মহীবুল আজিজ

কথাসাহিত্যিক মহীবুল আজিজ এর জন্ম: ১৯ এপ্রিল ১৯৬২ সালে। পড়াশোনা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশা: শিক্ষকতা উপন্যাস: বাড়ব, যোদ্ধাজোড়, গল্পগ্রন্থ: গ্রাম উন্নয়ন কমপ্লেক্স ও নবিতুনের ভাগ্যচাঁদ, মৎস্যপুরাণ, আয়নাপড়া, বুশম্যানের খোঁজে, নীলা মা হতে চেয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের গল্প। কাব্যগ্রন্থ : সান্তিয়াগো’র মাছ, রৌদ্রছায়ায় প্রবাস, হরপ্পার চাকা, পৃথিবীর সমস্ত সকাল, নিরানন্দপুর, বৈশ্য বিশ্বে এক শূদ্র, এই নাও দিলাম সনদ, আমার যেরকম প্রস্তুতি, আমরা যারা স্যানটরিয়মে, দৃশ্য ছেড়ে যাই, পালাবার কবিতা, ট্যারানটেলা, কাব্যসমগ্র, ওগো বরফের মেয়ে। প্রবন্ধগ্রন্থ: কথাসাহিত্য ও অন্যান্য, সাহিত্যের পরিপ্রেক্ষিত, সৃজনশীলতার সংকট ও অন্যান্য বিবেচনা, সাহিত্য ইলিয়াস ও অন্যান্য নক্ষত্র, অস্তিত্বের সমস্যা ও লেখালেখি, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, সার্ত্র সোলঝেনিৎসিন ও অন্যান্য। গবেষণাগ্রন্থ: হাসান আজিজুল হক: রাঢ়বঙ্গের উত্তরাধিকার, বাংলাদেশের উপন্যাসে গ্রামীণ নিম্নবর্গ, ঔপনিবেশিক যুগের শিক্ষা-সাহিত্য।  

শঙ্খধ্বনি 

শঙ্খের মধ্যে সমুদ্রের ধ্বনি শ্রুত হয়, শঙ্খ ঘোষের কবিতায় পাওয়া যায় আয়ত বিশ্বের স্বাদ। নিবিড় কবিতাপাঠের দিনগুলিতে তিন তালব্য ‘শ’-ই প্রিয় ছিল আমার- শঙ্খ, শরৎ এবং শক্তি। কিন্তু শঙ্খকে মনে হতো, সবসময়েই মনে হতো, জলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা ফসফরাস যার ভেতরে প্রচণ্ড দাহ্যময়তা কিন্তু বাইরে আপাত হিমের মাধুর্য। তখনও জানতাম না, কোথাকার শঙ্খ! পরে দেখতে…

Read More

জাদুঘরের জাদু

বিখ্যাত ফরাসি লেখক সমালোচক আন্দ্রে মালরোঁ ১৯৪৫-৪৬-এ ছিলেন শার্ল দ্য গল সরকারের তথ্যমন্ত্রি, তারপর ১৯৫৯-৬৯ পর্যন্ত সংস্কৃতিমন্ত্রি। মালরোঁকে সবচাইতে বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছিল ল্যুভ মিউজিয়ম। কেননা, মালরোঁ’র ভাবনা ছিল, জাদুঘর হচ্ছে একটা জাতির অস্তিত্বের প্রকাশ। ‘মুজে ইমাজিনেঘ্’ বা ‘ইমাজিনারি মিউজিয়ম’ শীর্ষক একটি লেখায় তিনি বলেছেন, “মিউজিয়ম ইজ নট্ আ ট্র্যাডিশন, ইট্স্ এ্যান এ্যাডভেঞ্চার”। ল্যুভ জাদুঘরের…

Read More

জীবনানন্দ দাশের ‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও’

তোমরা যেখানে সাধ চ’লে যাও — আমি এই বাংলার পারে র’য়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে; দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হ’য়ে আসে ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে নেচে চলে–-একবার–দুইবার—তারপর হঠাৎ তাহারে বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে; দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ—শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে শঙ্খের মতো কাঁদে:…

