গীতিকাব্য: নোনা মাটির নোলক (পর্ব- ৮)

মাটির গান গাইতে গাইতে নোনাজলে ভেসে বেড়ায় মদন, ছমির মিঞারা। প্রকৃতি কাড়ে তাদের সুখ- স্বপ্ন- আশা- ভরসা। নোনাস্রোতে ভাঙনের সাক্ষী হয় রোজ রোজ। রাত নামলে ছমিরের চোখে ভাসে মেয়ে গোলাপির মুখ। শোনে বিবির অসহায় কান্না।কালক্রমে বাঁজা হারামনি শোনে নারী জীবনের কাঙ্খিত মা ডাক। নোনা জল শোনায় নিখোঁজ হওয়া মানুষের গল্প। আখ্যান জড়িয়ে বাঁচে বিপন্ন লোকসংস্কৃতি, অলৌকিক বিশ্বাস, গ্রাম্য নরনারীর প্রেম, অকাল শোক। ‘নোনা মাটির নোলক’ বস্তুত সমাজ, লোকসংস্কার ও রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ বিভাজনের দৃশ্যলিখন, ভাঙনের গান।

অষ্টম পর্ব

হারা এয়েচে বাপের বাড়ি অনেক দিনির পর
চোকির ওবর বানভাসি ঢেউ নোনা বালির চর
বদলে গেচে জায়গা জোমি আস্তা মাটির ঘর
গাচগাচালি জেবন আঙ্গার পেইলেচে সমোয়।

সোদ্দারেরা গরু নে যায় পুরবো পুরুষ ধোরে
ডাবর কোলসি আনবে ওরা দেকবি কায়দা কোরে
সেরোম ভালো ময়েল ছ্যেলো হারুর ব্যেটা নোনে
ওগার হাতের যাদুর কোতা বলতো জোনে জোনে।

হারামনি দেকতি গেচে মই ছাড়ার হই ম্যেলা
সোঙ্গে ছ্যেলো কচি টেপি তেকোন বিকেল ব্যেলা
হোঠাৎ কোরে কালো মেগে আগাশ গেচে ঢেকে
এধার ওধার ছুটতেচে সব ম্যেলার ঝেতো নোকে।

ঝেদিক তাকাই সোবার মুকি জোড়দা দেওয়া পান
এট্টু পরে থামলো আগাশ মেগ গুনো খানখান
দেকতি দেকতি ভোরে গেলো পাকা আস্তার মোড়
দল বেঁধে আসতেচে ঝেতো গুটকা বিড়ি খোর।

দাদা বলল ও ছানিরা একেন তোরা দাঁড়া
এট্টু পরে শুরু হলো দুকাড়ার মইছাড়া
গরুগার নাকি বান মারে বড়ো গুনিন ঝারা
সারা গায়ে গামচা বুলোয় দ্যেয় যে জল পড়া।

হাঁটু জলে গরু ঘোরায় আয় বায় তিনে সায়
মইয়ির ওবর ময়েল দাঁড়ায় জোরে নেজ পাকায়
ওপারেতে দেঁইড়ে ছ্যেলো নোম্বা মতোন ছেলে
বুকির ভোতর হচ্চে কেরোম ওরে দেকে ফেলে।

ধুর থেকে আসতেচে ভেসে কদোম ফুলির বাশ
বিষ্টি ভেজা গাচের পাতায় স্বপ্নো সুকির চাষ
বোর্ষায় সময় ঝেকোন নাগে তোলা ওয়ার ধুম
কাজের কোতা শুনলি নোকে দ্যেয় জম্পেশ ঘুম।

আজগের মতো খ্যেলা বন্দো ব্যেলা গেচে পড়ে
নোকজন ঝেতো ঢুকলো বাড়ি ঝেজার মুক করে
দাবায়তেনে ঝেৎল্লা পেতে নিকতেচে কোচ্ছানি
তুলসী তোলায় সোন্দে দেকাই চলদেন পদ্মমনি।

ওটোনেতে ঢুকলো দুজন ওগা মতোন ছেলে
ও পিসি তুই জাইনি এ্যাকোন আমার এগলা ফেলে
মদন ঢুকে পোণাম করে ভোদি জেটির পায়
ওরে ও বাপ এলি ককোন মইছাড়ার বাদায়?

