দুইটি কবিতা: ইশারার নিয়নবাতি, মববাজ

ইশারার নিয়নবাতি

বহুরঙা ঈগল উড়ছে সুনীল আকাশে
মায়ের কথা মনে হলে মনখারাপের
আকাশে তাকিয়ে থাকি
কখন সন্ধ্যাতারাটি জ্বলবে!
দখিন-পুবের আকাশে আর সন্ধ্যাতারা দেখি না,
দেখি বিভিন্ন নিয়নবাতির সংকেত
শষ্যক্ষেতের আইলের ছায়াবৃক্ষের ডালে
অপেক্ষায় বসে আসে আছে শকুনের ঝাঁক
বাঁশ বাগানে সন্ধ্যা নামলে কিচিরমিচির করতো হরেক রকম পাখি
ধানক্ষেত ফাঁকা হলে মেলা বসতো অতিথি পাখির
আজ শুধু ঈগল আর শকুন দেখি
সন্ধ্যাতারারা এখন রঙবেরঙের সাংকেতিক ইশারায় জ্বলে উঠে।
যখনই আকাশ প্রান্তে সন্ধ্যাতারার বিপরীতে নিয়নবাতি জ্বলে,
জ্যামিতিক মাপে আলোর প্রক্ষেপণে দিকনির্দেশনা দেয়
ঠিক তারই পরে এ বাংলার কোন পাড়াগ্রাম বা বাজার জ্বলে যায় দাউদাউ আগুনে
পুড়ে ছাই হয় গর্ভবতী মা, শিশু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, আমরা শ্মশান ঘাটের দিকে দৌড়াই
এ হচ্ছে বাংলার নতুন কুরুক্ষেত্রের কৌশল
অথচ বাংলাদেশে কোন পত্রিকায় এসব খবর ছাপা হয় না,
খবরে বেহেস্তি শান্তির নহর বয়ে যাচ্ছে
বাবা খুব ভোরে ফজরের নামাজ আদায়ে মসজিদে যান
পথে একটি মরা নদী, আইল ঘিরে শস্যক্ষেত,
নামাজ শেষে সূর্যের নবীন আলোয় দেখে শস্যক্ষেতে পড়ে আছে ধর্ষিতার লাশ
একদিন দেখতে পান মসজিদের সিঁড়ি বেয়ে অজুখানায় নেমে আসছে রক্তস্রোত
আজান ঘরের ভেতরে ততক্ষণে মৃত এক এতিম শিশু।
এসব দেখা আতঙ্কিত বাবা ঘরকেই মসজিদ বানিয়েছেন।
নিজ ঘরে নিরবে জায়নামাজ বিছিয়ে একা একাই নামাজ আদায় করেন।
যেনো এক করুণ আকুল সমর্পণ কণ্ঠ ও সুরে!
এদিকে মববাজ শান্তিরদূত নিয়ত নসিহতের যাবর কাটে
‘বাংলাদেশ কে গাজা হতে দিবে না।’

মববাজ

সুপরিকল্পিত সংঘবদ্ধ সংঘটিত বিপ্লব, প্রতিবিপ্লব, সন্ত্রাসের পরে
আচানক এলো এক শান্তিদূত
সুশীতল ভঙ্গি তার, মুখে শৈল্পিক কথামালা
বিত্তশালী তো বটে তবু-
আদমশরীরে তার মধ্যবিত্ত পাঞ্জাবি-পায়জামা,
হঠাৎ নজরে আসে মাথায় তানসেনের টুপি
আর বালকবয়সী কেডস পায়ে
বিশ্বমঞ্চে যেন ম্যাকিয়াভেলির নিপুণ নটরাজ।
“আপনারা এখন স্বাধীন,
ইচ্ছে মতো লিখবেন, সমালোচনা করবেন, স্বাধীনভাবে কাজ করবেন।”
আহা, স্বাধীনতা
তারপরও কথা থাকে-
নিত্যনৈমিত্তিক তার লালিত একদল মিলিশিয়া
উঠিয়ে নিয়ে যায় কোন সুন্দরী মডেল, কোন না কোন চলচ্চিত্র নায়িকা
পথেঘাটে ঘুরে বেড়ায় উশৃংখল কিশোরের গ্যাং
যখন তখন যা ইচ্ছে তাই স্বাধীনভাবে লুটতরাজ করে যাচ্ছে।
যারা লিখে ব্লগিং, ফেসবুকিং করি তাদের
বাসায় স্বাধীনভাবে হানা দেয়, মনচাইলে জ্বালিয়ে দেয় বাড়িঘর
স্বাধীনভাবে উঠিয়ে নিয়ে যায় যুবতী থেকে কিশোরী
পরবাসে বসে দুয়েক এনার্ক্টিক নির্দেশক
ইউটিউবে ঘোষণা দেয়
আগামীকাল পুড়িয়ে দেয়া হবে বত্রিশ নাম্বার
পরশু পুড়িয়ে দেয়া হবে রমনার চারুকলার সব নির্মাণ
ভাঙচুর লুটপাট তারপর জ্বালিয়ে দেয় বিভৎস উল্লাসে
অসহায় পথচারী নিরব দর্শকের মতো অশ্রুপাত করে
মববাজের সাঙ্গপাঙ্গরা সংবাদ সম্মেলন করে একটি ন্যারেটিভ বর্ণনা দেয়
এক উম্মাদ গভীর রাতে ডেকে আনে মিডিয়া দাস
তারও প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে দৌড় দেয় কিন্তু
পথে ঘাটে উৎপেতে থাকা কিশোর গ্যাং কেড়ে নেয়
ক্যামেরা মানিব্যাগ সহ সব,
নারী কর্মীকে অযাচিত আদর করতে ভুল করে না তারা
হঠাৎ মনে হলো কোন কোন মবগাদ্দারের মাজার জিয়ারত করা পূজা,
পূজা শিরক, তাই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে হবে
একদল হায়েনা নারেয়ে তাকবির বলে পুড়িয়ে দিল মাজার
পুকুরের মাছ, কবর বৃক্ষের ফল,
মাজারের দান বাক্সের টাকা গণিমতের মাল, নিয়ে নিল
এভাবেই সমগ্র বাংলাদেশ জ্বলে পুড়ে লুটে
লাট হয় একদল হায়েনা, কিন্তু রাষ্ট্র কিছুই জানেনা,
কারণ কোন মিডিয়া প্রকাশ করেনি কোন খবর।
মববাজ জীবিত কিংবা মৃত কবিকে চরম ভয় পায়
মেরুদণ্ড সম্পন্ন কবিকে পাঠাতে হবে জেলে
নিষিদ্ধ করতে হবে রবীন্দ্র – নজরুল,
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে হবে রফিক আজাদের ঐতিহাসিক বাড়ি
কারণ কবি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আমাদের রাষ্টযন্ত্রের মাথায় বসে থাকা মববাজ
শুক্রবার এলেই টুপি পড়ে কোন কোন মসজিদে ছুটে যান
ইমান আকিদা উম্মাহর পক্ষে শান্তির ওয়াজ করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!