মাটির গান গাইতে গাইতে নোনাজলে ভেসে বেড়ায় মদন, ছমির মিঞারা। প্রকৃতি কাড়ে তাদের সুখ- স্বপ্ন- আশা- ভরসা। নোনাস্রোতে ভাঙনের সাক্ষী হয় রোজ রোজ। রাত নামলে ছমিরের চোখে ভাসে মেয়ে গোলাপির মুখ। শোনে বিবির অসহায় কান্না।কালক্রমে বাঁজা হারামনি শোনে নারী জীবনের কাঙ্খিত মা ডাক। নোনা জল শোনায় নিখোঁজ হওয়া মানুষের গল্প। আখ্যান জড়িয়ে বাঁচে বিপন্ন লোকসংস্কৃতি, অলৌকিক বিশ্বাস, গ্রাম্য নরনারীর প্রেম, অকাল শোক। ‘নোনা মাটির নোলক’ বস্তুত সমাজ, লোকসংস্কার ও রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ বিভাজনের দৃশ্যলিখন, ভাঙনের গান।
একাদশ পর্ব
ফাগুন মাসে হলির দিনি অঙিন পাতায় গাচ
কিষ্টোচূড়া আধাচূড়ায় নাগলো খুশির নাচ
কচি, বুঁচি, ভুতো, ভুলো এ বাড়ি সে বাড়ি
আবির ওড়ে পতে ঘাটে অঙের ছোড়াছড়ি।
হোলি বলে চেঁইচে কারা ঢুকলো আঙ্গার বাড়ি
দলের ভোতর নাজুক চোকি হেইরেচে ভাব আড়ি
সাদা সিতেয় নেইগে দেলো পেমের নালচে অঙ
ঝার দিকিরতোন তেইকে দেকি ঝ্যেন হোলির সং।
আগের বচোর হোলির দিনি গেলো বুড়ি মরে
তিনটে পাণি আচি এ্যাকোন কনো অকম করে
বুড়ির হাতে পোঁতা গাচে ধোরেচে কতো বোল
গোনা আপ না পেলি বুড়ি বাদাতো বড়ো গোল।
পতি বচোর হোলি আসে আমধনু অঙ চোকি
পাকি জেবন ডেনায় ডেনায় ঘোরে চোতুরদিকি
কতো সিতে অঙে অঙে নোতুন স্বপোন আঁকে
কতো জেবন অঙ হেইরেচে নোনা বালির বাঁকে।
মেটে দাবায় বসে হারা বুনতে ছ্যেলো কাঁতা
কাঁতার সুতোয় বাঁধা আচে তাগার দুক্কু ব্যেতা
মাঝি পাড়ার সেই ছাবালটা আসলো যেকোন কাচে
ঘরের মদ্দি সেই ছানিটার বুকটা তেকোন নাচে।
ও আমারে বাসে ভালো আমিও বাসি ভালো
সুকি দুকি কাটবে জেবন আঁদর হোক না কালো
ও জানে না নিজের কোতা জানে না কোন জাত
জাতির বিচের করলি কি আর পেটে পড়বে ভাত!
হোটাৎ করে ঘরের মদ্দি বেজে ওটে চুড়ি
আগাশ খোঁজে নোতুন করে সুতো ছেঁড়া ঘুড়ি
নোতুন স্বপ্নো চোকিতেনে আনে নোতুন ঘোর
হলদে শাড়ি মেন্দি হাতে নোতুন ঘরের দোর।
সোকাল হলি ছোড়া দিতি আনতি যাবে জল
শাপলা পাতায় আতের শিশির হাওয়ায় টলমল
গামচা কাঁধে মদ্দো যেকোন ঢুকবে দুপুর ব্যেলা
আন্না করে মেটে দাবায় পাতবে ভাতের থালা।
তাল পাখার বাতাস দেবে আর মুইছে দেবে ঘাম
মেয়েমানুষ ঝেতো খাটে সোংসারে নি দাম
বিকেল হলি শাউড়ি ডাকবে দেনা সেজে পান
পান না হলি জানলি ও বউ ঠিগরে বেরোয় পাণ।
বাদায় গেলো কচি টেঁপি ভর সোন্দে ব্যেলা
ভুতি ধোরে ছ্যেলো নাকি কয় গুনিন ভোলা
ভুত ছাড়ানো বিরাট বেপার হলুদ গুজে নাকে
মাতার বেমো বেড়ে গেলি ভুতি এসে ডাকে।
শউরো গেচে হাটেতেনে আনতি জ্বরের বড়ি
কদিন ধোরে বন্দো আচে দ্যেয়লের ভাঙা ঘোড়ি
মদ্দো সেবার বল্লো ও বউ চলনা শওরের দিকি
পাতাল য়েল, যাদুঘর আচে আরো কতো কি কি!
দকিণ হাওয়ায় নৌকো দোলে নদী বেজায় খুশি
যেকোন তেকোন মনের মদ্দি বাজে কালার বাঁশি
বাইন গাচের পাতার ওবর পড়ে চাঁদের আলো
সুক ভেসে যায় বুকির ভোতর দুক্কু জমে কালো।
বান ডাকেচে ডাগর গতর নদী আঁকোন বাঁকোন
ছোলাৎ ছোলাৎ ঢেউয়ে ঢেউয়ে অচেনা সেই কাঁপন
পিরিত ঝেন চাঁদের ছায়ায় পড়ে গলে গলে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচে নৌকো ভাসে নদীর জলে।
সোন্দে ব্যেলায় এলি ঘরে বোলবুনি আর কোতা
কার জন্যিরে ভাববো সুদু গাঁতবো নোক্সি কাঁতা!
হোটাৎ করে পাশের বাড়ি হলো আওয়াজ দুম
সোত্যি নয় তো স্বপ্নো ছ্যেলো ভাঙল তেকোন ঘুম।
চলবে…