ইতিহাসের দৃষ্টিতে দেবী সরস্বতী

দেবী সরস্বতীই সম্ভবতঃ হিন্দুদের পূজিত দেবদেবীদের মধ্যে একমাত্র দেবী, যাঁর উদ্ভব এবং স্বরূপ সম্বন্ধে এত অজস্র এবং এত পরস্পর-অসম্পৃক্ত তথ্য বেদ-পুরাণ-উপনিষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন লোকপুরাণ এবং কিংবদন্তীগুলির মধ্যে থরে-থরে ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলো থেকে তাঁর সঠিক ঐতিহাসিক পরিচয় উদ্ধার করা রীতিমত দুরূহ ব্যাপার। প্রাচীন হিন্দু পুরাণবৃত্তান্তের বিভিন্ন পর্যায়ে এমনভাবে এই বিশেষ দেবীকে দেখা যায় যে, তাঁর সামগ্রিক একটি ভাবমূর্তিকে সেই জটিলতার জাল থেকে মুক্ত করে গড়ে তোলাও অপরিসীম কঠিন বিষয়। মূলতঃ, দেবী সরস্বতী প্রাচীন ধ্রুবপদী সাংস্কৃতিক বলয়ের মধ্যে এমনভাবে সীমায়তা রয়েছেন যে, সেটার থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে তাঁর আদিরূপটি (যেটাকে আর্কিটাইপ বলা যেতে পারে) আদতে ঠিক কি ছিল – সেটা নির্ণয় করাও রীতিমত দুরূহ ব্যাপার। ধ্রুবপদী সাংস্কৃতিক-মণ্ডলের অন্তর্ভূতা এই দেবীর লোকায়ত ভিত্তিই বা আদতে কি, সেটাও এখনও পর্যন্ত খুব একটা সুস্পষ্ট নয়। অথচ সেই ভিত্তি না থাকলে সরস্বতী পূজা এমন জনপ্রিয় একটি পার্বণে যে কখনোই পরিণতি পেত না — একথাও কিন্তু বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। সচরাচর দেবদেবী, পার্বণ ইত্যাদির সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ব্যাপারে সেগুলির আদিমরূপ (যেগুলো প্রায়শঃই প্রাক-ইতিহাসের অনুষঙ্গবহ হয়ে থাকে) এবং লোকায়ত রূপগুলির সূচকচিহ্ন সমূহকে আলোচনার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে, তবেই সেগুলির ধ্রুবপদী চরিত্রলক্ষণগুলির বিবর্তনের ধারাকে নির্দিষ্ট করা সম্ভব। কিন্তু দেবী সরস্বতীর ভাবনার মধ্যে পুরাণের মাধ্যমে যেসব জটিলতার অভিব্যক্তি প্রকট হয়ে উঠেছে বলে দেখা যায়, সেগুলোর জন্যই এই বিশেষ ক্ষেত্রে বিপরীতমুখিন গতিতে অগ্রসর হওয়াই সমীচীন।

হিন্দুধর্মে সরস্বতীকে বাক এবং শিল্প-কৃষ্টি-কলার দেবীরূপে যেভাবে কল্পনা করা হয়েছে, তাতে তাঁর বহুবিধ বৈশিষ্ট্য যে সমস্ত দেবীকল্পনায় দেখতে পাওয়া যায়, তাঁরা হলেন – বাক, বিরাজ, ভারতী, ব্রাহ্মী, পুটকারী, সারদা, বাগীশ্বরী, বেদমাতা, শতরূপা, পৃথুদক, মহাশ্বেতা, সর্বশুক্লা, এবং অবশ্যই – সরস্বতী। ঋগ্বেদে তাঁকে নদীরূপে গণ্য করা হয়েছে, সেখানে তিনি ভারতের সাতটি পবিত্র নদীর মধ্যে অন্যতমা। নদীকে স্ত্রীদেবতার প্রতিভূ হিসেবে গণ্য করলে, তাঁকে প্রাচীন সপ্তমাতৃকার অন্যতমা হিসেবে ধরা যেতে পারে, এবং সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁর একটি উৎস হরপ্পা সংস্কৃতির মধ্যে প্রাপ্তব্য – চন্‌হূদডোর একটি সীলমোহরে সেই সপ্ত দেবিকার মূর্তি খোদিত রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞবা মনে করে থাকেন। বৈদিক ব্রহ্মাবর্ত বা বর্তমান পাঞ্জাব-হরিয়ানা-উত্তর রাজপুতানা দেশে এই সরস্বতী অতীতে অধিষ্ঠিতা ছিলেন বলে মনে করা হয়ে। তখন তিনি ছিলেন জ্যোতির্ময়ী এবং উর্বরতাদায়িনী। সরস্বান বা সূর্যের কন্যা এবং নদীর সমন্বিত রূপে তো তিনি অবশ্যই ফার্টিলিটি কাল্টের সঙ্গে ভাবগতরূপে সংযুক্তা – একজন মাতৃকা দেবীরূপে সেটি স্বাভাবিকও বটে।

