গীতিকাব্য: নোনা মাটির নোলক (পর্ব- ৯)

মাটির গান গাইতে গাইতে নোনাজলে ভেসে বেড়ায় মদন, ছমির মিঞারা। প্রকৃতি কাড়ে তাদের সুখ- স্বপ্ন- আশা- ভরসা। নোনাস্রোতে ভাঙনের সাক্ষী হয় রোজ রোজ। রাত নামলে ছমিরের চোখে ভাসে মেয়ে গোলাপির মুখ। শোনে বিবির অসহায় কান্না।কালক্রমে বাঁজা হারামনি শোনে নারী জীবনের কাঙ্খিত মা ডাক। নোনা জল শোনায় নিখোঁজ হওয়া মানুষের গল্প। আখ্যান জড়িয়ে বাঁচে বিপন্ন লোকসংস্কৃতি, অলৌকিক বিশ্বাস, গ্রাম্য নরনারীর প্রেম, অকাল শোক। ‘নোনা মাটির নোলক’ বস্তুত সমাজ, লোকসংস্কার ও রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ বিভাজনের দৃশ্যলিখন, ভাঙনের গান।

নবম পর্ব

ঝুঝগো ব্যেলায় কিচির মিচির গাচের ডালে পাকি
পুব আগাশে সোনার আলো সোন্দর নাগে চোকি
ভোরির বাতাস গার ওবরে ফুলির সুবাস ছাড়ে
গাচের পাতায় শিশির ঝেনো আলোর ঝিলিক মারে।

ঘরে ঘরে দিচ্চে ছোড়া আনতেচে জল কাঁকে
ওদে পোড়া গতরগুনো কাজের জন্যি হাঁকে
বোজা ছিড়ে পড়েচে ধান বিইচে গেচে পতে
খরখরে আয় না রে ও বাপ নে না হাতে হাতে।

নোকজন হলি ঝালাপালা যেতি হোবা মাটে
জ্যোষ্টি মাসের ওদ্দুরিতে মাতার চাঁদি ফাটে
মুরগিগুনো খোঁড়ের মদ্যি কোঁকোর কোঁকোর ডাকে
মেটে ওটোন গাচগাচালি মাতলা নদীর বাঁকে।

বিকেল ব্যেলায় চল না হারা এট্টা জায়গায় যাই
সোন্দে হওয়ার আগে গেলি দেকতি ঝেদি পাই
খালধারী দে দুজন হেঁটে গেলো জানের বাড়ি
মোজে যাচ্চে খালটা এ্যাকোন জঞ্জাল কাঁড়ি কাঁড়ি।

চোতুরদিকি ছইড়ে আচে ঝেতো পোচা খড়
গাচের গোড়ায় টিনির বাড়ি উগি দেকার ঘর
কতো জনের ওগ নড়েচে মাদুলি আর জলে
তক্বো করলি ফুরবেনে যা বিশ্বেসে তা মেলে।

বাচ্চা কাচ্চা না থাকলি যে কোতো নোকের কোতা
বাড়ির নোকে পাড়ার নোকে দেকলি বলে ঝাতা
বুকির ব্যেতা বুকি করে এতায় ওতায় গিচি
বিশ্বেস করে সোবার কোতায় থানে হত্যে দিচি।

দুজন মিলে গিচি সেবার পাগলা বাবার কাচে
কোতাশুনে বাবা আমার কিসব নিকে দেচে
আসার সোময় তিনটে শেকোড় দেলো কারির সুতো
নিষ্ঠা ভোরে সোকাপড়ে বোসাবি ঘট দুটো।

এরোম করে কতো জায়গায় গিচি ওগের তরে
ফুল না হলি ফল না হলি আকবে কে সোংসারে !
হারামনির কোপাল মন্দো হবে কি যে তার
ছাবাল ছাড়া বাড়ি ঝেনো নাগে অন্দকার।

দোষ কি এগলার মেয়েমানষির পুরুষির নি দোষ?
বাইরি থেকে সতীন আনে নি কোনো আপশোষ!
আচম্বিতে চেঁইচে ওটে আঙা চোকি জান
শিকোড় বাকোড় বেটে খাবি গোটা তিনেক পান।

যেকোন ওরা হেঁটে হেঁটে এলো হাটের কাচে
পাকিগুনো বাড়ি মুকো সুয্যু নুকোয় গাচে
হেটো চালা ভোরে গেচে মাল পত্তর কাঁড়ি
হালদারেগার ওই দোকানে এয়েচে নাল শাড়ি।

হাটেতেনে ভীড়ির ঠ্যেলায় গা গোলানো দায়
ছোট্ট মতোন গুমটি এট্টা নেড়া গাচের গায়
হাতের শেঁকা বাড়ন্ত চল শেঁকা পরে আসি
হাটটা পেইরে সামনের পাড়ায় থাকে নীলি মাসি।

নীলি মাসি এগলা থাকে তিন কুলি নি কেউ
ছাবাল গেচে গাড়ির তোলায় বুকি শোকের ঢেউ
দুক্কু কষ্টো মনের ভোতর নিত্যুই আশে যায়
তাতে পোড়ে জলে ভেজে নোনা বালির গায়।

চলবে…

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!