বোদল্যার: দুইশো বছর পরে দাঁড়িয়ে ২

।।দুই।।

১৮৪৭ সালে ২৬ বছর বয়সে পো’র সাহিত্য সম্পর্কিত বোদল্যারের মনোনিবেশের শুরু আর সেই নিমগ্নতা পাঠ এবং অনুবাদ ছাপিয়ে এবং পো’র সাহিত্য সম্পর্কে একাধিক প্রবন্ধ রচনা করেও ক্ষান্ত হয় না। দীর্ঘ ১৮টি বছর তিনি কাটান পো’র সঙ্গে। মৃত্যুর দু’বছর আগেও (১৮৬৫) তিনি ব্যাপৃত থাকেন পো’র সাহিত্যকর্মে। ১৮৫৬ সালে বেরোয় বোদল্যারের’র প্রথম পো-অনুবাদ ইস্তোয়াঘ্ এক্সত্রাঅর্দিন্যাঘ্ এবং ১৮৫৭-তে লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল-এর বছরে নুভেয়ে ইস্তোয়াঘ্ এক্সত্রাঅর্দিন্যাঘ্। ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয় পো’র রহস্যময় আর অদ্ভুত রসের গল্পাবলির বোদল্যারকৃত অনুবাদ। অর্থাৎ একটা দীর্ঘ প্রলম্বিত সময় তিনি কাটান এডগার এ্যালেন পো’কে নিয়ে। প্রশ্ন উঠতে পারে নিজের মৌলিক সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি এতটা অনুবাদ-মগ্নতা কী তবে তাঁর সৃজনশীলতার পরিমাণ-প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিল। সম্ভবত এর উত্তরে বলা যাবে, বোদল্যার এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর এই বিভাষী পূর্বসূরীর সাহিত্য-সংযোগে। এই সংযোগ তাঁর জন্যে ইতিবাচকই হয়েছিল। ১৮৪৯ সালে প্রকাশিত পো’র বিখ্যাত গল্প ‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাট’ অনুবাদ করেছিলেন বোদল্যার। অস্বাভাবিক মনস্তত্ত্বের গল্পটি ফরাসি সাহিত্যে চমৎকার অনুবাদ-সংযোজন হিসেবে স্বীকৃত। বেড়াল চরিত্র পো’র সাহিত্যে অনেকখানি জায়গা জুড়ে থাকতে দেখা যায়। মজার কথা, বোদল্যারের একাধিক কবিতা রয়েছে ‘বেড়াল’ এবং ‘বেড়ালেরা’ শিরোনামে। কেবল তা-ই নয়, তাঁর নিজেরও ছিল পোষা বেড়াল। নিঃসঙ্গ নগরজীবনে তাঁর সঙ্গী ছিল বেড়াল। বেড়াল যেন তাঁর প্রেমিকা, তার দৃষ্টিতে যেন প্রমিকারই তীক্ষ্ণ চাহনি’র প্রতিফলন। কিন্তু প্রেমিকার মধ্যকার সুখপ্রদ প্রসন্নতার পরিবর্তে এক ধরনের অশুভ বার্তারই যেন বাহী হয়ে দেখা দেয় বেড়াল। শুরুটা:
Viens, mon beau chat, sur mon coeur amoureux;
Retiens les griffes de ta patte,
Et laisse-moi plonger dans tes beaux yeux,
Meles de metal et d’agate.
আয়, আমার সুন্দরী বেড়াল, আমার প্রেমার্দ্র বুকে,
গুটিয়ে নে তোর দীর্ঘ নখ থাবার ভেতরে;
ডুবে যেতে দে আমায় ধাতু আর আকিকের
সুন্দরতাময় তোর দুই চোখে।

লক্ষ্য করা যাক অন্তিমাংশটুকু:

Et, des pieds jusques a la tete,
Un air subtil, un dangereux parfum
Nagent autour de son corps brun.
আর তার আশিখরনখ বাদামি শরীর জুড়ে
বয়ে যায় এক অনির্বচনীয় হাওয়া,
বিপজ্জনক এক সৌরভে।

এডগার এ্যালেন পো’র ‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাট’ নামক ছোটগল্প থেকে খানিকটা বর্ণনা লক্ষ করা যেতে পারে-
“বেড়ালটার নাম ছিল প্লুটো- আমার প্রিয় পোষ্য আর খেলার সাথী। আমি একাই তাকে খাওয়াতাম, ঘরের যেখানেই যাই না
কেন সে আমার সঙ্গে-সঙ্গে হাজির। এমনকি রাস্তায় বেরোলে আমার পেছন পেছন ওর ছুটে আসাটাকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার
পক্ষে যথেষ্ট কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতো।”