Read More

বোদল্যার: দুইশো বছর পরে দাঁড়িয়ে ৫

।।শেষ পর্ব।। বোদল্যারের প্যারিস শহর ধনিদের পদভারে কাঁপা আর অবিরাম প্রাণস্পন্দিত ব্যস্ততার নগর নয়, তাঁর শহর সমস্যাপীড়িত, নোংরা গরিবের শহর। চমৎকার দোকানপাট আর রাস্তাঘাট-এ্যাভিন্যু এসব বাস্তবে থাকলেও স্প্লিন-এর বিষাদগ্রস্ত অবয়বে সেসব ঢাকা পড়ে যায়। বোদল্যারের শহর তাঁর নিবিড়-একাগ্র পর্যবেক্ষণের নিরিখে প্রতিফলিত। ‘ভিড়’ কিংবা ‘পুরনো জোচ্চোর’ কবিতাগুলি পাঠ করলে বরং প্রচলিত প্যারিস-আভিজাত্য টোল খেতে বাধ্য। তবে,…

Read More

বোদল্যার: দুইশো বছর পরে দাঁড়িয়ে ৪

।।চার।। ফোকলোর বা লোককথার ‘ভঁপিঘ্’ বা রক্তচোষা’র চরিত্রকে অতীতচারী স্মৃতিচারণার ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়েছে ‘লে মেতামঘ্ফোজ্ দ্য ভঁপিঘ্’ কবিতাটিতে। সমালোচকদের মতে এই ‘রক্তচোষা’রা হলো বোদল্যারের উদ্দাম জীবনের সঙ্গী পতিতারা যাদের অন্যতম প্রতিনিধিত্ব কবিতাটিতে চিত্রিত হয়েছে। কবিতাটির দু’টি অংশ। প্রথমাংশে অতীতের প্রেক্ষাপটে বর্তমান এবং দ্বিতীয়াংশে কেবল বর্তমানের দৃশ্যায়ন। কবিতাটির শুরুতেই মানুষী ‘রক্তচোষা’ আসে ‘স্যঘ্পঁ’ বা ‘সাপিনী’র…

Read More

বোদল্যার: দুইশো বছর পরে দাঁড়িয়ে ৩

।।তিন।। বোদল্যারের নিষিদ্ধ কবিতাগুলো একদিক থেকে সেসময়কার ফরাসি সমাজের ও রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিটাকেই উন্মোচন করে দেয়। বস্তুত ১৯০৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত ফ্রান্সে চার্চ সরকারি প্রশাসনিক কাঠামোতে অত্যন্ত প্রভাবক ভূমিকা পালন করতো। ১৯০৫ সালের ৯ ডিসেম্বর চার্চকে প্রকাশ্যভাবে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে দেওয়া হয় অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় চার্চ-কর্তৃপক্ষকে। বস্তুত বিখ্যাত রাজনীতিবিদ এমিল কোম্ব-এর…

Read More

বোদল্যার: দুইশো বছর পরে দাঁড়িয়ে ২

।।দুই।। ১৮৪৭ সালে ২৬ বছর বয়সে পো’র সাহিত্য সম্পর্কিত বোদল্যারের মনোনিবেশের শুরু আর সেই নিমগ্নতা পাঠ এবং অনুবাদ ছাপিয়ে এবং পো’র সাহিত্য সম্পর্কে একাধিক প্রবন্ধ রচনা করেও ক্ষান্ত হয় না। দীর্ঘ ১৮টি বছর তিনি কাটান পো’র সঙ্গে। মৃত্যুর দু’বছর আগেও (১৮৬৫) তিনি ব্যাপৃত থাকেন পো’র সাহিত্যকর্মে। ১৮৫৬ সালে বেরোয় বোদল্যারের’র প্রথম পো-অনুবাদ ইস্তোয়াঘ্ এক্সত্রাঅর্দিন্যাঘ্ এবং…

