কবি কৃষ্ণরাম দাস

কৃষ্ণরাম দাস মধ্যযুগের শেষার্ধের বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট ও শক্তিশালী কবি ছিলেন। তিনি ছ’টি মঙ্গলকাব্য রচনা করেছিলেন; যথা— চণ্ডীমঙ্গল, কালিকামঙ্গল, ষষ্ঠীমঙ্গল, রায়মঙ্গল, শীতলামঙ্গল ও কমলামঙ্গল। কলকাতার কাছে নিমতায় তাঁর বাড়ি ছিল। এই কারণেই ‘কালিকামঙ্গল’ কাব্যের সূচনায় কৃষ্ণরাম তাঁর বাসভূমি সম্বন্ধে লিখেছিলেন—
“অতি পুণ্যময় ধাম সরকার সপ্তগ্রাম
কলিকাতা পরগণা তায়।
ধরণী নাহিক তুল জাহ্নবীর পূর্বকূল
নিমিতা নামেতে গ্রাম যায়॥”
একই কাব্যের আরেক জায়গায় তিনি লিখেছিলেন—
“ভাগীরথীর পূর্বতীর অপুরুব নাম।
কলিকাতা বন্দিনু নিমিতা জন্মস্থান॥”

গবেষকদের মতে কৃষ্ণরামের সমস্ত কাব্যই জোব চার্নকের কলকাতায় আসবার আগে রচিত হয়েছিল। সুতরাং কৃষ্ণরাম কর্তৃক কলিকাতা পরগণার উল্লেখ এবং কলিকাতার নাম করে নিজের জন্মস্থানের পরিচয় দেওয়াটা বাংলা তথা কলকাতার ইতিহাসের দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

কৃষ্ণরাম জাতিতে কায়স্থ ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল— ভগবতী দাস। কৃষ্ণরামের সমস্ত রচনার মধ্যে ‘কমলামঙ্গল’ সবথেকে আগে লেখা হয়েছিল বলে গবেষকরা মনে করে থাকেন। তাঁদের এরকম ধারণার পিছনে দুটি কারণ দেখতে পাওয়া যায়।

প্রথমতঃ, কমলামঙ্গলে কৃষ্ণরামের কবিত্বশক্তির অল্পই নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়তঃ, কৃষ্ণরামের কাব্যের একটি বড় দোষ অশ্লীলতা হলেও, এই দোষ কিন্তু তাঁর গোড়ার দিকের রচনাগুলির তুলনায় পরবর্তীকালের রচনাতেই বেশি করে দেখা যায়; কমলামঙ্গলে আদৌ কোন অশ্লীলতা নেই।

এরপরে তিনি ‘কালিকামঙ্গল’ কাব্যটি রচনা করেছিলেন। এটি আয়তনে অত্যন্ত বৃহৎ। উক্ত কাব্যের রচনাকালবাচক শ্লোকটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে সংরক্ষিত থাকা ২৩৭৬ নং পুঁথিতে পাওয়া যায়, যেটি এরকম—
“সারসাসানের (সারসাসনের) নেত্র ভীমাক্ষিবর্জ্জিত মিত্র
তেজিয়া ঋষির পক্ষ তবে।
বিধুর মধুর ধাম রচনাতে কহিলাম
বুঝ সকল (শক) বিচারিয়া তবে॥”

অতীতে অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য উপরোক্ত হেঁয়ালিটির সমাধান করতে গিয়ে লিখেছিলেন—
“সারসাসন = পদ্মাসন অর্থাৎ ব্রহ্মা। তাঁহার চতুর্মুখে নেত্রসংখ্যা হইল ৮। মহাদেবের প্রসিদ্ধ নামাষ্টক মধ্যে একটি হইল ‘ভীম’। সুতরাং ভীমাক্ষি হইল ৩। আর মিত্র অর্থে দ্বাদশ সূর্য্য; ৩ বাদ দিয়া হইল ৯। ঋষির অর্থাৎ ৭ সংখ্যার পক্ষ অর্থাৎ ২ ত্যাগ করিলে পাওয়া যায় ৫ (বিধু = ১)। সুতরাং শকাঙ্কটি হইল ১৫৯৮ (অর্থাৎ ১৬৭৬-৭৭ খ্রীঃ)।” (সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা, ১৩৫০ বঙ্গাব্দ, পৃ- ৬৪)