আরও পড়ুন: বোদল্যার: দুইশো বছর পরে দাঁড়িয়ে ১ 

পো’র গল্পের প্লুটো নামের সেই বেড়ালটা শেষ পর্যন্ত নায়কের হত্যার শিকার হয়। কিন্তু বোদল্যারের বেড়াল তাঁর গভীর-গোপন প্রেমার্দ্র মনোলোকের এক অনিবার্য উপাদান। দু’জনের জীবনের বাস্তবতার মধ্যেই অস্বাভাবিক মনস্তত্ত্বের উপজিব্যতা থাকলেও সেটি পো’র চেতনায় এক জান্তব-নিষ্ঠুর জগতের উন্মোচন ঘটায়। অন্যদিকে বোদল্যারের কবিচেতনায় তুচ্ছ প্রাণিও মানবিকতার স্পর্শে দ্যুতিময় রূপ নেয়। বস্তুত জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে বহির্জগতের কষ্ট ও যন্ত্রণাকে সামলাতে না পারলেও সৃজনশীলতার শক্তি দিয়ে বোদল্যার তাঁর অন্তর্জগতের অস্থিরতাকে সামাল দিতে পেরেছিলেন এডগার এ্যালেন পো’র সাহিত্য-সম্পৃক্ততায়।
মার্কিন সাহিত্যের যে আইকন বোদল্যারের ভালোবাসার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল প্রকাশ হওয়ামাত্র সেরকম একটি আইকনে পরিণত হলেন শার্ল বোদল্যারও। ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষে চলছিল সিপাহবিদ্রোহজনিত তুলকালাম ওলটপালট। সে-বছর ফরাসি সাহিত্যজগতেও ঘটে এক ধুন্ধুমার আলোড়ন। কবিতা তথা সাহিত্যের সঙ্গে আইন-আদালতের এমন রেষারেষির ঘটনাকে অদৃষ্টপূর্বই বলা যেতে পারে। যে-কবিতা সমগ্র ফরাসি সাহিত্যে এমনকি বিশ্বসাহিত্যে নতুন মাত্রিকতার বাহক রূপে স্বীকৃত হয় সে-কবিতাকেই দাঁড়াতে হয় আদালতের কাঠগড়ায়। প্রতিষ্ঠান-রাষ্ট্র-আইন যাঁকে অসঙ্গত বলে ঘোষণা করছে সেই একই ব্যক্তি প্রশংসায় বৃত হচ্ছেন সহগামী এবং পূর্বসূরীদের যৌক্তিক মূল্যায়নে। সবচাইতে বড় কথা নিজের কবিতা বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বোদল্যার তাঁর মা’কে চিঠিতে জানান, তাঁর কবিতা একদিন মূল্যায়িত হবে মহান ভিক্টর হুগো’র সমান্তরালে। এমনকি থিওফিল গতিয়ে এবং বায়রনের সমপর্যায়ে পৌঁছাবেন তিনিও। আবির্ভাবকালে এমনই ঐতিহাসিক পটভূমির নির্মাতা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কবি শার্ল পিয়ের বোদল্যার। ফরাসি সাহিত্যের অমর দিকপাল স্বয়ং হুগো (১৮০২-১৮৮৫) তাঁকে জানান যে তাঁর কবিতা নক্ষত্রের ঔজ্জ্বল্য নিয়ে দীপ্তিমান। নিজের সমস্ত সামর্থ্য দিয়ে তিনি অভিবাদন জানিয়েছিলেন উত্তরসূরী বোদল্যারকে। হুগো বিশেষভাবে প্রশংসা করেছিলেন তাঁর ‘ল্য সিন’ (‘রাজহাঁস’) কবিতাটির। প্রকৃতপক্ষে কবিতাটি ভিক্টর হুগোকেই উৎসর্গীকৃত। কবিতাটিতে আফ্রিকা-গ্রিস-প্যারিস সব মিলেমিশে একাকার। প্যারিস শহরকে তাঁর মনে হয়েছে হুবহু তাঁরই বিষাদের আদলে ঢাকা। বোদল্যারের প্যারিস-বিষাদের ভিন্ন কারণ সম্পর্কে পরে কথা হবে, তবে কবিতাটিতে অসাধারণ চিত্রকল্পের একেকটি ধাক্কায় খুলে গেছে একেকটি বন্ধ দরোজা। রাজপথে নালা-নর্দমার ধারে সঞ্চরণশীল একটি রাজহাঁসের চিত্রকল্প যেন জান্তবরূপে তৎকালীন জায়মান প্যারিসের পরিবৃত্তে স্বয়ং কবিরই হাঁসফাশ অবস্থানের বাস্তবতা। একা কবি নন, রাজহাঁসটি যে কিনা ওভিদের নায়কের মত গ্রীবা বাড়িয়ে বিধাতাকেও ভর্ৎসনা করবার সাহস দেখাতে পারে সেই বিরল ভাবনার বিস্ফোরণকে অভিনন্দন না জানিয়ে উপায় থাকে না কারোরই। ক্ষুদ্র রাজহাঁসের শ্বাস নেওয়ার অধ্যবসায়ে মানুষেরই ছায়াপাত লক্ষণীয়। কবির এ-অভিনব প্রতীকতায় আন্দোলিত হয়েছিলেন হুগো। ‘রাজহাঁস’ কবিতার সেই চিত্রকল্পটি লক্ষ করি:
“দেখলাম খাঁচা থেকে পালানো এক রাজহাঁস তার পলকা পায়ে
ফুটপাথ ঘষ্টে চলে আর খর্খরে মাটিতে হেঁচড়ে নিয়ে যায়
তার সফেদ পালকগুচ্ছ।
জলহীন নর্দমার ধারে খোলে তার চঞ্চুপুট।”
কেবল হুগো নন ফরাসি সাহিত্যের দিকপাল লেখকেরা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বোদল্যারকে।

