঘরের লক্ষ্মীকে শিব-দুর্গার কন্যা বলা হয়ে থাকে; সরস্বতী তাঁর ভগিনী, এবং কার্তিক ও গণেশ তাঁর দুই ভাই। কিন্তু প্রাচীন পুরাণের মতে লক্ষ্মী যখন দেবসেনারূপে জন্ম নিয়েছিলেন, তখন তিনি স্কন্দ ওরফে কার্তিকের স্ত্রী ছিলেন! এমনকি ‘মন্ত্রমহোদধি’ গ্রন্থে তাঁকে গণেশের স্ত্রী হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে! লক্ষ্মীর সঙ্গে পদ্মফুল এমন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত যে তাঁর অন্য নাম হল পদ্মা (বা কমলা); আবার মনসাও পদ্মা নামেই শিবকন্যারূপে বাঙালীর লৌকিক সংস্কৃতিতে কল্পিত হয়েছেন বলে দেখা যায়। খুব সম্ভবতঃ নামসাদৃশ্যের জন্যই দ্বিতীয় পদ্মাও শিবকন্যা হয়ে উঠেছেন। কিন্তু লক্ষ্মীর সঙ্গে পদ্মের যোগাযোগটা ঘটেছিল কেন? সূর্য পদ্মকে বিকশিত করেন, এই অভিজ্ঞতারই ধর্মীয় ব্যাখ্যা হল যে, বিষ্ণুরূপী সূর্যের শক্তিরূপিণী লক্ষ্মী এবং পদ্মকে অভিন্ন বলে মনে করা, এবং তাঁদের কেন্দ্র করে পৌরাণিক বৃত্তান্ত গড়ে তোলা।
প্রাচীনযুগে বৈদিক লক্ষ্মী শস্য সম্পদের দেবী ছিলেন না; নদীরূপিণী সরস্বতী তখন তাঁর জায়গায় উর্বর পলিজমির উৎস বলে শস্যদাত্রী দেবী হিসেবে গণ্য হতেন। কিন্তু এটা ঋগ্বেদের সেই অর্বাচীন অংশের কথা, যখন বৈদিক আর্যভাষীরা প্রাগার্য ভারতীয়দের কাছ থেকে চাষাবাদ শিখছিলেন। লক্ষ্মী, সরস্বতীর সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবেই শস্যদেবী হিসেবেও গণ্যা হয়েছিলেন; এবং তখন থেকেই লক্ষ্মী এবং পৃথিবী-দেবীও অভিন্না হিসেবে গণ্য হতে শুরু করেছিলেন। বিষ্ণুপুরাণে বলা হয়েছে যে, বরাহ অবতার-রূপে বিষ্ণু বসুমতীকে তাঁর স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন। অতএব শস্যদায়িনী ধরিত্রী এবং শস্যদেবী লক্ষ্মী উভয়েই যখন বিষ্ণুর স্ত্রী হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, তখন তাঁরা দু’জনে মিলে মিশে এক হয়ে গিয়েছিলেন। এই ধারণাটা মহাযানী বৌদ্ধদের বসুধারা-লক্ষ্মীমূর্তির মাধ্যমেও বিবর্তিত হয়েছে বলে দেখা যায়; তাঁর পূর্ণঘট মাতৃদেবতার বিশ্বজনীন প্রতীক, এবং তাঁর হাতেও ধানের মঞ্জরী বর্তমান। বাঙালীর লক্ষ্মী-কল্পনাও মোটামুটিভাবে তাঁরই অনুরূপ।
লক্ষ্মীই যদি বসুন্ধরা দেবী হন, তাহলে সারা পৃথিবীতে আদিম মানুষেরা সমুদ্র থেকে মৃত্তিকার জন্মের যে কল্পনা করেছিলেন, সেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পৌরাণিক বৃত্তান্তও অবশ্যই গড়ে ওঠা উচিত ছিল। এবং ঠিক সেইমতোই সমুদ্র মন্থনের পুরাণকথা সৃষ্টি হয়েছিল। ইন্দ্রের ঐরাবত ঋষি দুর্বাসার দেওয়া মালা ছিঁড়ে ফেলবার পরে ঋষির শাপে ইন্দ্রদেব লক্ষ্মী-পরিত্যক্ত হয়েছিলেন; এবং দেবী সমুদ্রতলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এর ফলে বিশ্বচরাচরের শস্য-বৃক্ষ-পুষ্প শুকিয়ে গিয়েছিল। দেবতারা তখন অসুরদের সঙ্গে সন্ধি করে, এবং অবশেষে তাঁদের প্রতারিত করে বাসুকী নাগ ও মন্দার পর্বতের সাহায্যে সমুদ্র মন্থন করে অমৃতভাণ্ডসহ দেবীকে সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। সমুদ্রকন্যা ধনদেবী লক্ষ্মীর, অর্থাৎ বিত্তের প্রতীক হিসেবে সমুদ্রজাত কড়ির অর্থরূপে ব্যবহৃত হওয়ার সূত্রপাতও সেখান থেকেই ঘটেছিল। কড়ির দুই পিঠেরই বিশেষ আকৃতিও মাতৃকাদেবীর সূচক। লক্ষ্মী এখানে—ইন্তার এবং ভেনাস—এই দুই দেবীর সঙ্গে তুলনীয়া। বরাহের আক্রমণে ইন্তারের প্রেমিক তম্মুজ নিহত হওয়ার পরে, দেবী তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে পাতালপুরীতে গিয়েছিলেন। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার পুরাণে বলা হয়েছে যে, এরপরে শস্যদায়িনী সেই দেবীকে দেব-নর নির্বিশেষে আরাধনা করে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। সেই দেবীই আবার গ্রীকো-রোমক সংস্কৃতিতে ভেনাসের (চিন্তার = স্টার = শুকতারা = ভেনাস, এইভাবে বিবর্তন ঘটেছিল) রূপে, বিবসনা মূর্তিতে শ্রী ও সম্পদ দান করবার জন্য ঝিনুকের ভেলায় ভেসে পৃথিবীতে এসেছিলেন বলে পৌরাণিক কাহিনী চালু রয়েছে। তখন দেব-নর-যক্ষ-রক্ষ সবাই নাকি তাঁকে বন্দনা করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী বত্তিচেন্নী অঙ্কিত—‘বার্থ অব ভেনাস’—ছবিটির কথা স্মরণযোগ্য। লক্ষ্মীর সমুদ্র থেকে উঠে আসবার ভারতীয় পুরাণ কথার সঙ্গে ঐ গ্রীকো-রোমক পুরাবৃত্তের মিলও এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়। তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরমের মন্দিরগাত্রে উৎকীর্ণা সমুদ্রোত্থিতা লক্ষ্মীদেবীকেও অনুরূপভাবে বিবসনারূপে দেখতে পাওয়া যায়; ভেনাসের মত তিনিও দ্বিভুজা। দেবীর সেই নগ্নতা আসলে প্রাচীন মানুষের শস্য উৎপাদন-কেন্দ্রিক উর্বরতার ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। ইতিহাস বলে যে, প্রাচীন মেসোপটেমিয়া এবং সিন্ধুরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক লেনদেন চালু ছিল। হতে পারে যে, তাঁরা একের কাহিনী থেকে অন্যে প্রেরণা নিয়েছিলেন। আবার উত্তরকালে গ্রীকো-রোমক এবং পৌরাণিক হিন্দু সংস্কৃতিও একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ফলে ইন্তার-ভেনাস-লক্ষ্মী, সেকালের মানুষের দেবকল্পনায় খুব কাছাকাছি এসে পড়েছিলেন।
শুরুতেই বলা হয়েছে যে, আদিতে পেঁচা কিন্তু লক্ষ্মীর বাহন ছিল না। তাহলে আদিতে লক্ষ্মীর বাহন (বা লক্ষ্মী-উপাসকদের কুলকেতু ওরফে টোটেম) কি ছিল? পুরাণে বর্ণিত সমুদ্র মন্থনের মিথে দিকনাগ (হাতি) কর্তৃক দেবী বন্দনার বিবণটা তাঁকে কালক্রমে হস্তীবাহনা গজলক্ষ্মীতে পরিণত করেছিল, তিনি বাঙালীর ঘরে কমলেকামিনী রূপে পরিচিতা। তাঁর গণেশ-স্ত্রী হয়ে উঠবার বিস্মৃত-কাহিনীর উৎস হয়ত সেটাই। পরবর্তী সময়ে ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ হওয়া ‘ট্যাবু’ হওয়ার ফলশ্রুতিতে সেই গল্প বিস্মৃতিতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। কুনিন্দ-রাজাদের মুদ্রায় তাঁকে হরিণসহ কিংবা সিংহবাহনা রূপে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল; এর থেকে তাঁকে দুর্গার কন্যারূপে কল্পনা করা সহজ হয়েছিল। গুপ্ত রাজাদের মুদ্রায় লক্ষ্মী কখনো সিংহ, তো কখনো আবার ময়ূর-আরূঢ়া ছিলেন; এথেকে বোঝা