ব্রাহ্মী গ্রন্থমালায়, বিশেষতঃ শতপথ এবং গোপথে, সরস্বতী বাকদেবীরূপে স্বীকৃতা। এর ব্যাখ্যা হিসেবেই সম্ভবতঃ মহাভারতে বলা হয়েছে যে, অতীতে সরস্বতী নদীর কূলে বৈদিক মন্ত্র ইত্যাদির যে ব্যাপক আবৃত্তি ও উচ্চারণ ঘটত, সেসবের কারণে ঐ বেদধ্বনির উৎপত্তিস্থল নদীর উপকূলের অধিষ্ঠাত্রী নিসর্গ শক্তিই শেষপর্যন্ত বাক-দেবীতে পরিণত হয়েছেন। ইতিহাসের এই পর্যায় পর্যন্ত একজন দেবীরূপে সরস্বতীর ভাবরূপটি দুরূহ বোধ্য নয়। কিন্তু এরপর থেকেই জটিলতার শুরু হয়েছে।
সরস্বতী কার কন্যা, কার স্ত্রী?

উপরের আলোচনায় কিছুক্ষণ আগেই তাঁকে সূর্যের দুহিতা বলা হয়েছে। এছাড়া – ভাগবতপুরাণ, পদ্মপুরাণ, মৎস্যপুরাণ, কাঠক উপনিষদ ও তৈত্তিরীয় উপনিষদ – গ্রন্থে তাঁকে অনেক সময়েই ব্রহ্মার কন্যা হিসেবেও ভাবা হয়েছে। আবার অথর্ববেদের মতে তিনি কামের কন্যা বিরাজ–রূপেই পরিগৃহীতা। অন্যদিকে পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে যে, সরস্বতী হলেন দক্ষকন্যা।

সরস্বতী ব্রহ্ম থেকে সঞ্জাতা – এমন ভাবনা সত্ত্বেও প্রায় ক্ষেত্রেই তাঁরই সহযোগে ব্রহ্মা প্রজা সৃষ্টি করেছেন – এমন বিবরণও বহু প্রাচীন গ্রন্থেই দেখতে পাওয়া যায়। সেইসব বিবরণকে ছায়াচ্ছন্ন প্রাগৈতিহাসিক অজাচারী সমাজের স্মৃতির ভাবানুষঙ্গবাহী বলেই মনে করা যেতে পারে। দেবীভাগবত, শতপথ ব্রাহ্মণ, ঐতরেয় ব্রাহ্মণ, ভাগবতপুরাণ – ইত্যাদি গ্রন্থে এসবেব অজস্র বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। শতপথ ব্রাহ্মণ এবং অথর্ববেদে তাঁকে যেখানে ইন্দ্র তথা সূর্যের শয়ন-সহচরীরূপে গণ্য করা হয়েছে, সেখানে পদ্মপুরাণে তিনি হলেন কশ্যপ-পত্নী। আবার ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তিনি হলেন নারায়ণের স্ত্রী — বাংলার লৌকিক ভাবনাতেও তিনি তাই, সেক্ষেত্রে তিনি আবার লক্ষ্মীর সপত্নী। পুরাণের অর্বাচীন পর্যায়ে রাজা মতিনারের যজ্ঞাগ্নিরূপে আবির্ভূতা হয়ে সরস্বতী তাঁর সঙ্গে সঙ্গতা হওয়ার ফলশ্রুতিতে তাঁকে তংশুর জননীরূপেও দেখতে পাওয়া যায়। আবার স্কন্দপুরাণে তিনি শিবের প্রণয়ভাজন। শিবপুরাণেও সেই একই কথাই বলা হয়েছে। তিনি — ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর — ত্রিদেবেরই নর্মসঙ্গিনী বলে স্বীকৃতা; আবার মনু এবং দধীচিও তাঁর স্বামীত্বের দাবীদার; — পুরাণান্তরে যদিও আবার ব্রহ্মার পুত্ররূপে স্বায়ম্ভূব মনুকে সরস্বতীর গর্ভে জন্মাতে দেখা যায়।

