।।তিন।।
বোদল্যারের নিষিদ্ধ কবিতাগুলো একদিক থেকে সেসময়কার ফরাসি সমাজের ও রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিটাকেই উন্মোচন করে দেয়। বস্তুত ১৯০৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত ফ্রান্সে চার্চ সরকারি প্রশাসনিক কাঠামোতে অত্যন্ত প্রভাবক ভূমিকা পালন করতো। ১৯০৫ সালের ৯ ডিসেম্বর চার্চকে প্রকাশ্যভাবে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে দেওয়া হয় অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় চার্চ-কর্তৃপক্ষকে। বস্তুত বিখ্যাত রাজনীতিবিদ এমিল কোম্ব-এর নেতৃত্বাধীন ‘ব্লক দে গশ্’ (বাম-জোট) তিনটি মূল নীতির ভিত্তিতে নতুন এ-পদক্ষেপ নিয়েছিল- রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা, ধর্ম পালনের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং চার্চের সঙ্গে সম্পর্কিত জনগণের ক্ষমতা। এই ঐতিহাসিক সংক্রান্তিকে ফরাসি ‘লেইসিতে’ বা ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আজকের যুগে জন্মালে হয়তোবা বোদল্যারকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। নোরার গৃহত্যাগের ঘটনার সেন্সর কিংবা বোদল্যারের রোমান্টিকতার বিরুদ্ধে খাঁড়া একই সূত্রে গাঁথা। রাষ্ট্র ও সমাজ যখন বিবিধ কানুনের শাসনে রুদ্ধতার সামিল তখন কবিতার পরিশুদ্ধ ডানায় ভর করে ব্যক্তিস্বাধীনতার অনিবার্যতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল। কবিতাগুলোর মধ্যে লেজবো-কে কঠোরভাবে ‘অবসিন’ চরিত্রের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। কবিতাটিতে রয়েছে সমকামিতা, চুম্বন, গাঢ় প্রেমাবেগ এসবের উচ্ছ্বাস। উচ্ছ্বসিত আবেগে স্মরণ করা হয়েছে গ্রিক কবি স্যাফোকে। মূলত স্যাফো’র জন্মস্থান লেসবোস দ্বীপ এবং কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা কবিতাটির কেন্দ্রবিন্দু। জীবনের প্রেরণা বা চেতনার নেপথ্যে থাকে যে প্রাণ এবং সৃজনশীলতা বোদল্যার তাকেই বার-বার স্মরণ করেছেন। কবিতাটি পাঠ করলে বিশ্বাস হতে চায় না, এটি দুইশো বছর আগেকার রচনা। যেন মনে হয় মাত্রই রচিত হয়েছে এটি। অকস্মাৎ বিস্ফারিত ও উদ্দাম ঝর্ণার মত কবিতাটির সূচনাংশ:
Mere des jeux latins et des voluptes grecques,
Lesbos, ou les baisers, languissants ou joyeux,
Chauds comme les soleis, frais comme les pasteques,
Font l’ornement des nuits et des des jours glorieux,
লাতিন ক্রীড়া আর গ্রিক প্রাণচেতনার জননী,
লেসবোস, যেখানে সূর্যালোকের মত জ্বলজ্বলে আর তরমুজের মত শীতল
চুম্বন, অবসাদ কিংবা আনন্দ
আনে ঐশ্বর্য যামিনীর আর গৌরবময় দিনের।