ইংরেজ কবি টি এস এলিয়ট তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘বোদল্যার’ (১৯৩০)-এ লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল-এর কবির মূল্যায়ন করেছেন সংহত বিন্যাসে। তাঁর সৃষ্টির স্বাতন্ত্র্য নির্ণয়ে এবং কবিকণ্ঠের মৌলিকতার স্বরূপ বিশ্লেষণে এলিয়ট তাঁর কাব্যের সৃজনশীলতার অনন্যতাকে এবং তাঁর কাব্যদর্শনকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছেন। এলিয়ট দেখিয়েছেন, বোদল্যার তাঁর কাব্যের অনন্য চারিত্রে তাঁর সমকালীন এবং তাঁর পূর্বসূরীদের চাইতে এগিয়ে গেছেন সগর্বে। বোদল্যার তাঁর সময়ের চাইতে অনেক বেশি অগ্রগামী ছিলেন। তিনি নিজেই ছিলেন তাঁর বিশ্বাসের উৎস। তিনি কারও অনুকরণ করেন নি, কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শেও সমর্পিত হন নি। কেবল কবিতাকেই করে তুলেছিলেন তাঁর ভাষ্য ও তাঁর রাজনীতি। এলিয়ট তাই লিখেছেন, যাঁরা দান্তেকে পছন্দ করবেন বোদল্যারকেও তাঁদের পছন্দ হবে কিন্তু দু’জনের ‘ইনফার্নো’ দ্বিবিধ। একজনের নরক অতিপ্রাকৃত-অলৌকিক এবং অন্যজনের নরক বাস্তবিক। শুভ এবং অশুভ দুই-ই বাস্তব পৃথিবীর বিষয়। অশুভকে না দেখা মানেই যে অশুভ নেই তা নয়। বোদল্যার অশুভকে চিহ্নিত করেছিলেন, নিজস্ব বিষয়-ভাবনা-প্রকরণে তাকে উপস্থাপন করেছিলেন। সময় এবং সমাজ-রাষ্ট্র সেই নগ্ন-খোলামেলা উপস্থাপনার জন্যে তৈরি ছিল না। আধুনিকতা শব্দটিকে ফরাসি সাহিত্যে আমদানি করেছিলেন বোদল্যার তাঁর সেই বাস্তবের প্রকৃত অবয়বকে উন্মোচনের মধ্য দিয়েই। গুস্তাভ ফ্লবেখ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বোদল্যারের। ফরাসি বিচারকেরা তাঁর লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল-এর যে-ছ’টি কবিতাকে ‘অবসিন’ বিশেষণে চিহ্নিত করে গ্রন্থচ্যূত করেন সেগুলো সম্পর্কে তাঁরা বলেন, কবিতাগুলোতে প্রতিফলিত জান্তব বাস্তবতা মানুষের সংবেদনাকে মারাত্মকভাবে ধাক্কা দেবে যা জনসাধারণের জন্যে মঙ্গলজনক নয়। ভাবা যায়, এমন পরিশীলিত সৃজনশীল কাব্যের সমালোচনায় নেমেছিলেন আদালতের বিচারকেরা যেখানে দিকপাল ফরাসি লেখকেরা তাঁকে জানাচ্ছেন অভিনন্দন!

