মালঞ্চা এবং ঘর

এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বৈশালী ভাল করে খেয়াল করল, গ্রামটির বেশির ভাগ গাছেই লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, আকাশি, বেগুনি বিভিন্ন রঙের ছোট-ছোট ঘর ঝুলছিল। নানা আকারের ঘর। বৈশালী এক দৃষ্টিতে গাছে-গাছে নানা রঙের,বিভিন্ন আকৃতির ঝুলে থাকা ঝুলন্ত-ঘর দেখতে লাগল। ঘর দেখতে দেখতে নিজেকে কিছুক্ষণ হারিয়ে ফেলল বৈশালী। এরপর বৈশালী আস্তে-আস্তে হাঁটতে লাগল আর গাছে লাগানো ঘর দেখতে লাগল। ঘর দেখে বৈশালীর প্রাণ ভরে গেল।

আরও পড়ুন: মালঞ্চার পথে 

গ্রীষ্মকাল। বৈশাখ মাসের প্রথম দিক। মাথার ওপর সূর্য। বৈশালী পাকা রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল। দত্তক-গ্রামের-রোদ বৈশালীর গায়ে পড়তে লাগল। মালঞ্চার-রোদে বৈশালী রৌদ্দুর-স্নান করতে লাগল। মালঞ্চার-বাতাসে দেহ ভেজাতে লাগল। মালঞ্চার-আকাশের-রূপ উপভোগ করতে লাগল। বৈশালীর ছায়া পশ্চিম দিকে ক্রমশ লম্বা হতে লাগল। বৈশালী পায়ে‌ হেঁটে গ্রামটি ঘুরতে লাগল। পাকা বাড়ি আধুনিকতার ও কাচা বাড়ি বৈশালীকে মাটির গন্ধ শোঁকাল। লাল-মাটির একটি কাচা রাস্তা ‌গ্রামের মাথার সিঁথির-সিঁদুরের অনুভূতি জাগাল। গ্রামের এক দিকের কৃষি-জমি গ্রামের প্রাণকে উপভোগ করাল। মালঞ্চা-গ্রামের একটি দাতব্য চিকিৎসালয় একজন রূপবতী মেয়ের মনোমোহিনী রূপকে প্রত্যক্ষ করাল। একটি সুদৃশ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি দোতলা উচ্চ-বিদ্যালয় একটি ‌সুন্দরী নারীর অপরূপ সৌন্দর্য প্রকাশ করল। এরপর বৈশালী মালঞ্চা দত্তক-গ্রামের মাটির রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল। রাস্তার মধ্যে বাঁশের চটা ও পাতা দিয়ে তৈরি মাথাল মাথায় এক বয়স্ক লোকের সাথে দেখা। বৈশালী লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, “কাকা,আপনার নাম কি?”
লোকটি জানাল, “আমার নাম পঞ্চানন। আমি এই গ্রামের বাসিন্দা।”
বৈশালী লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা পঞ্চানন কাকা,এই গ্রামে গাছে-গাছে ঘর ঝুলানো কেন?”
পঞ্চানন কাকা বলল, “ম্যাডাম,গাছে টাঙানো ঘরগুলো হল পাখির-বাসা। পাখি পৃথিবীর বুকে এক মনোরম সৌন্দর্য। পাখির রং-বাহারে চোখ মুগ্ধ হয়, পাখির কলকাকলিতে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, পাখির আকারে মন ভরে যায়, পাখির চলনে থাকে ছন্দ। পৃথিবীকে অপরূপা করে তোলা এই পাখি অনেক কষ্ট করে,বহু পরিশ্রম করে খড়কুটো, ডাল, লতাপাতা দিয়ে গাছের ডালে তাদের স্বপ্নের বাসা তৈরি করে। সেই ঘরে পাখি সপরিবারে বসবাস করে। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে তাদের সেই স্বপ্নের বাড়িগুলো প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়, ধ্বংস হয়ে যায়। পাখি প্রায়শ গৃহহীন হয়ে পড়ে, ঘরছাড়া হয়ে পড়ে। সেইজন্য পাখিদের বসবাস করার জন্য গাছে-গাছে মজবুত-বাড়ি, শক্ত-বাড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে,যাতে তারা মন দিয়ে সংসার করতে পারে,আরামে ঘুমাতে পারে,সুখে স্বপ্ন দেখতে পারে।”
পাখির ঝুলন্ত-বাসাগুলোর দিকে তাকিয়ে বৈশালী বলে উঠল, “সুন্দর! খুবই সুন্দর!”

চলবে…

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!