লেপচাজগৎ

পাহাড়প্রেমীদের কাছে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আনাচে-কানাচে থাকা অফবিটগুলো। কিছু বাঙালি পাহাড় বলতে বোঝে ডুয়ার্স কিংবা দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির আশেপাশের কিছু জায়গা। কিন্তু পাহাড় পাগল কিছু মানুষের কাছে পছন্দের জায়গা হল পাহাড় বা জঙ্গলের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা কিছু অচেনা অজানা জায়গা, যার নাম বা ঠিকানা অনেকেই জানেন না। লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত বা খাপছাড়া কিছু জায়গাগুলোর মধ্যে লেপচাজগৎ হল অন্যতম। দার্জিলিং থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে রয়েছে লেপচাজগৎ।

লেপচাজগৎ! মনের মধ্যে নিশ্চয়ই একটু খটকা লাগে ভুল শুনলাম নাতো! কোনো জায়গার আবার এমন নাম হয় নাকি! অনেকেই জানেন না এমন একটি অসাধারণ সুন্দর জায়গার নাম।

মিরিক ছাড়িয়ে আরও কিছুদূর গেলেই সুখিয়া পোখরি। এই এলাকাটি বেশ সমৃদ্ধ। বড় বাজার, দোকান, হোটেল, গাড়ি, সবই আছে। সুখিয়া পোখরি পেরিয়ে রাস্তাটা চলে গেছে ঘুম স্টেশনের দিকে। সেখান থেকে দার্জিলিং মাত্র আট কিলোমিটার। আমাদের এই লেপচাজগত অবশ্য ঘুমেরও আট কিলোমিটার আগে। অর্থাৎ সুখিয়া পোখরি আর ঘুমের ঠিক মাঝখানে। জায়গাটা দার্জিলিং থেকে অনেক উঁচুতে। ফলে, ঠান্ডাও বেশি, গাছপালা তো অনেক বেশি। নিঝুম পাইন বন, মাঝে মাঝে ওকের সারি, আর রডোডেনড্রন তো আছেই। পাহাড়ের ওপর কেমন একটা জঙ্গল জঙ্গল গন্ধ। বাংলার মধ্যে এমন একটা সুন্দর জায়গা ভাবাই যায়না।

লেপচাজগৎ হল এমন এক পর্যটন কেন্দ্র যেখানে চোখ মেললেই দেখা যায় তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা। যারা পাহাড় ভালোবাসেন তাদের কাছে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে থাকা অফবিটগুলো। লেপচাজগৎ হল সেই অফবিটগুলির মধ্যে অন্যতম।

আরও পড়ুন: লামাহাট্টা

পাইনগাছে ঘেরা এই গ্রামে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি হোম স্টে। অনেকে ভাবতেই পারেন দলবেধে হৈ হৈ করে খাওয়া দাওয়া আড্ডা মেরে দু’চারটে দিন কাটাবেন, তাহলে এই জায়গা তাদের জন্য নয়। এই জায়গা তাদেরই জন্যে যারা একটু নিজের মতো করে শান্ত পরিবেশকে উপভোগ করতে চান। ঘুম পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই গ্রামে অনায়াসে নিজের মতো করে হারিয়ে যেতে পারেন।

লেপচাজগতে ভোর হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর সানরাইজের দৃশ্য দিয়ে। তারপর সকালের মিঠে রোদে গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে পাইনে ঘেরা এই গ্রামের মনোরম দৃশ্য দেখার মজাই আলাদা। ইচ্ছে হলে এখান থেকে ঘুরে আসা যায় সুখিয়াপোখরি বাজার, তাকদা বাজার, বড় ও ছোট মাঙ্গোয়া, লামাহাটা, তিনচুলে এবং দাওয়াইপানি। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই খুব তাড়াতাড়ি এখানে সন্ধ্যা নেমে আসে। চারদিকে পাইনে ঘেরা এই লেপচাজগতে সন্ধ্যেবেলা ঝিঁ ঝিঁ ডাক ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। তবে ওপর থেকে আলোয় ঘেড়া দার্জিলিং এর দৃশ্য ভালই দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড় প্রেমীদের কাছে এই পাহাড়ে সন্ধ্যে নামার দৃশ্য বিস্ময়কর। তাছাড়া এখানে সূর্য ডোবার সেই মনোরম দৃশ্য কেউই মিস করেন না বিকেলে। বাজেটের দিক দিয়েও একদম সাশ্রয়ী এই লেপচাজগৎ।

ব্রিটিশরা আসারও অনেক আগে থেকেই এখানে লেপচারা থাকত। তখন তো এমন সুন্দর রাস্তা ছিল না। যানবাহনও ছিল না। ভাবলে অবাক হতেই হয় কীভাবে এখানে থেকে তারা জীবনধারনের উপাদান সংগ্রহ করত, সেও এক বিস্ময়!

নির্জন পাহাড়ে এমন সুন্দর একটা জায়গা আছে ভাবতেই অবাক লাগে। এই জায়গার কোনো প্রচার নেই। ভাগ্যিস বেশি প্রচার নেই। লোকের ভিড় আর চিৎকারে এই প্রকৃতির নির্জনতার গন্ধ তাহলে হারিয়ে যাবে যে।

উত্তরবঙ্গগামী যে কোন ট্রেনে চেপে চলে যেতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা লেপচাজগতে পৌঁছে যাওয়া যায়।#

ছবিঋণ: মণিজিঞ্জির সান্যাল

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!