আরও পড়ুন: আজকের বাংলায় লেখকদের পরিস্থিতি

এলিয়টের বোদল্যার-মূল্যায়ন থেকে এটা স্পষ্ট, বোদল্যার তাঁর মনের স্বাধীনতা উপভোগ করেছিলেন তাঁর কবিতার অন্তর্জগতে। মনের এই স্বাধীনতাকেই লাভ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিজীবনে কিংবা সমাজবেষ্টনীর মধ্যে কোথাও সেই স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে মেলে না তাঁর জন্যে। ফলে, তাঁকে এক অর্থে প্রতিষ্ঠানেরও বিরোধিতা করতে হয়। প্রসঙ্গত মাদাম বোভারি’র রচয়িতা গুস্তাভ ফ্লবেখের কথা আবারও স্মরণযোগ্য। সমালোচকেরা মজা করে কখনও কখনও বোদল্যারকে বলেন কবিতার ফ্লবেখ এবং ফ্লবেখকে বলেন গদ্যের বোদল্যার। নিশ্চয়ই সমাপতনীয়, দু’জনেরই জন্ম ১৮২১-এ এবং দু’জনের দুই বিখ্যাত বই বেরোয় একই বছরে, ১৮৫৭ সালেÑ বোদল্যারের কবিতা এবং ফ্লবেখের উপন্যাস। আবার, দু’জনের সাহিত্যকেই জবাবদিহিতার জন্যে দাঁড়াতে হয় আদালতের কাঠগড়ায়। যাকে অন্তর্লোকের স্বাধীনতা বলা হচ্ছে সমাজ কিন্তু সেটিকে অনুমোদন করছে না। বরং সমাজ (সমাজের পক্ষে রাষ্ট্র) ব্যক্তি লেখকের স্বাধীনতাকে (সচেতন লেখকসমাজ দ্বারা নির্ণয় না করে) প্রতিষ্ঠানের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যাচাই করছে। একজনের কবিতা এবং অন্যজনের উপন্যাসÑ দু’জনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগÑ উৎরাঝ ও ম্যাইউঘ্, ইংরেজিতে কন্টেম্পট্ অব মোর‌্যাল্স্। এখানে মনে রাখা দরকার, সমালোচকেরা যেমনটা চিহ্নিত করেন, বোদল্যার হলেন উনিশ শতকের প্রথম কবি যিনি তাঁর কবিতায় বারবার ‘নু’ বা ‘আমরা’ সর্বনামটি ব্যবহার করেছেন। যতই তিনি স্বকীয় চেতনা-উদ্দীপ্ত হ’ন না কেন সামাজিক মূল্যবোধকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চান নি তিনি। এখানে বরং বোদল্যারের কোনো-কোনো দৃষ্টিভঙ্গিকে আমাদের নিকটে পশ্চাতমুখী সংস্কারও মনে হতে পারে। তাঁর দর্শনকে (কবিতাকে বিবেচনার বাইরে রেখে স্বতন্ত্রভাবে তাঁর অন্যত্র প্রকাশিত মন্তব্যের আলোকে।) কী বলা যাবেÑ নৈরাজ্যবাদী, সংরক্ষণশীল কিংবা বুর্জোয়া! বোদল্যারের দৃষ্টিতে সমাজে কেবল তিনটি শ্রেণির মানুষ সম্মানের যোগ্য: পুরোহিত, যোদ্ধা এবং কবি। পুরোহিত হলেন তাঁরা যাঁরা জ্ঞানের সন্ধান দেবেন, যোদ্ধারা হত্যা করবেন প্রতিপক্ষকে এবং নির্মাণের কৃত্য করবেন কবিরা। এঁদের বাইরে যারা তাদের কাজ হলো গতর খাটানো। তাদের জন্মই হয়েছে আস্তাবলে জীবন কাটানোর জন্যে, যেটিকে ভদ্র ভাষায় বলা হয় পেশা। বোদল্যারের এসব কথাকে প্রত্যক্ষভাবে গ্রহণ করলে আমরা হয়তো অন্য এক বোদল্যারকে দেখবো যিনি নিজেই প্রকারান্তরে প্রাতিষ্ঠানিক কণ্ঠে কথা বলছেন। যাহোক, বোদল্যার মানুষের পরম সম্পদ অন্তরের স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই বিসর্জন দিতে রাজি ছিলেন না। লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল-এর পরে লেখা রেভোল্ৎ পর্যায়ের কবিতা ‘লে লিতানিজ দ্য সাত্যাঁ’ (‘শয়তানের স্তোত্র’) লক্ষ করলে দেখবো সেখানে একটি ধ্রুবপদের মত আসা একটি পংক্তি যেন বেজে চলেছে গির্জার ঘণ্টার মত। বস্তুত ‘লিতানি’ মানে হলো গির্জার প্রার্থনার একটি পদ্ধতি। কিন্তু