বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে বাংলায় হয়ে যাওয়া ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের বীভৎসতার কথা জানতে পারা যায়। ১১৭৬ বঙ্গাব্দে হওয়া সেই ভয়ানক দুর্ভিক্ষে বাংলার গ্রামগুলির শ্মশান হয়ে যাওয়ার কাহিনী মর্মন্তুদ ভাষায় বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন—
“রাজপথে লোখ দেখি না, সরোবরে স্নাতক দেখি না, গৃহদ্বারে মনুষ্য দেখি না, বৃক্ষে পক্ষী দেখি না, গোচারণে গোরু দেখি না, কেবল শ্মশানে শৃগাল-কুকুর।”
একটি বৃহৎ অট্টালিকার ঘরের মধ্যে অন্ধকারে— “এক দম্পত্তি বসিয়া ভাবিতেছে। তাঁহাদের সম্মুখে মন্বন্তর।”
“… লোকে প্রথমে ভিক্ষা করিতে আরম্ভ করিল, তারপরে কে ভিক্ষা দেয়! —উপবাস করিতে আরম্ভ করিল। তারপরে রোগাক্রান্ত হইতে লাগিল। গোরু বেচিল, লাঙ্গল জোয়াল বেচিল, বীজধান খাইয়া ফেলিল, ঘরবাড়ি বেচিল, জোত জমা বেচিল। তারপর মেয়ে বেচিতে আরম্ভ করিল। তারপর ছেলে বেচিতে আরম্ভ করিল। তারপর স্ত্রী বেচিতে আরম্ভ করিল। তারপর মেয়ে, ছেলে, স্ত্রী কে কিনে? খরিদ্দার নাই, সকলেই বেচিতে চায়। খাদ্যাভাবে গাছের পাতা খাইতে লাগিল, ঘাস খাইতে আরম্ভ করিল, আগাছা খাইতে লাগিল। ইতর ও বন্যেরা কুকুর, ইন্দুর, বিড়াল খাইতে লাগিল। অনেকে পলাইল, যাঁহারা পলাইল, তাঁহারা বিদেশে গিয়া অনাহারে মরিল। যাঁহারা পলাইল না, তাঁহারা অখাদ্য খাইয়া, না খাইয়া, রোগে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিতে লাগিল।”
কিন্তু— ইংল্যাণ্ডের রানীর শাসনে থাকা বাংলায় হওয়া পঞ্চাশের মন্বন্তর ছিয়াত্তরের মন্বন্তরকেও বহুগুণে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন—
“সে-ইতিহাস একটা দেশ শ্মশান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস, ঘরভাঙা গ্রাম ছাড়ার ইতিহাস, দোরে দোরে কান্না আর পথে পথে মৃত্যুর ইতিহাস, আমাদের অক্ষমতার ইতিহাস।”
ভারতবর্ষের জাতীয় জীবনে তখন এক বিরাট সংকট দেখা দিয়েছিল। দেশের দোরগোড়ায় তখন জাপানী আক্রমণ কড়া নাড়ছিল, অন্যদিকে দেশের ভেতরে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন চলছিল; ইংরেজদের ‘ভারত ছাড়ো’ হুমকি দিয়ে কংগ্রেসের নেতারা তখন কারারুদ্ধ হয়েছিলেন; তারপরে একদিকে চলেছিল আগস্ট আন্দোলন এবং অন্যদিকে ছিল দুর্ভিক্ষ মন্বন্তরের অভিশাপে অভিশপ্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের করুণ আর্তনাদ। কমিউনিস্ট পার্টি তখন বাংলার জাতীয় আন্দোলনের পুরোভাগে অবস্থান করছিল। ফলে অন্যান্য দলীয় কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে অন্ধ কমিউনিস্ট বিরোধিতায় সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। সেই সময়ে