মাটির গান গাইতে গাইতে নোনাজলে ভেসে বেড়ায় মদন, ছমির মিঞারা। প্রকৃতি কাড়ে তাদের সুখ- স্বপ্ন- আশা- ভরসা। নোনাস্রোতে ভাঙনের সাক্ষী হয় রোজ রোজ। রাত নামলে ছমিরের চোখে ভাসে মেয়ে গোলাপির মুখ। শোনে বিবির অসহায় কান্না।কালক্রমে বাঁজা হারামনি শোনে নারী জীবনের কাঙ্খিত মা ডাক। নোনা জল শোনায় নিখোঁজ হওয়া মানুষের গল্প। আখ্যান জড়িয়ে বাঁচে বিপন্ন লোকসংস্কৃতি, অলৌকিক বিশ্বাস, গ্রাম্য নরনারীর প্রেম, অকাল শোক। ‘নোনা মাটির নোলক’ বস্তুত সমাজ, লোকসংস্কার ও রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ বিভাজনের দৃশ্যলিখন, ভাঙনের গান।
চতুর্থ পর্ব
ছমির মিঞা ঢুকলো ঝেকোন ভেঙে আচে ঘর
জলের সোতে দুক্কু ভাসে ভোরা নদীর চর
চেঁইচে কাঁদে ছমির মিঞা ওরে মণির মা
আমার ফেলে কোতায় গেলি এট্টু বলে যা।
জলের ওবর বসে পড়ে মাতায় বোজাই কাট
অহিম চাচা বলে ওরে ওপরওলার হাত!
সুরমা নেগে কেঁদে ছ্যেলো গেল বচোর ঈদি
দোকান ঘুরে কিনে ছ্যেলো ওর ফুফাতো দিদি।
চোকির আড়ে ভেসে গেচে কতো গাচের পাতা
কতো চাওয়া জলের তোলায় ভাঙা ঘরের বাতা
স্মিতি শুদু নড়ে চড়ে চোকির জলের বাঁকে
আঁদার আতে দুক্কু ঝেনো পাতার ফাঁকে ফাঁকে।
উল্টে গেচে মুরগির খোঁড়টা ডুবে আচে জলে
ভোরির আলোয় ডাকতো ওরা ভেসে গেচে চলে
কোলকেতারতোন ছাবালদুটো করতো কামের কাজ
মাজেমদ্দি আসতো যেতো নি সোকাল নি সাঁঝ।
জন্মোভিটেয় ছ্যেলো ওরা ঝড়ের কদিন আগে
ঘরটা এ্যাকোন নোহার খাঁচা বুকটা খাঁ খাঁ নাগে
মাতার ভোতর কতো কোতা মনে নাগে ঘোর
ভাঙা নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে নোড়বে জেবোন ভোর?
ছানির মুখটা মনে পড়লি চোকি ভাসে জল
দুকির কোতা শুনবেনে কেউ ঝেতো বলিস বল!
সাদা সাদা খোঁচা দাড়ি গা গতরে ধুলো
নদীর জলে কষ্টো ভাসায় কালো মানুষগুলো।
বিষ্টি তেবু কোমে গেচে জলের সোতা চোকি
পোচা গন্দো দোমকা হাওয়ায় উড়তেচে পুব দিকি
উচ্চে গাচের ছাতলা পড়ে আচে পুকুর পাড়ে
গাচের গোড়ায় জল জোমেচে বাগান ছারে খারে।
অনেক কষ্টো করে য্যকোন দেকে সুকির মুক
কোতা থেকে কালো মেগে ঢাকে তেকোন বুক
বিবি ঝ্যেনো ডাকলো আমার ও গোলাপির বাপ
তোরে ছেড়ে যাচ্চি চলে কোরিস ঝ্যেনো মাপ।
বুকির ভোতর কষ্টো বাড়ে শুনলি আগের কোতা
পড়ে আচে ভাঙা বেড়ায় নোক্সা আঁকা কেঁতা
ওটোনের একপাশে ছ্যেলো সাদা ফুলির গাচ
দকিণ হাওয়ায় উড়তো অলি করতো ঘুরে নাচ।
ফুলিরগাচটা ভেসে গেচে বাগান অন্দোকারে
মাটির বুকি জলের পাষান ফাঁকা নাগে ঘরে
চোকির ওবর ভেসে ওটে বিবির হাসি মুক
ভেঙে গেচে জলের তোড়ে কষ্টো জোমা বুক।
ওদিক পানে মাচের ঘেরি ওদিক জেলে পাড়া
ওদিক ছ্যেলো বড়ো বাদা আকতো সোবাই নাড়া
সে সপ এ্যাকোন মোজে গেচে জোঞ্জালে জোঞ্জালে
মনটা তেবু বাঁদা আচে খেতির সোবজে আলে।
ওইখানেতে শোশ্মান ছ্যেলো এদিক পানে গোর
মোড়া মানুষ মেশে শেষে মাটি খোলে দোর
কবোর শোশ্মান জলের নেচে অইলো কোথায় জাত
মানুষ সুদু খোঁজে ব্যেড়ায় সপটাতে অনজাত!
চলবে…