কবি স্যাফোকে অভিহিত করছেন ‘প্রাণপ্রিয় সম্রাজ্ঞীর অধীশ্বরী’রূপে (‘Reine du doux empire’)। লেসবোস কবির নিকটে প্রীতিপূর্ণ ও মহান এক ভূমির নাম। খানিকটা বঙ্কিম বা খোঁচা-দেওয়া সুরে প্রাচীন কবি স্যাফোকে তিনি বলছেন- “ ‘Laisse du vieux Platon se froncer l’oeil austere’ অর্থাৎ “বুড়ো প্ল্যাটো হানুক কঠিন দৃষ্টি তোমার প্রতি” তবু স্যাফোই চির-শহিদের অমর প্রতীক। স্যাফোর জীবনের আত্মহত্যার ঘটনাটি কবিতায় সৃষ্টি করেছে চমৎকার ব্যঞ্জনা। বোদল্যার যতটা না সমকামিতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন তারও অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন কবি স্যাফোর অদম্য-স্বাধীন আত্মপ্রকাশ ও জীবনচেতনাকে যে-জীবনচেতনার তিনি অভাব লক্ষ্য করেছেন তাঁর শহর প্যারিসে, এমনকি তাঁর স্বদেশভূমিতেও। সমকামিতার কথা প্রসঙ্গে বলা যায়, বর্তমানে বিষয়টি এর প্রচলিত ট্যাবু ভেঙে পৃথিবীতে চলে এসেছে স্বীকৃত মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যে। কিন্তু চার্চ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এখনও তা পাপের নামান্তর।
‘ফাম দ্যানে’ শিরোনামে দু’টি কবিতা রয়েছে বোদল্যারের- একটি দীর্ঘ এবং একটি অপেক্ষাকৃতভাবে ক্ষুদ্রকায়, ২৮ পংক্তির। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছ’টি কবিতার মধ্যে আটাশ পংক্তির এ-কবিতাটি অন্যতম। কবিতাটি সেইসব নারীদের জন্যে রচিত যারা হদয়ের গভীর প্রেম নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল অতৃপ্ত প্রাণাবেগ নিয়ে। পূর্ববর্তী কবিতার মত এটিতেও গ্রিক পুরাণের শরণ লক্ষ করা যাবে। লিজবনে জন্মগ্রহণ করা এবং ইতালিতে মৃত্যুবরণ করা কিংবদন্তি সৃষ্টিকারী ঐতিহাসিক চরিত্র সেইন্ট এ্যান্থনি (১১৯৫-১২৩১) কবিতাটিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। দরিদ্র-রুগ্ন-স্নেহভালোবাসাকামী মানুষের প্রতি সেইন্ট এ্যান্থনির উদার ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে কবি স্মরণ করেছেন কবিতায়। তবে রোমান দেবতা বাক্কাস কবিতাটির মুখ্য চেতনা। রোমান দেবতা বাক্কাসকে গ্রিক দেবতা ডায়োনিসাসের সঙ্গে তুলনা করা হয় যিনি কৃষি, মদ এবং উর্বরতার প্রতীক। আঙুর আর আইভিলতা হলো বাক্কাসের উদ্ভিদ-প্রতীক। কবিতাটিতে একটি পৌরাণিক উৎসবের দৃশ্য-চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে যে-উৎসবে জুপিটারের পুত্র বাক্কাসকে ঘিরে উদ্দাম-প্রাণময় নৃত্যে যোগ দেয় তার অনুসারীরা, আর বুনো নারীরা। বাক্কাসের বিশেষ অনুসারীদের বলা হয় ‘স্যাটির’ ও ‘ম্যায়নাড’। স্যাটির হলো প্রবল লিবিডোতাড়িত ও মদমত্ত বনবাসী। গ্রিক পুরাণে তাদের কান ও