যায় যে, কার্তিকের স্ত্রী হিসেবে তাঁকে কেন কল্পনা করা হয়েছিল। গৌড় অধিপতি শশাঙ্কের মুদ্রায় লক্ষ্মী হংসবাহিনী হয়েছিলেন; অর্থাৎ—তখন সরস্বতীর সঙ্গে তাঁর অভিন্নতার কল্পনা করা হয়েছিল। নেপালের প্রাচীন পটচিত্রগুলিতে তিনি কচ্ছপবাহিনী; সাঁওতালী পুরাণ বৃত্তান্ত অনুসারে কচ্ছপের পিঠে পৃথিবীর মাটি সমুদ্রের জল থেকে উঠে আসবার কাহিনীই সেটার উৎসে থাকতে পারে। এরপরে কোন একটাসময়ে পেঁচা বাহন হিসেবে লক্ষ্মীর কাছে এসেছিল। যেহেতু অতীতে রাতজাগা এই পাখিটিকেই শস্যক্ষেত্রের এবং ধন-সম্পত্তির উপযুক্ত প্রহরী বলে মনে করা হয়েছিল, সেহেতু কোজাগরীও ঐ শস্য পাহারার সঙ্গেই জড়িত।
উপরোক্ত ইতিহাস থেকে স্পষ্টতঃই বুঝতে পারা যায় যে, লক্ষ্মীদেবীর উৎস এবং বিবর্তনকাহিনী আকর্ষণীয় রকমের বিচিত্র। প্রাচীন অবৈদিক লক্ষ্মী, যিনি ধন ও শস্যদেবী ছিলেন, তাঁর অনেক কিছুই—আলপনার পদচিহ্ন, পদ্ম ইত্যাদি—পরবর্তীকালের পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির লক্ষ্মীর মধ্যে গৃহীত হলেও (যেগুলি বিশ্বজনীনভাবে অতি আদিম কাল থেকেই শুভদ্যোতক বলে গৃহীত হয়েছিল বলে নৃতত্ত্ববিদরা মনে করে থাকেন), অনেক কিছুই আবার গ্রহণ করা হয়নি। কোজাগরী লক্ষ্মীর ব্রতকথায় মূলতঃ ঐ দুই লক্ষ্মীর দ্বন্দ্বই বর্ণিত হয়েছে। বাঙালির লক্ষ্মীপুজোয় বরাহদন্ত, কুবেরের মুণ্ড ইত্যাদির প্রতীক ব্যবহার আদিমতর এক সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে বহন করে—যা ভারতের অন্যত্র দেখতে পাওয়া যায় না। এই উপলক্ষ্যে কলাগাছের থোড়ের নৌকা তৈরি একই সঙ্গে আমন ধান ঘরে ওঠবার আগে বাণিজ্য-প্রস্তুতি এবং বৃক্ষপূজার আদিম স্মৃতির ঐতিহ্য-সমন্বয়রূপে কাজ করে থাকে। এর সঙ্গে আর্য ভারতের লক্ষ্মী-উপাসনার বিরোধ রয়েছে। সমুদ্র মন্থনের মিথে লক্ষ্মীর, অর্থাৎ—বিত্তের আবির্ভাবের ফলশ্রুতিতে শ্রমজীবী অসুরদের বুদ্ধিজীবী দেবকুল কর্তৃক প্রতারিত হয়ে অমৃতবঞ্চিত হওয়ার পিছনে যে সামাজিক দ্বন্দ্বের অবচেতন চিন্তা সক্রিয় ছিল, সেটারই একটা ভিন্নতর রূপ বলে এই বিরোধকে গণ্য করা যেতে পারে।
দেবী লক্ষ্মী মূলতঃ বিত্ত-সম্পদের দেবী বলেই, শ্রেণী-সমাজের কল্পনায় তিনি ওপর তলার বিত্তবানদের স্বার্থকে রক্ষা করেছেন। অতীতে তাঁর প্রতিশক্তিরূপে অলক্ষ্মীকে অনার্য দেবীরূপেই কল্পনা করা হয়েছিল। তাই অলক্ষ্মীকে বিদায় করা এবং লক্ষ্মীকে বরণ করবার রেওয়াজ সেকালের ওপর তলার সমাজপতিরা অন্যদের ওপরে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। সেই কারণে লক্ষ্মী-অলক্ষ্মীর নানা ব্রতকথা তৈরি হয়েছিল। অতীতে যাঁরা কৃষি-বিত্ত এবং বাণিজ্য-সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, লক্ষ্মী তাঁদেরই দেবীরূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। আর সেকালের সাধারণ মানুষ এই আকাঙ্খায় তাঁর আরাধনা করেছিলেন, যাতে তাঁরাও সেরকম বিত্তাধিকারী হতে পারেন। অর্থাৎ, লক্ষ্মী এক অর্থে আকাঙ্ক্ষার অধিদেবী; তিনি ভক্তি বা ভয়ের দেবী নন। এরকম ব্যাপার কিন্তু দেবদেবী কল্পনায় সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না।
#