গীতিকাব্য: নোনা মাটির নোলক (পর্ব- ৫)

মাটির গান গাইতে গাইতে নোনাজলে ভেসে বেড়ায় মদন, ছমির মিঞারা। প্রকৃতি কাড়ে তাদের সুখ- স্বপ্ন- আশা- ভরসা। নোনাস্রোতে ভাঙনের সাক্ষী হয় রোজ রোজ। রাত নামলে ছমিরের চোখে ভাসে মেয়ে গোলাপির মুখ। শোনে বিবির অসহায় কান্না।কালক্রমে বাঁজা হারামনি শোনে নারী জীবনের কাঙ্খিত মা ডাক। নোনা জল শোনায় নিখোঁজ হওয়া মানুষের গল্প। আখ্যান জড়িয়ে বাঁচে বিপন্ন লোকসংস্কৃতি, অলৌকিক বিশ্বাস, গ্রাম্য নরনারীর প্রেম, অকাল শোক। ‘নোনা মাটির নোলক’ বস্তুত সমাজ, লোকসংস্কার ও রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে গ্রামীণ বিভাজনের দৃশ্যলিখন, ভাঙনের গান।

পঞ্চম পর্ব

ম্যেসিনভ্যেনে মাইপ বাঁদা ঢুকলি গানের নোকজন
গেরাম ভেঙে কচি কাচা যাচ্চে পেচোন পেচোন
কাটের ওবোর নেকা আচে মনসা গানের পালা
ওদের আবার দল মেনেজার কানে এট্টু কালা।

কোনো কোতা বলতি গেলি বেইড়ে দেয় সে খাতা
ভালো মন্দো ঝা নেকো না দেঁইড়ে চোকির পাতা
বউটা বেজায় পোচাল পাড়ে বুলে ব্যেড়ায় পাড়া
কানে আবার ঝুমকো দোলে কাটে জমির নাড়া।

কাবলের বেটা নোখাই সাজে মনসা পালা গানে
মাতায়তেনে টাকপোকা তার ওষুদ আনে ফোনে
ঘরে আচে বেধোবা মা সেয়না এট্টা বোন
কটা টাকায় পেট চলবে কি ভাবে সব্বোক্ষণ!

বোনটা এ্যাকোন বিড়ি পাকায় সুতো বাঁদা জেবন
পোড়া কোপাল নদীর মতো দুকির আঁকন বাঁকন
বড্ডার নাকি বয়োস বারো ছোট্টার বয়োস তিন
বাপ গেলোরে তাগার ছেড়ে দুঃক্কে কাটে দিন।

একেন সেকেন সোকাল সোন্দে ছোটে গানের দল
কষ্টো বেঁদে ঘুরে ব্যেড়ায় শিল্পীর চোকি জল
ঝারা শুদু আতের ব্যেলায় অঙিন সাজে সাজে
তাগার জেবোন অন্দোকারে ব্যেতায় ব্যেতায় বাজে।

দুঃকের বেটা মনসা সাজে পেন করে দেয় কালি
মেয়ে নোসকা বলতো সোবাই নাম তার বনোমালি
কানেতেনে মাগড়ি ঝোলে ধাইমার থেকে পোরা
পোতোম ছাবাল মরলি নাকি ফোঁটায় নাক-কান ওরা।

চুল একেচে বড়ো সড়ো দেকলি হাসি নাগে
হে রে বুনো বে করবি নি বলদেন আগে ভাগে
পোড়া কোপাল জুটবে কি আর বৌগার হাতের ভাত!
ও সপ কোতা বাদ দেদেন তুই যাচ্চে হয়ে আত।

সোম্বচ্চোরে বাইরি বাইরি পায় না ভালো খেতি
চালির পায়েস আচে এট্টু দেনা ও মা নুতি
দশোহারা গোঙ্গা পুজোয় থাকবি কি তুই ঘরে
নারে নুতি গান আচেরে পুব গাঙের ওপারে।

মাটার এ্যাকোন বয়োস আশি কদিন বল আর আচে
বৌদি এট্টা ঘরে আন না দেকে জেবোন বাঁচে
ঝাঁকড়া মতোন সবদা গাচটা বড়পুকুরির পাড়ে
ছোটোব্যেলায় আব্দুল আব্দুল মনে স্মিতি নাড়ে।

গাচের ডালে হতো কতো অঙির মিটে ফল
পাকি বসে ঠুকরে খেতো ডুবে খেতো জল
পোইরে দেচে গাচের গায়ে আলতা পেড়ে শাড়ি
গাচের গোড়ায় নুট ছোড়ালি ছাবাল কাঁড়ি কাঁড়ি।

ওদ পড়েচে নোম্বা ছাওয়ায় ওটোনের একধারে
মেগ জমেচে পুব আগাশে বিষ্টির হাওয়া বাড়ে
তোলপিতোলপা পোশাকআশাক গুইচে নিচি খোকা
চোকিতে মার ছানি পড়া পায় না ভালো দ্যেকা।

ও ছানি তুই জানা এট্টু পেঁইপা কেটে দে না
কি খাবে আর থাকবে কোতায় হোবানি আর শোনা
দুরি থেকে আসলো ভেসে কিসির আবাজ জোরে
নৌকো পুজো নদীর পাড়ে ভক্তি ঝোরে পড়ে।

কদিন ধোরে মাকে না তেল দেয় না সিঁদুর সিতে
চোকির জলে কাটে ব্যেলা পড়ে অঙিন ফিতে
বাড়ির নোকে চেয়ে থাকে দুরে পথেরতোন
বুকির ভোতর ভাঙে নদী আসবে সে ককোন!

বোনও কাঁদে ব্যেতায় বেত্যায় গভীর হলি আত
সব্বো শরীর নে যায় কেটে নোভী মানষির জাত
নদী কাঁদে ঢেউয়ে ঢেউয়ে মাটির চোকি জল
নদী বোনের দুক্কু ব্যেতার পার পাবে নে তল!

নোনা মেগে আঁদার ব্যেতা নাকে ঝোলে নত
মদু ভাঙাতি কাঙড়া ধোত্তি ধরে বোনের পত
বোনের মদ্দি ঢোকে সোবাই বিপদ সোঙ্গে করে
নোড়াই করে মেয়ে মদ্দো সারা জেবন ধোরে।

বোনে নেবে মাটি পড়ে পেচোন পেচোন নোক
মনে মনে ভাবে কোতায় হলদে বাগের চোক।
যাচ্চে সোবাই দলে দলে বাঁচে বলদেন কজন!
নোড়াই করে বাঁচামোরা গাঙধারীগার জেবন।

চলবে…

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!