বাংলাদেশের ইতিহাসে কিছু নাম কখনো কেবল ব্যক্তি হয়ে থাকে না, তারা হয়ে ওঠে এক একটি চেতনার প্রতীক। অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত তেমনই একজন মানুষ- একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন অর্থনীতিবিদ, একজন শিক্ষক, গবেষক এবং একজন সাহসী মুক্তচিন্তক। কিন্তু আজ তিনি বন্দি। দুর্নীতির একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে।
চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো যায় যে এই গ্রেপ্তার কেবল একটি মামলার অংশ নয়; বরং এটি একজন মুক্তচিন্তাবিদের কণ্ঠ রোধের নাটকীয় প্রচেষ্টা। প্রশ্ন জাগে: রাতের অন্ধকারে, বিনা ওয়ারেন্টে, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে এভাবে গ্রেপ্তার করার নেপথ্যে রাষ্ট্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?
কেন এখন? কেন তিনিই?
যখন রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তখন অন্য সব কণ্ঠকেই চাপা দিতে হয়। ড. বারাকাত ছিলেন সেই বিরল কণ্ঠ, যিনি বারবার প্রশ্ন তুলেছেন- সংখ্যালঘু নিপীড়ন, মৌলবাদের উত্থান, পুঁজিবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে। তিনি বলেছিলেন, “মৌলবাদেরও একটা অর্থনীতি আছে।” এই সত্য কথাটি হয়তো ছিল অত্যন্ত অস্বস্তিকর, ক্ষমতাবানদের জন্য বিপজ্জনক।
তাই আবুল বারাকাতের গ্রেপ্তার কেবল আইনি ঘটনা নয়, এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
ড. আবুল বারাকাত একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই পরিচয়টাই যথেষ্ট ছিল রাষ্ট্রীয় সম্মানের জন্য। অথচ আজ তাকে যেভাবে হেনস্তা করা হলো, তা শুধু একটি ব্যক্তিগত অপমান নয়- এটি একটি ভয়াবহ বার্তা: যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হবে, যারা সত্য বলবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে; তারা কেউই নিরাপদ নয়। অর্থাৎ, কেউই বাদ যাবে না।
এই ঘটনা আমাদেরকে একটি কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়:
যদি আবুল বারাকাতের মতো একজন সম্মানিত মানুষকে অপমান ও অপদস্থ করা যায়, তাহলে কাল কার পালা?
যারা প্রশ্ন তোলে, অন্যায় দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয় না, যারা সমাজের বিবেক নাড়িয়ে দেয়; তারা কি সবাই একই ভাগ্যের দিকে এগোচ্ছে?
আসুন, আমরা বলি
ড. আবুল বারাকাতের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বিবেক থামানো যায় না, হাতকড়া পরিয়ে ইতিহাস বদলানো যায় না।
সময়ই সাক্ষ্য দেবে- কে সত্য, কে ছায়া।

 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
															


