রানা চক্রবর্তী

ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু একজন সাধারণ মানুষ।

দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তরের কবি সুকান্ত

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে বাংলায় হয়ে যাওয়া ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের বীভৎসতার কথা জানতে পারা যায়। ১১৭৬ বঙ্গাব্দে হওয়া সেই ভয়ানক দুর্ভিক্ষে বাংলার গ্রামগুলির শ্মশান হয়ে যাওয়ার কাহিনী মর্মন্তুদ ভাষায় বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন— “রাজপথে লোখ দেখি না, সরোবরে স্নাতক দেখি না, গৃহদ্বারে মনুষ্য দেখি না, বৃক্ষে পক্ষী দেখি না,…

Read More

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল তারিখে অকস্মাৎ মজঃফরপুরে প্রচণ্ড বোমার বিস্ফোরণে সমগ্র ভারতবর্ষ সচকিত হয়ে উঠেছিল। সেই সময়কার কুখ্যাত অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলক্রমে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর ছোঁড়া বোমার আঘাতে মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা নিহত হয়েছিলেন। এরপরেই সুরাট-কংগ্রেসের ঠিক তিনদিন আগে গোয়ালন্দে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট অ্যালেন বিপ্লবীদের হাতে অতর্কিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তারপরে…

Read More

প্রেতপুরী থেকে মরণদোল: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর অলৌকিক কাহিনী ২

(শেষ পর্ব) বহুরূপী (১৩৪৪ বঙ্গাব্দ): বিহারের একটি গ্রামাঞ্চলের পটভূমিতে লেখা বহুরূপীতে প্রেত সম্পর্কে একটি অভিনব তথ্যকে কেন্দ্র করে কাহিনীবৃত্ত গড়ে উঠেছে। শরদিন্দুর অধিকাংশ গল্পেই প্রেতাত্মারা বিদেহী বলে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে যে, একটি অশরীরী আত্মা শুধু যে দেহধারণ করতে পারে তাই নয়, সে ইচ্ছারূপধারীও বটে! আবার কি কৌশলে প্রেতাত্মা দেহধারণ করতে পারে,…

Read More

প্রেতপুরী থেকে মরণদোল: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর অলৌকিক কাহিনী ১

(প্রথম পর্ব) সাধারণভাবে অলৌকিকতা ও অতিলৌকিকতা বলতে মানুষের লৌকিক অভিজ্ঞতার সীমানা বহির্ভূত এমন কিছু রহস্যকে বোঝানো হয়ে থাকে যেগুলিকে বাস্তব যুক্তি বা বুদ্ধির দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে না; যেমন — ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ, দৈব প্রভাব, জন্মান্তরবাদ, মন্ত্রশক্তি ইত্যাদি। সৃষ্টির ঘনতমসাবৃত প্রথম প্রহর থেকে শুরু করে বর্তমানের আলোকোজ্জ্বল যান্ত্রিক শতাব্দী পর্যন্ত অলৌকিক ও অতিলৌকিকের প্রতি মানব হৃদয়ের…

Read More

হরিনাথ মজুমদারের সমাজসেবা

নিজে প্রথাগত কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করতে না পারবার ফলে কাঙাল হরিনাথের মনে দুঃখের কোন অন্তঃ ছিল না। আর সেজন্যই অন্যান্য বালক-বালিকাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে তিনি তাঁর নিজের অতৃপ্ত ইচ্ছাকে পূর্ণ করবার চেষ্টায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। গ্রাম বাংলার দরিদ্র বালক-বালিকাদের শিক্ষাদানের কাজকে হরিনাথ তাঁর জীবনের একটি অবশ্য পালনীয় ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। তাঁর বয়স যখন…

Read More

বাংলা নববর্ষ ও হালখাতা: ঐতিহাসিক উৎসের সন্ধানে

ইতিহাস বলে যে, বর্তমান সময়ে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে উৎসব পালন করবার যে রেওয়াজটা প্রচলিত রয়েছে, সেটা কিন্তু খুব একটা পুরোনো নয়। তাছাড়া সুবিশাল ভারত ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে বছর হিসেব করবার পদ্ধতিগুলিও কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ধরণের। তাই স্বভাবতঃই বাংলায় পয়লা বৈশাখ তারিখে নববর্ষ পালনকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত আলোচনার অবকাশ প্রায় থাকেই না। তবে নতুন বছরকে অভ্যর্থনা…