ধ্রুবপদী হিন্দু সংস্কারে সরস্বতীকে অনেক সময়ে স্বয়ং ‘পরমাত্মা’র অন্যতমা শক্তিরূপিণী বলে — রাধা, পদ্মা, সাবিত্রী ও দুর্গা — এই চারজনের সঙ্গেও কল্পনা করা হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তাঁকে কৃষ্ণ থেকে সম্ভূতা বলা হয়েছে এবং একইসাথে একথাও বলা হয়েছে যে, তিনি স্বয়ং কৃষ্ণকে বাসনায় আবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আর সেজন্য কৃষ্ণ নাকি তাঁকে নারায়ণকে ভজনা করবার উপদেশ দিয়েছিলেন। এই পুরাণকাহিনীটি যখন তৈরি করা হয়েছিল, তখন স্পষ্টতঃই অজাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক ট্যাবু বা নিষেধ গড়ে উঠেছিল। নারায়ণের দুই স্ত্রী – শ্রী এবং লক্ষ্মীর মধ্যে তখন শ্রীকে বেছে নিয়ে তিনি তাঁর সঙ্গে একীভূতা হয়ে গিয়েছিলেন। খুব সম্ভবতঃ শ্রীপঞ্চমী নামের উৎসমুখটি এখানেই লুকিয়ে রয়েছে। আবার কৃষ্ণই নাকি তাঁর প্রথম উপাসক ছিলেন। মৎস্যপুরাণে বলা হয়েছে যে, পরমাত্মার মুখ থেকে নির্গত শক্তিদের মধ্যে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠা, তাঁর রূপ দেবীর মত হয়েও প্রাপনীয়ার মত আকর্ষক, তিনি সর্বশুক্লা বা মহাশ্বেতা, বীণাধারিণী, কেশরাজিতে চন্দ্রশোভাময়ী, শ্রুতি-ও-শাস্ত্রে পারঙ্গমা এবং স্বজন-প্রেরণাদাত্রী ও পদ্মাসনা। পরবর্তীকালে সূর্যালোকের সঙ্গে তাঁর একত্রিতা হওয়ার ফলশ্রুতিতে তাঁকে সর্বশুক্লা বা মহাশ্বেতারূপে কল্পনা করা হয়েছে। চন্দ্র এবং পদ্ম তাঁর নারীত্বসূচক বাহিরঙ্গিক অস্তিত্বের দ্যোতক — পদ্ম চিরাচরিতভাবে স্ত্রীচিহ্ন এবং চন্দ্র রমণীর পূর্ণত্বের পরিচায়ক ঋতুর ব্যঞ্জনাবহ। এগুলি থেকেও ফার্টিলিটি-কাল্টের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বুঝতে পারা যায়। অতীতে শিল্প-এবং-জ্ঞান সম্পর্কে ক্রমে-ক্রমে মানুষের বোধ যখন থেকে একটা সুনির্দিষ্ট-আকার ধারণ করতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই এসবের অধিষ্ঠাতৃর অতিলৌকিক শক্তির অস্তিত্বও সে কল্পনা করতে আরম্ভ করেছিল; সেই ‘দৈবী’ শক্তির অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসের সূত্র ধরেই যে দেবতার কল্পনা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিবর্তিত হতে শুরু করেছিল, তিনিই কালক্রমে সরস্বতীর সঙ্গে একত্রিতা হয়ে গিয়েছিলেন। সরস্বতীর হাতে বীণা এবং শ্রুতি ইত্যাদির প্রসঙ্গ এখানে সেসবেরই হদিশ দেয়। অথর্ববেদ অবধি বাক এবং সরস্বতী পৃথক বলে দেখতে পাওয়া যায়; কিন্তু তারপর থেকেই দেখা যায় যে তাঁরা অভিন্না। অথর্ববেদ প্রাক-বৈদিক হরাপ্পার ধর্মবিশ্বাসের উপাদান নিজের মধ্যে সঞ্চিত রেখেছে — বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকের এই অভিমতকে মেনে নিলে — পরবর্তীকালে, অর্থাৎ বেদোত্তর সময়কালে হরাপ্পীয় এবং বৈদিক সংস্কৃতির সংশ্লেষণেই যখন হিন্দু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তখন অথর্বীয় বাক এবং ঋক-সংহিতার সরস্বতীর এই বিমিশ্রণকে স্বাভাবিক বলেই স্বীকার করে নেওয়া যায়।