এখানে নায়ক হলো শয়তান যার কাছে বর চাইছেন কবি। কবির দুঃখভারাক্রান্ত হদয়ের বেদনা মূর্ত হতে থাকে বার-বার ফিরে আসা ছত্রটিতে- “ও সাত্যাঁ, প্রন্দ্ পিতিএ দ্য মা লাঞ্জ্ মিজেখ্!” অর্থাৎ “হে শয়তান, করুণা করো আমার অনিঃশেষ দুঃখে!” স্মর্তব্য লা মঘ পর্যায়ের দীর্ঘ কবিতা ‘ল্য ভোয়াইয়াজ’ (‘ভ্রমণ’) যেখানে কবির বেদনার্ত স্বীকারোক্তি- “স্য পেয়ি নুজনুই, ও মঘ! আপাঘেইয়োঁ!” যেটির অর্থ দাঁড়ায়: বিষাদবিধুর এই দেশ, হে মৃত্যু, কাছে এসো!” কবিতাটির প্রচণ্ড ধাক্কা টের পাওয়া যায় সর্বান্তিম শব্দটিতে। কবি যাবেন কোথায়, কোন্ অতলে, স্বর্গ কিংবা নরকে? (‘অঁফেঘ্ উ সিয়েল্, ক্যাম্পোখ্ৎ?) কিন্তু সে-অজানার গহ্বরে কবি পেতে চান ‘নতুন’কে- ‘পুঘ্ ত্রুভেঘ্ দ্যু নুভো’! (‘নতুনের অন্বেষণে!’) প্রচুর বিস্ময়চিহ্নের ব্যবহার রয়েছে কবিতাটিতে। আছে বোদল্যারের অনেক কবিতাতেই। শেষ চিহ্নটাও বিস্ময়েরই। যে-নতুনের সন্ধানে তাঁর সমস্ত জীবনের মন্থন সে-নতুনকে পাওয়ার পথে যন্ত্রণা আর যন্ত্রণাভোগই কবির সঙ্গী। এ ভ্রমণ (ভোয়াইয়াঝ) যেন কবির নিজের জীবনেরই ভ্রমণ। কবিতাটির একেবারে শুরুতে থাকে হয়তো তাঁরই শৈশবের স্মৃতি এবং প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই এ-বার্তা- “আঁ মাত্যাঁ নু পাঘ্তঁ” (“এক সকালে যাত্রা আমাদের”)। ঠিক কয়েক পংক্তি পরেই রয়েছে এক অশুভের বার্তা- ‘আঁ পাৎঘি অঁফাম্’Ñ যার অর্থ ‘কুখ্যাত স্বদেশ’। ফরাসি বিপ্লবের বত্রিশ বছর পরে জন্মানো কবির নিকটে তাঁর স্বদেশের করুণ পরিণতির জন্যে তিনি বাধ্য হয়ে ‘অঁফাম’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন তাঁর কবিতায়। কার জন্যে ‘কুখ্যাত’ সেই স্বদেশ, বলাবাহুল্য কবির ব্যক্তিগত তিক্ত-বিস্বাদ অভিজ্ঞতার মৃত্তিকাতেই জন্ম এমন অভিজ্ঞানের। স্বদেশের প্রতি এমন তিক্ততার জন্ম তাঁর হতেই পারে। হৃদয়নিংড়ানো আবেগ আর শ্রম দিয়ে তিল-তিল করে গড়া একটি-দু’টি নয় ছয়-ছয়টি কবিতাকে বাতিল করে দেয় তাঁরই স্বদেশ। তাঁর কবিতাবলিকে তিনি যে-শ্রেণিবিভাজনে গেঁথেছেন সেটি সুপরিকল্পিতভাবেই তিনি করেছিলেন- বিতৃষ্ণা ও আদর্শ, প্যারিস-চিত্র, মদ, সর্বনাশা ফুল (বুদ্ধদেব বসু যদিও এটিকে ক্লেদজ কুসুম বলেছেন। ইংরেজি অনুবাদকেরা বলেছেন ফ্লাওয়ারস্ অব ইভিল।), বিদ্রোহ, মৃত্যু। এই শ্রেণিকরণের সঙ্গে আরেকটি শ্রেণিও তাঁর কবিতার জন্যে অনিবার্য হতে পারেÑ সমকাল। এটা তাঁর নিজের অনুসিদ্ধান্তের আলোকেই বলা। বিশ^বিখ্যাত ফরাসি চিত্রশিল্পী এডওয়ার্ড মানে’র চিত্রকর্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে বোদল্যার বলেছিলেন, আমাদের সমস্ত মৌলিকতার উৎস হলো আমাদের সময়। সময়ই এর প্রগাঢ় ছাপ রেখে যায় আমাদের অনুভূতিতে। সময়কে যদি সমকালের কেন্দ্রীয় বিন্দু ধরা হয় তাহলে বোদল্যারের কবিতার যাবতীয় উপাদানের নেপথ্যে রয়েছে তারই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। তাঁর মৃত্যুবোধ, বিষাদ-বিতৃষ্ণা, ন্যক্কার, ক্ষোভ-বিদ্রোহ, প্রেম সবই বৃহত্তর অর্থে সমকালীনতাজাত। এমনকি আঙ্গিকের নতুনত্ব হিসেবে তিনি যে গদ্য ছন্দের শরণ নেন সেটিতেও থাকে সমকালীনতার সঙ্গে সংযোগ।