Read More

প্রাকৃত ভাষার উৎপত্তির ইতিবৃত্ত

আলোচ্য প্রসঙ্গে আলোকপাত করবার জন্য প্রথমেই প্রাকৃত ভাষার উৎপত্তির বিষয়ে প্রাচীন ভারতের দু’জন পণ্ডিতের বক্তব্যকে এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। হেমচন্দ্র নামের একজন প্রাকৃত বৈয়াকরণ বলেছিলেন— ‘প্রকৃতি সংস্কৃতং তত্র ভবঃ তত আগতং বা প্রাকৃতং।’ অর্থাৎ — ‘সংস্কৃতই হচ্ছে প্রকৃতি বা মূল। তার থেকে যা এসেছে বা উৎপন্ন হয়েছে সেটাই হল প্রাকৃত।’ তাঁর মতোই ‘প্রাকৃতচন্দ্রিকা’ গ্রন্থের…

Read More

শেখ ফয়জুল্লা ও নাথ সাহিত্য

শেখ ফয়জুল্লা বাংলা ভাষায় — গোরক্ষবিজয়, গাজীবিজয় ও সত্যপীরের পাঁচালী — রচনা করেছিলেন। এছাড়া অতীতে ঐতিহাসিকেরা ‘মীর ফয়জুল্লা’ ভণিতায় রচিত কতগুলি বৈষ্ণবপদ পেয়েছিলেন, সেগুলিও শেখ ফয়জুল্লার রচনা বলেই মনে হয়। গোরক্ষবিজয় কাব্যটি প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একটি বিশিষ্ট রচনা। কিন্তু সেই কাব্যটির রচয়িতা কে এবং সেটির রচনাকাল কি, — অতীতে সেসম্বন্ধে গবেষকরা এক বিরাট সমস্যার…

Read More

দোলযাত্রা – সমন্বয়ের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য

সমগ্র ভারতে একই উৎসব প্রচলিত রয়েছে, এমন উদাহরণ মোটামুটিভাবে তিনটির বেশী পাওয়া যায় না। সেই উৎসব তিনটি — হলদশেরা, দেওয়ালী এবং দোল। লোকসাংস্কৃতিক গবেষকদের মতে, প্রথম দুটির মধ্যে মানুষের ধর্মীয় অনুষঙ্গটুকু উৎসবমনস্কতার থেকে প্রবলতর হয়েছে, কিন্তু দোলযাত্রার ধর্মানুষঙ্গটি এর উৎসব-মুখরতার কাছে প্রকৃতপক্ষে গৌণই হয়ে গিয়েছে। সেদিক থেকে দেখলে এটিই হল একমাত্র সর্বজনীন সর্বভারতীয় উৎসব, যেখানে…

Read More

প্রাচীনকালে বাঙালীর বসন

কাশ্মীরী কবি ক্ষেমেন্দ্র তাঁর ‘দশোপদেশ’ গ্রন্থে কাশ্মীর প্রবাসী গৌড়ীয় বিদ্যার্থীদের বেশ অদ্ভুত রকমের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। খৃষ্টীয় দশম-একাদশ শতকে প্রচুর গৌড়ীয় বিদ্যার্থী বঙ্গদেশ থেকে কাশ্মীরে বিদ্যালাভ করবার জন্য যেতেন। ক্ষেমেন্দ্র লিখেছিলেন যে, তাঁদের প্রকৃতি ও ব্যবহার রূঢ় এবং অমার্জিত ছিল। তাঁরা অত্যন্ত ছুঁৎমার্গী ছিলেন; তাঁদের দেহ ছিল ক্ষীণ — কঙ্কালমাত্র সার; একটু ধাক্কা লাগলেই যেন…

Read More

ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির পটভূমিকায় শিব ও শিবরাত্রি

অতীতে মহেঞ্জোদড়োতে তিনমাথাওয়ালা কোনো একজন দেবতার চিত্রসম্বলিত একাধিক মোহর পাওয়া যাওয়ার পরে হরাপ্পাবিদ্যার প্রথম আচার্য স্যার জন মার্শাল তাঁকে পৌরাণিক শিবদেবতার আদিরূপ বলে সিদ্ধান্ত করেছিলেন। হরাপ্পা-সংস্কৃতির স্বরূপ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে যতই বিরোধ থাকুক না কেন, অন্ততঃ এই একটি বিষয় নিয়ে এখনও অবধি কেউই দ্বিমত পোষণ করেননি। বাস্তবিক পক্ষে, ভারতীয় পৌরাণিক ঐতিহ্যে শিবের যে বহু বিচিত্র…

Read More

কোম্পানি আমলে আধুনিক শিক্ষা ও মাতৃভাষার বঞ্চনা

বেনিয়া-শাসনের প্রথম যুগে বঙ্গদেশে ইংরেজি-শিক্ষা বিস্তারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কোম্পানির শাসকদের ছিল না। ১৭৫৭ সালের পরবর্তী প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে তাঁরা ভারতের মাটিতে নিজেদের অবস্থানকে রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট ছিলেন। তখন বঙ্গদেশে ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত আদালতের কাজের সুবিধার জন্য পণ্ডিত-মৌলভীদের নিয়োগ করতে হত বলে তাঁরা বাংলায় সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা-চর্চায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!