মদন বলে তারক আমার আনলো ধোরে টেনে
এটা কি আর পরের বাড়ি এইচি তো সব জেনে
ওগার কোতা শুনতে ছ্যেলো এগলা নুইকে ঘরে
নাগদেচে ভয় দাদার বন্দু সে ঝেদি ডাক পাড়ে।

সোকাল ব্যেলায় হারামনি নিমগাচ তোলার ধারে
চোচাচোকি হাওয়ায় তেকোন নজ্জায় পাতা পড়ে
সাবি বৌদি বল্লো ওরে নৌকোয় নাগলি হাওয়া
পরের বাড়ি হবে আপন ছেড়ে ঘরের মায়া।

মেয়েমানষির জেবোন এরোম দুঃখ্যু সুকি ভোরা
এঘর ও ঘর ঠাঁই নাড়া আর চোকি ঝরে ঝোরা
বাপের বাড়ি আপন ছ্যেলো পুতুল পুতুল খ্যেলা
নদীর জলে কাঙড়া ধোরে কেটে যেতো ব্যেলা।

সোন্দে ব্যেলায় চেঁইচে চেঁইচে আসতেচে সব ফিরে
পেতোম বিটটা ছিইনে নেচে মাঝি পাড়ার ধীরে
আত্তির ব্যেলায় গেরাম শোনে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক
সোকাল ফোটে আলোয় আলোয় নোনা জলের বাঁক।

পাঁচু ঝেকোন যাচ্চে চলে খালের আস্তা ধোরে
হারামনি চেয়ে আচে ওদিকি মুক করে
ছেরাপনের ভালো দিনি ওটে হলদি গায়
মালা পরে পুরুষ মানুষ কেরোম হয়ে যায়।

পাঁচুর ঘরে বেধবা মা তিন কুলি নি কেউ
হারামনি গাঙধারীগার মাঝি পাড়ার বউ
ঘরে আচে নোম্বা চোওড়া চিত কোপালে গাই
হাম্বা ডাকে য্যেকোন তেকোন দেকা দেওয়া চাই।

গাচের গোড়ায় আসলি ঝ্যেনো ভাসে আগের কোতা
পেল্টে গেচে আগান বাগান ঝেতো বাঁশের বাতা
পদ্মমনির শউরো বাড়ি শিয়ালদার ওই কোলে
হাঁড়ি এ্যাকোন ভেন্য সোবার পাড়ার নোকে বলে।

বলনারে বউ দেকতি পাইনা দুটো চোকি ছানি
কদ্দিন পরে ঢুকল আঙ্গার ঘরের মেয়ে মনি
পাঁচু নাকি আবার এট্টা বউ এনেচে ঘরে
মেয়ে একোন বাস্তোছাড়া জ্বালায় শরীর পোড়ে।

ও সব কোতা সত্যি নয় মা নোকের মিচে কোতা
ষোলো বচোর বয়োস হবে বুকি গোপন ব্যেতা
গেল বচোর ভাঙলো ঝড়ে গাচের দুখান ডাল
সপ হারানো গাচের চোকি ভাঙা ছায়ার জাল।

নোতুন এট্টা ঘর বেঁদেচে বড়ো বন্দের ধারে
বচোর চারেক নোতুন ভিটেয় ছোট পুকুরির পাড়ে
তারক এ্যাকোন মহোল করতি সোঁদোরবোনে যায়
বোনের ভোতোর বিপদ আপদ মন জেনো কু গায়।

গাঙের কাচে বোনের কাচে আচে অনেক ইণ
নোঙর ফেলে অকাল জেবন মরোণ আঙা দিন
পোদীপ জ্বালে ঘরে ঘরে পড়ে ছোড়া ঝাট
সোয়াগ ছাড়া মেয়ে মানষির শূন্যো বুকির মাট।

চলবে…

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!