এবারে বোদল্যারের লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল-এর বিখ্যাত (তৎকালীন ফরাসি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে কুখ্যাত।) সেই ছ’টি কবিতার প্রসঙ্গ। ১৮৫৭ সালে তৃতীয় নাপোলিওঁ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রকাশিত হয় বোদল্যারের এ-কাব্যগ্রন্থ। ২২/২৩ বছর বয়স থেকেই তিনি ফরাসি লেখক-বুদ্ধিজীবী মহলে চেনামুখ। নিজে শখের চিত্রশিল্পী হলেও কাব্যগ্রন্থেরও অনেক আগে তাঁর প্রকাশিত চিত্রসমালোচনায় বোদল্যারের বর্ণনভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণের দক্ষতা প্রশংসা কুড়োয় যথেষ্টই। বিশেষ করে ‘রেভ্যু দে দ্যু মন্দ্’-এ মুদ্রিত তাঁর চিত্রসমালোচনা পেশাদার চিত্রসমালোচকদেরও মুগ্ধ করে। সে-বছর চিনের সঙ্গে বৃটেনের আফিম-যুদ্ধে জড়িয়ে যায় ফ্রান্সও। একই বছরে নাপোলিওঁ-র ভিয়েতনাম আগ্রাসনের ঘোষণা ফরাসি পুঁজিবাদের চরম নগ্নতাকেই তুলে ধরে। ফ্রান্সেও তখন চলমান অর্থনৈতিক চরমাবস্থা। বোদল্যারের কাব্যগ্রন্থ লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল প্রকাশ হওয়ামাত্র গোটা দেশে সৃষ্টি হয় আলোড়ন। মামলা রুজু করা হয় রচয়িতার বিরুদ্ধে। বিচারকের রায়ে ৩০০ ফ্রাঁ জরিমানা হয় বোদল্যারের। তাঁর অপরাধ ‘গণরুচির অবমাননা’ এবং মামলার জেরে বইটির প্রকাশকের আর্থিক দেউলিয়াদশা ঘটে। গ্রন্থের ছ’টি কবিতাকে সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয় এবং রায়ে বলা হয়, গ্রন্থের ভবিষ্যৎ সংস্করণে কখনই ঐ কবিতাগুলোর ঠাঁই হবে না। নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া কবিতাগুলো:
(১) লেজবো (২) ফাম দ্যানে (অভিশপ্ত নারী, বুদ্ধদেব বসু’র অনুবাদে ‘পাতকিনী’) (৩) ল্য লেথে (লিথি) (৪) আ সেল কি এ ত্রো গে (বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে ‘অতিশয় লাস্যময়ী’, মূল ভাষার ‘আ’ শব্দটিকে কবুল করলে ‘এক পরমানন্দময়ীকে’ শিরোনামটিও চলতে পারে।) (৫) লে বিঝু (বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে ‘অলংকার’) এবং (৬) লে মেতামঘ্ফোজ্ দ্যু ভঁপিঘ্ (বুদ্ধদেব বুসর অনুবাদে ‘পিশাচীর রূপান্তর’)।