দেবী সরস্বতীকে নিয়ে লৌকিক এবং ধ্রুবপদী যেসব কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, সেগুলির উল্লেখও এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবেনা বলেই মনে হয়। তেমনি একটি কাহিনী হল যে – সমুদ্র মন্থনের পরে বাগদেবতা নারীর মোহনীয়া রূপ ধরে অসুরদের বিভ্রান্ত করে অমৃতের ভাণ্ডটি দেবতাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এরপরে তাঁর ঐ নারীমূর্তিই দেবকুলের নির্বন্ধে স্থায়ী হয়েছিল, তাঁরই নাম হল – সরস্বতী।

এই কাহিনীর সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্যটি এখানে বিশ্লেষণযোগ্য এবং সেটা সরস্বতীর সাথে সম্পৃক্ত আরও দুটি অনুরূপ কাহিনীর অনুষঙ্গেই করতে হবে। প্রথমটি হল – নিষাদ শবর এবং পুলিন্দদের স্নান-পানের জল থেকে বঞ্চিত করবার জন্য দেবতাদের নির্বন্ধে নদীরূপিণী সরস্বতী মাটির তলায় অনুপ্রবেশ করে আবার বহু দূরবর্তী একজায়গায় মৃত্তিকা ভেদ করে প্রবহমানা হয়েছিলেন। তখন থেকে ওই কারণেই তাঁর নাম হয়েছিল – পৃথুদক।

দ্বিতীয় কাহিনীতে বলা হয়েছে যে, গন্ধর্বরা দেবভোগ্য সোমরস অপহরণ করে নিয়ে গেলে সরস্বতী (তখন বাক-বিরাজমূর্তিতে) মোহকারিণী রূপ ধারণ করে তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে ক্রমান্বয়ে সঙ্গতা হয়ে তাঁদের সবাইকে অবসন্ন করে তুলেছিলেন, এবং সেই অবকাশে বিনা বাধায় সোমের ভাণ্ডটি আবার দেবতাদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, টিউটনীয় লোকপুরাণের ফ্রেইয়া দেবীকে নিয়ে প্রায় হুবহু একটি গল্প ওই সাংস্কৃতিক বলয়ে প্রচলিত রয়েছে।

স্পষ্টতঃই, বুদ্ধিজীবী দেবকুল প্রতারণা এবং বঞ্চনা করে শ্রমজীবী অসুরকুলের (মূলতঃ তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই মন্থনশেষে অমৃতাভাণ্ড হাতে নিয়ে লক্ষ্মী যে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন – একথায় পুরাণবৃত্তের পাঠক-পাঠিকামাত্রেই নিশ্চই একমত হবেন) ন্যায্য প্রাপ্য দেননি — এই মর্মে পুরাণবৃত্তান্তে যে কাহিনীর হদিশ পাওয়া যায়, সেটার কেন্দ্রে রয়েছেন জ্ঞানের দেবী। সভ্যতার গোড়া থেকেই ওপরতলার মানুষ যে, জ্ঞান এবং বিদ্যার সাহায্যেই বিদ্যাহীন বৃহত্তর শ্রমজীবী শ্রেণীকে প্রবঞ্চনা করে আসছেন, সেই বস্তুবাদী ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক সত্যটি এর মধ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছে বলে দেখা যায়। দ্বিতীয় কাহিনীতে এই অন্তর্কাঠামো বা ইনফ্রাস্ট্রাকচারটি আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সভ্যতার অমৃতরসের পরিবর্তে এখানে প্রাণস্বরূপ তৃষ্ণার জল থেকে অরণ্যচারী আদিবাসীদেরকে সুসভ্য আর্য তথা ব্রাহ্মণ্য-সংস্কৃতির কুলপতিরা বঞ্চিত করেছেন বলে দেখতে পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের ‘মুক্তধারা’ নাটকের অনুরূপ ঘটনা-পরম্পরা এখানে স্মরণযোগ্য। নিজেদের উন্নততর প্রাযুক্তিক বিদ্যার বলে শোষক শ্রেণী, অন্যদের তৃষ্ণার জলটুকু পর্যন্ত শুষে নেন — কখনো জ্ঞানের দেবী নদীরূপা সরস্বতী যার প্রতীক, আবার কখনো বা যন্ত্ররাজ বিভূতি।

