জ্যোতি পোদ্দার

জ্যোতি পোদ্দার ১৯৭৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। নব্বই দশকের এই কবি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত আছেন। তিনি একাধারে লিখছেন কবিতা ও গদ্য– বিশেষ করে প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে। বইয়ের নাম:(a+b)2 উঠোনে মৃত প্রদীপ (১৯৯৭), সীতা সংহিতা (১৯৯৯), রিমিক্স মৌয়ালের শব্দঠোঁট (২০০২), ইচ্ছে ডানার গেরুয়া বসন (২০১১), করাতি আমাকে খুঁজছে (২০১৭), দুই পৃথিবীর' গ্যালারি (২০১৯)। এছাড়া তিনি নিজের জেলা, ইতিহাস ও প্রকৃতিকে জানার নেশা থেকে জানাতে লিখছেন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায়। ১৯৭০-২০২০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত শেরপুরের ছোটকাগজগুলো সংগ্রহ করে লিখেছেন 'শেরপুরের ছোটকাগজ চর্চা' শিরোনামে একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থের পাণ্ডূলিপি।

পরব ভাঙা হাটের হাটুরে ৪

।।শেষ পর্ব।। হাটের নানা রূপের আরেকটি রূপ- মারামারি। কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই মারামারি কিংবা খুবই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি। কোন কিছু বুঝবার আগেই ধর ধর মার মার কাট কাট মারামারি। মাথা ফাটাফাটি মারামারি। রক্তারক্তিতে সয়লাব হাটের প্রান্তর। যোগানিয়া বনাম গড়কান্দা অথবা গোবিন্দ নগর বনাম গড়কান্দা। ঝগড়া ব্যক্তিগত পরিসর থেকে শুরু হয় শেষ পর্যন্ত নামটা…

Read More

পরব ভাঙা হাটের হাটুরে ৩

।।পর্ব – তিন।। ধানের বাজারের রূপ এক্কেবারে আলাদা। জমিতে শ্রম ঘাম ঢেলে তবেই না এই ফসল। এই ফসল বিক্রিবাট্টা করেই স্ত্রী পুত্র পালন পালন। কৃষক মানে প্রান্তিক কৃষক তার ফসল বিক্রি করতে গেলেই ধানের বাজার পড়তি দিকে পড়ে যায়। অন্য সওদা কিনতে গেলে জিনিসের দর উর্ব্ধমুখী। একই বাজারে একপণ্যের কেবলই পডনমুখী আর বাকি সওদা সবই…

Read More

পরব ভাঙা হাটের হাটুরে ২

।। দুই।। যে কোনো বড় হাট মূলত বহুরূপী হাট। একটি পরিসরকে কেন্দ্র করে পরিধিতে নানা কিসিমের কায়কারবার। যার যেটা প্রয়োজন সে খুঁজে খুঁজে ঠিক ঠিক জিনিসই বেছে নিচ্ছে কিংবা বলা ভালো বেছে নিতে হয়। পুরাতন হাটের এখানে ওখানে বেড়াতে বেড়াতে আমি ঠিক-ই টের পাচ্ছি এক সময় হাট-ই ভরসা। হাট-ই আশ্রয়। হাট শুধু তখন একটি স্থানবাচক…

Read More

পরব ভাঙা হাটের হাটুরে ১

।। পর্ব – এক ।। মঙ্গলবারে বড়হাট আর শুক্রবারে ছোট হাটবার। মঙ্গল-শুক্রবারে হাটের যেমন গুণগত আঁচ লক্ষ্য করা যায় তেমনই শুধু আচরণে নয়— পণ্য আমদানিতেও পরিমাণগত পার্থক্য চোখে পড়ে। মঙ্গলের বড়হাটে বেলা বাড়তে বাড়তে গমগম ডাক ওঠে। মানুষের হল্লা আর নানা শব্দে জীবন জেরবার হয়ে যায়। নিজের ইচ্ছে মতো হাটবার জো নেই। ভীড়ই হাটুরেকে ঠেলে…

Read More

চৌকাঠ

একবার কুড়িয়ে পাওয়া একটা শব্দকে কৌটায় ভরে বেশ খানিক ঝাঁকিয়ে লুড়ুখেলার দানমারা’র মতো করে ছুঁড়ে কানাপুট উঠে এসেছিল বলে ঘর থেকে গুটি বের করতে পারিনি। সাপলুডু খেললে অবশ্য ট্রেকে ওঠে যেতাম। আমি আবার সাপলুডু খেলি না। খেলি না মানে খেলতে জানি না—ব্যাপারটা তেমন নয়; সাপলুডুতে অবিরাম সন্ধ্যা নামার মতো করে ভয় নামে– ভিতর বাহির সব…