পরবর্তী সময়ের অধিকাংশ গবেষকই দীনেশচন্দ্র সেনের উপরোক্ত ব্যাখ্যাকে সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য বলে অভিমত প্রকাশ করলেও, কিছু কিছু গবেষক তাঁর ব্যাখ্যাকে কষ্টকল্পিত বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণরামের কালিকামঙ্গল যে সত্যিই ১৫৯৮ শকাব্দেই রচিত হয়েছিল, পরবর্তীসময়ে ইতিহাসগতভাবে সেটার সাক্ষাৎ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। দীনেশচন্দ্র সেনের ব্যাখ্যার কিছু সময় পরে অক্ষয়কুমার কয়াল তৎকালীন ২৪ পরগণা জেলার মগরাহাট থানার পশ্চিম বেলিয়া গ্রামে কৃষ্ণরামের কালিকামঙ্গলের একটি প্রাচীন পুঁথির সন্ধান পেয়েছিলেন। সেটি ১১৬৬ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৭৫৯-৬০ খৃষ্টাব্দে লেখা হয়েছিল। সেই পুঁথিতে নিম্নলিখিত ছত্রগুলি দেখতে পাওয়া গিয়েছিল—
“সপ্তগ্রাম সরকার কলিকাতা নাম তার
পরগণা অনুপম ক্ষিতি।
সাবর্ণি চৌধুরী জায় সর্ব্বলোকে গুণ গায়
পশ্চিমে আপনি ভাগিরথী॥
বলে কবি কৃষ্ণরাম নিমিতা তাহার গ্রাম
জথা হৈল কালির মঙ্গল।
বসু নব বাণ ইন্দু সক এই গুণসিন্ধু
বিচারিয়া বুঝহ সকল॥”

গবেষকদের মতে কৃষ্ণরাম এখানে স্পষ্টভাবেই তাঁর কালিকামঙ্গলের রচনাকাল জানিয়ে লিখেছিলেন— “বসু নব বাণ ইন্দু সক” —অর্থাৎ— ১৫৯৮ শকাব্দ। এই রচনাকালবাচক শ্লোকটির অব্যবহিত আগেই কৃষ্ণরাম তৎকালীন ‘ক্ষিতিপাল’—‘অরং সাহা’, অর্থাৎ— ঔরঙ্গজেব এবং ‘নবাব সারিস্তা খাঁ’, অর্থাৎ— সুবেদার শায়েস্তা খানের নামোল্লেখ করেছিলেন বলে দেখা যায়। এপ্রসঙ্গে এটাও উল্লেখযোগ্য যে, ঔরঙ্গজেব সম্বন্ধে কৃষ্ণরাম লিখেছিলেন—
“রাম রাজা সর্ব্বজনে বলে।”

গবেষকদের মতে, কৃষ্ণরামের এই উক্তিটি থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, সমসাময়িক সব হিন্দুই ঔরংজেবকে অপছন্দ করতেন না।
কালিকামঙ্গল কাব্যের সূচনায় কৃষ্ণরাম বলেছিলেন যে, উক্ত গ্রন্থটি লেখবার সময়ে, অর্থাৎ— ১৫৯৮ শকাব্দে তাঁর বয়স ছিল কুড়ি বছর,—
“সেই গ্রাম মধ্যে বাস নাম ভগবতী দাস
কায়স্থকুলেতে উতপতি।
তাঁহার তনয় হই নিজ পরিচয় কই
বয়ঃক্রম বৎসর বিংশতি॥”