লেজ ঘোড়ার মত এবং রোমান পুরাণে তাদের কান, পা আর লেজ ছাগলের মত। মনে করা হয়ে থাকে, বাক্কাস সুদূর ভারতবর্ষ পর্যন্ত এসেছিলেন মানুষকে আঙুরের চাষ ও উৎপাদন শেখানোর জন্যে। বোদল্যারের এ-কবিতায় পুরো উৎসবের মধ্যকার নারীরা চিত্রিত হয়েছে বিশেষভাবে। প্রাচীন সেই জীবনে বাক্কাসের চেতনা ও সেদিনকার সেই উচ্ছ্বল নৃত্যময় নারীদের চিত্রকল্প বর্তমানের শূন্য-হতাশ প্রেক্ষাপটে স্থাপন করে বোদল্যার জড়তা, আনন্দশূন্যতা ও কৃত্রিম জীবনের বিপরীতে প্রাণস্পর্শিত জীবনের জয়গান গেয়েছেন। কবিতাটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আবেগ, জীবনস্পন্দন আর উচ্ছ্বাসের উপস্থিতি। তবে, চার্চের কঠিন ধর্মবোধ, প্রশাসনের নীতিনৈতিকতার দোহাই যে বোদল্যারের জীবনচেতনাকে স্বীকৃতি দেবে না তা বলাই বাহুল্য। যে-নারীদের বলা হচ্ছে ‘অভিশপ্ত’ (‘দ্যানে’) কবি আসলে সেই নারীদের জন্যেই তাঁর সমস্ত আবেগ আর কামনাকে উজাড় করে দিয়েছেন কবিতাটিতে। একদিন কবিও যে সেইসব নারীদের মত নারীর পেছনে ছুটেছিলেন এক গতিময় জীবনে ভর করে সেকথারও অবাধ স্বীকারোক্তি আছে কবিতায়। জড়-নিশ্চল-অনুশাসনের স্বদেশে প্রাচীন সেই উদারতার পরিপ্রেক্ষিত কবির কাম্য। সর্বশেষ পংক্তিচতুষ্টয়:
তোমরা, তোমাদের নরকের পেছনে ছুটেছি আমিও,
অভাগী বোনেরা, ভালোবাসি তোমাদের, যেভাবে অশ্রু ঝরাই
তোমাদের হতাশ যন্ত্রণায়, তোমাদের উচ্ছ্বসিত কামনায়,
আর ভালোবাসার সে তরীগুলি তোমাদের হৃদয়ের আর্দ্রতায় ভরা।
বোদল্যারের প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে সবচাইতে আবেগোষ্ণ, লিবিডোচেতন এবং জীবনোচ্ছ্বাসে ভরপুর একটি কবিতা ‘লিথি’। গ্রিক পুরাণে একজন লিথি রয়েছেন যিনি দেবি আইরিসের কন্যা। আবার, লিথি একটি নদীও, যেটি নিজেই একটি জীবন্ত সত্তার মতন। প্রাচীন গ্রিসের হিপ্নোস্ নামক গুহাকে পরিবেষ্টন করে চলা নদীটি হলো বিস্মৃতি, স্মৃতিভ্রংশতা প্রভৃতির পরিচালনাকারী। বিখ্যাত পঞ্চনদীর একটি লিথি। গ্রিক ভাষায় একে বলা হয় ‘আমেলেস্ পোটেমোস্’ বা ‘বিস্মৃতি/অচেতনতার নদী’। লোকবিশ্বাস, এই নদীর পানি পান করলে জীবনের সমস্ত কিছু ভুলে যায় মানুষ। বোদল্যারের কবিতাটি সেই লিথির প্রত্যাশী যে তাঁকে এমন বিস্মৃতিতে ভাসিয়ে দেবে যা জীবনের রংয়ে মহীয়ান, বর্তমানের ক্রূরতা থেকে উদ্ধারকারী এবং চিরন্তন তুরীয়ানন্দের উৎস। পৌরাণিক লিথির আশ্রয়ে দুরন্ত-দুর্বার গতির কবিতাটি পূর্বাপর একটি নিখুঁত ভেদী পার্থ-তীর। অনেকটা খোলামেলা ভঙ্গিতে কবি তাঁর অবরুদ্ধ মনের আবেগকে উৎসারিত করে দিয়েছেন কবিতাটিতে। পৌরাণিক হয়েও এ-লিথি একেবারে জীবন্ত রক্তমাংসের নারীই-
আমি ঘুমাতে চাই! যে-ঘুম নিঃশেষ করে দেয় জীবনের আয়ূ!