সরস্বতীকে নিয়ে প্রচলিত তৃতীয় কাহিনীটিকে প্রথমটির প্রায় অনুরূপই (সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায় যেটাকে বলে আইসোমর্ফিক বা অইকোটাইপ) বলা চলে। প্রথম এবং তৃতীয় কাহিনীতে সরস্বতী কর্তৃক যৌন-প্রলোভন দেখানোর ব্যাপারটিকে বিশ্লেষণ করলে, সেটাকে নিশ্চই শাসক শ্রেণীর কাছে বুদ্ধিজীবীর আত্মবিক্রয় বা প্রস্টিটিউশনের রূপক বলেও গণ্য করা যেতে পারে।

সরস্বতীকে নিয়ে লৌকিক এবং ধ্রুবপদী পুবাণবৃত্তে আরও যেসব কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, উৎসাহী পাঠক-পাঠিকাদের পক্ষে সেগুলিও যথেষ্টই আকর্ষণীয় বলেই প্রতীত হবে। সেগুলির মধ্যে একটি হল যে, বিষ্ণুর তিনজন স্ত্রী — গঙ্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী। বিদুষী ভার্যা সরস্বতীরূপে মোহনীয়া হলেও, নিজের বিদ্যাবত্তার জন্য তিনি তাঁর স্বামীর পক্ষে বাঞ্ছনীয়া হতে পারেননি, গঙ্গাও নারায়ণের হৃদয়েশ্বরী হননি। অতএব তিন সপত্নীর পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে তিনি সরস্বতীকে ব্রহ্মার এবং গঙ্গাকে শিবের নর্মসহচরীরূপে দান করে দিয়েছিলেন, শুধু ধনদায়িনী লক্ষ্মী তাঁর নিজের সহচারিণী হয়ে থেকে গিয়েছিলেন। এই গল্পটি গড়ে ওঠবার পিছনে যে মানসিকতাগুলি সক্রিয় রয়েছে, সেগুলি সমাজতত্ত্বের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অবশ্যই ভাবনার বিষয়। স্পষ্টতঃই, এই কাহিনী সামাজিক-বিবর্তনের যে স্তরে গড়ে উঠেছিল, সেখানে নারীকে (তা তিনি দেবী বা মানবী যেটাই হন না কেন) একধরণের হস্তান্তরযোগ্যা ভোগ্যপণ্য (বা ট্র্যান্সফারেবল কমোডিটি) রূপেই দেখা হয়েছিল। নিজের সুবিধা-অসুবিধার জন্য স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার কাহিনীর মধ্যে সেই মানসিকতারই অভিব্যক্তি ঘটেছিল বলে দেখা যায়। শ্রেণীসমাজের নীতিবোধের এলাকায় এই জিনিষ এমন কিছুই অভাবনীয় নয়! দ্বিতীয়তঃ, নারীর পবিত্রতা (গঙ্গা যদি সেটার প্রতীকরূপা হন) এবং প্রজ্ঞা (সরস্বতী যেটার প্রতিভূ) — এই শ্রেণীভিত্তিক পুরুষশাসিত সমাজে অর্থ-সম্পদের (লক্ষ্মী যেটার প্রতীক) কাছে যে খুবই তুচ্ছ, সেটাও এই কাহিনীর মধ্যে দিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে বলে দেখা যায়।