বাংলা বয়স গণনার রীতি অনুযায়ী কুড়ি বছর বয়স অর্থে জীবনের বিশতম বর্ষকে বোঝানো হয়ে থাকে। অতএব— কৃষ্ণরাম ১৫৭৯ শকাব্দে (১৬৫৭-৫৮ খৃষ্টাব্দে) জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে গবেষকরা মনে করে থাকেন; কারণ সেটা হলেই ১৫৯৮ শকাব্দে তাঁর জীবনের বিংশতম বর্ষ শুরু হতে পারে। অবশ্য তিনি ১৫৭৮ শকাব্দের (১৬৫৬-৫৭ খৃষ্টাব্দে) শেষ দিকেও জন্মগ্রহণ করে থাকতে পারেন; আর সেটা হলে তাঁর জীবনের বিংশতম বর্ষের শেষাংশ ১৫৯৮ শকাব্দের গোড়ার দিকে হওয়া সম্ভব। মোটের উপরে, ১৬৫৭ খৃষ্টাব্দে কৃষ্ণরামের জন্ম হয়েছিল বলে মনে করলে ভুল কিছু অনুমান করা হয় না। কৃষ্ণরামের ‘ষষ্ঠীমঙ্গল’ কাব্যের রচনাকাল ছিল—
“মহী শূন্য ঋতু চন্দ্র শক সংবৎসর”
অর্থাৎ— ১৬০১ শকাব্দ বা ১৬৭৯-৮০ খৃষ্টাব্দ।
এবং তাঁর ‘রায়মঙ্গল’ কাব্যের রচনাকাল ছিল—
“বসু শূন্য ঋতু চন্দ্র শকের বৎসর”
অর্থাৎ— ১৬০৮ শকাব্দ বা ১৬৮৬-৮৭ খৃষ্টাব্দ।

গবেষকদের মতে, রায়মঙ্গলই কৃষ্ণরামের রচিত শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। দক্ষিণ রায়ের কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি উক্ত কাব্যটি রচনা করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন; এবং সেই স্বপ্নাদেশ প্রাপ্তির স্থান ছিল— বড়িশা। গবেষকদের মতে, এই কাব্যটি শুধু যে একজন শক্তিশালী কবির হাতের রচনা— সেটা নয়, এর মধ্যে কবি সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় বাঘের দেবতা দক্ষিণ রায়কে যেভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সেযুগের সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত করে তুলেছিলেন— সেটার তুলনাও বিরল। কৃষ্ণরামের আগে মাধব আচার্য নামের একজন কবিও যে ‘রায়মঙ্গল’ লিখেছিলেন, সেকথা কৃষ্ণরামের রায়মঙ্গলের গ্রন্থোৎপত্তির বিবরণে দক্ষিণ রায়ের উক্তি থেকেই জানতে পারা যায়—
“পূর্ব্বে করিল গীত মাধব আচার্য্য।
না লাগে আমার মনে তাহে নাহি কার্য্য।”

এখনও পর্যন্ত গবেষকরা খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধের যে মাধব আচার্যের লেখা ‘কৃষ্ণমঙ্গল’, ‘চণ্ডীমঙ্গল’ ও ‘গঙ্গামঙ্গল’ কাব্যের সন্ধান পেয়েছেন, সেই তিনিই উক্ত ‘রায়মঙ্গল’ কাব্যটি রচনা করেছিলেন কিনা— সেকথা বলা সম্ভব নয়। কানা হরিদত্ত, মাণিক দত্ত, ময়ূরভট্ট ও রামাই পণ্ডিতের লেখা যথাক্রমে— মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, ধর্মপুরাণ প্রভৃতি ধারার প্রথম গ্রন্থগুলি যেমন এখন আর পাওয়া যায় না, তেমনি প্রথম রায়মঙ্গল কাব্যের কোন চিহ্নও বর্তমানে লুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলে দেখা যায়। কৃষ্ণরামের পরে— রুদ্রদেব ও হরিদেব —নামের দু’জন কবি রায়মঙ্গল রচনা করলেও তাঁদের রচনাগুলি তেমনভাবে সমাদৃত হয় নি। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এঁদের মধ্যে রুদ্রদেবের কাব্যের সম্পূর্ণ পুঁথির সন্ধান গবেষকরা পাননি; এমনকি ইতিহাস থেকে তাঁর সময়কালও জানা যায় না। অন্যদিকে হরিদেব খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বর্তমান ছিলেন বলে জানা যায়। অতীতে হরিদেবের নিজের হাতে লেখা রায়মঙ্গল যে সম্পূর্ণ পুঁথিটি পাওয়া গিয়েছিল, সেটার লিপিকাল ছিল— ১৬৫০ শকাব্দ বা ১৭২৮-২৯ খৃষ্টাব্দ। পরবর্তীসময়ে সেই পুঁথিটি ডঃ পঞ্চানন মণ্ডল কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল। বলা বাহুল্য যে, তাতে পুঁথিটির রচনাকালও দেওয়া ছিল। কিন্তু সেই প্রকাশিত গ্রন্থটি দেখবার পরেও (বা. সা. ই. ১। অ, ২য় সং, পৃঃ ৩০৮ দ্রঃ) ডঃ সুকুমার সেন তাঁর ‘বাঙ্গলা সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থের ২য় সংস্করণের ১ম অধ্যায়ের ৩০৮ নং পৃষ্ঠায় লিখেছিলেন—
“হরিদেব সম্ভবতঃ অষ্টাদশ শতাব্দের শেষে অথবা উনবিংশ শতাব্দের গোড়ায় বিদ্যমান ছিলেন।”