একদিকে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের উত্তেজনা এবং অন্যদিকে যুদ্ধ ও মন্বন্তরে পীড়িত মানবিকতার প্রতি কর্তব্যবোধ তৎকালীন সচেতন তরুণদের নাড়া না দিয়ে পারেনি। সমকালীন রাজনীতিটা তাঁদের কাছে প্রত্যক্ষরূপে ধরা দিয়েছিল। সেই জনযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষীয় প্রচারের মধ্যে তাঁদের নিজেদের পথ বেছে নিতে কোন অসুবিধা হয়নি। তাঁদের রাজনীতি করাটা তখন একটি সম্পূর্ণ জীবনবোধ এবং আচরণের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময়ে কমিউনিস্ট কর্মীরা যেমন জাপবিরোধী প্রচারে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন, অন্যদিকে তেমনি তাঁরা আর্ত মানুষের সেবায় এবং সাহায্যে লঙ্গরখানায় ও রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে অমানুষিক পরিশ্রমও করতে শুরু করেছিলেন। একইসঙ্গে তখন থেকেই কমিউনিস্ট পার্টি তাদের সাংস্কৃতিক শাখাকে দিকে দিকে উজ্জীবিত করে তুলেছিল। সেই সময়কার শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, কিশোর, লেখক, শিল্পী— প্রত্যেকের মধ্যেই কমিউনিস্ট পার্টি সেদিন একটি নতুন জাগরণেব সৃষ্টি করতে পেরেছিল। ওই সময়টা নিয়ে অবন্তী সান্যাল লিখেছিলেন—
“কিশোর সুকান্ত এই রাজনীতির অংশীদার হয়েছিল, সে সোজাসুজি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিল। এই রাজনীতির প্রেরণায় একেবারে গোড়া থেকেই সে ছিল সর্বক্ষণের কর্মী এবং তাঁর কর্ম ছিল তাঁর কবিত্বের পরিপূরক। রেশনের লাইনের তিক্ত অভিসম্পাতে লঙ্গরখানার করুণ কোলাহলে, মিছিলের উল্লাসে-চিৎকারে যে-ক্ষোভ যে-বেদনা যে-আশা যে-উদ্দীপনা, তাকে কেমন করে ভাষা দিতে পারা যায়? সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে অতি-প্রত্যক্ষ এই ক্ষোভ-বেদনা-আশা-উদ্দীপনাকে কোন তির্যক বক্রভাষণে প্রকাশ করা সম্ভব? অনুভব যেখানে স্পষ্ট প্রত্যক্ষ ও তীক্ষ্ণ ভাষাকে সেখানে অবশ্যই স্পষ্ট ও তীক্ষ্ণ হতে হবে।” (সুকান্ত স্মৃতি, অবন্তী সান্যাল)
তাই স্বাভাবিকভাবেই সুকান্তের ভাষা স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছিল। তিনি ভালো করেই জানতেন যে, কোন ধরণের তির্যকতা দিয়ে সেই ভাষাকে অতটা জীবন্ত করে তোলা যাবে না। যাঁদের কথা তাঁরা যেমন করে বলতে চায়— তেমন করেই লিখতে হবে; এবং যাঁদের জন্য সেই বলা— তাঁরা যেমন করে বোঝেন তেমন করেই বলতে হবে। কিন্তু সেই প্রত্যক্ষ অনুভবকে প্রত্যক্ষ ভাষায় প্রকাশ করতে গিয়ে সুকান্তর পক্ষে পূর্ববর্তী কোন কাব্য-সংস্কার বা কোন কাব্য-শর্তকে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। যদিও সেগুলো তাঁর পক্ষে আশীর্বাদ হয়েই দেখা দিয়েছিল। অবন্তী সান্যাল লিখেছিলেন—
