কল্পনা চাকমা স্মরণে

কল্পনা চাকমা কি শুধু যুবতী ছিল?
নাকি ছিল এক পাহাড়ের আত্মার গান—
যার প্রতিটি সুরে ছিল স্বাধীনতার বর্ণ।

যখন তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল
তখন সবাই ছিল সভ্যতার মুখোশে
মোড়া গভীর ঘুমে অচেতন।

শুনশান ১২ই জুন ১৯৯৬
নিঃশব্দে গিলেছিল এক প্রতিবাদী কণ্ঠ—
নাম তার কল্পনা, কল্পনার থেকেও অস্পষ্ট
দৃশ্যের মতো হারিয়ে গেল সে।

তাঁবুর নিচে রাষ্ট্রের পোশাক,
হাতের স্পর্শ হয়ে ওঠে আইন।
উচ্চকণ্ঠে জেরা, নিপীড়ন,
প্রশ্নে প্রশ্নে ধেয়ে আসা হিংসা!
তাকে বলা হলো ‘বিদ্রোহী’—
কারণ সে আদিবাসী, নারী, গরিব, সংখ্যালঘু
—সবচেয়ে সহজ শিকার।

কেউ বলে, “এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।”
কেউ বলে, “প্রমাণ কোথায়?”
কেউ বলে, “দেশদ্রোহিতা ছড়িও না!”
—আর আমরা দেখি,
একটি মেয়ের ক্ষত জাতির মানচিত্রে ছাপ রেখে যাচ্ছে।

সে ফেরেনি আর, কখনও কোনও উৎসবে,
ফিরতে পারেনি মাঠে, বাড়িতে, ঝর্ণায়, জুমচাষে,
কিংবা ছড়ায় ফুলে ফুলে ভরা দুপুরে।
মায়ের কোল ফাঁকা, আর স্বদেশ অদ্ভুত চুপ!

তাকে পায় না কেউ, তার অভাব থেকে জন্ম হয়
আরেক অন্ধকার সভ্যতার–
যেখানে প্রশ্ন করা অপরাধ।
আর উত্তর?
উত্তর এখন তার অস্তিত্বহীন কবরের নিচে চাপা!

তবু আমরা লিখি।
আমরা লিখি– কারণ শব্দই এখন অস্ত্র,
আর নিরবতা— সর্বোচ্চ অপরাধ!

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!