কৃষ্ণরামের ‘শীতলামঙ্গল’ কাব্যটি যে কবে রচিত হয়েছিল— সেকথা বলা সম্ভব না হলেও, সেটি যে রায়মঙ্গলের আগেই রচিত হয়েছিল, সেবিষয়ে গবেষকদের কোন সন্দেহ নেই। কাব্যটির একটি ভনিতা এরকম—
“রায়ের মঙ্গল কবি কৃষ্ণরামে গায়।
কেবা কি করিতে পারে শীতলা সহায়॥”

এখানে যে— ‘রায়ের মঙ্গল’ —কবি গেয়েছিলেন, তিনি দক্ষিণ রায় নন, শীতলা দেবীর পুত্র বসন্ত রায় (অর্থাৎ— বসন্ত রোগ) ছিলেন।
এছাড়া উপরোক্ত ভনিতার ঠিক আগেই কবি লিখেছিলেন—
“ভাবিএ বসন্ত রায় চরণকমল।
শীতলায় ডাকে সাধু কাঁদিতে কাঁদিতে।
কাছে কর্ণধার বুক না পারে বাঁধিতে॥”
(কবি কৃষ্ণরাম দাসের গ্রন্থাবলী, ডঃ সত্যনারায়ণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃ- ২৭৬)

এথেকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা যায় যে, কবি তখনও পর্যন্ত তাঁর রায়মঙ্গল কাব্যটি রচনা করেন নি, অথবা রচনা করবার কথা চিন্তা করেন নি। কারণ— এর আগে রায়মঙ্গল রচিত অথবা পরিকল্পিত হলে শীতলামঙ্গলের একটি অংশকে ‘রায়ের মঙ্গল’ বলে কবি কখনই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতেন না। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত শীতলামঙ্গলের ভনিতাটি অতীতের কোন কোন গবেষককে বিভ্রান্ত করেছিল। তাঁরা মনে করেছিলেন যে, কৃষ্ণরামের শীতলামঙ্গল কাব্যটি আসলে রায়মঙ্গল কাব্যেরই অংশ বা পরিশিষ্ট হিসেবে রচিত হয়েছিল। কিন্তু, বর্তমান সময়ের গবেষকদের মতে শীতলামঙ্গলের সঙ্গে রায়মঙ্গলের বিষয়বস্তুর দিক থেকে কোন যোগ দেখতে পাওয়া যায় না। সুতরাং— এটি রায়মঙ্গলের অংশ বা পরিশিষ্ট হতে পারে না, কৃষ্ণরামের শীতলামঙ্গল একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন কাব্য।

কিছুকাল আগেও কৃষ্ণরাম দাসের লেখা ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের অস্তিত্ব সকলের কাছে অজ্ঞাত ছিল। গবেষক অক্ষয়কুমার কয়াল সর্বপ্রথম এই কাব্যটির একটি খণ্ডিত পুঁথি আবিষ্কার করে ১৩৭৮ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যার ‘সমকালীন’ পত্রিকার ৪৩৩-৩৭ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন। চণ্ডীমঙ্গলে কৃষ্ণরাম দাস লিখেছিলেন—
“কালীর পাঁচালী আদি রচিনু সকল।
অধিক যতনে এই চণ্ডীর মঙ্গল॥”

এথেকে বোঝা যায় যে, কালিকামঙ্গল এবং আরও কয়েকটি গ্রন্থ লেখবার পরে কৃষ্ণরাম চণ্ডীমঙ্গল গ্রন্থটি লিখেছিলেন, এবং এটিই সম্ভবতঃ তাঁর রচিত সর্বশেষ গ্রন্থ ছিল।#

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!