“প্রত্যক্ষ ভাষার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে সুকান্ত এমন কিছু লাইন লিখে ফেলেছিল যা সত্যিই অবাক করা। … সুকান্তর কবিতায় শ্লোগান আছে, তার কারণ কিশোর সুকান্ত দেওয়ালে দেওয়ালে শ্লোগান লিখতো; মিছিলে মিছিলে শ্লোগান দিতো। কিন্তু সুকান্তর কলমেই সর্বপ্রথম খাঁটি শ্লোগান খাঁটি কবিতা হয়ে উঠেছিল। একমাত্র সুকান্তর কবিতা থেকে এমন প্রচুর শ্লেগান জড়ো করা যায় যা দিয়ে একটা পুরো মিছিলকে সাজানো চলে আর সে শ্লোগানগুলির বেশিরভাগ অব্যর্থ বলেই কবিতা অথবা কবিতা বলেই অব্যর্থ। শ্লোগান লিখতে গিয়েই সুকান্ত লিখেছে এমন আশ্চর্য লাইনটি:
‘রক্তে আনো লাল
রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনো ফুটন্ত সকাল।’
(বিবৃতি)
সুকান্তর মানসিকতায় রাজনীতি ও কবিতায় কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। সমকালের রাজনীতির ছোট বড় সকল কিছুই তার প্রেরণার বিষয় ছিল। আজকের দিনের রাজনীতি-সচেতন তরুণদের পক্ষে সেই সাময়িকতার প্রসঙ্গ অনুধাবন করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন। (সুকান্ত স্মৃতি, অবন্তী সান্যাল) এবং এই কাজটি কঠিন ছিল বলেই তাঁরা কেউই সুকান্ত, রমেশ শীল, নিবারণ চক্রবর্তী প্রমুখের যথার্থ উত্তর সাধক হতে পারেননি।
উপরোক্ত কবিরা তৎকালীন রাজনীতি এবং জনশক্তির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে পেরেছিলেন বলেই এখনও জনমনে তাঁরা একটা বিরাট জায়গা অধিকার করে রেখেছেন। বর্তমান সময়ে কলকাতা থেকে নিউইয়র্ক— এই বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে অবিরাম মনোবিহারী কবিদের কাছে সুকান্ত রাজনীতির জন্যই সীমাবদ্ধ কবি বলে মনে হলেও একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, সুকান্তর মত জনপ্রিয়তা আধুনিক কোন বিদগ্ধ বা পুরস্কৃত কবিও লাভ করতে পারেননি বা ভবিষ্যতেও হয়ত পারবেন না। পঞ্চাশের মন্বন্তরে বিপর্যস্ত জনজীবন সেযুগের আধুনিক কবিদের মনেও নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। ১৩৫০ বঙ্গাব্দ সুকান্ত ভট্টাচার্য সমকালীন আঠারো জন কবির লেখা ‘আকাল’ সম্বন্ধীয় কবিতার একটি সংকলন সম্পাদনা করেছিলেন। সেই সংকলনটি উল্টেপাল্টে দেখলেই সুকান্তর চিন্তা, প্রকাশ ও প্রেরণার সঙ্গে অন্যান্যদের পার্থক্যগুলি ধরা পড়ে। ঐ সম্পাদনার ‘কথা-মুখ’ অংশে সুকান্ত যে প্রশ্নগুলো তুলেছিলেন সেগুলো এরকম ছিল—
“বাংলাদেশের আধুনিক কবিরা কি চিত্তে ও চিন্তায়, ধ্যানে ও জ্ঞানে, প্রকাশ ও প্রেরণায় জনসাধারণের অভাব-অনাহার পীড়া-পীড়ন আর মৃত্যু-মন্বন্তরকে প্রবলভাবে উপলব্ধি করেন? তাঁরা কি নিজেকে মনে করেন দুর্গত জনের মুখপাত্র? তাদের অনুক্ত ভাষাকে কি করেন নিজের ভাষায় ভাষান্তরিত? এক কথায় তাঁরা কি জনমনের কবি?”