উপরে ব্রহ্মা-সরস্বতীর অজাচার-ভিত্তিক পুরাণবৃত্তান্তের যে প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করা হয়েছে, এখানে সেটারও বিশ্লেষণ করবার দরকার রয়েছে। পুরাণে বলা হয়েছে যে, ব্রহ্মা নিজেকে নিজে সৃষ্টি করে অতঃপর যখন ধ্যানস্থ হয়েছিলেন, তখন তাঁর দেহের ক্রমবর্ধনশীল সত্ত্বগুণ তেজরূপে রসনা দিয়ে নির্গত হয়ে বাক বা সরস্বতীর মূর্তিতে উপস্থিত হয়েছিল। আত্মজার রূপ ব্রহ্মার ধ্যানভঙ্গ করেছিল। ব্রহ্মার তৃষিত দৃষ্টির লেহন থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনিচ্ছুক সরস্বতী তাঁর সম্মুখ থেকে পিছনে, তারপরে উভয় পার্শ্বে, অতঃপর আকাশের দিকে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যেদিকেই গিয়েছিলেন, সেদিকেই ব্রহ্মার একটি করে মুখের সৃষ্টি হয়েছিল — এবং এভাবেই তিনি পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছিলেন। অবশেষে বাগদেবী তাঁর স্রষ্টাকে আর এড়াতে পারেননি — এবং সেটারই ফলশ্রুতিতেই নাকি মনু স্বায়ম্ভূব আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই কাহিনীর পাঠান্তর হিসেবে অন্যত্র যা প্রচলিত রয়েছে, সেখানে সবস্বতী একটি হরিণীর রূপ ধারণ করে অরণ্যে পলায়ন করবার পরে ব্রহ্মাও হরিণমূর্তিতে তাঁকে অধিকার এবং গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া রাজহংসী এবং রাজহংস প্রতীকেও তাঁদের মিলন ঘটেছিল বলে পুরাণবৃত্তান্তে প্রচলিত রয়েছে। খুব সম্ভবতঃই এই কাহিনীটিই সরস্বতীর বর্তমান মূর্তিতে রাজহংস-বাহনের উৎস। পরবর্তীকালের দেবকল্পনায় ব্রহ্মার কাছ থেকে আকাশে-পলায়নপরা সরস্বতীই আকাশগঙ্গা (বা ছায়াপথ)-রূপে গণ্যা হয়েছিলেন; অতীতে আচার্য যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি অন্ততঃ সেভাবেই কাহিনীটি বিশ্লেষণ করেছিলেন।

ব্রহ্মা-সরস্বতীর হরিণ-মিথুন এবং রাজহংস-মিথুনের মধ্যে দেবকল্পনা যে আদিম টোটেম-ভাবনার অনুবৃত্ত — সেবিষয়ে গবেষকদের মনে কোন সন্দেহ নেই। পশ্চিম ভারতে ময়ূরাসীনা এবং সিংহাসীনা যেসব সরস্বতীমূর্তি দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলির উৎসেও ঐ যে টোটেম-কল্পনাই রয়েছে — সেকথা বলাই বাহুল্য। ছায়াপথকে দেবীরূপে কল্পনা করাও সুদূর অতীতের উত্তরাধিকার। অজাচারের ব্যাপারটা হয়ত আরও পুরোনো সময়কালের স্মৃতিবাহী। কন্যারূপিণী সরস্বতীর সলজ্জ পলায়নের প্রয়াসের বর্ণনাটুকুতে পরবর্তী সময়ের অভিক্ষেপ পড়েছিল বলেই মনে হয়।

সরস্বতী প্রসঙ্গে যত ধরণের প্রাচীন কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, সেগুলির প্রায় কোনোটির মধ্যেই তাঁকে চারিত্রিক বিশুদ্ধির প্রতিমূর্তিস্বরূপা — এমনকিছু ভাববার বিশেষ কোন অবকাশ পাওয়া যায় না। এখানে এই প্রসঙ্গটি একটু বিশেষভাবে অনুধাবনযোগ্য। পুরুষ দেবতাদের মধ্যে অনেকেই শ্লথচরিত্ররূপে চিত্রিত হলেও — বিশেষতঃ ইন্দ্র — স্ত্রীদেবীদের মধ্যে অন্য কাউকেই কিন্তু এভাবে কল্পিতা হতে দেখা যায় না। একই দেবীকে এতজনের স্ত্রীরূপে কল্পনা করা হয়েছে — পিতা-কন্যা এবং মাতা-পুত্রের অজাচার (ব্রহ্মা-সরস্বতী, শিব-সরস্বতী এবং মনু-সরস্বতী প্রসঙ্গ যথাক্রমে বিচার্য) তাঁকে উপলক্ষ্য করেই ঘটছে, স্বগোষ্ঠী বা শ্রেণীর স্বার্থে বহুচারিনী হয়ে তিনি নিজের পবিত্রতা ক্ষুন্ন করছেন (অসুর ও গন্ধর্বকুলের প্রসঙ্গ স্মরণযোগ্য) — ইত্যাদি বিষয় কিন্তু তাঁকে ভারতীয ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই করতে পারেনি। সেদিক থেকে তিনি গ্রীক এবং টিউটনীয় পূবাণবৃত্তের দেবীদের সঙ্গে তুলনীয়া। ভারতীয় পুরাণবৃত্তান্তের মাতৃকাদেবতাদের স্বাভাবিক যে ভাবমূর্তি অন্যত্র দেখতে পাওয়া যায়, সরস্বতী তাঁদের থেকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক। যদি উর্বরতাকেন্দ্রিক ধর্মধারার সঙ্গে সম্পর্ক থাকবার জন্যই সরস্বতীকে এভাবে কল্পনা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়, তাহলেও সেই ব্যাখ্যাও কিন্তু সম্পূর্ণাঙ্গ হবে না। সেটার কারণ হল যে, ফার্টিলিটি কাল্টের সঙ্গে অন্যান্য যেসব দেবীরা যুক্ত রয়েছেন বলে মনে করা হয়, তাঁদের কাউকেই কিন্তু পৌরাণিক সরস্বতীর মত শিথিলচরিত্রা কিংবা কলঙ্কিতারূপে দেখা যায় না; সেক্ষেত্রে শুধু সরস্বতীর প্রসঙ্গেই এই ব্যতিক্রমী ভাবনা সঞ্জাত হয়েছিল কেন?

