মাটির গান গাইতে গাইতে নোনাজলে ভেসে বেড়ায় মদন, ছমির মিঞারা। প্রকৃতি কাড়ে তাদের সুখ- স্বপ্ন- আশা- ভরসা। নোনাস্রোতে ভাঙনের সাক্ষী হয় রোজ রোজ। রাত নামলে ছমিরের চোখে ভাসে মেয়ে গোলাপির মুখ। শোনে বিবির অসহায় কান্না।কালক্রমে বাঁজা হারামনি শোনে নারী জীবনের কাঙ্খিত মা ডাক। নোনা জল শোনায় নিখোঁজ হওয়া মানুষের গল্প। আখ্যান জড়িয়ে বাঁচে বিপন্ন লোকসংস্কৃতি, অলৌকিক বিশ্বাস, গ্রাম্য নরনারীর প্রেম, অকাল শোক। ‘নোনা মাটির নোলক’ বস্তুত সমাজ, লোকসংস্কার ও রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ বিভাজনের দৃশ্যলিখন, ভাঙনের গান।
শেষ পর্ব
ভোঁটের এজাল হওয়ার পরে সুদু মারা মারি
দাঙ্গা নাগে একেন সেকেন অক্তে ছোড়াছোড়ি
এদল মারে ও দল মারে জেতে শেষে জেদ
ভাঙা ঘরে ভাঙা দোরে অয়ে যায় সে খেদ।
ঢেউয়ে দোলে আতিদিনি নৌকোর কালো গা
ভেসে যাচ্চে কতো নাশের কাটা মুন্ডু পা
ফায়দা নোটে কতোক নোকে তারা থাকে ভালো
হিংসা পোকা মনের ভোতর আঁদার ঘন কালো।
তেইকে দেকি আঙরা খেকো পাটির ঝেতো নোক
এদিক সেদিক যাচ্চে ছুটে, দুচোখ ভোরা শোক
জমির বলল আঙ্গার পাটির দেয় নে ঝারা ভোঁট
ফোন্দি করে পার পাবেনে খেয়চে গোচা নোট।
কতো নোকে পেইলে যাচ্চে কতোক পাড়া ছাড়া
নুট হবে আজ মাঝআত্তিরি বলতে ছ্যেলো হারা!
কাদামাটির খোঁচে খোঁচে নেগে আচে দাগ
নদীর চরায় আজার হালে অক্তখেকো বাগ।
আঙ্গার পাটি জিতে গেচে ছাড়বুনি আর কারো
ওরা ফেললি এট্টা নাশের আমরা বারো তেরো
থাকতি দোবো শান্তিতে কি জ্বেইলে দোবো বাড়ি
দেগবুনি মোটে আপন পর উটলি আগটা চাঁড়ি।
দুলাল বলে নদীর চরায় আঙ্গার আচে হক
বাপ ঠাগদারা নোড়াই করে দেইকে গেচে ধক
দাঙ্গা নাগলি মরে মানুষ মার কোল হয় খালি
গামচা, নাঙলে অক্তের দাগ জমির আলি আলি।
দাঙ্গা হচ্চে দুকুর থেকে একোন আত্তির ব্যেলা
ভাবদেচে নোক অন্দোকারে কোমবে মনের জ্বালা
অন্দোকারে আতের ব্যেলায় চৌদিক বোমাবাজি
এদিক ওদিক নাগাচ্চে ছুট নস্কোর, সোদ্দার, গাজী।
ঘর জ্বলতেচে দাউদাউ করে ভোরা চিতার মোতো
ওগের ঘোরে শুয়ে আচে বাপটা থাকলি যেতো
জল আনতিগে বিকেল ব্যেলায় গেচে আটকা পড়ে
ছানি একোন এগলা ঘরে দেনা বাপ পার করে।
বোমার আগুন আস্তায় আস্তায় বাইরি যাওয়া দায়
ভেবে চিন্তে নাব নি কোনো নি কোনো কি উপায়?
ছাবাল ফেলে পরের বাড়ি ভালো থাকতি পারি!
এগলা ঘরে আচে ছানি হচ্চে এগে হাঁড়ি।
সোমোয় ঝেন কাটতি চায় না বাজে না আর ঘড়ি
ঝুঝগো ব্যেলায় বেইরে পড়ে এগলা তড়িঘড়ি
পোড়া গন্দে আগাশ মাটি ব্যেতায় টল মল
চোতুরদিকি শোকের ছায়া চোকির কোণায় জল।
ঘরের কাচে এসে দেকে দেঁইড়ে কতো নোক
পুলুশ এসে ঘরে ঢোকে আঙরা খেকো চোক
ভীড়ির মদ্দি চেঁইচে ওটে আঙ্গার চোকির মনি
ফাঁকি দে তুই গেলি চলে ঝরে চোকির পানি।
হায়রে আল্লা কি হলো যে বল না তোরা আজ
সোংসার পুড়ে ছাই হলোরে পড়ল মাতায় বাজ।
পড়ে আচে নদীর চড়ায় ঝেরোম পড়ে ছ্যেলো
চেঁইচে ওটে হারামণি আজ আঙ্গার কি হলো।
দুকের গাঙে বানভাসি ঢেউ করলি আমার পর
তোর কিনারে সুকি দুকি থাকবো জেবন ভোর
নদীর চরে বাতাস কাঁদে পড়ে ঝেকোন মনে
ছমির মিঞা নৌকো চালায় আতের তারা গোনে।
(সমাপ্ত)