এই জাতীয় প্রশ্ন করা তাঁকেই সাজে যিনি তাঁর কাব্যজীবনকে এইসব প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে দিতেই ব্যয়িত করেছিলেন। যিনি অনায়াসে বলতে পেরেছিলেন—
“আমি এক দুর্ভিক্ষের কবি,
প্রত্যহ দুঃস্বপ্ন দেখি, মৃত্যুর সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।
আমার বসন্ত কাটে খাদ্যের সারিতে প্রতীক্ষায়,
আমার বিনিদ্র রাতে সতর্ক সাইরেন ডেকে যায়,
আমার রোমাঞ্চ লাগে অযথা নিষ্ঠুর রক্তপাতে,
আমার বিস্ময় জাগে নিষ্ঠুর শৃঙ্খল দুই হাতে।”
(রবীন্দ্রনাথের প্রতি)
কবির বিস্ময় আরো গভীর হয়েছিল যখন তিনি দেখেছিলেন— “সোনার দেশে অবশেষে মন্বন্তর নামে।” তখন প্রতিদিন তিনি রাস্তায় রাস্তায় আহার্যের অন্বেষণে নগ্ন সমারোহ দেখতে পেয়ে লিখেছিলেন—
“বুভুক্ষা বেঁধেছে বাসা পথের দু’পাশে,
প্রত্যহ বিষাক্ত বায়ু ইতস্তত ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাসে।
পথে পথে দলে দলে কঙ্কালের শোভাযাত্রা চলে,
দুর্ভিক্ষ গুঞ্জন তোলে আতঙ্কিত অন্দরমহলে।
দুয়ারে দুয়ারে ব্যগ্র উপবাসী প্রত্যাশীর দল,
নিষ্ফল প্রার্থনা-ক্লান্ত, তীব্র ক্ষুধা অন্তিম সম্বল;
রাজপথে মৃতদেহ উগ্র দিবালোকে,
বিস্ময় নিক্ষেপ করে অনভ্যস্ত চোখে।”
(বিবৃতি)
তখন একদিকে যেমন— ‘পথে পথে চলে কঙ্কালের শোভাযাত্রা’ চলছিল, অন্যদিকে তেমনি বিদেশী হিংস্র শত্রুর আক্রমণ আর দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে দেশপ্রেমিকের মৃত্যু ঘটেছিল। তবুও সেসব দেখে কবির চিত্ত নৈরাশ্যে ম্রিয়মাণ হয়ে যায়নি, সেই সময়কার নিরন্ন দেশেও তিনি উদ্ধত বিদ্রোহ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, সেই ক্ষুধার আগুনের মধ্যে দিয়েই রক্তাক্ত সূর্যোদয় সম্ভব। তখন সেই ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিল এবং কাতারে কাতারে মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন জেগে উঠেছিল। তাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, সেই বিরাট ধ্বংসের পেছনে একটি ক্ষয়িষ্ণু সমাজব্যবস্থার শবযাত্রা রয়েছে। এসবের ফলে সেকালের সচেতন মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সময়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জনমনে নবজীবনের যে ব্যাকুল প্রত্যাশা জেগে উঠেছিল, সেটার পদধ্বনি কবি শুনতে পেয়েছিলেন। তাই তিনি সংগ্রামী মানুষের কণ্ঠে ভাষা দিয়ে বলেছিলেন—
“রক্তে আনো লাল,
রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনো ফুটন্ত সকাল।
উদ্ধত প্রাণের বেগে উন্মুখর আমার এ দেশ,
আমার বিধস্ত প্রাণে দৃঢ়তার এসেছে নির্দেশ।
আজকে মজুর ভাই দেশময় তুচ্ছ করে প্রাণ,
কারখানায় কারখানায় তোলে ঐকতান।
অভুক্ত কৃষক আজ সূচীমুখ লাঙলের মুখে
নির্ভয়ে রচনা করে জঙ্গী কাব্য এ মাটির বুকে।
নিরন্ন আমার দেশে আজ তাই উদ্ধত জেহাদ,
টলোমলো এ দুর্দিন, থরোথরো জীর্ণ বনিয়াদ।
তাইতো রক্তের স্রোতে শুনি পদধ্বনি
বিক্ষুব্ধ টাইফুন-মত্ত চঞ্চল ধমনী:”
(বিবৃতি)
পৃথিবীর আদালতের পরোয়ানা নিয়ে তিনি ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করেছিলেন— “কেন মৃত্যুকীর্ণ শবে ভরলো পঞ্চাশ সাল?” তাঁর এই প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে ছিল; তাঁদের বিবেক ও ঐতিহ্যের কাছে ছিল। আত্মঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলেন বলেই তখনও পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে কোন ধরণের লৌহদৃঢ় সংহতি গড়ে ওঠেনি। চাল-চিনি, কয়লা-কেরোসিনের মত মুক্তির জন্যও তখন তাঁদের আরো বড়, আরো সংহত ও অবিচ্ছিন্ন লাইন দিতে হয়েছিল—
“একদা দুর্ভিক্ষ এল
ক্ষুধার ক্ষমাহীন তাড়নায়
পাশাপশি ঘেঁষাঘেঁষি সবাই দাঁড়ালে একই লাইনে
ইতর-ভদ্র, হিন্দু আর মুসলমান
একই বাতাসে নিলে নিঃশ্বাস।
চাল, চিনি, কয়লা, কেরোসিন?