এই প্রসঙ্গে এই প্রবন্ধের শুরুতে যে বিপরীতমুখিন বিশ্লেষণের কথা বলা হয়েছে, এখানে সেটাকে অবলম্বন করেই সম্ভবতঃ এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব। মানব ইতিহাসের প্রাথমিক পর্যায়ে, নদীনিসর্গের দেবী (ছায়াপথের অধিষ্ঠাত্রী দেবীও তাঁর সঙ্গে সন্নিবিষ্টা হয়ে থাকতে পারেন) রূপেই তিনি অনুভাবিতা হয়েছিলেন; মাতৃকা দেবতাদের সাধারণ লক্ষণ অনুসারেই ফার্টিলিটি-কাল্টের সঙ্গে তাঁর সংযোগটা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল। এরপরে তিনি কিভাবে জ্ঞান এবং বিদ্যা এবং শিল্পকলার অধিষ্ঠাত্রীতে রূপান্তরিতা হয়েছিলেন — সেকথা ওপরেই আলোচনা করা হয়েছে। অতীতে এই সূত্র ধরেই দেবী সরস্বতী শ্রেণীকেন্দ্রিক সমাজের ওপরতলার দেবীতে পরিণতি পেয়েছিলেন। তখন বিদ্যার চর্চা যেহেতু ওপরতলার চৌহদ্দীর মধ্যেই সীমায়ত (নিষাদ-শবরদের জন্য নদীর জল মাটির মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া যেটার প্রতীক) ছিলেন, তাই ওপরতলার সমস্ত প্রধান দেবতারই তাঁর ওপরে অধিকার সাব্যস্ত হয়েছিল — প্রকারান্তরে তিনি দেবকুলের বসন্তসেনা-কল্পা হয়ে উঠেছিলেন! এখানে বসন্তসেনার উল্লেখ এই কারণে করা হল যে, শূদ্রক যে সামাজিক কাঠামোয় তাঁর নাটকটি রচনা করেছিলেন, মোটামুটিভাবে সেটি ব্রাহ্মণ্য-স্মার্ত ঐতিহ্যবাহী সমাজশক্তির অভ্যুদয়ের যুগ ছিল। অতএব দেবতা-কল্পনার অভিব্যক্তিতেও যে সেই সমাজেরই ভাবধারার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ছায়াপাত ঘটবে, সেকথা তো সহজেই অনুমান করা যায়। বিদ্যা-প্রজ্ঞা-শিল্প-ললিতকলা ইত্যাদির ধারিকা এবং বাহিকা হিসেবে সেই সময়ে — ইতিহাসে যে সময়টাকে ‘ক্লাসিক্যাল এজ’ বলা হয়েছে — ঐ বসন্তসেনারাই অগ্রগণ্যা ছিলেন। সুতরাং সেই সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যা এবং ললিতকলার দেবীরও বসন্তসেনা-সুলভতা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। বিশেষতঃ, ঐ ধরণের পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায়। এখন প্রশ্ন হল যে, তাহলে পরবর্তী সময়ে সরস্বতীপুজো কি করে জনজীবনে এইভাবে পুনর্ব্যাপ্ত হয়েছিল?

এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, পার্বণের সরস্বতী কিন্তু আবার সেই প্রাথমিক পর্যায়ের মাতৃকাদেবীর সম্মান ও মর্যাদায় ভূষিতা হয়েছিলেন। এটাও স্বাভাবিক, কেন না, লোকায়ত জীবনের প্রেক্ষিতে কখনোই ওপরতলার মত চিন্তার কলুষ একটা কোনো ভাবমূর্তিকে ধারণ করেনা। তবে সাংস্কৃতিক প্রবহমানতার যে নিরবচ্ছিন্ন বলয়াবর্তন লোকসমাজ থেকে ওপরতলায়, আবার ওপরতলা থেকে লোকসমাজে ঘটে চলে — সেটারই নিয়মে ওপরতলা থেকে জ্ঞান-বিদ্যা-শিল্প ললিতকলার দেবীও নীচের তলার জনজীবনকে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং সরস্বতী ক্রমে পার্বণের দেবীতে পরিণতা হয়েছিলেন।

বাঙালীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক-মানসলোকে যখন তাঁর পৌরাণিক আধ্যাত্মিকতার ভাবরূপ নির্মঞ্চিত হয়ে লৌকিক একটি মূর্তি তৈরী হয়ে গিয়েছিল — বাঙালীর নিজস্ব দেবদেবীরূপে যাঁরা সুপ্রতিষ্ঠ — সেই শিব-দুর্গার কন্যারূপেই তখন তাঁর সামগ্রিক পরিচয় দেখা দিয়েছিল। ঘরোয়া জীবনের লোকায়ত সত্তায় সরস্বতী তখন স্বাভাবিক মাতৃকামূর্তিতে সমাবৃতা হয়েছিলেন। যেহেতু তিনি প্রথম থেকেই বাক তথা ভাষারও দেবী, তাই তাঁর মধ্যে দিয়ে অনিবার্যভাবে সর্বজনীনতা তো আগে থেকেই ছিল; সুতবাং প্রত্ন-ঐতিহাসিক–ঐতিহাসিক–ধ্রুবপদী–লৌকিক — এই ছক ধরে লোকজীবনের মধ্যে অনায়াসে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল। গ্রীক পুরাণের বিদ্যা-শিল্পের দেবী এথেনা ও রোমান পুরাণের অনুরূপ দেবী মিনার্ভার মত তিনিও ‘শ্রী’-দায়িনীরূপে গণ্যা — অতীতে ‘শ্রী’-দেবীর সঙ্গে তাঁর সংমিশ্রণ কিভাবে ঘটেছিল, সেকথা ওপরেই বলা হয়েছে। এবারে এই আলোচনা শেষ করবার আগে, আরো দুটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আবশ্যক।

প্রথম প্রশ্নটি হল, একটি বিশেষ তিথিতে, অর্থাৎ শ্রীপঞ্চমীতেই কেন সরস্বতী-পূজার বিধান দেওয়া হয়েছে? এবং, দ্বিতীয় প্রশ্নটি হল যে, সরস্বতী পূজার পরেরদিন পশ্চিমবঙ্গে যে ‘শীতল’-খাবার রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে সেটার তাৎপর্যই বা কি?

দেবী সরস্বতী যেহেতু সরস্বান তথা সূর্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই মাঘের উত্তরায়ণ যখন শুরু হয়েছে, তখন সরস্বতীর অর্চনা – সূর্যনির্ভর ধর্মধারার (বা সান-কাল্টের) সঙ্গে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন হল যে, শুক্লাপঞ্চমী – এই বিশেষ তিথিটিই কেন?

পুরাণ মতে মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমীতে শ্রীদেবী দেবসেনারূপে কার্তিকের সঙ্গে পরিণীতা হয়েছিলেন। শ্রী ও সরস্বতীর সমন্বিত হওয়ার কথা আগেই আলোচনা করা হয়েছে। অতএব শ্রীদেবীর শুভদিন এবং সূর্য্যকন্যা সরস্বতীর উপাসনাকাল একত্রে সমন্বিত হয়ে শ্রীপঞ্চমী রূপে সুস্থিত হয়েছে।

সরস্বতীপূজার পরেরদিন শীতল-খাদ্য গ্রহণ করবার যে প্রথা পশ্চিমবঙ্গের বহু অঞ্চলে সুদূর অতীত থেকে প্রচলিত রয়েছে, সেটার অন্তরালে হয়ত আঞ্চলিক কিছু শস্যকেন্দ্রিক ধর্মধারার অবশেষ লুকিয়ে রয়েছে। অতীতে উর্বরতা-ভিত্তিক মাতৃকাদেবীরূপে যাঁর প্রাথমিক অভ্যুদয় ঘটেছিল — লোকজীবনে প্রত্যাবর্তন করবার পরে তাঁর অর্চনাবিধির সঙ্গে এইধরণের প্রথা নতুন করে সংযুক্ত হয়ে যাওয়াটা তাই আদৌ কিছু অভাবনীয় বিষয় নয়, বরং এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার বলেই বোধ হয়।#

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!