যে-ঘুমে থাকে মৃত্যুর মতন কোমলতাও,
লজ্জাহীন সীমাহীন চুম্বনে ভরিয়ে দেবো
তোমার সতেজ তামাটে শরীর।
২৪ পংক্তিবিশিষ্ট কবিতাটির সর্বত্র এমন খোলামেলা প্রকাশ স্পষ্ট। কবিতার শেষ অনুচ্ছেদটি সৃষ্টি করে প্রচ- ঘূর্ণাবর্ত, যেটির জন্যে পাঠক তৈরি থাকলেও ফরাসি সমাজ-প্রশাসন-রাষ্ট্র তৈরি ছিল না, যদিও বর্তমানে ফ্রান্স বোদল্যারের সেই জায়গাটাতে পৌঁছেছে-
আমার তিক্ততাকে ডুবিয়ে দিতে
তোমার ধারালো স্তনের রমণীয় চূড়ো থেকে
আমি চুষে নেবো মহুয়া-মদিরা আর নিদারুণ বিষ
যেখানে কখনও বাঁধা পড়ে নি কোনো হৃদয়।
পূর্ববর্তী ‘লিথি’র উল্টো পিঠের কবিতা বলা যাবে ‘আ সেল কি এ ত্রো গে’ (‘এক পরমানন্দময়ীকে’) নামের কবিতাটিকে। দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য হলো, প্রথমোক্তটি গ্রিক পুরাণাশ্রিত এবং শেষোক্তটি একেবারে সমকালীনতার পরিপ্রেক্ষিত থেকে নেওয়া, এমনকি এটিকে কবির আত্মজৈবনিক উপাদানাশ্রিত কবিতাও বলা সম্ভব। কবির প্রেমিকা মাদাম সাবাতিয়েঘ হলেন সেই রমণি যিনি কবিতাটিতে কবির দৃষ্টিতে অতি প্রফুল্ল, প্রাণসঞ্চারী ও প্রেমময়ী। বস্তুত কবিতাটিতে প্রেমঘন সংসর্গের চিত্রকল্প অত্যন্ত খোলামেলা ও সাহসীভাবে আঁকা। কোনো সংস্কার, রাখঢাক কিংবা প্রতীকতার ছায়াচ্ছন্নতার ধার ধারেন নি কবি। যা তাঁর বক্তব্য তার সবটাই উদাত্ত, সবটাই লিবিডোময়। ৩৬ পংক্তিবিশিষ্ট কবিতাটির শেষ বারোটি পংক্তির উদ্ধৃতি-
অতঃপর কোনো এক রাতে যখন
জেগে ওঠে বাসনানন্দের ক্ষণ,
নিঃশব্দ হামাগুড়ি দিই কাপুরুষের মতন,
তোমার মণিমুক্তোহেমের দিকে।
হামলা চালাতে তোমার মাংসল ঐশ্বর্যে,
আঘাত দিতে তোমার ক্ষমাশীল স্তনে,
মাতোয়ারা হতে তোমার উরুর সাম্রাজ্যে,
করতে জখম এক আয়ত ও গভীর।
তারপর এক মধুর মাদকতা,
আরও উজ্জ্বল, সুন্দরতর
নবতন ঐ দুই ঠোঁট বেয়ে ছুটে যায়
আমার হলাহল, বোন আমার!
নরনারীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক-কল্পনার এমন চিত্র আমাদের মধ্যযুগের পদাবলী সাহিত্যে মেলে। শরীরী চিত্রকল্প ডিঙ্গিয়ে কবিতায় শরীরকে সরাসরি নিয়ে আসবার এমন দুঃসাহসে নিঃসন্দেহে বজ্রাহত হয়েছিল সেদিনকার সংরক্ষণশীল ফরাসি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ও সমাজ। এখানে উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক নয়, বোদল্যারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিত্রশিল্পী এডওয়ার্ড মানে ‘অলিম্পিয়া’ নামের যে নগ্ন পতিতার চিত্র এঁকে বিখ্যাত হ’ন, যেটি সেই সময়কার ফ্রান্সে তুমুল আলোড়ন তোলে সেটি ১৮৬৫ সালের ঘটনা। মানে যেরকম খোলামেলাভাবে এঁকেছিলেন তাঁর অলিম্পিয়া চিত্রটি তাঁর বন্ধু কবি এবং শখের চিত্রশিল্পী বোদল্যার তারও আগে প্রায় সেরকম খোলামেলাভাবেই আঁকেন তাঁর প্রেমিকাকে, শব্দশিল্পে। শেষ দু’টি শব্দ গোটা বর্ণনার অন্তিমে ধাক্কা লাগায় যেখানে এই প্রগাঢ় সংসর্গের শেষে কবি তাঁর প্রেমিকাকে সম্বোধন করছেন ‘মা স্যাঘ্’ (‘আমার বোন’ বা ‘বোন আমার’) বলে।
লে ফ্ল্যুর দ্যু মাল-কাব্যের নিষিদ্ধ কবিতাগুলোর আরেকটি ‘লে বিঝু’কে (‘অলংকার’) ঠিক পূর্ববর্তী কবিতাটির সমান্তরাল হিসেবে বিবেচনা করা যায় যেখানে বোদল্যার যৌনতার বোধকে বেঁধেছেন দৃশ্য-চিত্রের পরম্পরায় এবং তাঁর স্বতন্ত্র শব্দক্রীড়ায়। কবিতাটির বুদ্ধদেব বসুকৃত অনবদ্য অনুবাদ থেকে খানিকটা অংশ পাঠ করা যাক:
ফেলে দিলো বসন আমার প্রিয়া। আমার অদ্ভুত
খেয়ালের অর্থ বুঝে- সুলতানের সোহাগে গর্বিণী
সুন্দরী বাঁদির মতো- চন্দ্রহার, কেয়ুর, কিঙ্কিণী
(কিন্তু অন্য কিছু নয়) প’রে নিতে হ’লো সে প্রস্তুত। … …
আমার তন্ময় চোখ, মগ্ন হ’য়ে মধুরের ধ্যানে,
দ্যাখে, তার দ্যুতিময় কটিতট, জঠর, জঘন,
মরালপঙক্তির মতো কম্পমান, কেলিপরায়ণ;
উদর, স্তনযুগল, দ্রাক্ষাপুঞ্জ আমার উদ্যানে।
মালার্মে কিংবা ভের্লেন বা অন্যান্য অনেক ফরাসি কবি পরবর্তীকালে কবিতায় শব্দের সাঙ্গীতিক ব্যঞ্জনার যে-কথা বহুবার বলে গেছেন, কবিতায় ব্যবহার করে দেখিয়েছেন সেরকম শব্দব্যঞ্জনার এক চমৎকার দৃষ্টান্ত বোদল্যারের অনেক কবিতার মত এটিও। এর ছত্রে-ছত্রে জাগানো তরঙ্গ-স্পন্দন প্রায় দুশো বছর পেরিয়ে এসে আজও দ্যুতিজাগানিয়া। চারটি পংক্তি লক্ষ করা যেতে পারে-
Et son bras et sa jambe, et sa cuisse et ses reins,
Polis comme de l’huile, onduleux comme un cygne,
Passaient devant mes yeux clairvoyants et sereins;
Et son ventre et ses seins, ces grappes de ma vigne,
[এ সঁ ব্ঘা এ সা জঁব্, এ সা কুইস্ এ সে ঘাঁ,
পলি কম্ দ্য লুইল্, অঁদ্যুলো কম্ আঁ সিনি,
পাসে দ্যুভঁ মেজিয়ু ক্লেঘ্ভোয়াইয়ঁ এ সেঘাঁ;
এ সঁ ভঁৎঘ্ এ সে সাঁ, সে ঘাপ দ্য মা ভিনি।]
চলবে…