বনফুলের এ অপ্রকাশিত চিঠিটি সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট ডাকসংগ্রাহক ও গবেষক আখলাকুর রহমান। এ চিঠিটি সংগ্রহের নেপথ্যের গল্পটি এ রকম: ১৯৭৩ সাল, তখন আখলাকুর রহমান রাজশাহী কলেজের ছাত্র, কলেজের শতবর্ষ উৎযাপন উপলক্ষে কলেজ সাজাতে চুনকাম ও রঙের কাজ চলছিল আর কলেজের অফিসের বস্তা বস্তা কাগজ বারান্দায় ফেলে রাখা ছিল। রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী [যাকে তিনি শিবলী চাচা নামে ডাকতেন] আর মাহবুবুর রহমান [মাহবুব ভাই ডাকতেন] সেই বস্তা ঘেটে প্রয়োজনীয় ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ আলাদা করতেন আর আখলাকুর রহমান তাদের পাশে পাশে থেকে কিছু কাগজ এগিয়ে দিতেন। তিনি মাঝে মাঝে অপ্রয়োজনীয় পোস্টকার্ড, খাম ইত্যাদি নিজের সংগ্রহের জন্য আলাদা করে রাখতেন।
সেখান থেকে হঠাৎ শাদা কাগজে কালো কালিতে লেখা একটা চিঠি তার হাতে উঠে এল যার লেখকের নাম ছিল বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। দেখে তার মনে প্রশ্ন জেগেছিল যে ইনি কি বাঙালি কথাসাহিত্যিক, সেই বিখ্যাত বনফুল? আরে তাইতো! এ চিঠি এখানে কোথা থেকে এলো? কার কাছে লেখা? চিঠিটি একটি ব্যক্তিগত প্যাডে লেখা। উপরে বাম দিকে একটি নকশা করা। খুঁটিয়ে দেখে বুঝতে পারলেন যে সেখানে লেখা আছে, “বনফুল।” বাংলা সাহিত্যের এক মহান উপন্যাসিকের একটি অপ্রকাশিত চিঠি এভাবে তার হাতে চলে এলো, যা তিনি কালের বিস্মৃতি থেকে রক্ষা করতে পারলেন–এ ভেবে তিনি বেশ আনন্দও পেলেন।
চিঠিটি ১৯৪৪ সালে বনফুল তখনও ভাগলপুর থাকতেন তখন লেখা। প্রাপকের নাম না পাওয়া যাওয়ায় চিঠিটি কাকে লেখা তা জানা যায় না যদিও। চিঠিটি পড়লে বোঝা যায় কোনো এক পত্রলেখকের প্রতিউত্তরে ১৯৪৫ সালের কোন একটি নিমন্ত্রণ রক্ষা তিনি করতে পারবেন না তা জানিয়ে ২৬ ডিসেম্বর তিনি এ পত্রটি লিখেছেন। যেখানে তিনি আরো জানিয়েছেন যে তার বড় মেয়ে টাইফয়েডে শয্যাশায়ী এবং তিনি ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে যাবে অন্য একটি নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। যতদূর জানা যায় তিনি কখনও অন্যকে চিঠি দিতে কসুর করেননি।
বিহারের ভাগলপুর জেলার আদমপুর ঘাট রোডের ব্যাংক কলোনির বাড়ি ছেড়ে ১৯৬৮ সালের ১৬ জুন বনফুল কলকাতায় পাড়ি জমান। এই চলে আসার দিনটার কথা জানা যায় পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান সত্যেন্দ্রনাথ ঘোষালের অভিজ্ঞতা থেকে। ভাগলপুর স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়। স্টেশনমাস্টার প্রথম শ্রেণির প্রতীক্ষালয় থেকে চেয়ার আনিয়েছেন বনফুলের বসার জন্য। কেউ একজন অভিমানের সুরে বললেন:’বাড়িটা বিক্রি না করলেই পারতেন। ভাগলপুরের সঙ্গে সম্পর্ক তা হলে বজায় থাকত।’ সঙ্গে সঙ্গে আরেক ভদ্রলোক জবাব দিলেন:”এখন সে বাড়ি রইল না, ভাগলপুরে সব বাড়িই ওঁর বাড়ি হয়ে গেল। যখন খুশি আসবেন, যেখানে খুশি উঠবেন।”♦