মাঝে দুটো রবিবার পার হয়েছে সময়ের স্রোতের টানে। সোমবার সন্ধের ঝাপসা ভ্রূকুটি থানার সামনের চত্বরে লুটোপুটি খেলছে। নিজের চেম্বারে বসে আকাশ সাম্প্রতিক ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত। টেবিলের উপরে উঁচু উঁচু টাকার বান্ডিল। সেদিকে একবার চোখ রেখে আকাশ একমনে ফাইলগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে শুরু করল। টানাপোড়েনের দেওয়াল টপকে বেশ ভালোমতোই বুঝেছে, থানার আইন মোতাবেক কাগজপত্র ঠিক থাকলে…
কালবৈশাখী ঝড়ে প্রকৃতি যেমন আন্দোলিত হয়, আকাশের ভিতরের অবস্থা ঠিক সেইরকম। ক’দিন ধরে একটানা মানসিক কসরত করে চলেছে কিন্তু কিছুতেই বহমান ঝড়ের বাইরে আসতে পারছে না যদিও বিশেষ এক অকুতোভয় ভাবনায় দুলতে বেশ লাগছে। শুধু ভাবছে, তার পদমর্যাদার তুলনায় এ ঝড় কিছুই নয়। এতদিনের অভিজ্ঞতা বলছে, কালবৈশাখী সারা বছর চলে না। শরৎ, হেমন্ত কিংবা শীতে…
পাপানের মতো বাচ্চা ছেলে ধাক্কা খেতে খেতে যে এভাবে পোক্ত হয়ে উঠতে পারে, তা ভেবে ডুরানি অবাক না হয়ে পারলেন না। মায়ের মার খাবার দৃশ্য দেখার পর থেকেই পাপানের ভিতরের অবস্থান দ্রুত পাল্টাতে শুরু করেছে। নতুন নতুন অনুভূতির সঙ্গে তার অনুশীলন গড়ে উঠছে দুবেলা। বড়ো বড়ো অভিজ্ঞতার ঢেউ তার মনের নদীতে এমনিই উথলে উঠছে যে…
পুলিশ-লাইনের মূল কথা হল, আগে আসামিকে মেরে ঘায়েল করে দাও। শারীরিক দুর্বলতায় কাঁপতে থাকলে মৃত্যুর ভয় দেখাও, তখন সে নিজের মুখে সব কিছু বলে দিতে বাধ্য হবে। কিছুই লুকোতে সাহস পাবে না। ওসি আকাশ সেই তত্ত্বে কঠোর বিশ্বাসী। দুজন কন্সটেবলকে ডেকে সোজাসাপটা হুকুম দিল, শালাকে হাতলহীন চেয়ারের সঙ্গে আড়মোড়া করে বাঁধো। তারপর দেখছি কতক্ষণ সহ্য…
সন্ধের কিছু পরেই আকাশ সেদিন প্রথম বাড়িতে ফিরল। থানার বড়বাবু বলে কথা। এ নিয়ে একটা গালভরা ইংরেজি শব্দদল রয়েছে— অফিসার-ইন-চার্জ। আকাশ টানা কয়েক বছর সেই দায়িত্ব পালন করে আসছে। অনেকগুলো গ্রামপঞ্চায়েত থাকে প্রতিটা থানার অধীনে। সর্বত্র শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যে তাকে অধস্তনদের উপর নানা গুরুভার চাপিয়ে দিতে হয়। নিজেই পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধানে থাকে। ক্রিকেট দলে ক্যাপটেন…
কেউ কাছে না থাকলে মানুষ ভিতরের নিবিড়তা নিয়ে নিজের মনের সঙ্গে বেশ কথা বলতে পারে। ডুরানির আত্মিক অবস্থান সেই পথে ঢুকে পড়েছে। হিসেব মেলাতে না পেরে কেমন যেন হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। ভাবনা একটাই, ছেলেকে কেন তিনি নিজের মতো করে গড়ে তুলতে পারলেন না? সদুত্তর পেলে প্রশ্নের গোলকধাঁধা থেকে বের হয়ে আসা সহজ হত। ডুরানির পক্ষে…
রবিবার সকাল হলেই চাকুরেদারদের জীবনে নতুন উৎসাহ তৈরি হয়। সপ্তাহে ওই তো মাত্র একটাই দিন, বাড়িতে বসে ছুটির আমেজ বেশ উপভোগ করা যায়। পিছনে কোনো তাড়া থাকে না। ছ’টা দিনের ক্লান্তি মুছে ফেলার এক অপূর্ব সন্ধিক্ষণ। বোধ হয় সেই কারণেই চাকুরেজীবীরা রবিবার এলে মনে মনে এত বেশি খুশি হতে পারেন। ডুরানি অবশ্য অবসরপ্রাপ্ত কেরানি, তবুও…