আরও পড়ুন: রিশপ হয়ে লোলেগাঁও

১৮৬১ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে কবিতাগুলোকে বাদ দেওয়া হয়। তবে বেলজিয়ামের রাজধানি ব্রাসেলস থেকে প্রকাশক পুলে-মালাসিজ কর্তৃক কালো রংয়ের মরক্কো চামড়ায় বাঁধাই করা লে জেপাভ (‘জাহাজডুবি’) শিরোনামে যে-কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় তাতে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া ছ’টি কবিতাই অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সঙ্গে আরও ১৭টি নতুন কবিতা। বোঝাই যাচ্ছে, ফরাসি সরকারের জবরদস্তি-আচরণ ও অপমান বোদল্যারের মনের স্বাধীনতার বোধকে আহত করেছিল প্রবলভাবে। ফলে, ব্রাসেলস থেকে কবিতাগুলো পুনরায় ছাপিয়ে সেই অপমানের খানিকটা প্রতিশোধ নেন কবি। কিন্তু বেলজিয় সরকার কবিতাগুলোর ব্যাপারে ছিল প্রতিক্রিয়াশূন্য। ১৮৫৭ সালের ৬ নভেম্বর শার্ল বোদল্যার একটি চিঠি লেখেন নাপোলিওঁর স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজিনি বরাবর। অত্যন্ত বিনীতভাবে তিনি জানান, দুর্ভাগ্যবশত লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল শিরোনামে তাঁর একটি কাব্যসংগ্রহ অভিযুক্ত হয়েছে। এটির খোলামেলা শিরোনামটি তাঁকে রক্ষা করবার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। কবি ভেবেছিলেন, তিনি একটি অসাধারণ-চমৎকার ও স্বচ্ছ কাব্যকর্ম সাধন করেছিলেন। অভিযুক্ত ছ’টা কবিতা বাদ দিয়ে তাঁকে পুনরায় লিখতে বলা হয় যেখানে মোট কবিতার সংখ্যা ছিল ১০০। আদালত তাঁর সঙ্গে সদাচরণ করেছে এবং রায়ে তারা জানিয়েছে, কবির উদ্দেশ্য অসৎ ছিল না। কিন্তু যে-জরিমানা তাঁর ওপর ধার্য করা হয়েছে সেটা কবিদের প্রবাদপ্রতিম দারিদ্রাবস্থার মধ্যে পরিপালন সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। দৃষ্টান্তস্বরূপ বোদল্যার তাঁর পক্ষে থাকা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বোদল্যার জানান, ১০ দিন ধরে ভাববার পর তিনি তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন। এখন তিনি যদি দয়াপরবশ হয়ে বিচারমন্ত্রির নিকটে তাঁর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন তাহলেই একমাত্র প্রতিকার সম্ভব। ২০ আগস্ট রায় ঘোষিত হয় আদালতের। কেননা, আদালত রায়ে গণনৈতিকতা, শিষ্টাচার, ধর্মীয় নৈতিকতা প্রভৃতির মানদণ্ডে কবিতাগুলোকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ২১ জুন ১৮৫৭ সালে প্রথম লে ফ্লুর দ্যু মাল-এর ১১০০ কপি বই বাজারে আসে। প্রকাশ হওয়া মাত্রই গুজব ছড়িয়ে পড়ে, বইটি বাজেয়াপ্ত হবে। একটি চিরকুটে বোদল্যার তাঁর প্রকাশক পুলে-মালাসিজকে লেখেন: শীঘ্র, বইগুলোর কপি লুকিয়ে ফেলো। ৫ জুলাই তারিখে ‘ফিগারো’-পত্রিকার সাংবাদিক গুস্তাভ বুঘ্দ্যাঁ গ্রন্থ ও গ্রন্থাকরের প্রতি বিষোদ্গারের সূচনা করেন। বোদল্যারের পক্ষে ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্য সমালোচক শার্ল-অগুস্ত্যাঁ সাঁৎ-বভ্। তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল রাজকুমারী মাতিল্ডা’র। আবার, ঐতিহাসিক এবং লেখক প্রসপেঘ্ মেঘিমি ছিলেন কবির জোর সমর্থক। তাঁর সঙ্গে সখ্য ছিল সম্রাজ্ঞী ইউজিনি’র। এর আগে সম্রাজ্ঞীর হস্তক্ষেপে ‘মাদাম বোভারি’র লেখক ফ্লবেখ-এর অভিযোগমুক্তি ঘটে। তাই বোদল্যারের ধারণা হলো- ফ্লবেখ একজন নারীর কারণে রক্ষা পেয়েছেন, কাজেই তাঁরও একজন নারীর প্রয়োজন সেই সংকটের মুহূর্তে। অবশ্য সমাজে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত মাদাম সাবাতিয়েঘ তাঁর জন্যে তদবির করেন। তাঁর ৩০০ ফ্রাঁ জরিমানা কমিয়ে ৫০ ফ্রাঁ করা হয়। কবি বোদল্যার ইতোমধ্যে চিত্রসমালোচক হিসেবে যে-খ্যাতি অর্জন করেন সেটাই বলতে গেলে তাঁর জন্যে খানিকটা রক্ষাকবচ হয়ে দেখা দেয়। তাছাড়া ১৮৫৪ সালে এডগার পো’র ওপর লেখা তাঁর রচনা ফরাসি সাহিত্যজগতে বেশ সাড়া ফেলে। ১৮৫৭ সালের ৩০ আগস্ট এক দারুণ অনুপ্রেরণামূলক চিঠিতে ভিক্টর হুগো তাঁকে জানান, তিনি আসলে অভিযুক্ত নন, পুরষ্কৃত। তবে, ইতিহাসের নিদারুণ পরিহাস, বিচারক পিনার্ড পরের বছরেই লাভ করেন ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘লিজিওঁ দন্যুঘ’। যে-বছর কবি মৃত্যুশয্যায় বিচারক পেলেন মন্ত্রিত্ব। আর, কবি বোদল্যার (সম্ভবত) সিফিলিস রোগের সর্বনাশা পরিণামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্যারিসে। বস্তুত মাদাম বোভারি এবং লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল কাব্যগ্রন্থের ঐতিহাসিক পরিস্থিতি থেকে সমাজ-রাষ্ট্র এবং লেখকের অবস্থান ও লেখকের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় সামনে চলে আসে। ফ্রান্সের মত একটি অগ্রসর সাংস্কৃতিক চেতনার মানচিত্রে দীর্ঘকাল প্রবঞ্চনা জোটে কবি বোদল্যারের। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৯ সালে ফরাসি সরকার বোদল্যারের সেই ছ’টি কবিতার ওপর থেকে তুলে নেয় নিষেধাজ্ঞা। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, নরওয়ের নাট্যকার হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬) রচিত নাটকের কথা। তাঁর লেখা ডল্স্ হাউজ (১৮৭৯) নাটকটির সমাপ্তিতে যেখানে নরওয়েজিয় নাট্যকার দেখিয়েছেন নোরা তার সংসার ছেড়ে চলে যাচ্ছে বাইরের জগতে সেখানে অনেকটা কাল পরে এসেও সেই নাটকের জার্মান মঞ্চায়নে নোরা শেষ দৃশ্যে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় পর্দার ভেতরের দিকে (বাইরে নয়!) এবং নাটকটির ইংল্যান্ডিয় মঞ্চায়নে নোরা মঞ্চের সমুখভাগে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে এবং যবনিকাপতন ঘটে যায়। কাজেই, প্রতিষ্ঠান যখন রাষ্ট্র-ধর্ম-সমাজ এসবের পোশাক পরিধান করে তখন কেবল বিজ্ঞান নয় প্রায় সবকিছুর ওপরেই চলে তার শ্যেন-প্রহরা। বোদল্যার যতই প্রতিষ্ঠানবিরোধী হ’ন না কেন, কবিতায় যতই ক্ষোভ-বিদ্রোহ প্রকাশ করুন না কেন বাস্তবে পরিস্থিতির চাপে তাঁকেও বিনত ভঙ্গিতে দাঁড়াতে হয় প্রতিষ্ঠানেরই সামনে।

চলবে…

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!