#৭
আলো গিলে ফেললে তোমার ছায়া
তুমি কার কথা কও?
কে তোমায় ছোঁয় নিঃশব্দ চাবুকে?
ঘৃণা চোখে হেঁটে চলো
বিশুদ্ধ মন খারাপে,
আর কতদূর ভয়হীন ভোরের আকাশ?
কেবলই রক্তচোখে স্লোগানে স্লোগানে
মনে হয় ফিরে আসে
আফ্রিকার কোনও ক্ষুধাার্ত শিশুর মুখ!
কতোটা নির্লজ্জ-প্রেমহীন হলে
জন্ম নেয় যুদ্ধশিশু
স্বাধীনতাকামীর ঔরসে?
#৮
নদীর প্রগাঢ় আওয়াজ, ঘোলাটে হাওয়া
প্রাচীন ধনুকের মতো আঁছড়ে পড়ে,
মৃত্তিকার ঝলসানো দেহে
গেঁথে দেয় শব্দহীন ঘন্টাধ্বনি।
পাহাড়ের পাড় ভাঙে যে স্তম্ভিত রাত
তার একমুঠ অন্ধকার
জেলে পাড়ায় ছড়ায় ক্ষুধার বিন্যাস।
শব্দহীন ক্ষুধার তর্জমা
পৃথিবীর সমস্ত ভাষাকে
একটা শব্দের কাছে নত করে—
‘ ক্ষুধা’!
#৯
আমরা ঘুমিয়ে গেছি
যেভাবে গাজা উপত্যকার শিশুরা
নিশ্চিত মৃত্যুর মুখেও ঘুমিয়ে যেত ভয়হীন!
ভয়ে, ঘৃণায়, ক্ষুধার যন্ত্রণায়
একদিন সবাই ঘুমিয়ে যায়
পাখির বোবা কান্নার মতো শব্দহীন!
কখনো ফুরিয়ে গেলে ঘৃণার সকাল
হে স্বদেশ তুমি কি আমার হবে?
প্রথম আলো যেভাবে ছোঁয় পৃথিবীর মুখ?
ঘৃণাহীন চোখ নিয়ে
একটা শিশুর জন্মানোর প্রতীক্ষা
শেষ হতে আর কতদূর?
#১০
তীব্র নিন্দা পুষে রাখে পাখিহীন, নিশ্চুপ আকাশ
মীমাংসাহীন শ্রেণীসংঘাতের মতোই
রূপান্তরিত হয় কালো উদ্যান।
বন আর পাখির করুণ আওয়াজে
রাতের নির্লিপ্ত আবরণ ভারী হলে
এখানে মৃত্যুহীন পোশাকে নেমে আসে বিপর্যস্ত চোখ।
বিলম্বিত সূর্যরশ্মি আসতে পারেনি ভেদ করে
ঘুমহীন, ক্ষুধার সকালে!
#১১
লুকিয়ে থাকা বিব্রত ময়ুরের মতো
ডানা ঝাপটানো ভয় নিয়ে
তোমার জানালার ওপাশে কে অপেক্ষা করে?
কোন্ আততায়ী স্বপ্নে জাগে রক্তের পিপাসা?
এখনো শ্রমিকের স্বপ্ন মরে যায়
ঘাম শুকানোর আগে!
এক ক্ষয়হীন পথের কোলাজে
মৃতস্বপ্নরা বুনো ঘাস হয়ে জন্মায়,
কবরের নিঃস্তব্ধতার মতো শুষে নেয় এ চোখ!
তবু আকাশ ও সমুদ্রের সীমানায়
গলে যাওয়া কর্পূরচোখ
পাহাড়ের মানচিত্র বেয়ে নেমে আসে!
#১২
হাসপাতালের করিডোরে থুবড়ে পড়া মুখগুলো
মীমাংসাহীন সত্যের মতো জমে থাকে বুক পকেটে,
ক্ষয়হীন রাতের জরায়ু পোষে ঘৃণার সকাল।
নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও জেগে থাকা আন্দোলিত চোখ
বেঁচে থাকার যে তীব্র নেশায় জেগে আছে
সে চোখে মুহুর্তেই গলে যায় পৃথিবীর সমস্ত ক্ষুধা!
পোষা বেড়ালের ঘ্রাণে বিছানায় লেপ্টে আছে
ক্ষুধা—
মৃত্যুহীন জীবনের গান।