এ সব দুষ্প্রাপ্য জিনিসের জন্য চাই লাইন।
কিন্তু বুঝলে না মুক্তিও দুর্লভ আর দুর্মূল্য,
তারো জন্যে চাই চল্লিশ কোটির দীর্ঘ, অবিচ্ছিন্ন এক লাইন।”
(ঐতিহাসিক)
কবির দৃষ্টিতে কোন অস্বচ্ছতা ছিল না, কোন দিকে কোন ভ্রান্তি ছিল না। সেই কারণেই তিনি বলতে পেরেছিলেন—
“আমার সম্মুখে আজ এক শত্রু: এক লাল পথ,
শত্রুর আঘাত আর বুভুক্ষায় উদ্দীপ্ত শপথ।”
(শত্রু এক)
সমকালীনতায় এই শপথের শেষ হয়নি। যতদিন পৃথিবীতে ক্ষুধার্ত মানুষেরা থাকবেন আর মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখবার অপকৌশল থাকবে— ততদিন কবি সুকান্তের এসব বাণী ক্লাসিক হয়ে থাকবে। এমনভাবেই তাঁর ‘বোধন’ কবিতাটিও ক্লাসিক হয়ে থাকবে। রৌদ্ররসের এই কবিতায় ক্রোধই স্থায়ীভাব পেয়েছে। পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় রচিত এই কবিতায় তখনকার মজুতদার, মুনাফাখোর আব শাসকশক্তির প্রতি দারুণ ক্রোধ আর একইসঙ্গে জনগণের প্রতিশোধ কামনা ও সংগ্রামস্পৃহা, এবং অন্যায়কারী আর প্রবঞ্চকের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা আর আগ্নেয় বিদ্রোহ দেখতে পাওয়া যায়। তখন যাঁরা অন্যায়কারী ছিলেন, যাঁরা সেদিন গ্রাম-বাংলাকে মহাশ্মশানে পরিণত করে দিয়েছিল আর যাঁরা নীরবে সেইসব অন্যায়কে সহ্য করেছিলেন— তাঁরা সবাই ওই সর্বনাশের জন্য সমানভাবে দায়ী ছিলেন। সেইসব অন্যায়কারীর প্রতি সহনশীলতায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন—
“ধূর্ত, প্রবঞ্চক যারা কেড়েছে মুখের শেষ গ্রাস
তাদের করেছ ক্ষমা, ডেকেছ নিজের সর্বনাশ।”
(বোধন)
অন্যায়কে সহ্য করলে অন্যায়কারীর শক্তিবৃদ্ধিতে সাহায্য করা হয়। একথা যাঁরা বোঝেন না, তাঁদের ঘুম কখনও ভাঙবার নয়। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না জানানোই হল অন্যায়। কবি সুকান্ত জীবন সচেতন, সমাজ সচেতন ও বাস্তব সচেতন ছিলেন। অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ তাঁর কাছে স্পষ্ট ছিল। তাই তিনি কোন ভুল করেননি। বরং সকলের হয়ে তিনিই অন্যায়কারীর প্রতি এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন—
“শোন রে মালিক, শোন রে মজুতদার।
তোদের প্রাসাদে জমা হল কত মৃত মানুষের হাড়—
হিসাব কি দিবি তার?
প্রিয়াকে আমার কেড়েছিস তোরা,
ভেঙেছিস ঘরবাড়ি,
সে কথা কি আমি জীবনে মরণে
কখনো ভুলতে পারি?
আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই
স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের
চিতা আমি তুলবই।”
(বোধন)
এখানে আমি বলতে কোন ব্যক্তি বিশেষকে বোঝানো হয়নি। সেযুগের বিরাট জনগণের এক সংগ্রামী চেতনা— এই আমির মধ্যে ঐ যুগের সর্বরিক্ত মানুষের পুঞ্জীভূত ক্রোধ হয়ে যেন ফেটে পড়েছিল। তাই এই কবিতার নান্দীমুখে কবি এক মহামানবকে আহ্বান জানিয়েছিলেন— যিনি অসীম শক্তিধর ছিলেন ও যিনি যুগে যুগে অন্যায়ের প্রতিকার করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। আর কবিতাটির উপসংহারে কবি সেই মহামানব নয়— যুগসন্ধিকালের চেতনা, শোষক আর শাসকের নিষ্ঠুর একতার বিরুদ্ধে সংগ্রামী জনগণের একত্রিত সংহতিকেই উদ্বোধন করেছিলেন। যাঁরা তখন সেই চেতনার অংশীদার ছিলেন না, তাঁরা ঐতিহ্যবঞ্চিত দেশদ্রোহিতারই পতাকাবাহী ছিলেন। এই কবিতায় ঐ যুগের শ্রেষ্ঠ প্রেরণার সন্ধান পাওয়া যায়।
সুকান্তর লেখা বহু কবিতায়, গল্প ও নাটকে দুর্ভিক্ষ মন্বন্তরের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি হল— রবীন্দ্রনাথের প্রতি, ইওরোপের উদ্দেশ্যে, বিবৃতি, চট্টগ্রাম ১৯৪৩, ঐতিহাসিক, শত্রু এক, ডাক, বোধন, মৃত্যুজয়ী গান, ফসলের ডাক: ১৩৫১, কৃষকের গান, এই নবান্নে, উদ্বীক্ষণ, মণিপুর, চিরদিনের, মহাত্মাজীর প্রতি, পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে, ভেজাল, বিয়েবাড়ির মজা, রেশন কার্ড, খাদ্য সমস্যার সমাধান, পুরনো ধাঁধা, ব্ল্যাক মার্কেট, ভাল খাবার, নবজ্যামিতির ছড়া, চরমপত্র, ক্ষুধা, দুর্বোধ্য, কিশোরের স্বপ্ন, দরদীকিশোর, এবং ‘অভিযান’ নাটিকা।
সুকান্ত স্বজন হারানোর বেদনাময় কাহিনী ও একইসঙ্গে দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশে শত্রুর অতর্কিত আক্রমণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন; কিন্তু কোন অবস্থাতেই তাঁর মনোবল হতাশায় ভেঙে পড়েনি, বরং সেযুগের নগরে ও গ্রামের ভগ্ননীড় ক্ষুধিত জনতার ভীড়েব মধ্যে তিনি— “সমুদ্রে জাগে বাড়বানল” —উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
খাদ্যের দাবিতে, রেশনিং প্রথা চালু করবার দাবিতে শহরে গ্রামে তখন মিছিল চলছিল। জনতার দাবিতে শেষপর্যন্ত রেশনিং ব্যবস্থা চালুও হয়েছিল, কিন্তু একইসঙ্গে সেই ব্যবস্থাকে ঘিরে ভেজাল এবং চোরাকারবারও পুরোদমে চলেছিল। আর কিশোর কবির ব্যঙ্গাত্মক ছড়ায় সেসবও জীবন্ত হয়ে উঠেছিল—
“ভেজাল পোশাক, ভেজাল খাবার, ভেজাল লোকের ভাবনা,
ভেজালেরই রাজত্ব এ পাটনা থেকে পাবনা।”
(ভেজাল)
কিংবা তাঁর ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ কবিতায় ধনীরাম পোদ্দার ব্ল্যাক মার্কেট করে, গরীব চাষাকে মেরে বালিগঞ্জে খান ছ’য়েক বাড়ি হাঁকিয়েছিলেন। একদিন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, তাঁর বাড়ির চাকরটা রোজ বাজারে গিয়ে পয়সা চুরি করে। এরপরে তিনি সেই চাকরটাকে আচ্ছামত ধমকে দিয়েছিলেন। তখন—
“খানিকটা চুপ করে বলল চাকর হরি:
আপনারই দেখাদেখি ব্ল্যাক-মার্কেট করি।”
দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তরের সেই তাণ্ডবনৃত্য তখন সারাবছর ধরেই চলেছিল। ‘ক্ষুধা’ ও ‘দুর্বোধ্য’ নামক দুটি গল্পে সুকান্ত সেই ঘটনার মর্মস্পর্শী কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন। ক্ষুধার জ্বালায় তখন হারু, নীলু এবং যশোদার মত কত মানুষ যে আত্মহত্যা করেছিলেন; এবং অন্ধের স্ত্রীর মত কত স্ত্রী যে ক্ষুধার জ্বালায় নিজের স্বামীকে ত্যাগ করে বাঁচবার জন্য অন্ধকারের বেছে নিয়েছিলেন— সেসবের কোন হিসেবে নেই। কিন্তু সুকান্তর বৈশিষ্ট্য ছিল যে— তিনি শুধুমাত্র মৃত্যু, আত্মহত্যা ও বিপর্যয়ই প্রত্যক্ষ করেননি, তিনি অনুভব করেছিলেন—
“আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে লাভার মতই তলে তলে উতপ্ত হচ্ছে দুর্ভিক্ষ, প্রতীক্ষা করছে বিপুল বিস্ফোরণের।”
সেই সময়ে প্রতিদিনকার রেশনের লাইনে দাঁড়ানোর ধৈর্যের মধ্যে ক্ষুধার্ত মানুষ একটা আগ্নেয় বিপ্লবের অনিবার্য সম্ভাবনাকে সংঘবদ্ধ ও সংগঠিত করে তুলছিল। আর খাদ্য মিছিলের হাজার হাজার কণ্ঠের সঙ্গে ক্ষুধার যন্ত্রণাকে মিশিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে থাকা চেতনার আগুনকেই শেষপর্যন্ত জ্বালিয়ে তুলেছিল।
ওই মন্বন্তরের পরের বছরে, অর্থাৎ— ১৩৫১ বঙ্গাব্দে কৃষক সমিতি এবং কমিউনিস্ট পার্টি কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেকাজেও তখন অনেক সমস্যা দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমতঃ জমি, বীজ, লাঙ্গল, গরু— সবকিছুর অভাব ছিল। তাছাড়া দুর্ভিক্ষের তাড়নায় এবং ক্ষুধার জ্বালায় একই পরিবারের মানুষেরা তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁরা যখন আবার ফিরে আসতে শুরু করেছিলেন তখন নানাধরণের সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে নানাধরণের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। সেসব দিনেও কমিউনিস্ট কর্মীরা তাঁদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। নিজেদের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে সেই সময়কার কৃষকেরা নতুন সত্য লাভ করেছিলেন। তারা রাষ্ট্র ও জমিদারের শোষণের রূপটি সম্পর্কে অবগত হয়েছিলেন। কবিকণ্ঠে সেযুগের কৃষকের সেই উপলব্ধিও কাব্যরূপ লাভ করেছিল—
“আমার পুরনো কাস্তে পুড়ে গেছে ক্ষুধার আগুনে,
তাই দাও দীপ্ত কাস্তে চৈতন্য প্রখর—
যে কাস্তে ঝলসাবে নিত্য উগ্র দেশপ্রেমে,
যে কাস্তে শত্রুর কাছে দেখা দেবে অত্যন্ত ধারালো।”
(ফসলের ডাক)
কৃষকদের মনে তখন দারুণ প্রত্যয় থাকলেও তাঁরা ভুলতে পারছিলেন ন—
“গত হেমন্তে মরে গেছে ভাই, ছেড়ে গেছে বোন,
পথে-প্রান্তরে খামারে মরেছে যত পরিজন;”
(এই নবান্নে)
কিন্তু তবুও তাঁরা জানতেন— “পৌষপার্বণে প্রাণকোলাহলে ভরবে গ্রামের নীরব শ্মশান।” তাই তাঁরা গোপনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—
“এ মাটিতে জন্ম দেব আমি
অগণিত পল্টন ফসল।”
(কৃষকের গান)
তাঁদের সেই প্রতিজ্ঞা কিন্তু ব্যর্থ হয়নি। কারণ— এর বছর দুই পরে বাংলার গ্রামে গ্রামান্তরে হওয়া তেভাগা আন্দোলনে সেই অগণিত পল্টনের কাস্তে ঝলসে উঠেছিল। তখন— “হয় ধান নয় প্রাণ” —এই শব্দে—