Read More

গারো পাহাড়ের চিঠি: ঘোড়া ও রওশন সার্কাস

ঘোড়ার প্রতি আমার পক্ষপাত কে না জানে? আমার শৈশবকাল ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ার দ্বারা আচ্ছন্ন। আমার ঘরের টিনের বেড়ায় জিগার আঠা দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছি পেপার কাটিং- কোনটা সাদা কালা কোনটা রঙিন– সিনেমার পোস্টার থেকে মাপে মাপে কেটে ঝুলিয়ে রাখা টগবগ ঘোড়ার ছবি। কোন ঘোড়ার পিঠে নায়ক মাহমুদ কলি কোনটায় ওয়াসিম বা ঘোড়ায় সামনের পা উঁচিয়ে ভিলেন…

Read More

গারো পাহাড়ের চিঠি: পাতিল হাঁটি ও জ্যোতি’র শৈশব

এখনো কি বিক্রি হয় হাঁড়ি, পাতিল, সরা কিংবা লালরঙে কাজ করা মাটির ব্যাংক? পথের পাশে মাটি পসরা দেখেই দাঁড়ালাম। মফস্বলের শেষ বিকালের হাটে পসরা সাজিয়ে বসেছে। আছে হরেক রঙের মাটির পুতুল- পাঁচ আঙুলে গড়ে ওঠা টেপা পুতুল; সালংকারা পুতুল স্থির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাট বাজার দেখছে। দেখছে স্থানিক হাট বাজার কেবলই পড়তির দিকে। আমাকেও কি তিনি…

Read More

গারো পাহাড়ের চিঠি: পঞ্চব্রীহি

নয়াবিলের একটি গ্রাম চাটকিয়া- এক্কেবারে উত্তরের জনপদ। গত শতকের নয়ের শুরুর দিকে প্রথম এখানে এসেছিলাম। পাল্টে গেছে অনেক কিছু। কাঁচা পথ আর নেই- সবই পাকা- পিচের সোজা বা বাঁকা পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে এই গাঁও ওগাঁও। তখনকার পথ ছিল হয় কর্দমাক্ত নয় ধুলায় ধুলায় ধুসরিত হতো চোখ মুখ পা- পরনের কাপড় পর্যন্ত। ধুলা এখানে ঈষৎ…

Read More

গারো পাহাড়ের চিঠি: সাধু আন্দ্রিয়ের মিশন ও শান্তিধামে আড্ডা

ফাদার ডেভিড মৃথার উঠানে বৃত্তের মতো গোল হয়ে চলছে খোশ গল্প। সমতল থেকে একটু উঁচুতে টিনসেডের ইটের ঘরে তিনি থাকেন। টিলার একপাশ দিয়ে ধাপে ধাপে সিঁড়ি- মাটি কেটে কেটে বানানো। উপরে উঠার পাশেই সমতলে স্কুল- লম্বা স্কুলঘর। লালচে মরীচিকা নিয়ে ঢেউ টিনের দোচালা ঘর। সামনে শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে আছে সবুজ ঘাসের কার্পেটে। হাতের ডানে অতিথিদের…

Read More

গারো পাহাড়ের চিঠি: ভরা বর্ষার জলে যৈবতী বিলকন্যা

জলের স্রোত টিলার উপর থেকে নামছে। কলকল করে জল নামছে। স্বচ্ছ- ঠাণ্ডা জল। আঁকাবাঁকা অগভীর ড্রেনের তল লাল বালু মাটির স্তর। সূর্য্যের আলো আর লাল মাটির মাখামাখিতে জল যেন আরো স্ফটিক রূপালি জল। জল বইছে- বইছে জল বাতাসে কেঁপে কেঁপে। লাল মাটির জমিনে জলের কম্পনে রোদ মেখে। উপর ঢালু থেকে হাত খানেক নীচে যখন ছরছর…

Read More

গারো পাহাড়ের চিঠি: মিঠুন রাকসামের জ্যোৎস্নার দেমাক

বৃষ্টি বাতাসের দাপটে অনেক দূর সরে গেছে। শাল গজারির সিনা টান করা মাথার উপর দিয়ে মেঘও দূরবাসিনী। শেষ বিকেলের হলুদ কমলা রঙের আলোর দাগে একটু একটু করো ফুটে উঠছে কালোর আঁচড়। ফ্যাকাশে নীল আকাশে হলুদে আর কমলার সাথে কালোর মিশ্রণে মনের গভীরে একধরণের আহ্লাদ যেমন জাগে তেমনি জাগে বুকের খুব গভীরে কী যেন কীসের টান…

Read More

গারো পাহাড়ের চিঠি: চৈত্রদিনে সালরাক তাতা’র জলকেলি উৎসবে…

গারো বাড়ির উঠান এঁটেল মাটির ফকফকা উঠান। কোথাও ময়লা নেই।দিনের আলোয় যেমন উঠান হেসে ওঠে তেমনি আস্তে আস্তে তপ্ত হয়ে ওঠে আর তখনই পায়ে পায়ে ছড়িয়ে ছড়িয়ে ছড়ায়ে দেয় রাখি ধান–আগামী কয়েক মাসের খোরাকি ধান। ফলনের বাকি অংশ আজকাল জমিতে ধান কাটতে না কাটতেই বিক্রি হয়ে যায়। এই রাখি ধান উঠানে শুকিয়ে গোলাঘরে পেটমোটা ডুলিতে…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!