Read More

বোদল্যার: দুইশো বছর পরে দাঁড়িয়ে ১

।।পর্ব – এক।। সারা পৃথিবীতে বোদল্যারই একমাত্র ব্যতিক্রম যিনি তাঁর বই পড়তে আরম্ভ করবে যে-পাঠক তাঁকেই ‘কপট’ বিশেষণে বিশেষায়িত করতে পারেন। কিন্তু কপট কেবল পাঠকই নন, আগে স্বয়ং কবি এবং তারপর তাঁর কবিতার পাঠক-পাঠকবর্গ। তবে পাঠককে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণই ভেবেছিলেন। একেবারে সূচনায় ‘ও লেকতুঘ’ বা ‘পাঠকের প্রতি’ শিরোনামের চল্লিশ পংক্তির কবিতাটি আমাদের বুঝিয়ে দেয়, পাঠক…

Read More

ভালোবাসার মানুষ টনি মরিসন ৩

।।শেষ পর্ব।। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৭- কালপরিসরটিকে টনি মরিসনের জীবনের ট্রিলজি-দশক হিসেবে অভিহিত করা যায়। ১৯৮৭-তে বেরোয় তাঁর বিলাভেড-ট্রিলজি’র প্রথম উপন্যাসটি, ১৯৯২-তে জাজ এবং ১৯৯৭ সালে প্যারাডাইস। এই ট্রিলজি প্রথমত এক আন্তঃমহাদেশীয় জীবন-বাস্তবতার শক্তিমান কথাচিত্রণ এবং দ্বিতীয়ত এটি টনি মরিসনকে দেয় বিশ্ব পরিচিতি এবং তৃতীয়ত এই ট্রিলজি-দশকেই তিনি অর্জন করেন সাহিত্যের জন্যে নোবেল পুরস্কার (১৯৯৩)। অবশ্য…

Read More

ভালোবাসার মানুষ টনি মরিসন ২

।।দ্বিতীয় পর্ব।। নিজের আফ্রিকিয় উত্তরাধিকার এবং সেটির সঙ্গে তাঁর মার্কিন বর্তমানতার মেলবন্ধনটাকেই টনি মরিসন ভবিতব্যের জীবনবিকাশের মূল সঞ্চয় হিসেবে বিবেচনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পেশায় যোগ দেওয়ার আগে যখন তিনি বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থায় সম্পাদনার চাকুরি করেন তখন থেকেই তিনি আফ্রো-আমেরিকা বিষয়ে সচেতন। মূল্যবান সব প্রকাশনা সম্পাদনা করে কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয় সমৃদ্ধ করেন গোটা বিশ্বকে। র‍্যান্ডম হাউজ…

Read More

ভালোবাসার মানুষ টনি মরিসন ১

আমি কোনো গ্রাম বা কোনো সম্প্রদায় কিংবা আপনাদের জন্যে লিখি না। কল্পনার নিতান্ত আত্মগত চর্চাও আমার কাজ না। আমার লেখালেখির কাজটাকে হতে হবে অবশ্যই রাজনৈতিক। এর অভিমুখ সেইটাই। সমালোচকদের মধ্যে আজকাল এমন একটা বাজে ধারণা চালু আছে, কোন লেখায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেই সেই লেখকের গায়ে কোনো না কোনোভাবে একটা দাগ লেগে গেল। আমার অনুভূতি ঠিক…

Read More

ইতিহাসের বাস্তব এবং লেখকের বাস্তব: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ৫

।।শেষপর্ব।। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্’র সামগ্রিক ঔপন্যাসিক জীবনের কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত যে-জীবনদর্শন সেটির নাম আশাবাদ নয়, হতাশাবাদ। তাঁর সাহিত্যপাঠের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা তাঁর বিভিন্ন উপন্যাসে সুপ্রযুক্ত হয়েছে নানাভাবে। প্রথম উপন্যাস লালসালু-তে চলচ্চিত্রিক আঙ্গিকে বাস্তবের খণ্ড খণ্ড অবয়বের সম্মিলনে একটা পরিপূর্ণ ক্যানভাস নির্মিত হয়। প্রসঙ্গত, আমরা মনে রাখি, তিনি একজন চিত্রকরও ছিলেন। নিজের একাধিক গ্রন্থেরও তিনি প্রচ্ছদশিল্পী। দ্বিতীয় উপন্যাস চাঁদের…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!