“সারাদেশ দিশাহারা,
একবার মরে ভুলে গেছে আজ
মৃত্যুর ভয় তারা।”
(দুর্মর)
কবির প্রাণও তখন কৃষকদের সেই নব জাগরণে উল্লসিত হয়ে উঠেছিল। সংগঠিত কৃষকদের উত্তাল বিক্ষোভে গোটা বাংলা তখন কেঁপে উঠেছিল। অহল্যা গৌতমী বাতাসীর রক্তে রাঙা বাংলায় হিন্দু-মুসলমান কৃষকের মিলিত বিদ্রোহে শোষণমুক্তির দৃপ্ত শপথ দেখা গিয়েছিল। আকালের মৃত্যুকে মুছে বাংলার মানুষের মধ্যে তখন নতুন চেতনার সঞ্চার হয়েছিল। তখনকার অবদমিত সেই কৃষক আন্দোলনের শপথ কবিকণ্ঠেও এভাবে শুনতে পাওয়া গিয়েছিল—
“এবার লোকের ঘরে ঘরে যাবে
সোনালি নয়কো, রক্তে রঙিন ধান,
দেখবে সকলে সেখানে জ্বলছে
দাউ দাউ করে বাংলা দেশের প্রাণ।”
(দুর্মর)
‘চিরদিনের’ শিরোনামের একটি কবিতায়, তখনকার দুর্ভিক্ষ লাঞ্ছিত গ্রাম বাঙলার কৃষক জীবনে যে নতুন স্বপ্ন ঘনিয়ে এসেছিল, কবি সেটার একটি সুন্দর আলেখ্য রচনা করেছিলেন। শব্দে, ছন্দে, ভাবে, কল্পনায় এবং স্বপ্নময়তায় সার্থক এই কবিতাটি কালাশ্রয়ের গণ্ডী অতিক্রম করে চিরদিনের জন্যই ব্যাপ্তি লাভ করেছে। কবিতাটির শেষ স্তবকে— কৃষকবধূর একফাঁকে সলজ্জ চাহনিতে সেটা প্রতীকী তাৎপর্য লাভ করেছে—
“হঠাৎ সেদিন জল আনবার পথে
কৃষক-বধূ সে থমকে তাকায় পাশে,
ঘোমটা তুলে সে দেখে নেয় কোনোমতে,
সবুজ ফসলে সুবর্ণ যুগ আসে।”
গোছা গোছ ক্ষেত ভরতি ফসলের ক্ষেতের মধ্যে সেই কৃষক বধূ শুধু প্রাচুর্যের স্বপ্নই দেখেননি, তিনি এক সুখ ও আনন্দঘন ভবিষ্যৎকে, এবং সুন্দর ও সম্ভাবনাময় আগামীদিনকেও দেখতে পেয়েছিলেন। তবে, এরপরে কবি সুকান্ত আর বেশিদিন ধরে মানুষকে সেই স্বপ্ন দেখাতে পারেননি। মৃত্যু-বিজয়ী আশার কথা, স্বপ্নের কথা শোনাতে শোনাতে একদিন তিনি নিজেই অকালে মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁর সময়ের উপোসী মানুষের কথা, ক্ষুধার্ত মানুষের মনে সম্ভাবনাময উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা শোনাতে গিয়ে বাংলার এই সম্ভাবনাময় তরুণ কবি তাঁর নিজের ক্ষুধার কথা ভুলে গিয়েছিলেন, নিজেকে উপোসী রাখবার ফলে তিনি শেষপর্যন্ত রক্তপায়ী কীটের আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মাত্র একুশ বছরে মৃত্যু বরণ করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে— উচ্চতর আদর্শের জন্য প্রয়োজনে প্রাণ দান করতে হয়, শহীদ হতে হয়। সুকান্ত না থাকলেও জনতার স্রোত কিন্তু এখনো রয়েছে। অসহায় যন্ত্রণায় রুদ্ধবাক এই কবি পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের সময়ে এক অনাগত রবীন্দ্রনাথকে — ‘পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে’ — কবিতায় প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন যে, এই রবীন্দ্রনাথ এক নতুন রূপে দেখা দেবেন যাঁর— “বিপ্লবের স্বপ্ন চোখে, কন্ঠে গণসংগীতের সুর।” আজও অনেকে সুকান্তর মতোই এক নতুন রবীন্দ্রনাথের অপেক্ষায় রয়েছেন, যিনি উজ্জ্বল মানবতার পতাকা নিয়ে জনতার পাশাপাশি চলবেন; কারণ— “কবি ছাড়া জয় বৃথা।”#